নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

“মার্কিন আগ্রাসনোত্তর ইরাকঃ প্রকৃত যুদ্ধ এখনো সম্মুখে – ডঃ এজাজ আহমেদ”

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:১৪

( এটা আমার অত্যন্ত পরিশ্রম সাধ্য একটি অনুবাদকর্ম। ডঃ এজাজ আহমেদ ভারতীয় উপমহাদেশের একজন উল্লেখযোগ্য মার্ক্সিস্ট থিয়োরিস্ট এবং এডওয়ার্ড সাইদের কট্টর সমালোচকদের একজন। তার "ইন থিওরি" বইটি সাউথ এশিয়ান পলিটিক্যাল সাইন্স ফিল্ডে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

অবাক লেগেছে ২০০৩ এর প্রেক্ষিতে লেখা এই প্রবন্ধে ডঃ এজাজ কিভাবে এত নিখুঁত ভাবে ইরাক তথা মধ্যেপ্রাচ্যের রাজনীতির বিধ্বংসী পট পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিরুপন করতে পারলেন।)

ইরাক যুদ্ধ শেষ হয় নি, এমনকি প্রকৃত অর্থে যুদ্ধ এখনও শুরুই হয় নি। ইরাকের বর্তমান সরকার দখলদারদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে সাধারণ ইরাকি জনগণের। এ প্রতিরোধ চলবে আরও দীর্ঘদিন।

উম্মাকসার কুয়েত সীমানার কাছাকাছি কয়েকহাজার জনসংখ্যার একটি ছোট শহর, যেখান দিয়ে শক্তিশালী অ্যাঙ্গলো অ্যামেরিকান বাহিনী ইরাকে প্রবেশ করে। এটাই তাদের উদ্ধত করাল থাবার নিচে পড়া প্রথম শহর, কিন্তু শহরের বাসিন্দারা বিনা প্রতিরোধে তাদের প্রিয় শহরকে দখলদারদের হাতে তুলে দেয় নি। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে তারা রুখে রাখতে সক্ষম হয় আগ্রাসন। এই সময়ে ইরাকী সেনাবাহিনী ফাও পেনিনসুলা অঞ্চলে রুখে দাঁড়ায় শত্রুপক্ষের ভারী গোলাবারুদ এবং আকাশ পথে আক্রমণের বিরুদ্ধে, যদিও তাদের বিমানহামলা ফেরানোর মত কোন প্রযুক্তি ছিল না। স্বল্প সময়ের মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে আন নাসিরিয়া, বসরা, কারবালা , আন নাজাফ সহ ছোটবড় আরও অনেক শহরে, যদিও কোন শহরেরই পতন হয় নি। কুর্দিদের শাসনাধীন উত্তরাঞ্চলের দৃশ্যপটও ছিল একইরকম। বিগত ১০ বছর যাবত ইরাক সরকারের বিরুদ্ধে অ্যাঙ্গলো অ্যামেরিকানদের সহায়তাই তাদের সাহায্য করে তাদের পূর্ববর্তি রক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। কিরকুক বা মসুল- কোন শহরই হাতছাড়া হয় নি তাদের এই সময়ে।
.
দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলির প্রতিরোধ ব্যাবস্থা ভেঙ্গে ঢুকতে দখলদারবাহিনীর প্রয়োজন ছিল প্রচুর পরিমাণ সৈন্য আর আরও অধিক সংখ্যক ভারী অস্ত্রশস্ত্র। তারমানে, মরুভূমি ডিঙিয়ে বাগদাদের দিকে ছুটতে থাকা সৈন্যেরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল ক্রমশ। যুদ্ধ বিশারদেরা মনে করেন, দুই সপ্তাহের যুদ্ধ এবং শত মাইলের পথ পাড়ি দেয়া ক্লান্ত শ্রান্ত সৈন্যদের পক্ষে বাগদাদের পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব ছিল না। তার জন্যে দরকার ছিল আরও এক মিলিয়ন সৈন্য এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্রের যোগান এবং কমপক্ষে তিন সপ্তাহের প্রস্তুতির। কেননা সাদ্দাম হোসেনের দুর্গ বাগদাদ তখনও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। বাগদাদের বিমানবাহিনী, গোলাবারুদ এবং শক্তিশালী রিপাবলিকান গার্ড ‘ফিদায়িন এ সাদ্দাম’ তখনও ব্যাবহারই করেন নি তিনি। ড্রেসডেনের মত অথবা তারও অধিক শক্তিশালী বোমা বর্ষণ ছাড়া বহুযুদ্ধের পরীক্ষিত নগরী বাগদাদের পতন ছিল অসম্ভব।

শুরুতে দখলদার বাহিনীর বিরতিহীন আক্রমনে ধার ছিল না। এমনকি ছোট ছোট শহরগুলোতেও তারা প্রতিরোধের মুখে পড়ে থাকে দিনের পর দিন। অ্যামেরিকান সৈন্যবাহিনী শুধুই সামনে এগোতে থাকে ধীরে ধীরে, তাদের ট্যাঙ্কগুলোকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়, তাদের সাথে এসে আরও সৈন্য যুক্ত হয়, তারা খণ্ড খণ্ড করে ইরাক দখলে আনতে থাকে। কিন্তু বাগদাদ থেকে কোন প্রতিউত্তর দেয়া হয় না। পরবর্তীতে, বেসামরিক নগর ও নগরবাসীদের ওপর অ্যামেরিকান মিত্র বাহিনীরা নিজেদের বিজয় উদযাপনে বুঁদ হয়ে পড়ে। ইতিহাস হাতড়ে দেখলে এর তুলনা মেলে কেবল তের শতকের মঙ্গলদের আক্রমনের। বাগদাদের পতনের পর বেসামরিক মানুষের হত্যা, সম্পত্তি দখল থেকে নিয়ে লাইব্রেরী পোড়ানো- এমন কিছু ঘৃণ্য কাজ তারা করে- যা বর্বর মঙ্গলরাও করতে সাহস পায় নি।

যাই হোক, মুল কথা হচ্ছে উম্মাকসর, কারবালা অথবা আন নাজাফের মত পীর আউলিয়ার দরগা ও মাজারে বেষ্টিত ও পূর্ণ শহরগুলো যেখানে দুই সপ্তাহ ধরে দুর্দান্ত অ্যামেরিকান সৈন্যবাহিনীকে আটকে রাখল, বাগদাদের পতন হল মাত্র ৩ দিনে, প্রায় কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়াই। কারণ হিসেবে অবশ্য বলা হয় যে বাগদাদ আক্রমনের সুচনার রাত্রিতেই এমন ভারী অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদের ব্যাবহার ও আকাশপথে হামলা হয় যে বাগদাদের পক্ষে স্বল্পতম সময়ে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।

