নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তচিন্তার মানুষ দারাশিকোহ

২৮ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৮


দারাশিকোহ ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র । তিনি ছিলেন না রাজনীতিবিদ ও সৈনিক । মূলত তিনি ছিলেন একজন বুদ্ধিজীবী । পিতার প্রিয়ভাজন ছিলেন বিধায় সম্রাট তাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করে রেখেছিলেন । তিনি সুফি ঐতিহ্য অনুসারে শিক্ষালাভ করেন এবং পিতামহ আকবরের মতো ভিন্ন ধর্মের প্রতি ছিল তাঁর আগ্রহ । ইবনে আরাবির সর্বেশ্বরবাদ তাকে হিন্দু ধর্মের কাছে নিয়ে এসেছিল। তিনি হিন্দু ধর্ম ও ইসলাম ধর্মের মধ্যে একটি সংযোগ সেতু তৈরির পথ খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন । তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন এই সংযোগটি খুঁজে পাওয়া যেতে পারে উপনিষদগুলোর দর্শনের ভেতর । “ঐশ্বরিক গুপ্ত তথ্য ফাঁসের সবচেয়ে সঠিক পুস্তক”- উপনিষদ পাঠ করে এমনটি ছিল তাঁর অভিমত । তিনি ছিলেন মরমি ও মুক্তচিন্তার মানুষ ।

দারাশিকোহ পারস্যের রহস্যবাদী সরমাদ কাশানির অনুসারী ছিলেন, পাশাপাশি লাহোরের বিখ্যাত কাদিরী সুফি সাধক হযরত মিয়া মীর, এবং মোল্লা শাহ বাদখশির (মিয়া মীরের আধ্যাত্মিক শিষ্য এবং উত্তরসূরী) সাথেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক ছিল। মিয়া মীরকে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে এতটাই শ্রদ্ধা করা হয়েছিল যে শিখদের অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

দারাশিকোহ পরবর্তীকালে সপ্তম শিখগুরু, গুরুহর রাইয়ের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। তিনি ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে একটি সাধারণ রহস্যময় ভাষা সন্ধানের জন্য প্রচুর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। এই লক্ষ্যে তিনি ১৬৫৭ সালে একজন সংস্কৃত পণ্ডিতের সহায়তায় উপনিষদকে মূল সংস্কৃত থেকে ফার্সিতে অনুবাদ করেন যাতে এগুলো মুসলিম পণ্ডিতদের দ্বারা অধ্যয়ন করা যায়। তাঁর অনুবাদকে ’সির-এ-আকবর’ (দ্য গ্রেটেস্ট রহস্য) বলা হয়। তাঁর সর্বাধিক বিখ্যাত রচনা, ’মাজমা-উল-বাহরাইন’ (দুই মহাসাগরের মিশ্রণ ) গ্রন্থে তিনি সুফিবাদ ও বেদাত্মক ভাবনার মধ্যে রহস্যময় ও বহুমাত্রিক সর্ম্পক নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। বইটি ফারসি ভাষায় পুস্তিকা আকারে ১৬৫৪-৫৫ সালে রচিত হয়েছিল।

এনকেটিল দ্যুপেরো নামে একজন ফরাসি পর্যটক ও প্রাচ্যবিশারদ দারাশিকোহর উপনিষদের অনুবাদটির একটি ল্যাটিন অনুবাদ করেছিলেন ।এটি ১৮০১-২ খৃষ্টাব্দে দুই খন্ডে প্রকাশিত হয়েছিল । ইউরোপে এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন দুইজন ব্যক্তিত্ব ; নিৎসে ও এমারসন ।

উলেমা ও মোল্লাদের প্রতি তাঁর ছিল বিদ্বেষপ্রসূত মনোভাব। তিনি নীরবতা ভালোবাসতেন । মোল্লাদের বাচালতাকে ব্যঙ্গ করে তিনি একটি কবিতায় লিখেছিলেন-

“বেহেস্তে কোন মোল্লা নেই- বলে
কেউ কখনো তাদের তর্ক আর বচসার হইচই শোনে না ….. ।”

দারাশিকোহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারটি এখনও দিল্লির কাশ্মীরি গেটে অবস্থিত গুরু গোবিন্দ সিং ইন্দ্রপ্রস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান আছে। এটি সংস্কারের পরে বর্তমানে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ কর্তৃক জাদুঘর হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি চারুকলা, সংগীত ও নৃত্যের পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। ১৬৩০ এর দশক থেকে মৃত্যুর র্পূব পর্যন্ত তিনি অনেকগুলো চিত্রকর্ম এবং ক্যালিগ্রাফি সংগ্রহ করেছিলেন। এগুলো তাঁর স্ত্রী নাদিরা বানুর কাছে সংরক্ষিত ছিল। নাদিরা বানুর মৃত্যুর পরে অ্যালবামটি রাজকীয় গ্রন্থাগারে নেওয়া হয় এবং আওরঙ্গজেবের শাসনকালে এসব চিত্রকর্মের অনেকগুলো ধ্বংস করা হয়।

