নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন বই পড়বেন না

২২ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:০৮



মানুষ কোরবানির হাটে যেভাবে গরু কিনে, আমি বইমেলায় বই কেনার ক্ষেত্রে সে পদ্ধতিই অবলম্বন করি। মেলা শুরু হবার পর বারকয়েক যাই, গিয়ে যতদূর সম্ভব ঘুরে ঘুরে প্রতিটা স্টলের প্রকাশিত নতুন - পুরান বই দেখি। পছন্দের বইয়ের একটা লংলিস্ট তৈরি করি। মানিব্যাগের স্বাস্থ্য বিবেচনা করি। তারপর ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় ক্রয়োপযোগী বইয়ের একটা শর্টলিস্ট তৈরি করি। তারপর একদিনে গিয়ে দুম করে সবগুলো বই একসাথে কিনে নিয়ে আসি। বই কাউকে গিফট করি না, পয়সার অভাবে। বই কাউকে ধারও দিই না, বিগতদিনের বাজে অভিজ্ঞতার কারণে।

তো যাই হোক, গতমাসে শেষ হওয়া বইমেলায় একটা স্টলে দাঁড়িয়ে উল্টে পাল্টে একটা সংক্ষিপ্ত চটি সাইজের বই দেখছিলাম। বইটার নামেও চটি শব্দটি আছে (খুবসম্ভব - 'শতাব্দী ভবর চটি' )। কবি ফেসবুক স্ট্যাটাসের সাইজের চার - আট লাইনের ছন্দে তার মনের অবদমিত যৌন বাসনাবলীকে নানাভাবে সমাজ - সংস্কৃতির নানা দিকের সাথে সম্পর্কিত করে - কাঁপানো - ঠাপানো ইত্যাদি end rhyme মিলিয়ে একটা চটি বই আকারে বইমেলায় নিয়ে এসেছেন। একটা অপেক্ষাকৃত নতুন প্রকাশনা সংস্থা তার এই চটিবই পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়েছেন। কাকতালীয়ভাবেই, স্টলের যে সেলসগার্ল - তিনি বেশ সুন্দরী ছিলেন। তিনি কৌতূহল নিয়ে দেখলেন আমাকে মিনিটপাঁচেকে দাঁড়িয়ে চটি বইটি শেষ করতে। তারপর নিজে থেকেই আগ্রহী হয়ে আমাকে আর একটা কবিতার বই আগিয়ে দিয়ে বললেন,

- দাদা, এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন। বেশ ভালো কবিতার বই।
আমি, কিনবো না জেনেও ভদ্রতার খাতিরে ওনার হাত থেকে বইটি নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- ভালো বই বলছেন, বইটির কোন লেখাটা আপনার ভালো লেগেছে?
মেয়েটি আমার প্রশ্নে খানিকটা অপ্রস্তুতই মনে হল। সম্ভবত তিনি বইটি পড়েন নি।
- দাদা মলাটটা বেশ চোখে লেগেছে আমার।
- কিন্তু আমি তো কবিতার বই মলাট দেখে কিনবো না।
আমার সোজাসাপটা উত্তরে তাকে খানিকটা মনক্ষুণ্ণই মনে হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সামলে নিয়ে তিনি আবার প্রশ্ন করলেন,
- তাহলে দাদার ঠিক কি ধরনের বই পছন্দ?

এবার আমার বোকা হবার পালা। কারণ এই প্রশ্নের কোন সরল উত্তর আমার কাছে নেই। কি ধরনের বই পছন্দ করি না, এই প্রশ্নটার উত্তর দেয়া আরও সহজ হত হয়তো।

যা হোক, এটা নিয়ে আমার এখন আর গর্ববোধ হয় না, কিন্তু সত্যি বলতে, আমি পড়ি অনেক। বাসা থেকে কখনোই বই ছাড়া বেরোই না। চলন্ত যানবাহনেও বই পড়ি। হাতে সবসময় একটা বই না থাকলে নিজেকে ন্যাংটো ন্যাংটো লাগে। এর একটা কারণ হচ্ছে এই যে - আমি সময় কাজে লাগাতে চাই। পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য, অগণিত অসাধারণ সব চিন্তাধারা লিপিবদ্ধ করা আছে। আমি আমার সীমাবদ্ধ আয়ুর জীবনকালে তাদের সাথে যতদূর সম্ভব পরিচিত হয়ে যেতে চাই। দ্বিতীয় কারণ, বইপড়াটাকে আমি জ্ঞান অর্জনের উৎস হিসেবে নিই না, বরং, জ্ঞান নারচার করার পন্থা হিসেবে বিবেচনা করি। লেখক, তা তিনি যত বড় বা বিখ্যাতই হন না কেন, তার লেখা পড়ার পর আমি নিজের যুক্তিতে - বুদ্ধিতে তার সংশ্লেষণ - বিশ্লেষণ করে কিছুর সাথে একমত হই, কিছু খারিজ করি। এভাবে, বই পড়াকে আমি উক্ত লেখকের সাথে একটা অন্তরিন বৌদ্ধিক সংলাপে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করি। এছাড়াও, আমার বন্ধুভাগ্য মন্দ।

