নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ সৃষ্টির গল্প

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪১


''এলেম আমি কোথা থেকে,
কোন্‌খানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে।''
(জন্মকথা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

যুগে যুগে মানুষকে প্রবলভাবে ভাবিয়েছে ঐ প্রশ্নটি-আমি কোথা থেকে আসলাম। মানুষ জানতে চেয়েছে পৃথিবীতে মানুষ উৎপত্তির রহস্য কী? কারণ মানুষের মধ্যে থাকে এক প্রবল জিজ্ঞাসু মন। তাই জন্মের পর থেকেই মানুষের জিজ্ঞাসার অন্ত নেই। মূলত মানুষের চিন্তাশক্তিই মানুষকে প্রাণীজগতে শ্রেষ্ঠতর করেছে। তবে মানুষের আদিম অবস্থায় চিন্তা-চৈতন্যের আধুনিক মানুষদের মত গাঠনিক বিকাশ হয়নি। আদিম মানুষই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে জন্ম দিয়েছে সংস্কার-কুসংস্কারের, আর এর ভেতর থেকে উৎপত্তি হয়েছে লোককথা-রূপকথার। আবার এগুলোকে উপজীব্য করেই রচিত হয়েছে ধর্ম-পুরাণ। বিজ্ঞান বিকাশের পূর্ব যুগে মানুষ ধর্ম-পুরাণ-রূপকথা-লোককথা ও দর্শনশাস্ত্রের মাধ্যমে অজানাকে জানার চেষ্টা করেছে। ধর্ম প্রচারকদেরও সম্মুখীন হতে হত বিভিন্ন প্রশ্নের। তাই ধর্মশাস্ত্রগুলোকেও মানুষ সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে স্বীয় গরজে। ভুল কিংবা সঠিক, যা হোক না কেন ধর্মের ঐসব বাণীগুলো প্রচারিত হত ঐশ্বরিক বলে।

রূপকথা-লোককথা ছাড়া পৃথিবীতে কোন জাতি আছে বলে মনে হয় না। মানবজাতির ইতিহাসের সাথেই এগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইতিহাস থেকে জানা যায় মানুষ সৃষ্টির লোককথা পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিসত্তার মধ্যে প্রচলিত ছিল। ধর্মশাস্ত্রের আবির্ভাবের যুগে সেগুলো ধর্মে অনুপ্রবেশ করে ঐশ্বরিক ক্রিয়াকাণ্ড হিসেবে। ফলে ঐসব কল্পকথার উপরও জন্মেছে একশ্রেণীর মানুষের বিশ্বাস।

আদিম ক্লানের মানুষের মধ্যে ছিল টোটেম বিশ্বাস। ক্লানের সবাই একই ধারণা পোষণ করত যে তারা কোন আদি নারী বা আদি পুরুষের বংশধর। কিন্ত তারা সেই আদি নারী বা আদি পুরুষ বলতে বুঝত কোনো জন্তুজানোয়ার বা গাছপালা, যার নাম থেকে ক্লানের নামকরণ হয়েছে। কাছিম ক্লানের লোকেরা হয়তো বিশ্বাস করতো, আদিকালে এক পুকুরের মধ্যে এক কাছিম বাস করতো। একবার প্রখর গ্রীষ্মকালে পুকুর শুকিয়ে গেল। পুকুর থেকে কাছিমটি পাড়ে উঠে এসে ফেলে দিল তার গায়ের খোলস। সেই খোলস থেকে বেরিয়ে এলো একটি মানুষ। কাছিম ক্লানের লোকেরা হল সেই মানুষটির বংশধর।

প্রত্যেকটা ক্লানের মানুষের মধ্যে এ জাতীয় ভিন্ন ভিন্ন গল্প থাকতে পারে প্রথম মানুষ উদ্ভবের। প্রথম মানব বা মানবী থেকে মানুষের বংশবৃদ্ধি হয়েছে, এরকম চিন্তা-চেতনা টোটেম বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে যে ছিল তা আমরা সহজেই বোঝে নিতে পারি। এই চিন্তাধারার ক্রমবিবর্তন লক্ষ্য করা যায় পরবর্তী লুপ্ত সভ্যতার মানুষদের মধ্যেও।

মেসোপটেমিয় সভ্যতাগুলোর মধ্যে সুমের সভ্যতাকে প্রাচীন হিসেবে গণ্য করা হয়। খৃষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে এই সভ্যতা গড়ে উঠে। নিজস্ব ভাষা, লিখন পদ্ধতি, গণিত, শিল্পকলা, জ্যোতির্বিদ্যা, স্থাপত্য ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠেছিল এক উন্নত সভ্যতা। তবে তাদের ধর্মে ছিল বহু দেবদেবীর সমাহার। নিপ্পু ছিল সেই সময়ের মেসোপটেমিয় প্রাচীন শহর। এখান থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত ফলক লিখন থেকে পৃথিবীর উৎপত্তি ও মানুষ সৃষ্টির বর্ণনা পাওয়া যায়।

সুমেরিয় শহরে দেবতারা ছিল শহরের রক্ষাকর্তা আর মানুষ ছিল তাদের দাস। তবে সৃষ্টির আদিতে দেবতারা পৃথিবী শাসন করতো। তারা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলে। একদিন দেবতারা তাদের পরিশ্রমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল।
দেবতাদের প্রধান ছিলেন আনু। আনুর পুত্র ছিলেন এন্‌কি। তিনি প্রস্তাব করলেন মানুষ বানানোর জন্য, যাতে দেবতাদের পরিশ্রম লাঘব হয় এবং মানুষ যেন সেই পরিশ্রম করে। এন্‌কি তার সৎবোন নিন্‌কির সাহায্যে মানুষ তৈরির কাজটি করেন। একজন দেবতাকে হত্যা করে, তার শরীর ও রক্তের সাথে কাদামাটি মিশিয়ে তৈরি করা হয় প্রথম মানুষ। সেই মানুষটি দেখতে ছিল অবিকল দেবতার মতো।

মেসোপটেমিয় সাহিত্যের অন্তর্গত 'এপিক অব গিলগামেশ' গ্রন্থে আমরা মানুষ সৃষ্টির একটি ভিন্ন গল্প পাই। এই গিলগামেশ লিখিত ভাষার রূপ পেয়েছিল খৃষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। এই মহাকাব্যের রচয়িতার নাম পাওয়া যায় নাই। পণ্ডিতদের ধারণা এর গল্পগুলো আরও বহু বছর পূর্ব থেকেই মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। গিলগামেশ ছিলেন উরুকের রাজা। তিনি বীর এবং সুশাসক হলেও প্রজাদের অত্যধিক খাটাতেন। প্রজারা তার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে ভাল হবে মনে করে দেবরাজ আনুর কাছে গেলেন। আনু ছিলেন স্বর্গের দেবতাদের রাজা। উরুক শহরে ছিল তার মন্দির। প্রজাদের সব কথা শুনে এবং তাদের কান্নায় দেবতা আনুর দয়া হল। তখন তিনি দেবী আরুরুকে ডেকে পাঠালেন। এই দেবী আরুরুই একটুখানি মাটি বনের মধ্যে নিক্ষেপ করলেন। আর সেখানে তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন।
"The goddess Aruru, she washed her hands,
took a pinch of clay, threw it down on the wild.
In the wild she created Enkidu, the hero,
offspring of silence, knit strong by Ninurta."