সত্য হচ্ছে, বাথ পার্টির সাথে গোপন আঁতাত হয়েছিল অ্যামেরিকানদের। সাদ্দাম এবং তার পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্য শীর্ষনেতাদের প্রয়োজনীয় অর্থসম্পত্তিসহ নিরাপদ পলায়ন, সাদ্দাম পরবর্তী সরকারে বাথপার্টির লোকজনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিষিক্তকরণ ইত্যাদির বিনিময়ে তাড়া বাগদাদের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা একদম ছেড়ে দেয়। তাই প্রায় বিনা যুদ্ধে বাগদাদ দখল করে নেয় ইঙ্গো-মার্কিন বাহিনী।

১৯৫৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির পেইড এজেন্ট হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে ইরাকের ক্ষমতাসীনদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ তৈরি হয় সাদ্দাম হোসেনের। সাদ্দামকে এই দায়িত্ব দেন আবদেল করিম কাসেম, একবছর আগেই যার তত্ত্বাবধানে ইরাকের সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান পরিচালিত হয়। সাদ্দামের ক্ষমতার ব্যাপ্তি আরও বৃহৎ হয় ১৯৬৮ সালে, যখন বাথ পার্টির অবস্থান ইরাকের রাজনীতিতে আরও শক্ত হয় এবং সাদ্দাম পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদটি অধিকার করে নেন। পড়ে পশ্চিমাদের প্রদিত লিস্ট অনুযায়ী নির্মমভাবে বামপন্থী নিধনে নামেন তিনি।

১৯৭৯ সালে ইরাকের বৈধ প্রেসিডেন্ট আহমেদ হাসান আল বকরকে হঠিয়ে সাদ্দামের ক্ষমতাসীন হওয়ার ঘটনাটি ঘটে অ্যামেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে। ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামিক রেভোলিউশান হলে সেটা অ্যামেরিকার মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতি অবলম্বন করতে সাদ্দাম হোসেনকে তাদের মুখপাত্র এবং পশ্চিম এশিয়ার ত্রাশ সৃষ্টিকারী যুদ্ধবাজ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। ফলাফল পায় তারা হাতেনাতেই। ক্ষমতায় আসার পরের বছরেই সাদ্দাম ইরানে আক্রমণ চালান, আর অ্যামেরিকা অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে সর্বতভাবে সাহাজ্য করে। অ্যামেরিকার আরেকটি সুক্ষ চাল ছিল ইরাক-ইরানকে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে ব্যাস্ত রেখে ইসরায়েলকে উপমহাদেশের তৈল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সমর্থ্য রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

সাদ্দাম অ্যামেরিকার বিরাগভাজন হয় কুয়েত আক্রমণের মাধ্যমে। সাদ্দামের উদ্দেশ্য ছিল কুয়েতের তেলের দখল নেয়া, তবে কুয়েত অ্যামেরিকার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাষ্ট্র হওয়ায় অ্যামেরিকা ব্যাপারটা মোটেই ভালভাবে নেয় নি। ক্ষুরধার বুদ্ধির অ্যামেরিকার কূটনীতিকরা দ্রুতই বিশ্লেষণ করে বের করেন যে ভিয়েতনামের এনগো দান দিয়েন, ফিলিপাইনের ফারদিনান্দ মারকোজ বা পানামার ম্যানুয়েল নোরেজিয়ার মত সাদ্দাম হোসেন আরেক ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হতে চলেছেন। পূর্বের এ ইতিহাসটুকু বিবেচনা করলে এটা বোঝাই যায় যে সাদ্দামের পতন ছিল অনিবার্য।

কি গোপন চুক্তি হয়েছিল সাদ্দামের দলের সাথে অ্যামেরিকার? অনেক গোপন তথ্যই এখন বেরিয়ে আসছে ক্রমশ নিত্যনূতন গবেষণায়, যদিও অনেক তথ্যই রয়ে গেছে ধোঁয়াশায় ঘেরা। কোনরকম চিহ্ন না রেখে বাগদাদে হামলার পরপর বাথপার্টির পুরো রাজনৈতিক ও সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের অন্তর্ধানে চলে যাওয়াটা নির্দেশ করে, পর্দার আড়ালে বিশাল একটা খেলা চলেছে এই দুইপক্ষের মধ্যে। অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব ডোনাল্ড রামসফেল্ড সে সময় প্রতিনিয়ত বলে চলেছেন দুইপক্ষের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনার প্রেক্ষিতে একটা সমাধানে পৌঁছানর চেষ্টা চলছে। তাদের পক্ষ থেকে শীর্ষ নেতাদের নিরাপদ দেশত্যাগের সুযোগ এবং নির্দোষ ব্যাক্তিদের জন্যে যুদ্ধপরবর্তী সরকার ব্যাবস্থায় চাকরীর নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
এই কারনেই কি বাগদাদে আসলে তলে তলে কি ঘটে গেল তা আর বের হয়ে আসে নি? রিপাবলিকান গার্ডেরা হঠাৎ করেই যেন উবে গেল। ১৯৯১ সালের গ্লাফ ওয়ারে যেখানে টিভি চ্যানেলগুলো ফলাও করে প্রচার করল অ্যামেরিকান সেনাবাহিনীর বুলডোজার দিয়ে ঠেলে হাজারো লাশ গনকবর দেবার, এইবারে তার কিয়দাংশও দেখা গেল না সংবাদমাধ্যমগুলোতে। আগের যুদ্ধে সাদ্দাম হুসেন তার তেলের কুপে আগুন জ্বালিয়ে বিশাল অগ্নিকুণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন , অথচ এবারে, সম্ভবত গোপন চুক্তির কারনেই এরকম কিছু ঘটতে দেখা গেল না।