যাক, ঐ নারী পরিবেশকের প্রশ্ন , এবং আমার তব্দা খেয়ে যাওয়াকে আমার এই লেখার সূচনাবিন্দু বিবেচনা করে, এখন আমি আসি আমার মূল প্রস্তাবনায়, যেখানে আমি যৌক্তিকভাবে আলোচনা করবো - ২০২০ সালের বাংলাদেশে বসে কেন আপনার একজন রেনেসাঁর সন্তান হওয়া উচিৎ নয়, বা সহজ করে বলতে গেলে, কেন আপনার বই পড়া কমিয়ে আনা, বা একটা ডিরেকশনে আনা উচিৎ।

বেশী বই পড়ার প্রথম সমস্যা হচ্ছে এই যে - আপনি যত পড়বেন, ততটাই প্রচণ্ডরকমের অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবেন, আর আপনার চারপাশে যখন তাকাবেন - তখন দেখবেন একদমই মানবিক অনুভূতিশূন্য, বা ভোঁতা অনুভূতির মানুষে সব ছয়লাব হয়ে গিয়েছে। বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়ার মানসিকতা, ক্রমাগত রুদ্ধশ্বাস ছুটে চলাকে লাইফস্টাইল বলে গণ্য করা, সৎ বা অসৎপথে ক্রমাগত একে অপরকে ল্যাং মেরে ওভারটেক করতে থাকা (তা সে যানবাহনেই হোক, বা ব্যক্তিজীবনে) - এই হচ্ছে আমাদের সমাজে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার পন্থা। আপনি যত পড়বেন, তত অনুভূতিসম্পন্ন হবেন, তত পিছিয়ে পড়বেন এই ইঁদুর দৌড়ে। মানুষ আপনাকে ঠ্যালা- ধাক্কা দিয়ে, পাড়িয়ে মাড়িয়ে এগিয়ে যাবে - আপনার ক্রোধ হবে তাতে, কিন্তু আপনি অনুভব করবেন যে, এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আপনি খাপ খাওয়াতে পারছেন না, বা আদৌ পারবেন না।

বেশী বই পড়ার দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, বই পড়ে, একটা উন্নত জীবনবোধ হয়তো আপনি তৈরি করতে পারবেন, কিন্তু তার প্রাসঙ্গিকতা আপনি আপনার খুব ঘনিষ্ঠ মানুষদেরও বোঝাতে পারবেন না। সবাই আপনাকে মানুষের সাইজ মাপার যে প্রথাসিদ্ধ স্কেল সমাজে প্রচলিত সেটা দিয়েই মাপামাপি করবে প্রতিনিয়ত। এবং এক পর্যায়ে আপনি আবিষ্কার করবেন যে - 'সাইজ অ্যাকচুয়ালি ম্যাটারস'। যেমন ধরেন, আমি প্রচণ্ড রকমের একটা রোম্যান্টিক আইডিয়ালসের মধ্যে বড় হওয়া এক তরুণ। দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেরা বিভাগের সেরা শিক্ষকদের মধ্যে লালিতপালিত হওয়ায় ইচ্ছা ছিল শিক্ষকতা পেশাতেই আসার। কারণ, বুদ্ধিজীবী হব। দেশের ক্রান্তিকালে ছফা হব, ইলিয়াস হব। অন্ধকারাচ্চছন্ন সময়ের ওপর সত্যের আলো ফেলবো। সেই চিন্তা থেকেই অধ্যাপনা - গবেষণার পথে এলাম তো বটে, কিন্তু অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম যে এদেশে আলোর প্রয়োজন প্রায় নাই বললেই চলে। বরং প্রত্যেকের হাতেই একটা দেড় ব্যাটারির টর্চ আছে। জ্ঞানচর্চাকে ব্রত হিসেবে নেয়া একটা মানুষকে তার সমাজ, তার পরিবার যেভাবে আরও ক্ষমতাবান, আরও পয়সাওয়ালা, আরও স্থিতিশীল চাকুরীতে থাকা অমুক - তমুকের সাথে একই স্কেল দিয়ে মাপতে থাকে - এটা হজম করা কষ্টকর। সাইকোলজিক্যাল কন্সটিপেশনে ইশবগুলের ভুষিও কাজে দেয় না।