(The Epic of Gilgamesh)

দেবরাজ আনু দেবী আরুরুকে বললেন, তুমি মাটি দিয়ে গিলগামেশের এক প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি কর। তারপর আরুরু জলে হাত ধুয়ে মাটি দিয়ে তৈরি করলেন খুব সুন্দর এক মানুষ; যার নাম রাখলেন এন্‌কিদু। লোমে ঢাকা তার শরীর ছিল নগ্ন ও বিশাল। বিস্তৃত অরন্যে এন্‌কিদু জীবজন্তু, পক্ষী ও সরীসৃপদের মাঝে ঘুরে বেড়াতে লাগল। বনের জীবজন্তুরা ছিল তার বন্ধু। এন্‌কিদুকে উরুক শহরে নিয়ে আসার জন্য পাঠানো হল শামহাতকে। তিনি ছিলেন উরুক শহরের গণিকা। বনের মধ্যে শামহাতকে দেখে খুব অবাক হল এন্‌কিদু। সে শামহাতের রূপের জাদুতে ভুলে গেল বনের পশুদের। অবশেষে শামহাত এন্‌কিদুকে উরুক শহরে নিয়ে আসতে সক্ষম হল।

আপসু ও তিয়ামৎ হলেন ব্যাবিলনীয় পুরাণের দেবতা ও দেবী। আপসু সৃষ্টি করেছিলেন পাতালপুরের জলরাশি। আর তিয়ামৎ এর হাতে ছিল সমুদ্রের নিয়ন্ত্রণ। তারা জন্ম দিলেন দেবতাদের চারটি প্রজন্ম। দেবতাদের কোলাহল অসহনীয় হয়ে গেলে আপসু ও তিয়ামৎ মুখোমুখি হলেন। আপসু গোপনে তার উজির মুম্মুকে সাথে নিয়ে ষড়যন্ত্র করলেন। দেবতা ইয়া ছিলেন সর্বজ্ঞ। তিনি ষড়যন্ত্রের কারণে আপসু ও মুম্মুকে হত্যা করলেন। তারপর ইয়া তার স্ত্রী ভামকিনা'র মাধ্যমে জন্ম দিলেন মার্দুককে। তিয়ামৎ ও অন্যান্য দেবতারা মার্দুকের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। তিয়ামৎ এর দলের দৈত্যদের মধ্যে প্রধান ছিলেন কীংগু। তিনি কীংগুকে সিংহাসনে বসিয়ে প্রদান করলেন নিয়তির ফলক। যুদ্ধে তিয়ামৎ পরাজিত হলে মার্দক তার শরীর দুই টুকরো করে কেটে ফেলেন। তিনি তিয়ামৎ এর দেহের এক অংশ হতে সৃষ্টি করলেন পৃথিবী এবং অপর অংশ হতে স্বর্গ সৃষ্টি করলেন। তার থুতু থেকে সৃষ্টি করলে বায়ু, মেঘ এবং বৃষ্টি। কুয়াশা সৃষ্টি করলেন তার বিষ থেকে। আর অশ্রু থেকে সৃষ্টি করলেন ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদী। তারপর মার্দুক কীংগুকে হত্যা করে ছিনিয়ে নিলেন নিয়তির ফলক। অবশেষে কীংগুর রক্ত থেকে সৃষ্টি করলেন মানবজাতি।

গ্রীক পুরাণে প্রমিথিউস ও এমপিথিউস দুই ভাই। প্রমিথিউসের ছিল দূরদর্শিতা আর এমপিথিউসের ছিল অপরিণামদর্শিতা। সেই অপরিনামদর্শী এমপিথিউসকে মানুষ ও প্রাণীকুল সৃষ্টির দায়িত্ব দেয়া হল। তিনি জীবজন্তু সৃষ্টি করে তার সমস্ত প্রজ্ঞা, শক্তি, সাহস, ক্ষিপ্রতা তাদের দিয়ে দিলেন। মানুষ তৈরির সময় দেখা গেল তার ঝুলি শূন্য। সুতরাং মানুষ তৈরি হল একেবারে দুর্বল প্রকৃতির। তিনি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ভাই প্রমিথিউসকে জানালেন। প্রমিথিউস মানুষকে দিলেন সুন্দর দেবতাদের আকৃতি। তারপর তিনি মানুষের জন্য সূর্যের কাছ থেকে চুরি করে নিয়ে এলেন আগুন।

এদিকে দেবরাজ জিউস মানুষের উপর চটেছিলেন কারণ প্রমিথিউসের কাছ থেকেই মানুষ পেল দেবতার আকৃতি এবং সূর্য দেবতার শক্তি ও আগুন। তাই তিনি মানুষকে শায়েস্তা করার জন্য সৃষ্টি করলেন একজন নারী। যাতে এই নারীর কারণে মানুষের জীবনে নেমে আসে হতাশা-দুঃখ-কষ্ট ও পাপাচার। নারীটিকে জিউস খুব সুন্দর ও লাজুক করে সৃষ্টি করলেন এবং নাম দিলেন প্যান্ডোরা। জিউস সকল দেবতাকে একটি করে বাক্স দিলেন প্যান্ডোরাকে উপহার হিসেবে দেয়ার জন্যে। তারপর তিনি এমপিথিউসের সঙ্গে প্যান্ডোরাকে বিয়ে দিলেন। প্রমিথিউস নিষেধ করেছিলেন এমপিথিউসকে, যাতে প্যান্ডোরাকে বিয়ে না করে আর উপহার সামগ্রী না নিতে। কিন্তু এম্পিথিউস তা ভুলে গিয়ে প্যান্ডোরাকে বিয়ে করলেন। এদিকে দেবতারা প্যান্ডোরাকে যে বাক্স দিয়েছিলেন তা কোনদিন না খুলতে বারণ করেছিলেন।
প্যান্ডোরা কৌতুহল ও লোভ সংবরণ করতে না পেরে বাক্সটি খুলে ফেলেন। আর মানুষের দুর্দশার কারণ হিসেবে বাক্স থেকে বেরিয়ে আসে পাপ, মৃত্যু, দুঃখ, কষ্ট, হতাশা এবং অশুভ যতকিছু আছে। এই অশুভের মধ্যেও একটা ভালো জিনিস ছিল, আর তা হল আশা।

