নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের খোঁজে

There is but one moment when the Goddess of Fortune wafts by, and if you don’t grab her by the hem, you won’t get a second chance.

আছিফুর রহমান

নিজেকে উগ্র জাতীয়তাবাদী বলতে পছন্দ করি।

আছিফুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেমব্রেন্টঃ সৌন্দর্যের চুড়ান্ত বহিপ্রকাশ যেখানে তৈলচিত্রে

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪০

আধুনিক চিত্রকলার এক প্রবাদ পুরুষ হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়। তৈলচিত্রের মাঝেও যে বাধন ছাড়া সৌন্দর্য থাকতে পারে। থাকতে পারে আবেগের চুড়ান্ত বহিপ্রকাশ তা প্রথম নিয়ে এসেছিলেন ডাচ চিত্রশিল্পী রেমব্রেন্ট। তারই কিছু অসাধারন মাস্টারপিছ নিয়ে এই ব্লগ।



০১. ইউরোপার অপহরন

ইউরোপার অপহরন গ্রীক মিথের অন্যতম একটা বিষয়। দেবরাজ জিউসের দুই স্ত্রী থাকলেও সে খুব বেশি ভাল ছিল না। সে মর্ত্যের সুন্দরীদের সাথে প্রেম করতো এবং প্রেমের পর তাকে ছুড়ে ফেলে দিতো। তার স্ত্রী হেরা সবসময় জিউসকে নজরে রাখতো। কিন্তু তারপরও হেরাকে জিউস ঠিকই ফাঁকি দিত। এক সকালে দেবরাজ জিউস সিংহাসনে বসলে সে দেখতো পায় মাইসিনের রাজকন্যা ইউরোপাকে। এবং তখনই জিউস তার প্রেমে পড়ে যায়। এবং স্বর্ন শিং যুক্ত ষাঁড় হয়ে সে ইউরোপাকে অপহরন করে। এবং তাকে জিব্রাটাল নিয়ে যায় এবং তার সাথে মিলিত হয়। ইউরোপার গর্ভে যে সন্তান আসে সেই বংশেরই কন্যা ট্রয় যুদ্ধের নায়িকা হেলেন।

ইউরোপার সেই অপহরন দৃশ্য তুলির আচড়ে একেছেন ডাচ চিত্র শিল্পী রেমবারেন্ট ভন রেজ। তৈলচিত্রটা আকাঁ হয়েছে ১৬৩২ সালে। তৈলচিত্রটা বর্তমানে আমেরিকার লস এঞ্জেলস শহরের জ্যা পল গ্যেটে মিউজিয়ামে রাখা আছে।



০২. দ্য ক্রাইস্ট ইন দ্য স্ট্রম অব দ্য সি গ্যালিলিও

শিষ্যদের মাঝে যিশু খ্রিস্টের অলৌকিকতা প্রথম প্রকাশ পায় গ্যালিলিও সাগরের ঝড়ে পড়া নৌকা উদ্ধার করার মাধ্যমে। গ্যালিলিও সাগরের সেই ঝড়ের কবলে পড়া সেই নৌকায় ছিল যিশু খ্রিস্টের অন্যতম শিষ্য পিতর। এই ঘটনার উল্লেখ আছে নিউ টেস্টামেন্টের গসপেল অব মার্কের চতুর্থ অধ্যায়ে। ডাচ চিত্র শিল্পী রেমবারেন্ট ভন রেজ শুধু সাগরকেই ঢেউকে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে ব্যবহার করে নৌকার চৌদ্দজন আরোহিকে মাঝে যিশু খ্রিষ্টসহ ১৩ জন আরোহিকে তুলির আচঁড়ে একেছেন। অমূল্য এই চিত্রকর্ম ১৯৯০ সালের ১৮ মার্চ আরো ১৪টি চিত্রকর্মসহ আমেরিকার বোস্টন শহরের ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়াম থেকে চুরি হয়। আমেরিকার ইতিহাসে এটা সবচেয়ে বৃহৎ শিল্পকর্ম চুরি। এই চুরির পর চিত্রকর্মটার আজ অবধি আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।



০৩ এ আর্টিস্ট ইন এ স্টুডিও

একজন চিত্রশিল্পী সব সময় মানুষের কাছে রহস্যজনক। সবাই তাকে চিনে কিন্তু তার ভিতরের খবরটা জানে না। তার কর্মক্ষেত্রটা সম্পর্কে জানে না। ডাচ চিত্র শিল্পী রেমবারেন্ট ভন রেজ তার তুলিতে তুলে এনেছেন একজন চিত্রশিল্পীর কর্মক্ষেত্র। তেলচিত্রটি বর্তমানে ব্যক্তিগত সংগ্রহ সালায় আছে।