বেশী বই পড়ার তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে, এর কোন নগদ ফল নাই। এমন একটা সময়ে আমরা আছি, যখন মানুষের মূল ঝোঁক ভিজুয়াল মিডিয়ার দিকে, জ্যাক অফ অল ট্রেড হবার দিকে, এবং ভাঁড়ামো করার দিকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় আমরা ফেসবুকের কনটেক্সটবিহীন ফানি ভিডিও দেখে কাটিয়ে দিচ্ছি। যখন মানুষ ঘোষণা দিয়ে প্রিন্টেড বইয়ের কবর রচনা করে ফেলছে, কারানজিত কাউরের থেকে যখন মানুষের দূরত্ব স্রেফ মোবাইলের একটা ক্লিকের, তখন আপনার গভীর জীবন বিশ্লেষণাত্মক কথা শুনবার, এবং পুঁছবার সময় কারো হবে না। অথচ, কোন কাজই কিন্তু আমরা একার জন্যে করি না। আমরা পড়ি, আমরা লিখি, আমরা শিল্প - সাহিত্য - সুকুমারবৃত্তির চর্চা করি মনের আনন্দে, এবং স্বীকৃতি পাওয়ার লক্ষেও। বই পড়ে, ডিপ ফিলসফিকাল ভিউ থেকে জীবন পর্যালোচনা করে আপনি দ্রুত স্বীকৃতি বা গ্রহণযোগ্যতা পাবনে না।
আমার ছাত্রছাত্রীদের তাদের করোনা ভাইরাসে ক্লাস বন্ধ হবার আগের দিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তরুণ বাংলাদেশী অনলাইন সেলিব্রেটিকে নিয়ে - যে ওনার ভিডিও থেকে তোমরা আসলে কি শিখেছ। একজন উত্তর দিলো, আমি নতুন নতুন ভোকাবুলারি শিখি ওনার ভিডিও থেকে (যদিও এভারেজে প্রতি সেমিস্টারে ওদের প্রায় তিনশো নতুন ইংরেজি শব্দ আমরা শেখাই), একজন উত্তর দিলো, আমি ম্যাথের কিছু বেসিক ফর্মুলা শিখেছি ওনার ভিডিও দেখে (যদিও ওদের প্রায় তিনটা বেসিক ম্যাথ কোর্স ইউনিভার্সিটিতে করা লাগে), একজন উত্তর দিলো আমি ম্যানারস শিখেছি ওনার ভিডিও দেখে (সে কি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে বড় হয়েছিল?), একজন উত্তর দিলো - স্যার আমার ওনার পাঞ্জাবীর চয়েজ ভালো লাগে(বাহ!)। যে ভদ্রলোকের কাছ থেকে আপনি একই সাথে ম্যাথের বেসিক ফর্মুলা, ইংরাজি শব্দার্থ, ম্যানার এবং পাঞ্জাবীর স্টাইল শিখেন, তিনি শিক্ষক হিসেবে কেমন বলে আপনাদের মনে হয়। আমার সমালোচনার জায়গাটা এই যে - এরা হালকা, এরা খেলো, তারা আপনাকে মানুষ হিসেবে কোথাও নিয়ে পৌঁছে দেবার ব্রত নিয়ে তাদের অনলাইন ব্যাবসায়ে নামে নাই।
অথচ এই সময়টায় আমি মূলধারা '৭১ বইটা পড়ছি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার এক অলটারনেটিভ ন্যারেটিভ আবিষ্কার করছি। প্রবল আগ্রহে ওদের জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের কার কার ইতিহাস পড়তে ভালো লাগে। চল্লিশ জনের ক্লাসে একজনও হাত তুললো না।
এই করোনা ভাইরাসকে নিয়েই কতরকম রংতামাশার ভিডিও ফেসবুকে দেখছি গত একসপ্তাহ। ৯০ শতাংশ ভিডিও মেকাররা করোনা নিয়ে ছড়া, গান, তামাসামূলক মিমস বানিয়ে ভাঁড়ামো করছে।
এমন একটা সময়ে, এমন একটা জেনারেশনের মধ্যে থেকে বই পড়া নিয়ে বেশী কচলাকচলি করা বাদ দিয়ে রাদার কিছু ভিডিও বানানোর পরিকল্পনা করতেই পারেন। আপনার ইউটিউব চ্যানেলের নাম হোক - কেলটু ভাই বা ফানি নানি।