গ্রীক পুরাণে মানুষ সৃষ্টির আরও একটি গল্প আছে, যেটাকে বলা হয় মানুষ সৃষ্টির পঞ্চযুগ। এই গল্প অনুসারে প্রথমে দেবতারা স্বর্গে বাস করতেন। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন ধাতব পদার্থ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রথমে সৃষ্টি করেন স্বর্ণের মানুষ। তাদের জীবন ছিল দেবতাদের মতো। কিন্তু তারা অমর ছিল না। মৃত্যুর পর তাদের আত্মা হতো অমর। মৃতের আত্মা জীবিতদের সহায়তা করত। এরপর দেবতারা সৃষ্টি করলেন রূপার মানুষ। তাদের বুদ্ধি ছিল নিম্নমানের। তারা পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে মারা গেল এবং ধ্বংস হয়ে গেল তাদের আত্মাও। তারপর দেবতারা তৈরি করলেন তাম্র প্রজাতির মানুষ। তারা ছিল শক্তিশালী এবং যুদ্ধপ্রিয়। তাই দেবতারা তাদের এক দ্বীপে নির্বাসিত করলেন। সেখানে তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। সর্বশেষ যুগে দেবতারা সৃষ্টি করলেন লৌহ-মানুষ। এরা ছিল দেবতাদের নিকৃষ্টতম সৃষ্টি। দুঃখ, কষ্ট, পাপাচারে ভরা তাদের জীবন। তারা শক্তির পূজা করবে। যা কিছু উত্তম তা বর্জন করবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো যেদিন কেউ থাকবে না, সেদিন জিউস তাদের ধ্বংস করে দিবেন।

ডিউক্যালিওন-পিরা উপাখ্যান থেকেও মানুষ সৃষ্টির কথা জানা যায়। সেখানে বর্ণিত আছে, লৌহ-মানুষদের যুগে যখন পাপাচারে ভরে গিয়েছিল পৃথিবী, তখন জিউস তার ভাই সমুদ্রদেবতা পোসাইডনের সাহায্য নিয়ে সৃষ্টি করলেন এক মহাপ্লাবন। এদিকে প্রমিথিউসের পুত্র ডিওক্যালিওনের সাথে আগেই বিয়ে হয়েছিল প্যান্ডোরার কন্যা পিরার সাথে। প্রমিথিউস আগেবাগেই প্লাবনের কথা জানিয়ে তাদের একটা বাক্স বানাতে বলেছিলেন। এদিকে প্লাবন শুরু হলে সবকিছু ডুবে গেল। কেবল ডুবল না পারন্যাসাস নামক একটা জায়গা। ডিওক্যালিয়ন ও তার স্ত্রী পিরা বন্যা থেকে বাঁচতে বাক্সে চড়ে বসলেন। বাক্স এসে থামল পারন্যাসাস নামক স্থানে। দেবতারা সদয় হয়ে বন্যা থামালেন। কারণ ডিওক্যালিয়ন ও পিরা ছিলেন ধার্মিক। তারা বাক্স থেকে নেমে দেখলেন কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব নেই। একটু হাঁটার পর তারা একটা মন্দির দেখতে পেলেন। সেখানে গিয়ে প্রার্থনা করার সাথে সাথে শুনতে পেলেন এক অলৌকিক আদেশ-'তোমরা মাথা অবগুন্ঠীত কর এবং তোমাদের মায়ের হাঁড়গুলো নিক্ষেপ কর তোমাদের পিছনে'। ডিওক্যালিওন বুঝতে পারলেন পৃথিবী গায়া হল তাদের মা, আর মাটিতে পড়ে থাকা পাথরগুলো হচ্ছে তার হাঁড়। তখন তারা উভয়ে পাথরগুলো নিক্ষেপ করতে থাকলেন, আর পাথর থেকে জন্ম হতে থাকল একটার পর একটা মানুষ।

হিন্দু পুরাণে আছে স্বয়ং ব্রহ্মা নিজ দেহ দ্বিখণ্ডিত করে নারী ও পুরুষ সৃষ্ট করেন। এই নারী-পুরুষ থেকে উৎপন্ন হলেন বিরাট। এই পুরুষ বিরাট হতে স্বায়ম্ভুব মনুর জন্ম হল। অন্য কাহিনী মতে, ব্রহ্মা নিজেকে দ্বিখণ্ডিত করে একখণ্ড থেকে নিজেই মনু রূপে আবির্ভূত হলেন এবং অপর খণ্ড থেকে শতরুপা নামে নারী সৃষ্টি করলেন। কন্যা শতরূপার সাথে ব্যাভিচারের ফলে মনুর জন্ম হল। মনু শতরূপাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেন। শতরূপার গর্ভে দুটি পুত্র প্রিয়ব্রত ও উত্তালপাদ এবং দুটি কন্যা ঋদ্ধি ও প্রসুতি জন্মলাভ করে। তারাই পৃথিবীতে মানুষের বংশবৃদ্ধি করে।

আবার মহাভারতের মতে, ব্রহ্মা ব্রহ্মাণ্ডের ভিতরে অবস্থানের সময় কয়েকজন আদিপুরুষ তৈরি করেছিলেন। মহাভারত বর্ণনা করে, প্রথমতঃ এই বিশ্বসংসার ঘোরতর অন্ধকারে আবৃত ছিল। অনন্তর সমস্ত বস্তুর বীজভূত এক অণ্ড প্রসূত হল। ঐ অণ্ডে অনাদি, অনন্ত, অচিন্তনীয়, অনির্বচনীয়, সত্যস্বরূপ, নিরাকার, নির্বিকার, জ্যোতির্ময় ব্রহ্ম প্রবিষ্ট হলেন। অনন্তর ঐ অণ্ডে ভগবান প্রজাপতি ব্রহ্মা স্বয়ং জন্ম পরিগ্রহ করলেন। তারপর স্থাণু, স্বায়ম্ভব মনু, দশ প্রচেতা, দক্ষ, দক্ষের সপ্ত পুত্র, সপ্তর্ষি, চতুর্দশ মনু জন্মলাভ করলেন।

প্রাচীন চীনের লোককাহিনী থেকে জানা যায়্‌ পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে সবকিছু বিশৃঙ্খল ছিল। এই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে জন্ম নেয় 'ইয়াং' ও 'ইন' নামে দুটি শক্তি। তারা সাদা ও কালো রঙের বৃত্তের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকে। বৃত্তের কালো অংশ থেকে সৃষ্টি হয় নারী, আর সাদা অংশ থেকে সৃষ্টি হয় পুরুষ। তাদের থেকে জন্ম হয় 'প্যাঙ্কু' নামে এক বিরাট পুরুষের। আসলে এই প্যাঙ্কু ছিল পৃথিবীর একটি রূপ। প্যাঙ্কুর সন্তুষ্টির জন্য সৃষ্টি করা হয় চন্দ্র-সূর্য ও নক্ষত্র। পর্বত সৃষ্টি হয় প্যাঙ্কুর মাথা থেকে এবং মেঘ সৃষ্টি হয় নিঃশ্বাস থেকে। গায়ের লোম থেকে জন্ম হয় গাছপালার। শিরা-উপশিরা থেকে সৃষ্টি হয় নদী। প্যাঙ্কুর গায়ে যে পোকামাকড় ছিল সেগুলো থেকে জন্ম নিল মানুষ এবং অন্যান্য পশুপাখি। কচ্ছপ, ড্রাগন ও ফিনিক্স পাখি ছিল প্যাঙ্কুর সহকারী।