বলা হচ্ছিল যে ইরাকের ৫০০ যুদ্ধবিমান ছিল, যা দিয়ে অ্যামেরিকার বিমানবাহিনীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তার ঘটেনি কিছুই। অ্যামেরিকান ট্রেড সেন্টারে হামলার পর এখন এটা সবাই জানে যে যদি আকাশপথে যুদ্ধে না ব্যাবহার করা যায়, তবে বিমানকে অটো পাইলট মোডে রেখে শত্রুর ঘাঁটির ওপর মিসাইল হিসেবেও ব্যাবহার করা যায়। আদতে তার কিছুই ঘটে নি। অ্যামেরিকার ট্যাঙ্কগুলোর পথে কখনোই কোন মাইন পুঁতে রাখা হয় নি, সীমান্তাঞ্চল থেকে বাগদাদে আসার পথে অসংখ্য ব্রিজ পড়ে- যেগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেবার কোথা ছিল, তার কিছুই হয় নি। অ্যামেরিকার সৈন্যবাহিনী হাসতে খেলতে ট্যাঙ্ক নিয়ে বাগদাদের বুকে ঢুকে পড়ে, বাগদাদে আগুন ধরিয়ে ট্যাঙ্কের ওপর বসে বসে নির্বিচার লুটতরাজ দেখতে থাকে , কেউ তাদের বলতে গেলে ঢিল ও ছোঁড়ে নি। যুদ্ধ কাভার করতে আসা সাংবাদিকেরা বিস্ময় প্রকাশ করেন বাগদাদের তরফ থেকে একটিবারের জন্যেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা না হওয়ায়। ইরাকি তথ্যমন্ত্রী সাইদ আল সাহাফ বেশ কয়েকবার বাগদাদ হতে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলার হুমকি দেন, তারপর হঠাৎ উধাও হয়ে যান।

বাগদাদ অ্যামেরিকান সৈন্যবাহিনীর আক্রমণের তীব্রতায় নয়, বরং তার কাপুরুষ নেতাদের পীঠ বাঁচানোর চুক্তির কারনে পরাভূত হয়- ব্যাপারটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এটা আমাদের ৩ টি গুরুত্তপূর্ণ তথ্য দেয়- প্রথমত, ইরাকে সাদ্দামের দল ছিল অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্থ, অত্যাচারী এবং ইরাকের সমস্ত প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পত্তির একক হর্তাকর্তা। তারা যখন একবার অ্যামেরিকান সৈন্যবাহিনীর সাথে গোপন চুক্তিতে সাক্ষর করে ফেলে , বাগদাদ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মত তখন আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই।

দ্বিতীয়ত, ইরাকের এই দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারি নেতাদের হঠানোর পর গণ অভ্যুত্থানের পথ সুগম হয়।

তৃতীয়ত, ইরাকি বাথ পার্টির নেতাদের পীঠটান দেবার ঘটনা মোটেও ইরাকি জনগণের মানসিকতাকে নির্দেশ করে না। বরং , ইরাকি জনগণ দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার ও শোষণ করে আসা সরকারের পতনে হাঁফ ছেড়ে বিরতি নিচ্ছে। অ্যামেরিকা যদিও কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের ইরাক যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক বিজয় ঘোষণা করবে, কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে যুদ্ধ শেষ হওয়া দূরে থাক আসল যুদ্ধ এখনও শুরুই হয় নি।

অ্যামেরিকান অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে এক অর্থে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে ইরাকি জনগণ। তারা সুযোগ পেলেই অ্যামেরিকানদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে মিছিলে, স্লোগানে। ১৫ই এপ্রিল , বাগদাদ শহরের ধংশযজ্ঞ যখন চলছিল সমানতালে, অ্যামেরিকান মিত্রবাহিনী তখন আন নাসিরিয়ার নিকটবর্তি উর শহরে একটি সভার আয়োজন করে। খ্রিস্টান –মুসলিম- ইহুদী তিনজাতির ধর্মগুরু ইব্রাহীম(আঃ)এর জন্মস্থল হিসেবে স্বীকৃত এই ছোট শহরের বিশাল ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। পূর্বতন অ্যামেরিকান সৈন্যবাহিনীর জেনারেল এবং বর্তমানে অস্ত্র ব্যাবসায়ি জে গার্নারকে দায়িত্ব দেয়া হয় ইরাকে অ্যামেরিকার শাসনভার পরিচালনায়। তিনি মিটিং-এ এসে বলেন , “সভ্যতার সূচনা হয় যে স্থলে, সেখানেই আজ নূতন ইরাকের জন্ম হচ্ছে”! দুঃখজনক ভাবে, ইরাকী জনগণকে উদ্দীপ্ত করার উদ্দেশ্যে দেয়া এই ভাষণ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে ইরাকী আমজনতা, যাদের ২০০০০ জন এই সভাস্থলের বাইরে বসে সাদ্দাম শাসন এবং বর্তমান অ্যামেরিকান অনুপ্রবেশ – উভয়ের প্রতি ধিক্কার দিয়ে নিজেদের অনাস্থা প্রকাশ করছিল।

বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসার আগে (১৯৬৩ সালে সাময়িকভাবে, ১৯৬৮ সালে আরও দীর্ঘমেয়াদে) ইরাকে ছিল মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সংগঠিত বামপন্থি দল ও কর্মী। বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসার পরপরই শুরু হয় তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন, ধরপাকড়, জেলজুলুম, গুমখুন ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ড। প্রগতিপন্থী সব রাজনৈতিক দলকে নিপীড়ন করে ক্ষমতায় নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে পারলেও সাদ্দাম ব্যার্থ হন ধর্মভিত্তিক দলমতের লোকগুলোকে। এরা আশ্রয় নেয় মসজিদ , দরগায়, মাজারগুলোতে এবং সেখান থেকে নিজেদের সংগঠিত করতে থাকে।

আজ ইরাকের এই চরম সংকটের মুহূর্তে সেকুলার কোন পার্টি নেই, যারা এই শূন্যতাকে পুরন করতে পারবে। ইরাকের ইতিহাসে প্রথমবারের মত তাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে একমাত্র বিরোধী দল হিসেবে আছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। অ্যামেরিকার ক্ষমতায় বসার মাত্র সপ্তাহ দুই যেতে না যেতেই ইরাকের মসজিদগুলোয় জুমার নামাজের জমায়েত হয়ে গেছে অ্যামেরিকা বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার কেন্দ্র।