দারাশিকোহ সুফিবাদ ও আউলিয়াগণের জীবন নিয়ে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। সেগুলো হলো-

১। সাফিনাত উল আওলিয়া
২। সাকিনাত উল আওলিয়া
৩। রিসালা-ই হক নুমা
৪। তরিকত উল-হকিকাত
৫। হাসানাত উল আরিফিন
৬। ইকসির-ই 'আজম (দিওয়ান-ই-দারাশিকোহ)

তাঁর দার্শনিক এবং রূপকর্ধমী রচনা হলো-

১। মাজমা-উল-বাহরাইন (দুটি মহাসাগরের মিশ্রণ)
২। সোয়াল ও জওয়াব বাইন-ই-লাআল দাস্ ওয়া দারাশিকোহ (যাকে মুকালামা-ই বাবা লাআল দাস্ ওয়া দারাশিকোহও বলা হয়)।
৩। সির-ই-আকবর (‘দ্য গ্রেট সিক্রেট’, ফারসি ভাষায় উপনিষদ অনুবাদ)।
৪। যোগ বশিষ্ঠ এবং ভগবৎ গীতার ফার্সি অনুবাদ।

সিংহাসনের উত্তরাধিকার ষড়যন্ত্রে দারাশিকো কারাবন্দী হয়েছিলেন এবং ছোটভাই আওরঙ্গজেব তাঁর প্রাণবদ করেন। আওরঙ্গজেব বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন এই বলে যে, দারাশিকো প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন ।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫২

এইচ তালুকদার বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন,তবে সত্যি বলতে দারা কখনোই সিঙ্গহাসনের উপযুক্ত ছিলেন না।পিতা শাহজাহানের অন্ধ সমর্থন সত্ত্বেও সেনাবাহিনী বা রাজনৈতিক পরিমন্ডলে নিজের অবস্থান সুসংহত করতে পারেন নি ফলে রাজপুতদের সর্বাঙ্গীন সহযোগীতা সত্তেও উত্তরাধিকারের যুদ্ধে শোচনীয় ভাবে হেরে যান ।উনার ভাই আওরংজেব যখন উযবেকদের পিটিয়ে সিধা বানিয়ে ফেলছেন তখন উনি দর্শন চর্চায় ব্যাস্ত,অন্য ভাই মুরাদ যখন কান্দাহার দখলে নিচ্ছেন উনি তখন আওরঙ্গজেব কে দক্ষিনে বদলি করতে বাপের কান ভারি করছেন এগুলো তো তাকে একজন একজন ঈর্ষাকাতর ব্যার্থ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠীত করছে কোন বুদ্ধিজিবী না।আর বুদ্ধিজিবী হিসেবে যে সব কাজের কথা বললেন সেগুলোও তো উনি শেষ করতে পারেন নি বা করেন নি।

২| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০১

এইচ তালুকদার বলেছেন: দয়া করে,শেষ লাইনটি এক্সপাঞ্চ করবেন।

২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:১৯

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: করে দিলাম।

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:২৫

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: পড়লাম।

২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:০৪

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: নতুন ইতিহাস জানলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।

২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:০৬

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: শুভ কামনা

৫| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২৬

এইচ তালুকদার বলেছেন: দুঃখিত ভাই,আমি আমার মন্তব্যের শেষ লাইনটির কথা বলেছি আপনার পোষ্ট এর নয়,আপনার পোষ্ট টি যথেষ্ঠ তথ্যবহুল।পোষ্টে আগেই লাইক দিয়েছি

৬| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৪৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার ও উপভোগ্য আলোচনা ।

২৯ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:২৯

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ।

৭| ২৯ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৩:০৮

শের শায়রী বলেছেন: দারাশিকোকে নিয়ে খুব বেশী জানা ছিল না, আপনার পোষ্ট টা পড়ে জানার আগ্রহ বাড়ল। পোষ্টে প্লাস +++

২৯ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:৩১

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: আসলে তিনি কম আলোচিত।

৮| ২৯ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:২৫

মলাসইলমুইনা বলেছেন: দারাশিকো সম্পর্কে বেশ কিছু জিনিস জানলাম । উনি কবি ও সুফিবাদী ছিলেন জানতাম । তার এতগুলো বই লেখা সম্পর্কে কিছু জানতাম না । তার বইগুলোর ওপর সময় করে ব্লগে কিছু লিখুন কখনো ।

০১ লা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৩

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: আপনার পরামর্শ নিলাম। চেষ্টা করব লিখতে।

৯| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৭

শিকারি মুসাফির বলেছেন: উপভোগ্য ইতিহাস । ইতিহাসে প্রচন্ড্র মজা পেয়েছি সাজ্জাদ কাদের সাহেবের "হারেমের জীবন, জীবন ও যৌনতা পড়ার মাধ্যমে ।

প্রকৃত ইতিহাসের কয়েকটা সুত্র সম্ভব হলে একটু দিয়েন , আমি জানতা চাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.