০৪. পার্সিপোনার অপহরন

গ্রীক পুরানের শষ্যদেবী ডায়নার মেয়ে পার্সিফোনা। অপরুপ এই সুন্দরীকে দেখে প্রেমে পরে জান মৃত্যুর দেবতা হেডিস। জিউসের ভাই হেডিস পার্সিফোনাকে মর্ত্য থেকে অপহরন করে নিয়ে যান পাতালে। এদিকে শষ্য দেবী ডায়না নিজের মেয়েকে হারিয়ে উন্মাদ হয়ে পৃথিবীর শষ্য দেয়ার ক্ষমতা নষ্ট করে দেন। পৃথিবীতে হাহাকার পরে গেলে দেবরাজ জিউসের কানে যায় ব্যাপারটা। সে এর ফয়সালা করে দেন। বছরের ছয় মাস পাতালে হেডিসের কাছে থাকবে পার্সিফোনা আর বাকি ছয় মাস মা ডায়নার কাছে। ডায়না রাজি হলেও পৃথিবীকে শষ্য দিতে অস্বিকার করেন যেই ছয় মাস পার্সিফোনা পাতালে থাকবে। দেবতাদের বিচারে্ তাই নির্ধারিত হয়।

গল্পগুলো আজগুবি মনে হলেও এর মাঝে লুকিয়ে আছে অন্যরকম এক গল্প। এখনও ইউরোপে শীতের সময় কোন ফসল হয় না। প্রচন্ড ঠান্ডার কারনে বরফে ঢেকে যায় মাঠের পর মাঠ। যখন গ্রীষ্ম আসে তখন ইউরোপ আবার জেগে উঠে ফসলে ফসলে। তাই এইগুলো শুধু গল্প না, গল্পের চেয়েও বেশি কিছু।

ডাচ গোল্ডেন এজ যুগের শিল্পী রেমবারেন্ট ভন রেজ পাতালের দেবতা হেডিস আর পার্সীফোনাকে তুলির আচড়ে একেছেন। ১৬৩১ সালে আকাঁ এই তৈলচিত্র বর্তমানে জার্মানির বার্লিন মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।



০৫. আব্রাহামের উৎসর্গ

হিব্রু পুরান অনুসারে আব্রাহাম ছিলেন সৃষ্টিকর্তার এক প্রিয় বান্দা। সে ছিল তার সৃষ্টিকর্তার এক অনুপম ভক্ত। সে তার জীবনের শেষ বয়সে পিতা হয়েছিল। সৃষ্টিকর্তা আব্রাহাম তার প্রতি কতটা অনুগত তার একটা পরীক্ষা নিতে চাইলেন। বাইবেল অনুসারে তার বড় ছেলে ইসাককে সৃষ্টিকর্তা তার উদ্দেশ্যে কোরবানী করতে বললেন। আব্রাহাম তার সৃষ্টিকর্তার আদেশ অনুসারে ইসাককে নিয়ে গেলেন কোরবানী করতে। তার বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট সৃষ্টিকর্তা আব্রাহামের ব্যাপারে খুসি হলেন। ওদিকে আব্রাহাম তার ছেলে ইসাক কে কোরবানী করার আগ মূহূর্তে দেবদুতরা আব্রাহামকে ইসাকতে কোরবানীর হাত থেকে রক্ষা করে।

ডাচ গোল্ডেন এজ যুগের শিল্পী রেমবারেন্ট ভন রেজ আব্রাহামকে দেবদূতের খবর পৌছে দেয়ার সময়টি তুলির আচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ১৬৩৫ সালে আঁকা এই তৈলচিত্রটি বর্তমানে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে সংরক্ষিত আছে।



০৬. স্টোন ব্রিজ

পাথরের একটা ব্রিজকে কেন্দ্র করে অসাধারন এই তৈল চিত্রটি একেছেন ডাচ গোল্ডেন এজ যুগের শিল্পী রেমবারেন্ট ভন রেজ। ১৬৩৫ সালে আকাঁ এই তৈলচিত্রটি বর্তমানে আমর্স্টাডাম মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।



০৭. দ্য হলি ফ্যামেলি

খ্রিস্টান চিত্রশিল্পীরা হলি ফ্যামেলি নিয়ে অন্তত কয়েক হাজার চিত্রকর্ম একেছে। এখানে হলি ফ্যামেলি বলতে যিশু খ্রিষ্ট, মাতা মেরী সব সময় উপস্থিত থেকেছে। তৃতীয় জনের ব্যাপারে অনেক শিল্পী পবিত্র আত্মাকে দেখিয়েছেন, কেউবা শুধু মাতা মেরী আর যিশু খ্রিস্টকেই হলি ফ্যামেলি চিত্রকর্মে বেশি দেখিয়েছেন।