১৮ই এপ্রিল অ্যামেরিকার আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্থ আবু হানিফা আল নুমান মসজিদে শিয়া ও সুন্নি মুসলিমেরা একত্রে জুমার নামাজ আদায় করে এবং নামাজ শেষে তারা মিছিলের আয়োজন করে এবং শিয়া-সুন্নি-কুর্দিদের অবিমিশ্রতার সাথে শান্তিপূর্ণ ভাবে অ্যামেরিকান অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার আহ্বান জানায়। ইরাকি ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট ব্যানারের অধীনে এই মিছিলে তারা সাদ্দাম হুসেন এবং অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে নিন্দাজ্ঞাপন করে এবং তাদের ধর্মকর্ম পালনে স্বাধীনতাসহ বৈদেশিক শাসনের অবসান চেয়ে ব্যানার বহন করে এবং স্লোগান দেয়।

এদিকে বাগদাদের দরিদ্র অংশগুলো শিয়া অধ্যুষিত এবং সেখানে স্থানীয় মিলিশিয়াদের দখলদার বাহিনীর ওপর আক্রমণের হার আরও অনেক বেশী তীব্র। শহরময় ছড়িয়ে পড়ে তারা আক্রান্তদের ঔষধপত্র, খাদ্য-বস্ত্র ইত্যাদি বিতরণ করে এবং মৃত ব্যাক্তিদের সৎকারের ব্যাবস্থা করে। আন নাজাফ শহর , যেখানে আয়াতুল্লাহ খোমেনি দীর্ঘ ১৫ বছর লুকিয়ে থেকে ইরানে বিপ্লবের নকশা প্রনয়ন করেন, সেখানে ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ধর্মগুরুরা একত্র হয়েছেন। তাদের লক্ষ্য দেশজুড়ে একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি এবং ধীরে ধীরে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়া। অ্যামেরিকা অবশ্য এরই মাঝে নিজস্ব ক্লায়েন্টদের নিয়ে একটা “গণতান্ত্রিক” সরকার গঠন করে ইরাকের শাসনভার অর্পণ করেছে।

কুর্ত অঞ্চলে ধর্মীয় নেতারা সরাসরি সরকারি অফিস দখল করে বসেছেন, এবং তাদের জনসমর্থনও প্রচুর। দক্ষিণ ইরাকের পথে ঘাটে এই সমস্ত ছোট ছোট দলের তরফ থেকে চেকপয়েন্ট বসান হয়েছে এবং অ্যামেরিকানরা প্রস্তুত হবার পূর্বেই তাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। অ্যামেরিকানদের প্রতিরোধে তারা আত্মঘাতী বোমা হামলায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, যাদের অধিকাংশই শিয়া মিলিশিয়া, যদিও তাতে কিছু সুন্নি মুসলমানদেরও অংশগ্রহণ আছে। কোন কোন স্থলে সেকুলার মিলিশিয়ারাও সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এ সব কিছুই এক রক্তাক্ত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত করে।

আমি আগেই উল্লেখ করেছি, বর্তমান বাগদাদের পরিণতি রাশিয়ার স্ট্যালিনগ্রাদের মত নয় , বরং ফরাসি শাসনের অধীনে আলজেরিয়া অথবা ইসরাইলের দমন পীড়নের অধীনে ফিলিস্তিনের মত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। বাগদাদের পরিণতি হবে শুধু একটি শহরের নয় – যা দখল হয়ে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ বা মাস পরে দখলদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে, বরং অ্যামেরিকার দিক থেকেই এই যুদ্ধ এক বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, যা ভারী ও ব্যায়বহুল অস্ত্রশস্ত্রের ব্যাবহারেও তারা টেনে নিতে সক্ষম হবে না। আশেপাশের শহর ও ছোট ছোট গ্রামগুলো গিজ গিজ করবে বিদ্রোহী সশস্ত্র বাহিনীতে, ইরাক অ্যামেরিকার জন্য হবে মূর্তিমান নরকের প্রতিরূপ।

আবার যদি বৈরুতের মত অবস্থা হয়, তবে দেখা যাবে ইরাকের অভ্যন্তরীণ শিয়া- সুন্নি- কুর্দি সহ বিবিধ মতালম্বীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে আন্দোলন থেমে গিয়ে তা নিজেদের মধ্যে সহিংসতায় পর্যবসিত হয়েছে। কাজেই সম্ভাবনা আছে সবরকমেরই। মনে রাখতে হবে, এই বিভাজন সৃষ্টিতে অ্যামেরিকা বিশেষভাবে পটু। তারাই হয়ত আরব- কুর্দ, শিয়া- সুন্নি, বাথ- অ্যান্টি বাথ অনুভূতিগুলো উস্কে দিয়ে জাতিগত দাঙ্গা বাধিয়ে দেবে।
ইরাকের শাসনভার সাদ্দাম হোসেনের হাতে থাকার দু’টো ভালো দিক ছিল। প্রথমত, তিনি ধর্মীয় উন্মাদনাকে কখনোই ছড়াতে দেন নি। ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দমন করেছেন শক্তহস্তে। দ্বিতীয়ত, তিনি সমস্ত জাতিগত বিভাজনের ঊর্ধ্বে অখণ্ড ইরাকের ধারণা ইরাকীদের মনে প্রোথিত করতে পেরেছিলেন।এখন যেহেতু সাদ্দাম হোসেন নেই, ইরাকে তার শাসনও আর চলছে না, দখলদার শাসক বাহিনীর মূল লক্ষ্যই থাকবে এখন ইরাকের জনগণকে সংগঠিত হতে না দেয়া। তাদের মধ্যে খণ্ড জাতীয়তা বোধ অত্যন্ত উগ্রভাবে জাগিয়ে তোলা। আর সে কাজ তারা শুরুও করে দিয়েছে। উদাহরণ হচ্ছে উত্তর ইরাক, যেখানে কুর্দি উগ্রপন্থীরা ঝাড়েবংশে আরব নিধন ও নির্মূলকরণ শুরু করেছে।

ইরাক যুদ্ধে সাফল্য লাভের পর থেকেই অ্যামেরিকার দৃষ্টি পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের ওপর কব্জা করার। এরই মধ্যে তারা সিরিয়াকে দোষারোপ করা শুরু করে দিয়েছে ইরাকী বিদ্রোহীদের সিরিয়ার অভ্যন্তরে স্থান দিয়ে এবং তাদের রাসায়নিক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করার জন্যে। সিরিয়াকে তারা জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহের পৃষ্ঠপোষক দেশ হিসেবে ঘোষণা করে। অ্যামেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড তো সিরিয়া আক্রমণের তোড়জোড় নিয়ে বসে আছেন বলতে গেলে।