অ্যাজটেক পুরাণে স্বর্গ আছে তেরটি। এই তের নম্বর স্বর্গে বাস করেন ঈশ্বর দম্পতি। তারা জন্ম দেন চারটি পুত্র সন্তান। প্রথমজনের নাম লাল তেজকাটলিপোকা, দ্বিতীয় পুত্র কালো তেজকাটলিপোকা, তৃতীয়জন কুয়েটজালাকোয়াটল এবং চতুর্থজন হলেন হুইটজিলোপোখটলি। চার ভাই একত্রে তৈরি করেন স্বর্গ, মর্ত্য, সমুদ্র এবং পাতালরাজ্য। তারপর সৃষ্টি করেন প্রথম মানবযুগল। অ্যাজটেক পুরাণ মতে দেবতাদের রক্ত ও হাঁড় থেকে সৃষ্টি হয়েছে প্রথম পুরুষ ও নারী।

স্লাভিক পুরাণ বলে, ঈশ্বর পৃথিবীকে বালি দ্বারা নির্মাণ করেন। সেই সময়ে বালির উপর তার এক ফোটা ঘাম পড়ে যায়। বালি আর ঘামের ঐ মিশ্রণ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল প্রথম মানুষ।

মায়া সভ্যতার পুরাণের নাম হল 'পোপোল ভুহ'। এখানে মানুষ সৃষ্টির বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে। মানুষ সৃষ্টির পূর্বে দেবতাদের আবাস ছিল গভীর সমুদ্রের নীচে। সেখানে থাকতে থাকতে দেবতারা বিরক্ত হয়ে গেলে, একদিন সবাই বের হয়ে আসে। তারপর দেবতারা সৃষ্টিকর্মে মেতে উঠে। তারা সমুদ্রের তলদেশ থেকে পাহাড়, হ্রদ, গাছপালা ইত্যাদি সৃষ্টি করলেন। এরপর সৃষ্টি করলেন হরিণ আর পাখি। দেবতারা দেখলেন পশুপাখিরা তাদের প্রশংসা করতে পারে না এবং পারে না উপাসনা করতে। তাই দেবতারা চাইলেন পশুপাখিদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু বানাতে, যারা দেবতাদের ভালোবাসবে।

দেবতারা প্রথমে মাটি দিয়ে মানুষ বানালেন। কিন্তু তারা দেখলেন মাটির মানুষ মজবুত না। বৃষ্টি হলে এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো গলে যায়। তারা সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারছিল না এবং অর্থহীন কথাবার্তা বলছিল। তাই দেবতারা বিরক্ত হয়ে মাটির মানুষগুলো ধ্বংস করে দিলেন। তারপর তারা মানুষে তৈরি করলেন কাঠ থেকে। মাটির মানুষের চেয়ে কাঠের মানুষের গুণ একটু বেশি হল। কিছুদিন পর দেবতারা বুঝতে পারল কাঠের মানুষের দেহ সতেজ নয়; এমন কি তাদের দেহে রক্ত চলাচলের শিরা নেই। তারচেয়ে বড় কথা হল তাদের দেহে আত্মা নেই। অবশেষে কাঠের মানুষদেরও দেবতারা ধ্বংস করে ফেললেন। এই কাঠের মানুষদের ধ্বংসাবশেষ থেকে সৃষ্টি হল বানর।
তৃতীয়বার মানুষ তৈরির জন্য দেবতারা আলোচনায় বসলেন। সেখানে তাদের সাথে দেখা করতে এলো বিড়াল, টিয়া, কয়োট ও কাক। তারা 'ব্রোকেন প্লেস' নামক জায়গায় এক প্রকার নতুন ধরনের শস্যের সন্ধান দিল, যা দেবতাদের কাজে লাগবে। দেবতারা সেখানে গিয়ে দেখলেন এই নতুন শস্য হল যব। দেবতারা এই যব গুড়ো করে চারজন মানুষ বানালেন। এই চারজন হল 'ফোর ফাদার্স'। এরপর যব গুড়ো করে তা দিয়ে এক প্রকার পানীয় তৈরি করে ফোর ফাদার্সকে খেতে দিলেন। খাওয়ার পর তাদের দেহে পেশী আর শক্তি তৈরি হল। তারপর তারা ঘুমিয়ে পড়লে তাদের জন্য চারজন নারী সঙ্গী বানিয়ে দিলেন।
'ফোর ফাদার্স' তাদের সৃষ্টি করার জন্য দেবতাদের কৃতজ্ঞতা জানালেন। দ্রুত তাদের স্ত্রীদের সন্তান-সন্ততি হল। এভাবে মায়ারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল।

খৃষ্টপূর্ব ৩০০০ হাজার অব্দে সুমেরীয় রূপকথায় লিলিথ আখ্যানটির উৎপত্তি বলে জানা যায়। সুমেরীয়বাসীরা তাকে ডাকত ডাইনি বা অন্ধকারের নারী। তাদের কাছে লিলিথ ছিল অশুভ এক আত্মা। খৃষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর একটি খোদাই করা সিরিয় লিপি থেকেও লিলিথের কথা জানা যায়। সেখানে লেখা ছিল-'হে অন্ধকারের উড়ন্ত অশুভ আত্মা, দূর হয়ে যা এই মুহূর্তে, হে লিলি'। সুমেরীয়বাসী ও ইহুদীরা অশুভ আত্মা বলে এই লিলিথের উপাসনাও করত।।

ইহুদীদের ব্যাবিলনী তালমুদেও লিলিথের গল্পটি আছে। সেখানে লিলিথ শয়তান, অশুভ আত্মা এবং অনিয়ন্ত্রিত যৌনতার প্রতীক। সেখানে আরও বলা হয়েছে-'কোন যুবক পুরুষের রাতের বেলায় ঘরে একা ঘুমানো নিষিদ্ধ। কারণ লিলিথ তাকে ছলে বলে গ্রাস করবে'।(শাবাত ১৫১এ)। প্রচলিত আছে লিলিথ একলা পুরুষের বীর্যে নিজেকে গর্ভবতী করে আরও শয়তানের জন্ম দেয়।


ছবি- অশুভ আত্মা থেকে রক্ষাকবচ, জাদুকারী বাটি

ইহুদীদের জেনেসিসে বর্ণিত অনেক জটিল বিষয়কে সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছে মিদ্রাশ সাহিত্য। জেনেসিস মিদ্রাশ সংস্করণে লিলিথকে অশুভ আত্মা থেকে একটি গ্রহণযোগ্য চরিত্রে রূপায়িত করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে ইভের আগে আদমের প্রথম স্ত্রী ছিল লিলিথ। জেনেসিস-১ এর ভাষ্য মতে নারী এবং পুরুষ উভয়কে একই সময়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার জেনেসিস-২ তে বলা হয়েছে ইভের আগে আদমকে সৃষ্টি করা হয়। জেনেসিস মিদ্রাশ সংস্করণে বলা হয়েছে প্রথম মানব-মানবী সৃষ্টির এই গল্প দুটি ভিন্ন। প্রথম গল্পে আদমের সাথেই তার স্ত্রী লিলিথকে সৃষ্টি করা হয়। কোন কারণে তাদের সংসার টিকে নি। তাই জেহোভা আদমের জন্য দ্বিতীয় স্ত্রী ইভকে সৃষ্টি করলেন।