ডাচ চিত্র শিল্পী রেমবারেন্ট ভন রেজ ১৭৩৪ সালে হলি ফ্যামেলি নামক এই চিত্রকর্মটি একেছেন। এখানে তিনি যিশু খ্রিস্ট, মাতা মেরী ও যোসেফকে একেছেন। যোসেফ ছিলেন যিমুর বাবা, মতান্তরে মেরীর ফুফাত ভাই। চিত্রকর্মটি বর্তমানে মিউনিখের মিউজিয়ামে রাখা আছে।



০৮. ফ্লোরা

নারীর সৌন্দর্য নিয়ে এই পর্যন্ত যত চিত্রকর্ম হয়েছে, এবং হচ্ছে। তার তুলনায় ছেলেদের নিয়ে শিল্প কর্ম হাতে গোনা।তুলির আচড়ে শিল্পীরা সবসময় মেয়েদের সৌন্দর্যই সবচেয়ে বেশি ফুটিয়ে তুলে। ডাচ চিত্র শিল্পী রেমবারেন্ট ভন রেজ তার ফ্লোরা চিত্রকর্মে সেই মেয়েদের সৌন্দর্যই ফুটিয়ে তুলেছেন। ১৬৩৪ সালে আকা এই তৈলচিত্রটি বর্তমানে রাশিয়ার সেন্ট পির্টাসবার্গের র্হামিট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।



০৯. এ ইয়াং ওম্যান এট হার টয়লেট



১০. এ পোলিশ রাইডার

ডাচ চিত্র শিল্পী রেমবারেন্ট ভন রেজএর পোলিশ রাইডার এক বিখ্যাত তৈলচিত্র। ১৬৫৫ সালে আকাঁ এই তৈলচিত্রে এক পোলিশ তরুনের অবয়ব ফুটে উঠেছে। যে পূর্ন সাজসজ্জা নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চরে বিস্তির্ন ভূমি পার হচ্ছে। পেইন্টিংটি বর্তমানে নিউ ইয়র্ক এর ফার্ক পরিবারের কাছে আছে। ১৯১০ সালে এই চিত্রকর্মটি এই পরিবার কিনে নেয়।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:৫৩

শব্দহীন জোছনা বলেছেন:
কি জানি কেন, শেষের টাই সবচেয়ে ভালো লাগল।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্টের জন্য।

++







০১ লা জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:২৮

আছিফুর রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। লিখতে তো ভালই লাগে আর এই নিয়ে আরো লিখতে চাই। কিন্তু পড়ার মানুষ তো নাই।

২| ১৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:২৯

শব্দহীন জোছনা বলেছেন:
লিখতে থাকুন মনের আনন্দে ,আশা করি পাঠকের অভাব হবে না।

১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:০০

আছিফুর রহমান বলেছেন: রেমব্যান্টের একটা পেইন্টিং আপনার প্রোফাইলে।

৩| ২১ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯

শব্দহীন জোছনা বলেছেন: হায় ! হায়! ধরা খাইয়া গেসি


:#> :#>

:-&

২১ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৯

আছিফুর রহমান বলেছেন: হে হে হে হে

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:১৮

এরিস বলেছেন: দ্য ক্রাইস্ট ইন দ্য স্ট্রম অব দ্য সি গ্যালিলিও সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। সবগুলো ছবিই মনোমুগ্ধকর।
চিত্রশিল্পের প্রতি আমার একটু আগ্রহ আছে, তবে আলসেমির জন্যে জানার জায়গায় অনেক গ্যাপ রয়েছে। আপনাকে অনুসরণ করলাম। এরকম আরও ছবি পোস্ট দেবেন। জানতে চাই।
প্লাস দিয়ে গেলাম। শুভকামনা।

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬

আছিফুর রহমান বলেছেন: আপনার উৎসাহ আমার লেখার ইচ্ছাকে আরো বাড়িয়ে দিল। আরো আসবে। তবে একটু অপেক্ষা করতে হবে।

৫| ২১ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৫০

মাহতাব সমুদ্র বলেছেন: দারুন পোস্ট!!! ভালো লাগলো

২১ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০০

আছিফুর রহমান বলেছেন: আপনাদের ভাল লাগাতেই আমার ভাল লাগা। ব্লগ বাড়িতে নিয়োমিত আসার জন্য আমন্ত্রন রইলো।

৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৪

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। অসাধারণ সব ছবির দারুণ একটা সংগ্রহ। ভালো লাগা রইল।



চার নাম্বার ছবির বর্ণনার ব্যাপারে একটু বলার ছিল, গ্রীক মিথ অনুযায়ী পার্সিফোনের মাতা এবং কৃষি ও শস্যদেবী হলেন দিমিতির। আর শিকারের দেবী আর্টেমিসের ল্যাটিন নাম হল ডায়ানা। ব্যাপারটা একটু দেখে নেবেন আশা করি।

শুভকামনা :)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৬

আছিফুর রহমান বলেছেন: আপনি সঠিক, আপনাকেও শুভ কামনা রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.