অ্যামেরিকান থিংক ট্যাংকেরা বুঝতে পেরেছে, যত দ্রুত তারা মিলিটারি ফোর্স ব্যাবহার করে ইরাক দখলে এনেছে, তত সহজে ইরাকে তাদের শাসনব্যাবস্থা জারি করা যাবে না। তবে তারা একই নীলনকশায় এগোলে হয়তো অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশ যেমন সিরিয়া, ইরান এমনকি সৌদি আরবকেও সম্পূর্ণভাবে নিজের কব্জায় আনতে পারবে। সিরিয়া আক্রমণের বিষয়টা ২০০৪ সালের নভেম্বরে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্যে থেমে আছে। তবে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে ইরাকের মাটিতেই। ইরাকী জনগণ ঠিক কি মাত্রায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে তার ওপর ভিত্তি করে সিরিয়া আক্রমণের সম্ভাব্য সময় আগপিছ হবে।

ইরাকের বর্তমান শাসনভার পরিচালনায় ইরাকী জনগণকে এককথায় ঠেলে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। জাতিসংঘকে এমনকি ইংল্যান্ড, ইরাক আক্রমনে অ্যামেরিকার অন্যতম দোসর, তাদেরও দেয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে খুবই নগন্য ক্ষমতা। গার্নারকে রাখা হয়েছে উপনিবেশিক শাসনের কেন্দ্রে। অ্যামেরিকাণ মিডিয়া তাকে ফলাও করে ভাইসরয় উপাধি দিয়ে দিয়েছে। অথচ পেনটাগনের অস্ত্র সাপ্লাইয়ার হিসেবে খ্যাত এই ভদ্রলোক ব্যাক্তি জীবনে মিসাইল স্পেশালিষ্ট। এ বছর তিনি দেড় বিলিয়ন ডলারের একটি অস্ত্রের বিল বাগিয়ে নিয়েছেন ইউএস সরকারের কাছ থেকে, ইসরাইলের সাথে সম্পাদন করেছেন নূতন প্রজাতির মিসাইল উৎপাদন চুক্তি।

গার্নারের অধীনে থাকবেন ২৩ জন মন্ত্রী, যাদের প্রত্যেকের অধীনে থাকবে ৩ জন করে উপমন্ত্রী এবং ৮ জন উপদেষ্টা, এবং বলাই বাহুল্য – তাদের সবাই অ্যামেরিকান। ইরাক পুনর্গঠনের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে বিল পাশ করেছে অ্যামেরিকার সরকার, তার ব্যায়ভার বহনকারী সংস্থা ইউএসএইড দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছে বুশ সরকারের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলা বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাকে। এইভাবে , ইরাক পুনর্গঠনে সংক্ষিপ্ত থেকে সংক্ষিপ্ত যে ক্ষেত্র – প্রতিটাই চলে আসছে অ্যামেরিকার মালিকানাধীন বিবিধ সরকারি বেসরকারি সংস্থার হাতে।

ইরাক হতে ইরাকি মুদ্রা দিরহাম-এর ব্যাবহারকে কমিয়ে তার স্থলে অ্যামেরিকান ডলার প্রচলিত করার চেষ্টা চলছে। ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হচ্ছে যে লেবানন তাদের জাতীয় মুদ্রার পাশাপাশি অ্যামেরিকান ডলারকেও সমান ভাবে ব্যাবহার করছে। আর সাদ্দাম হোসেন তো নিজেই বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্যে পূর্বে ইউরো ব্যাবহার করতেন।

ডেপুটি ডিফেন্স সেক্রেটারি পল উলফউইটজ, যাকে এই যুদ্ধের অন্যতম হোতা হিসেবে ধরা হয়, তিনি এপ্রিল মাসে ঘোষণা করলেন ইরাক পুনর্গঠনে অ্যামেরিকার শাসন দরকার, কমপক্ষে ৬ মাস হতে ১ বছরের। আহমদ চালেবি, অ্যামেরিকার সৃষ্ট ইরাকের পুতুল রাজনৈতিক দল ইরাকি ন্যাশনাল কংগ্রেসের হর্তাকর্তা গলা খুলে বললেন- ইরাক শাসনে কোন ভূমিকা রাখার অধিকার জাতিসংঘের নাই! ইরাকে শান্তি ফিরিয়ে আনার একমাত্র দায়িত্ব অ্যামেরিকার এবং এই জন্যে তাদের অন্ততপক্ষে ২ বছর ইরাকে থাকতে হবে। তারা এখন ইরাকি তেল কোম্পানিগুলোর বেসরকারিকরনে ব্যাস্ত। আহমদ চালেবির সংগঠনের আরেক নেতা ফাদহিল চালেবি বলেছেন- ইরাকে এখন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার আগমন প্রয়োজন। আর এ উপলক্ষে ইরাকের তেলের খনিগুলো বেসরকারি কোম্পানি (মূলত অ্যামেরিকাণ)-র হাতে ছেড়ে দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।

কে না জানে, ইরাক যুদ্ধ ত্বরান্বিত হবার পেছনে অন্যতম প্রভাবক ছিল বুশ সরকারের ইরাকি তৈলখনির ওপর। তাদের চোখ পড়েছে এখন ইরান, কুয়েত , সৌদি আরব সহ কাস্পিয়ান সাগরের বেসিন অঞ্চলে থাকা পেট্রোলিয়াম সম্পত্তির অধিকারী সকল দেশের ওপর।

ইরাক পুনর্গঠন ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের নাম করে ইরাকের তেলের খনিগুলোর বেসরকারিকরণ তো হচ্ছেই, সাথে সাথে গোপন পাইপলাইনের সংযুক্তিতে সে তেল ইসরাইলে পাচারের বন্দোবস্ত হচ্ছে একই সাথে, আরব বিশ্ব একাট্টা হয়ে সেই তেল বর্জন করে প্রয়োজনে সুদুর রাশিয়া থেকে তেল রপ্তানি করার ঘোষণা দিয়েছে। ইরাকি তেল ইসরাইলে স্থানান্তর করার জন্যে ইরাক-জর্ডান- ইসরাইল ত্রিভুজের কল্পনা করেছে অ্যামেরিকানরা। এই সূত্র ধরে ইরাক হতে আহরিত তেল সর্বপ্রথম পৌঁছাবে জর্ডানের বন্দর আকাবায় , পরে সেখান থেকে ইসরাইলি বন্দর এইলাতে।