'দি অ্যালফেবেট' পুস্তিকাটিতে আরামিক ও হিব্রু বর্ণমালার ক্রম অনুসারে ২২টি প্রবচন আছে। বেন সিরা বিভিন্ন পুরাণ উপাখ্যান অবতারণার মাধ্যমে প্রতিটির উৎস ব্যাখ্যা করে এগুলোকে সমৃদ্ধ করেন। তাকে নবী অরামিয়ার পৌত্র হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। কথিত আছে একজন পূর্ণ মানুষের জ্ঞান ও মানসিক শক্তি নিয়ে তার জন্ম হয়েছিল। তার খ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, পারস্যের সম্রাট নেঁবু চাঁদ নেজ্জার তাকে দরবারে ডেকে পাঠালেন।
"সম্রাট নেঁবু চাঁদ নেজ্জারের কনিষ্ঠ পুত্র পীড়িত হয়ে পড়লে তিনি বেন সিরাকে ডেকে নিয়ে বললেন,"আমার পুত্রকে যথাশীঘ্র আরোগ্য করে তোল, বিফলে তোমার গর্দান যাবে।"

বেন সিরা রোগীর শিয়রে বসে এক টুকরো পার্চমেন্টের উপর ডানা, হাত ও পা মিলিয়ে অদ্ভূত আকারের কয়েকটি চিত্র এঁকে সেখানে কিছু লিখলেন। নেঁবু চাঁদ নেজ্জার তা দেখে বললেন, 'এরা কারা'? বেন সিরা বললেন, 'এই রক্ষাকবচের উপর এই ছবিগুলো হচ্ছে ঔষধ পথ্যাদির দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেস্তা সেনয়, সানসেনয় ও সেমানজিলফের। যখন আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছিল তখন সে ছিল একা। জেহোভা বললেন, "পুরুষ মানুষের একা থাকা ঠিক না।"-জেনেসিস ২-১৮
অতঃপর তিনি আদমকে যেভাবে সৃষ্টি করেছিলেন তেমনিভাবে একজন নারীকে সৃষ্টি করলেন এবং তার নাম দিলেন লিলিথ।' আদম ও লিলিথের মধ্যে বনিবনা ছিল না। সামান্য কারণে তাদের মধ্যে বিবাদ লেগেই থাকত। একদিন সঙ্গম নিয়ে তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হল। লিলিথ অস্বীকার করল আদমের নিচে শোতে। আদম বলল, ''You are fit only to be in the bottom position. তাছাড়া আমি তোমার থেকে শ্রেয়, সুতরাং আমি তোমার উপরেই থাকব। লিলিথ তার কথা মেনে নিল না। সে বলল, আমরা কেউ কারো থেকে শ্রেয় নয়, আমরা উভয়ে মাটি থেকে সৃষ্টি। সুতরাং আমরা উভয়ে সমান।

লিলিথ যখন দেখল আদম কোন যুক্তি মানছে না, তখন সে প্রভুর জাদুকরী নাম পাঠ করে বাতাসে মিলিয়ে গেল এবং ইডেন থেকে সে পৃথিবীতে চলে আসল। আদম তৎক্ষণাৎ সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা নিবেদন করল- 'হে প্রভু! তুমি আমাকে সঙ্গী করে যে নারী দিয়েছিলে, সে তো পালিয়ে গেল।'

তখন সৃষ্টিকর্তা সেনয়, সানসেনয় ও সেমানজিলফ এই তিন ফেরেস্তাকে পাঠালেন লিলিথকে ফিরিয়ে আনতে। আর আদমকে বললেন, যদি সে ফিরে আসে তো ভাল, অন্যথায় দিনে তার এক'শ সন্তানের ধ্বংস অনিবার্য। ঐ তিন ফেরেস্তা লিলিথকে খুঁজে পেল লোহিত সাগরের তীরে। তারা সৃষ্টিকর্তার আদেশ শুনিয়ে তাকে আদমের কাছে ফিরে যেতে অনুরোধ করল। কিন্তু লিলিথ রাজী হল না। অন্য কাহিনী মতে লিলিথ ফেরেস্তাদের জানিয়েছিল যে, সে ইতিমধ্যে আযাযিল ফেরেস্তার সাথে সহবাস করে ফেলেছে, তাই আদমের কাছে ফিরে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তখন ফেরেস্তারা জানাল সে না ফিরলে প্রতিদিন তার এক'শ সন্তানের মৃত্যু হবে। এতে লিলিথ ক্ষিপ্ত হয়ে আদম সন্তানদের অনিষ্ঠ করার হুমকি দিয়ে বলল, 'আমি দুগ্ধপোষ্য শিশুদের ব্যাধি সৃষ্টির নিমিত্ত হব। নিশ্চয় শিশু পুত্র হলে আমার ক্ষমতা হবে ৮দিন, আর কন্যা হলে ২০ দিন পর্যন্ত।

ফেরেস্তাগণ ঐসময় লিলিথকে একটি মাত্র শর্ত দিয়েছিল যে, তারা তাকে না নিয়েই ফিরে যাবে যদি সে আদম সন্তানের কোন অনিষ্ঠ না করার প্রতিজ্ঞা করে। তখন লিলিথ প্রভুর নামে প্রতিজ্ঞা করে বলেছিল, 'যখনই কোন শিশুর রক্ষাকবচে আমি তোমাদের নাম বা তোমাদের আকার দেখতে পাব, নিশ্চয় ঐ শিশুর উপর আমার কোন ক্ষমতা থাকবে না'।

সৃষ্টিকর্তার আদেশে প্রতিদিন লিলিথের ১০০টি সন্তান মারা যায়। বেন সিরা বলেন-ঠিক একই কারণে আমরা শিশুদের রক্ষাকবচে ঐ ফেরেস্তাগণের নাম লিখি। যখন লিলিথ তাদের নামগুলো দেখে, সে স্মরণ করে তার প্রতিজ্ঞার কথা এবং ঐ শিশু আরোগ্য লাভ করে।
লিলিথ আর ফিরে না আসাতে জেহোভা আদমের বাম পাঁজরের হাঁড় থেকে হবাকে(হাওয়া) সৃষ্টি করলেন। আর হবাকে করা হল আদমের অধীনস্ত। যাতে সে সমতা দাবী করতে না পারে।

ছবি- সুমেরিয়ান লিলিথ

ইহুদীদের তালমুদে পাওয়া যায় আদম ও লিলিথের সংসার টিকেছিল ৩০ বছর। সেই সময়ে লিলিথের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া সন্তানরা হল শেদিম বা দানব।। বিভিন্ন গ্রন্থে লিলিথ সম্পর্কে আরও বহু তথ্য-উপাত্য পাওয়া যায়। আজ থেকে প্রায় দেড়'শ বছর আগে বাগদাদের কাছে চার হাজার বছরের পুরোনো একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ভিতর লিলিথের একটি দুর্লভ মূর্তি পাওয়া যায়। এটি ছিল সুমেরিয়ান লিলিথ। মন্দিরের ভূ-গর্ভস্থ কোন একটি চেম্বারের দেয়ালে আটকানো ছিল মূর্তিটি। এর পায়ের নিচে প্রাচীন কুনিফর্ম লিপিতে লেখা ছিল-"রাতের রানী লিলিথ তার বড় বোন ইরেশকিগালকে (কুইন অব দ্যা গ্রেট আর্থ) নিয়ে ব্যাবিলনের সব বেশ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে।" আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি হাজার হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন ব্যাবিলনে গড়ে উঠেছিল বড় বড় বেশ্যালয়। ইতিহাসের প্রথম এবং সব থেকে বড় 'পাপের শহর' ছিল এই ব্যাবিলন।