এ সব কিছু বিবেচনা করার পর প্রথম যে প্রশ্নটা মাথায় আসে – সেই বিবেকবান মানুষগুলো আজ কোথায়, সাদ্দাম হোসেনের দুঃশাসনে ইরাকী জনগণের দুর্দশায় যাদের বুক ভেঙ্গে যাচ্ছিল? সাদ্দাম হোসেন নাকি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের প্ররোচক, অথচ অ্যামেরিকান সৈন্যবাহিনী আটক করতে পারল মাত্র একজন বয়োভারে নুব্জ ফিলিস্তিনিকে, যার সর্বশেষ অপরাধের খতিয়ান ১৯৮৪ সালে। ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আর গোলাবারুদের সম্ভার আখ্যা দেয়া হয়েছিল ইরাকের বাগদাদ নগরীকে, অথচ অ্যামেরিকান সৈন্যবাহিনী তার কিছুই খুঁজে বের করে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে পারে নি। এ নিয়ে তাদের কোন তাড়াও নেই অথবা তাদের দুঃখবোধ বা লজ্জা – কিছুই হাবেভাবে বোঝা যাচ্ছে না। সাদ্দামের সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্থ আখ্যা দিয়েছিল তারা , সমূলে উৎখাত করার বদলে তারাই আবার সাদ্দাম বাহিনীর সাথে গোপন যোগসাজশ করে। অ্যামেরিকান বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া টমি ফ্র্যাঙ্কস বলছেন ইরাকে অ্যামেরিকাণ সৈন্যদের অবস্থান থাকবে আরও বছরের পর বছর। ইরাকী জনগণ ইরাকের পথেঘাটে তাদের গণতান্ত্রিক শাসনব্যাবস্থা ফেরত চেয়ে যে আন্দোলন করছে, অ্যামেরিকানদের তাও পছন্দ হচ্ছে না।

ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াতে যাতে ইরাকি জনগণের দুঃখ দুর্দশার খবর প্রচারিত না হয়, সে ব্যাপারে বিশেষ ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মত সিএনএন, লা মণ্ডে ও অন্যান্য বিশ্ব সংবাদসংস্থাগুলোকে রাজি করান হয়েছে মিলিটারিদের কাছ থেকে অথবা তাদের তত্ত্বাবধানে সংবাদ সংগ্রহ করতে। তৃণমূল থেকে উঠে আসা অখ্যাত কিছু দৈনিক অথবা সংবাদ সংস্থা তুলে এনেছে ইরাকে অ্যামেরিকান সৈন্যদের সাধারণ মানুষ হত্যা , লুটতরাজ এমনকি লাইব্রেরী পোড়ানোর মত ঘৃণ্য কার্যাবলী।

জেনেভা কনভেনশানের মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রতিটা অধ্যাদেশ তারা লঙ্ঘন করেছে। মানবাধিকার মানবাধিকার করে সর্বদা চেঁচিয়ে গলা ফাটানো আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা, কোন রাষ্ট্র একটা টু শব্দ করে নি। না জাতিসংঘের মহা সচিব কফি আনান, না ইউরোপের বিবেক খ্যাত ফ্রান্স বা জার্মানি, না কোন আরব রাষ্ট্র। এই বিবেকবর্জিত নিরবতা তারা প্রথম থেকেই পালন করে আসছিল বলেই অ্যামেরিকা-ইংল্যান্ড জোট এতদূর পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে।

যুদ্ধের বর্বরতায় বিধ্বস্ত ইরাকে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে অতি ধীরে। হয়তো ব্যাপারটা সাংগঠনিক পর্যায়ে পৌঁছুতে খানিকটা সময় নেবে, কিন্তু তারপরেই শুরু হবে সশস্ত্র সংগ্রাম। অ্যামেরিকা হয়তো তার একটি করদ রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে, কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাস বলে ইরাক আরেকটি ফিলিস্তিনে পরিণত হতে যাচ্ছে।

অ্যামেরিকানরা হয়তো মনোযোগ দিয়ে উপনিবেসিকতা বিরোধী মুভমেন্ট গুলোর ইতিহাসের পাতা উল্টোয় নি। উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যেমে ইতিহাস লেখা শেষ হয়ে যায় না, বরং নতুন ইতিহাস লিখিত হবার অপেক্ষায় তার গর্ভাঙ্ক স্ফুরিত হতে থাকে।


মন্তব্য ৩৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৪১

এহসান সাবির বলেছেন: চমৎকার হইছে অনুবাদটি।

ভালোলাগা।

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সাবির ভাই, আমার যেকোনো লিখা আপনার ভালোলাগাটা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।

ভালো থাকুন সবসময়।

২| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৪৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: বাপরে! বিশাল ব্যাপার স্যাপার! বুকমার্কড করে রাখলাম। পুরোটা পড়া হয় নি। তবে যতটুকু পড়লাম, মনে হচ্ছে আপনি ভালোই অনুবাদ করেছেন।

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: হা হা হা ! জি জাদিদ ভাই , সাইজের দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে তো বিশালই!
ধন্যবাদ আপনার পাঠে এবং অনুভূতি জ্ঞাপনে ।
ভালো থাকুন সর্বদা।

৩| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৫২

ডি মুন বলেছেন: পড়ে নেব।

শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় ব্লগার।
ভালো থাকা হোক। আরও নূতন গল্প উপহার দিন আমাদের।

৪| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:০৯

শাহরিয়ার নীল বলেছেন: অনেক ভাল অনুবাদ করেছেন, আর লিখাটাও ভাল লাগলো।

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। কৃতজ্ঞতা জানাই উৎসাহব্যাঞ্জক মন্তব্যে।
শুভকামন রইল।

৫| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩

সোহানী বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ এ চমৎকার লিখাটি শেয়ারের জন্য।

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পড়া এবং আপনার মন্তব্যে জন্যে।
সর্বদা শুভকামনা।

৬| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:১৪

রোকন রকি বলেছেন: তথ্য বহুল লেখা।

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: হ্যাঁ , তথ্যবহুল এবং দিক নির্দেশনী।
শুভকামনা।

৭| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:২৭

রেজা এম বলেছেন: Good job bro !! :) :)

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: Gracious bro… :)

৮| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫১

মামুন রশিদ বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণ! এক যুগ পরে এসেও তার বিশ্লেষণের যথার্থতা দেখে বিস্মিত । ওরিয়েন্টালিজমের প্রবক্তা এডওয়ার্ড সাঈদ কে চ্যালেঞ্জ করা লেখক বলেই আরও আগ্রহ নিয়ে পড়লাম ।

এই ধরনের লেখায় তথ্য-উপাত্ত-বিশ্লেষণের বাইরে কোন সাহিত্যমুল্য থাকে না । কিন্তু আপনার অনুবাদ ঝরঝরে বাংলা গদ্যের কথা মনে করিয়ে দেয় ।

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: জি মামুন ভাই, ভদ্রলোক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তো বটেই, তবে এডওয়ার্ড সাইদের বিরোধিতা তার অ্যান্টি ইসলামিক অবস্থানের কারনে।

প্রোপ্যাগান্ডা ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর সর্বত্রই। কোন কিছুই এর উরধে নয়।

আপনার মন্তব্যে বিনীত ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকা হোক।

৯| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৬

ডি এইচ খান বলেছেন: চমতকার ঝরঝরে অনুবাদ। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাই।

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনাকেও পাঠে ও মন্তব্যে ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন সবসময়।

১০| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:১২

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
ভাল ৷ গতিশীল গদ্য ৷ পড়তে দেওয়ায় ধন্যবাদ ৷


(তাহলে কারো কারো কথা শোনা হয় ৷ বেশ )

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: প্রিয় জাহাঙ্গীর ভাই,



সোশিয়লজি বা পলিটিক্যাল সায়েন্স আমার প্রায়োরিটি লিস্টে নেই। সবদিকে মনোযোগ দিতে গেলে খুব বেশী কিছু অর্জন সম্ভব নয় এ যুগে। জ্ঞান বিজ্ঞান যখন এথেনিয়ান বেসিনে মাত্র প্রস্ফুটিত হওয়া শুরু হয়েছে, সেই সময়টাতেই অ্যারিস্টটলেরা জন্মেছেন। আমাদের জেনারেশানে খালি স্পেশালিষ্ট আর স্পেশালিষ্ট।

১১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:২৮

আরজু পনি বলেছেন:

এখন থেকে ইংরেজি গল্পের যে বইগুলো পড়তে ইচ্ছে করবে সেগুলো আপনাকে দিব অনুবাদ করতে :-B

আনোয়ার হোসের মঞ্জুর পর অনুবাদক হিসেবে আপনার বইই পড়তে চাই ।

বইটা প্রকাশ হলে জানাবেন কিন্তু।

প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম দারুন কাজটি।

অনেক অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা রইল, আবির।

২৮ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: পনি আপা, আপনার কমেন্টে লজ্জা পেয়ে গেলাম এবং অনেক অনেক অনুপ্রাণিত হলাম। ব্লগে আপনার উপস্থিতিই আমাদের জন্যে একটা দারুণ পাওয়া। সেখানে আপনার কাছ থেকে এত বড় সার্টিফিকেট তো আমার জন্যে পকেট ভর্তি ঈদির সামিল! !:#P

ধন্যবাদ দিব না, ছোট ভাইদের বড় বোনের কাছে এতটুকু পাওনা হয়েই থাকে। :P আর অবশ্যই জানাবো বই বের হলে।

দোয়া করবেন আমার জন্যে, আর আপনার আর আপনার পরিবারের সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা। :)

১২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:৫০

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: অটোগ্রাফের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম!
অনুবাদ আমার কাছে অনেক কঠিন, মাঝে কবিতা অনুবাদের বৃথা চেষ্টা করেছি কিছুদিন!
শুভেচ্ছা রইলো :)

২৮ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধুরু ভাই, হুদাই নাট্য করেন। অনুবাদ করতে আপনার আলসেমি লাগে বলে, আপনি শুরু করলে আমরা কই থাকতাম আজকে , হদিস ও থাকতো না!
কবিতার অনুবাদ কঠিন, যথেষ্টই কঠিন, আমি কখনো চেষ্টা করি নি। তবে কবিতায় মনে হয় ভাবানুবাদ করলেই কাজ চালিয়ে নেয়া যায়, ভাষার ঝঙ্খার সেটা অনুবাদক নিজের মত করে মুনশিয়ানার সাথে প্রয়গ করতে পারে।

ঈদের শুভেচ্ছা অভি ভাই। :)

১৩| ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৫১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ঈদ শুভেচ্ছা আবির ।ভাল থাকবেন ।

২৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা প্রিয় সেলিম ভাই।
ভালো থাকুন সর্বদা।

১৪| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯

ইমিনা বলেছেন: অনুবাদ করার মতো কঠিন কাজটা কি সুন্দর ভাবে করে ফেললেন।
অবাক লাগছে আবার সেই সাথে মুগ্ধতাও।
:) :) :)
শুভকামনা সব সময় ।।

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:১৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার। :)

অনুবাদ করাটা আমার হবি না, খুব একটা উপভোগ ও করি না। তবে, যে পত্রিকায় কাজ করছি আজ প্রায় ছয় বছর, তাতে আমার মূল কাজই হচ্ছে অনুবাদকের। বিখ্যাত লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ কলাম বা লেখা অনুবাদ করা। এভাবেই দক্ষতাটা সহজাত হয়ে গেছে। যদিও আমার মূল ঝোঁক নিখাত সাহিত্যে।

আপনার মুগ্ধতা আপনার বড় হৃদয়ের অধিকারিণী হবার পরিচায়ক।

আপনিও অনেক ভালো লেখেন। সময় করে শীঘ্রই আসছি মনোযোগ দিয়ে আপনার লেখা পড়তে।

আপনাকেও শুভকামনা। :)