জেনেসিসে প্রথম মানবী হিসেবে লিলিথের নাম পাওয়া গেলেও নিউ টেস্টামেন্টে প্রথম মানবী হিসেবে লিলিথ নেই। সেখানে লিলিথের নাম একবার মাত্র পাওয়া যায়, তাও অভিশপ্ত, পাপাত্মা হিসেবে। কোরআনেও লিলিথের জায়গা হয়নি। সেখানে প্রথম মানব-মানবী আদম-হাওয়া। কোরআনের মতে, আল্লাহ মাটি দিয়ে তাদের নিজ হাতে বানিয়েছেন। জেনেসিসের আদম-হবা, বাইবেলের অ্যাডাম-ইভ এবং কোরআনের আদম-হাওয়া মূলত একই ব্যক্তিত্ব। জেনেসিসে প্রথম মানব সৃষ্টির গল্পটি এরকম।

প্রভু ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টির পর সেখানে কোনো গাছপালা ছিল না। চাষাবাদ করার জন্য তখন কেউ ছিল না। তখন প্রভু ঈশ্বর মাটি থেকে ধুলো তুলে নিয়ে একজন মানুষ তৈরি করলেন এবং সেই মানুষের নাকে ফুঁ দিয়ে প্রাণবায়ু প্রবেশ করালেন এবং মানুষটি জীবন্ত হয়ে উঠল। এই প্রথম মানুষটির নাম আদম। তখন প্রভু ঈশ্বর পূর্বদিকে একটা বাগান বানালেন আর সেই বাগানের নাম দিলেন এদন এবং প্রভু ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টি করা মানুষটিকে সেই বাগানে রাখলেন। এবং সেই বাগানে তিনি সবরকমের বৃক্ষ এবং খাদ্যোপযোগী ফল দিয়ে এমন প্রতিটি বৃক্ষ রোপণ করলেন। বাগানের মাঝখানে রোপণ করেন জীবন বৃক্ষটি, যার মধ্যে ছিল ভাল ও মন্দের জ্ঞান।

এদন হতে একটি নদী প্রবাহিত হয়ে সেই বাগান জলসিক্ত করল। তারপর সেই নদী বিভক্ত হয়ে চারটি ছোট ছোট ধারায় পরিণত হল। প্রথম ধারাটির নাম পীশোন। এই নদী হবিলা দেশটি ঘিরে প্রবাহিত হল। দ্বিতীয় নদীটির নাম গীহোন, এই নদীটি সমস্ত কুশ দেশটিকে ঘিরে প্রবাহিত। তৃতীয় নদীটির নাম হিদ্দেকল। এই নদী অশূরিয়া দেশের পূর্বদিকে প্রবাহিত। চতুর্থ নদীর নাম ফরাত্‌। এরপর প্রভু ঈশ্বর মানুষটিকে আদেশ দিলেন, "বাগানের যে কোনও বৃক্ষের ফল তুমি খেতে পারো কিন্তু যে বৃক্ষ ভালো আর মন্দ বিষয়ে জ্ঞান দেয় সেই বৃক্ষের ফল কখনও খেও না। যদি তুমি সেই বৃক্ষের ফল খাও, তোমার মৃত্যু হবে!"(জেনেসিস ২/১৬-১৭)

তারপর ঈশ্বর বললেন, মানুষের নিঃসঙ্গ থাকা ভালো নয়। আমি ওকে সাহায্য করার জন্য ওর মত আর একটি মানুষ তৈরি করব। তখন প্রভু ঈশ্বর সেই মানুষটিকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে তার বাম পাঁজরের একটি হাঁড় বের করে নিলেন। সেই হাঁড় থেকে তৈরি করলেন একজন স্ত্রী। আদম তার নাম রাখলেন হবা। তারা উভয়ে ছিলেন উলঙ্গ। তাদের মধ্যে কোন লজ্জাবোধ ছিল না। প্রভু ঈশ্বর যত রকম বন্যপ্রাণী সৃষ্টি করেছিলেন, তাদের মধ্যে সাপ ছিল সবচেয়ে চালাক। সাপটি নারীকে জিজ্ঞেস করল, ঈশ্বর কি বাগানের কোন গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন? নারীটি বলল, বাগানের মাঝখানের বৃক্ষের ফল না খেতে বলেছেন। সাপটি বলল, ঈশ্বর জানেন যদি তোমরা ঐ গাছের ফল খাও তাহলে তোমাদের ভালো আর মন্দের জ্ঞান হবে। আর তোমরা তখন ঈশ্বরের মত হয়ে যাবে। সেই নারী ভাবল ঐ গাছের ফল তাকে জ্ঞান দেবে, তাই সে নিজে গাছ থেকে নিয়ে ফল খেল এবং তার স্বামীকেও এক টুকরো খেতে দিল। তখন তাদের লজ্জা উম্মুক্ত হয়ে গেল। আদেশ অমান্যতার কারণে প্রভু ঈশ্বর তাদেরকে বেহেস্ত থেকে বহিষ্কার করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন। তাদের থেকেই হল পৃথিবীতে মানবজাতির বংশ বিস্তার।

বিভিন্ন পৌরাণিক ও লোক কাহিনীতে আদমের নামটি পাওয়া যায়।। ইহুদী-খৃষ্টান-ইসলাম ধর্মে তাকে প্রথম সৃষ্ট মানব বলা হয়েছে। ইসলামে তার স্ত্রীর নাম হাওয়া। আদম-হাওয়া সৃষ্টির মূল গল্প এই তিন ধর্মে একই হলেও ইসলামে অতিরিক্ত কিছু যুক্ত হয়েছে। ইসলামে আদম রাসুল হিসেবেও স্বীকৃত। কোরআন বর্ণনা করে, আল্লাহ ফেরেস্তাদের জানালেন যে তিনি পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি নিয়োগ করবেন। ফেরেস্তারা বলল, "আপনি কি সেখানে এমন কাহাকেও সৃষ্টি করিবেন, যে অশান্তি ঘটাইবে ও রক্তপাত করিবে? আমরাই তো আপনার সপ্রশংস স্তুতিগান ও পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বলিলেন,'নিশ্চয় আমি যাহা জানি তাহা তোমরা জান না'।'' (বাকারা-৩০)