১৫| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:১০

রাজিব বলেছেন: আমাদের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০০ নম্বর অনার্স এর পাশাপাশি ২ টি বিষয় সাবসিডিয়ারি পড়তে হত। আমার ছিল ইতিহাস এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে সেই ১৯৮৮ সাল থেকে আমি একেবারে নিয়মিত খবর রাখছি এবং ১৯৯৭ সাল থেকে লিখছি পত্রিকার ও ব্লগে। যাইহোক এই ভণিতা করার মূল উদ্দেশ্য হল এই ব্যপারে অনেক বছরের চেনাজানা, লেখাপড়া এবং সেই অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থেকে ডঃ এজাজ আহমেদ এর বিশ্লেষণের অনেক কিছুর সঙ্গেই একমত নই।
মার্ক্সিস্ট থিয়োরিস্টদের একটা দুর্বল দিক আমার সবসময় মনে হয়েছে যে তারা যেহেতু আমেরিকা ও পুজিবাদের চির শত্রু তাই তাদের প্রায় সবাই অনেকটা এক চোখা দৃষ্টি ভঙ্গী নিয়ে লেখেন।
আমেরিকা একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এ ব্যপারে আমার মনে কোন সন্দেহ নেই। তারা বিশ্বে একমাত্র সুপার পাওয়ার হিসেবে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য ছলে বলে কৌশলে সব কিছু করে থাকে এটি মানতেও আমার মনে কোন দ্বিধা নেই। তবে আমেরিকার শত্রুরা দুধে ধোয়া তুলসি পাতা নয়। ইরাকের প্রসঙ্গে বলতে হয় যে বহু জাতির ও ধর্মীয় বিশ্বাসের (শিয়া বনাম সুন্নি, আরব বনাম কুর্দি) দেশ এটি। তাই এখানে যে কোন সরকারের উচিৎ যে কোন মুল্যে দেশের ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার। নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে বাইরের লোক সুযোগ নেবেই। আর আমেরিকা সুযোগ নেবার জন্য সব সময় বসে থাকে এটাই বাস্তবতা।
আপনার অনুবাদ বেশ ভাল হয়েছে। এত কঠিন বিষয় এত অল্প বয়সে অনুবাদ করা খুব কঠিন। আমি মাস্টার্সে পড়ার সময় ভার্জিনিয়া উলফের A Room of One's Own বইটি অনুবাদ করি এবং তা ইত্তেফাকে ধারাবাহিক ভাবে ছাপাও হয় ১৪ সপ্তাহে মেয়েদের পাতায়। কিন্তু তা করতে গিয়ে খবর হয়ে গিয়েছিল।
ব্লগে আমার একটা অনুবাদ রয়েছে। পারলে পড়ে দেখবেনঃ
আলেক্স হেলি’র স্বপ্নের ছায়ারাজ্যঃ লেখক হতে চান এমন যে কারো পড়া উচিত
Click This Link

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:২৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া,

আপনি খুবই প্ল্যান করে আপনার সাবজেক্টগুলো চয়েজ করতেন বোঝাই যাচ্ছে। আমাদের এখন আর সেই সুযোগ নেই। সেমিস্টার সিস্টেমে কিছুই ভেতরে ঢুকে শেখার উপায় নেই। সারফেস লেভেলেই পড়াশোনা করতে হয়। আপনি যদি খুব বেশী টেক্সট পড়েন, তাহলে আলটিমেটলি আর ক্রিটিক পড়া হবে না, নোট করার সময় হবে না, কোটেশন মুখস্ত করার সময় হবে না, পরীক্ষার খাতায় ভালো লেখা সম্ভব হবে না। বিষয়টা সচেতন শিক্ষার্থী মাত্রই কষ্ট দেয়।

আপনি ইংরেজির ছাত্র হয়েও কত জ্ঞানের কত বৈচিত্র্যময় দিকে আপনার আগ্রহ ছিল, ভেবে অবাক লাগছে!

আর ডঃ এজাজ, বাম চিন্তাধারা, ইরাকের অবস্থা বিশ্লেষণ- কোন কিছুতেই আমার স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ নেই। আমাদের এক শিক্ষক অনুবাদ করতে বলেছেন বলেই করে দেয়া। খুবই নির্লিপ্ত ভাবে ম্যাশিনের মত অনুবাদ করেছি ক্রমাগত।

মারক্সিসট থিয়োরিস্ট দের ব্যাপারে আমার ফার্স্ট হ্যান্ড কোন এক্সপিরিএন্স নাই, বই ও পড়ি নাই মারক্সিস্ত ক্রিটিসিজমের। ক্লাসের পাহাড়পম সিলেবাসের ফাঁকে কিছু সময় বের করতে পারলে সাহিত্য সংক্রান্ত লেখা পড়ি। তবে আমার সাহিত্য পাঠের এক্সপিরিএন্স বলে, বাম ধারার লেখকেরা একটা ছকের মধ্যে ফেলে লেখার চেষ্টা করেন বলে তাদের সাহিত্যকর্ম এক পর্যায়ে এসে কিছুটা একঘেয়ে বা চর্বিতচর্বণ জাতীয় হয়ে যায়।

এই বিশ্বে যা কিছু যুদ্ধ, ঝুট ঝামেলা লাগে, তা পলিটিকাল কারনেই। অ্যামেরিকাকে দোষ দেয়া যায় না। বামপন্থী দলগুলো যদি পৃথিবীর মূল ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করত তবে তারাও একই ভাবে দমন পীড়ন চালাত তাদের বিরোধী শক্তির ওপর। তারপর নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে কাটাকাটি করত। স্ত্যালিন কি হিটলারের চেয়ে কম বড় খুনি ছিল? লাখ লাখ মানুষ মেরেছে সোভিয়েত ইউনিয়নে। আর নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ির ঘটনা তো জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্মেই আছে। স্ত্যালিন ট্রটস্কি বিরোধ, ট্রটস্কির দেশ ট্যাগ।

ইরাকের অবস্থা আমি ঠিক জানিনা, আপনি যেটা বললেন, সেটাই এক কথায় মানলাম।

ভারজিনিয়া উলফের এই টেক্সট আমি গতকাল কিনলাম। এখন অনার্সে থিয়োরির মধ্যেই এটা পড়ায়। আপনার অনুবাদের কথা শুনে শিহরিত হলাম। কত কত জ্ঞানী গুণী মানুষের পদভারে স্পন্দিত আমাদের এই ডিপার্টমেন্টের করিডোর!

একটু সময় নিয়ে পড়ে দেখছি আপনার অনুবাদটি। ক্লাস থেকে সন্ধ্যায় এসেছি, এই মুহূর্তে মনোযোগ স্থির থাকবে না।

দোয়া করবেন ভাইয়া।

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৩১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আর একটি প্রশ্ন, ভাইয়া কি এখন সুনামগঞ্জে আছেন ?

১৬| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৩০

রাজিব বলেছেন: না আমি এখন ঢাকাতেই আছি। সব সময় ঢাকাতেই ছিলাম। এখানেই জন্ম আমার।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৪২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আমি আমাদের এক অফিসিয়ালকে জিজ্ঞেশ করেছিলাম আপনার নাম উল্লেখ করে যে এমন কাউকে তার মনে আছে কিনা। তখন তিনি বললেন যে সুনামগঞ্জে আছেন বর্তমানে এক সরকারি কর্মকর্তা, আমাদের এলামনাই। তাই ভেবেছিলাম ।

ভালো থাকুন সর্বদা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.