আল্লাহ ফেরেস্তা জিব্রাইলকে পৃথিবীতে পাঠালেন মাটি নিয়ে যেতে। পৃথিবী মাটি দিতে অস্বীকৃতি জানালে ফেরেস্তা ফিরে যান। অতপর আল্লাহ ফেরেস্তা আজারাইলকে পাঠালেন পৃথিবীতে। আজরাইল পৃথিবীর কোন কথায় কর্ণপাত না করে মাটি নিয়ে গেলেন। সেই মাটি থেকে আল্লাহ বেহেস্তের বাগানে আদমকে তৈরি করলেন। তারপর তিনি আদমের মুখে ফুঁ দিয়ে প্রাণ সঞ্চার করলেন। আদমের সঙ্গী হিসেবে তার বাম পাঁজরের হাঁড় থেকে সৃষ্টি করলেন হাওয়াকে। যেহেতু মানুষ সৃষ্টির সেরা, তাই আল্লহ ফেরেস্তাদের আদেশ করেন আদমকে সিজদা করার জন্য। ইবলিশ ব্যতীত সকল ফেরেস্তা এই আদেশ প্রতি পালন করেন। আল্লাহ বললেন,"আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কী তোমাকে নিবৃত্ত করিল যে, তুমি সিজদা করিলে না? ইবলিশ বলিল, আমি তাহার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; তুমি আমাকে অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করিয়াছ এবং তাহাকে কর্দম দ্বারা সৃষ্টি করিয়াছ।" (আ'রাফ-১২)

আদেশ অমান্যতার কারণে ইবলিশ হল অভিশপ্ত এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত। তাকে করা হল বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত। ইবলিশও প্রতিজ্ঞা করল কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত মানব জাতিকে ধোঁকা দিয়ে সরল পথ থেকে বিপথগামী করবে। অতপর আল্লাহ আদম ও হাওয়াকে বললেন, তোমরা বেহেস্তে বসবাস কর, যা ইচ্ছা আহার কর। কিন্তু এই বৃক্ষের (গন্ধম বা জ্ঞানবৃক্ষ) নিকটবর্তী হইও না। কিন্তু ইবলিশ শয়তানের কুমন্ত্রণায় হাওয়া গন্ধম ফল ভক্ষণ করল। পরে হাওয়া ছলনার আশ্রয় নিয়ে আদমকেও খাওয়াল। ফলে উভয়ের লজ্জাস্থান উম্মুক্ত হয়ে গেল। তাই আল্লাহ উভয়কে বেহেস্ত থেকে বহিষ্কার করলেন। তিনি বললেন,"তোমরা নামিয়া যাও, তোমরা একে অন্যের শত্রু এবং পৃথিবীতে কিছুকালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রহিল।" (আ'রাফ-২৪)
পৃথিবীতে আগমনের পর হাওয়ার গর্ভে ১৪০ জোড়া সন্তান হয়। তাদের থেকেই পৃথিবীতে মানুষের বংশবৃদ্ধি হয়। বাইবেলের পরিসংখ্যান মতে পৃথিবীতে আদমের আগমন আজ থেকে মাত্র ৬ হাজার বছর পূর্বে।

পৃথিবীতে আরও বিভিন্ন জাতির উপকথাতে মানুষ সৃষ্টির উপাখ্যান পাওয়া যায়। বেশির ভাগ উপাখ্যানের সারকথা একই। অধিকাংশ দেবতা ও সব ঈশ্বরের মানুষ সৃষ্টির সাধারণ কাঁচামাল মাটি। আদিপাপের কারণ হল একজন নারী, আর নারীকে প্ররোচিত করে সাপ বা শয়তান টাইপের কিছু চরিত্র। গিলগামেশে দেখা যায় এনকিদুকে নগ্ন সৃষ্টি করা হয়েছিল বনের মধ্যে, যেখানে বিভিন্ন প্রকার জীবজন্তু ছিল। তাকে সেখান থেকে রূপের যাদুতে ভুলিয়ে শহরে নিয়ে আসে শামহাত নামে একজন নারী, যে তাকে বীয়ার পান করিয়েছিল, কাপড় পড়িয়েছিল। এই গল্পের ছায়া দেখা যায় এদনের বাগানে সৃষ্ট আদম-হবা কাহিনীতে।
--------
সূত্র--
পৃথিবীর ইতিহাস- দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।রামকৃষ্ণ মৈত্র। বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রাঃ লি, কলকাতা।
The Epic of Gilgamesh-Translated by Andrew Gorge. Penguin Books Ltd. London,1999.
Mythology: Edith Hamilton (1942)
Mayan and Aztec Mythology-Michael A. Schumann
Pytheya- Lilith: আদমের প্রথমা স্ত্রী উপাখ্যান। (ইন্টারনেট থেকে)।
লিলিথঃ আদি-মাতা ও প্রথম বিদ্রোহি-(প্রবন্ধ) রোখসানা চৌধুরী
বাংলা বাইবেল (আদিপুস্তক)
Al- Quran (Arabic to Bengali)- Islamer Alo Publication .

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:


এক সময় মানুষের ধারণাশক্তি খুবই সীমিত ও দুর্বল ছিলো

২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২৮

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: আজকের যুগে সেই পার্থক্য তো স্পষ্ট।

২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:১৮

একাল-সেকাল বলেছেন:
সভ্যতা আর বাটপারি রেল লাইনের মত সমান্তরাল। কখনও মিলিত হলেও পরক্ষনেই আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৩১

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: আদিম যুগই ভাল ছিল, গ্রন্থ ছিল না, ঈশ্বর ছিল না, কিন্তু মানুষ ছিল।

৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৩

শের শায়রী বলেছেন: অসাধারন একটি পোষ্ট। অনেক দিন পর এক পোষ্টে অনেক কিছু তুলে আনা দেখলাম। অভিনন্দন।

একটি অনুরোধ, বেশ কিছু প্যারাগ্রাফের মাঝে কোন স্পেস নাই। দয়া করে প্রতি প্যারায় একটি স্পেস দিতেন তবে পড়তে আরো সুবিধা হত এবং দৃষ্টি নন্দন হত। যদি অনধিকার চর্চা মনে করেন তবে মার্জনা করবেন।

আপনার এই পোষ্ট আমার শের শায়রীর রহস্যের দুনিয়ায় স্বাগতম এই সংকলনে পাচ নাম্বারে যোগ করেছি। আশা রাখি আপনি আপত্তি করবেন না।

৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৩৪

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: প্যারা ঠিক করে দিয়েছি। আপত্তির কোন কারণ নেই। সাদরে অনুমতি দিলাম।

৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: এক লাইনে বলি বিগ ব্যাং এর পর এমিবা থেকেই বিবর্তন হতে হতে মানুষ হয়েছে।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:০০

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: রাজীব ভাই এখানে আমি বিজ্ঞানের প্রসঙ্গ ইচ্ছে করে আনিনি। লেখা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে বলে। আমি শুধু মানুষ সৃষ্টির গল্পটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রাণের উৎপত্তি, বিবর্তন নিয়ে আমার প্রবন্ধ লিখা আছে। কোন এক সময় পোষ্ট দেব।

৬| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:১২

কামরুননাহার কলি বলেছেন: আমি প্রথমতো বলবো- আপনার উপরের প্যারার গল্পগুলো পড়ে খুব হাসি পেয়েছিলো। দ্বিতীয়তো বলবো- আপনি কোরআনের বনর্না স্পর্শ ভাবে দেননি। আপনার ভুল আছে। আর ভুল লেখা লিখে মানুষকে ধোকা দিবেননা। কোরআন সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন, ভালো ভাবে পড়েন। কোরআন হলো সংয় আল্লাহর বানী। কারো গল্প কাহনী লেখা নয়। উপরে আপনি সেকালের অনেক গল্পকাহীনি লিখেছেন সেকালের কবি দার্শনিকদের। এগুলো সবটাই হলো সেকালের গল্প। তাই পড়তে ভালো লেখেছিলো মন্দ না। কিন্তু যখন শেষে এসে কোরআনের বানী পড়লাম তখন মনে হলে এগল্পের লেখন মনে হয় আপনি নিজেই। তবে মনে রাখবেন ইসলাম কোন গল্প বানায় না আর কোন গল্পকে বিশ্বাসও করে না।

কোথায় পেয়েছেন আপনি হাওয়া (আঃ) কে সাপ এসে কুমন্ত্রণা দিয়েছে? বাইবেলে? ওটা যদি হয় তবে ভুল। কারণ বাইবেল একটা ভুল গ্রন্থ। কোথায় পেয়েছেন হাওয়া (আঃ) কে একা শয়তান এসে কুমন্ত্রণা দিয়েছে আর একা সে গাছের নিকট গিয়েছে তারপর সে ফল এনে আদম (আঃ) খাওয়েছে? কোথায় পেয়েছেন আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) নগ্ন ছিলেন। যদি পেয়েই থাকেন কোরআন ছাড়া অন্য কোন গল্প বইতে তবে সেগুলো তো সে কালের গল্প। সেগুলো তো আর সংয় আল্লাহ বলেনি। আপনি কোরআন থেকে আদম ও হাওয়া (আঃ) সম্পর্কে যে বনর্না দিয়েছেন সেগুলো ভুল একটিও হয়নি। ওগুলো আপনার বানানো গল্প। কোরআনে নেই, কোরআন ভালোভাবে দেখে নেন। সুরা আরাফ, সুরা নং ৭, আয়াত নং ১৯ থেকে ২৭ আয়াত পর্যন্ত। এই আয়াত গুলো পড়ে নেন এখানে সুন্দর ভাবে বনর্ন দেওয়া আছে মশাই। আর যদি কষ্ট হয় পড়তে তাহলে আমি লিখে দিবোনে। বলবেন সেটা কমেন্ট।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪৮

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: রেফারেন্স দেয়ার পরও যদি বলেন কোথায় পেয়েছেন ? মনে হয় আপনি রেফারেন্সগুলো দেখেননি। আপনি প্রধান প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলো পড়েন, পৌরাণিক আখ্যানগুলো পড়েন, পৃথিবীর ইতিহাস পড়েন, লুপ্ত সভ্যতার ইতিহাস পড়েন। তারপর আপনার ধারণা পরিষ্কার হয়ে যাবে। অন্যথায় এরকম এলোমেলো কথা বলতে থাকবেন।

৭| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৩

একাল-সেকাল বলেছেন:
আমাদের স্বল্প জ্ঞানের সুযোগ নেয় একদল ধরিবাজ প্রাণী, যারা মানুষের মত দেখতে ।

মাওলানা তারেক মনোয়ার বলেছেন, "আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছি তিন তিনবার, কাউকে বলিনাই, এমনকি আমার পরিবারও জানেনা।" উপস্থিত শ্রোতারা সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ বলতে বলতে গলা শুকিয়ে ফেলছে। অথচ, কথাটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

রাসুল (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়, 'পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।' (সুরা আলাক : ১)

২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২৩

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: জ্ঞানচর্চা মানে পক্ষপাতিত্ব নয়, যুক্তির মাধ্যমে সত্যের অন্বেষণ করা।

৮| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০২

কামরুননাহার কলি বলেছেন: রেফারেন্স হাহাহাহা এই ইন্টারনেট আর সেকালের কিছু মানুষের গল্প সেগুলো আমি কি করে বিশ্বাস করি? আর আমি কেনো পৃথীবির কোন সত্যিকার মানুষই বিশ্বাস করে না আপনার এই বই, আপনার এই ইন্টারনেট রেফারেন্স, বিজ্ঞান কথা। সংয় এই ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মই তো বিশ্বাস করে না। যে ঈশ্বর এক, তার কোন শরিক নেই, তার কোন প্রতিমূর্তি নেই, তার কোন প্রতিচ্ছবি নেই, তিনি মহান, তিনি পবিত্র, তিনি পৃথীবিতে প্রধান চারটি কিতাব পাঠিয়েছেন নিজের বানী দিয়ে চার জন রাসূলের মাধ্যমে। আগের তিনটি মানুষ বিকৃত করে ফেলেছে সেই জন্য সেগুলো তিনি বাধ দিয়েছেন। আর সেই জন্যই তিনি শেষ নবী পাঠিয়েছেন আর তার উপর নাজিল করেছেন শেষ কিতাব পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআন। এই কিতাবেই তিনি অতীত, ভবিষৎ, বর্তমান সকল দিক নিদের্শন, সকল বিধান দিয়ে দিয়েছেন। এই কিতাব শুধু মুসলিমরাই বিশ্বাস করে না সকল ধর্মের সকল জ্ঞানীরা এই কোরআন বিশ্বাস করে। শুধু আপনাদের মতো মূর্খ্য লোকেরা এ কিতাবকে অবিশ্বাস করে। আপনার রেফারেন্সের মতো হাজার হাজার গ্রন্থ হাজার হাজার মানুষ নিজেদেরকে দেবতা রুপে পৃথীবিতে তৈরি করেছে কিন্তু তারা কেউ টিকে নেই সবাই আল্লাহ কাছেই ফিরে গেছে। তাদের দাপট চুর্ণ হয়ে গেছে পৃথীবির কাছে। তাই অবিশ্বাসীদের কাছে আমাদের বলার কিছুই নেই। বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করে একটি কিতাব, একজন মালিক, আর একদিন কিয়ামত হবে সেটাই আর কিছু না।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২৪

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: আপনি হয়ত জানেন না বিশ্বাস কোন জ্ঞান নয়, একটি ধারণা মাত্র। বিশ্বাস দিয়ে কোনোকিছু বিচার করা যায়না। বিশ্বাস প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিষয়। আল্লাহ্‌ বিশ্বাসীদের প্রতি যেমন সদয়, তেমনি অবিশ্বাসী ও বিধর্মীদের প্রতিও সদয়। না হলে পৃথিবীতে শুধু মুসলমান থাকত, অন্য কেউ থাকত না। আপনি হয়ত জানেন না, আল্লাহ্‌ আমার মনের কথা বুঝতে পারে, আপনার সেই ক্ষমতা নেই। আমি কে, কি জিনিস আপনার বুঝার ক্ষমতা নেই। ধর্ম নিয়ে আরও পড়াশুনা করেন। কাজে আসবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.