বেশী বই পড়বার চতুর্থ সমস্যা হচ্ছে - সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্নতা। অমিতাভ ঘোষের শ্যাডো লাইনস - আমাদের সাব কন্টিনেন্টের পার্টিশন ডায়াস্পোরার একটা অবশ্য পাঠ্য। অমিতাভ ঘোষ, তার এক ইন্টারভিউতে বলেন - 'আমাদের সময়ে লেখকরাই ছিল নায়ক, এখনকার মত ফিল্মস্টারদের যুগতো ওটা ছিল না। আমি তাই ছোটবেলা থেকে লেখকই হতে চেয়েছি।' এই যে পড়া, বা লেখার প্রতি একটা তীব্র প্যাশন, এটা অন্য সময়ের গল্প। অন্য যুগের চাহিদা। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের সাথে সাম্প্রতিক আলোচনায় স্যার দেখি বার বার বলেন - কেবল বই পড়া জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না, অ্যাক্টিভিজম ই টার্গেট! এই কথাটা স্যার কেন বলেন, আমি, বা স্যারের ঘনিষ্ঠজনেরা হয়তো বুঝি। এতগুলো বছর বই পড়ার সম্মিলিত চর্চার পরেও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এখন কাদের আড্ডাখানা, কেন্দ্রের সচেতন সদস্য মাত্রই জানেন। একটা অভাবের তাড়নায় থাকা জাতি, যার মৌলিক চাহিদাগুলি পুরনের জন্যে দেশের মানুষকে ক্রমাগত একে অপরের গলায় পাড়া দিয়ে ধরতে হয় - সেখানে সুকুমার বৃত্তির চর্চাটা বরাবরই অপ্রাসঙ্গিক, বা মার্জিনাল। যেদেশের কাউন্সিলরদের শতকরা ৬৪% স্বশিক্ষিত, সেখানে ডিসিশন মেকিং এর স্থলে পড়ুয়া মানুষদের কোন স্থান হবে কি? যে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে পারলে দেশের মানুষ আপনার কথা শুনবে, সেখানে পৌঁছাতে হলে মৌলিক দরকারি গুন হচ্ছে জ্যাক মেনটেইন করার সক্ষমতা, সাইকোফেন্সি। অথচ আপনি যদি পড়ুয়া হন, আপনার আজগুবি আত্মমর্যাদাবোধ তৈরি হবে। আপনি আপনার প্রয়োজনেও আর ছোট মানুষদের সামনে মাথা নত করতে পারবেন না , মুখে তেলতেলে হাসি ঝুলিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে পারবেন না। অথচ, বাংলাদেশে 'উন্নতির' সিঁড়ি টপকাবার জন্যে এগুলি মৌলিক চাহিদা। হয়ে গেলো তো জীবন জটিল?

বেশী বই পড়বার পঞ্চম সমস্যার ব্যাপারে সচেতন হলাম সম্প্রতি বুদ্ধদেব বসুর রাতভর বৃষ্টি বইটা পড়ে। ভদ্রলোকের বউ পরকীয়া করা শুরু করে যখন ভদ্রলোক নাকের সামনে সবসময় একটা বই ঝুলায়ে বসে থাকে। আমি সারাদিন আপিস শেষ করে রাতে বাসায় এসে টুকটাক সাংসারিক কাজকর্ম করে নাকের সামনে একটা বই ঝুলায়ে বসি। কবে যে বউ নাকে ঝামা ঘষা দেয় - এই নিয়ে ইদানীং বড় পেরেশানিতে আছি। সবার দোয়াপ্রার্থী।

এই বইমেলায় কিনলাম - রায়হান রাইনের লেখা - বাংলার দরশনঃ প্রাক - উপনিবেশ পর্ব, নীরুকুমার চাকমার লেখা - বুদ্ধঃ ধর্ম ও দর্শন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠিপত্রের সংকলন - ছিন্ন পত্রাবলী, কমরেড মুজাফফর আহমদের আত্মজৈবনিক - আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (১৯২০ - ১৯২৯), আবুল মনসুর আহমদের - আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, এবং মামুন আল মোস্তফার লেখা - লালনের রাজনীতি। সম্প্রতি পড়লাম/পড়ছি - মঈদুল হাসানের মূলধারা '৭১, আনিসুল হকের ঊষার দুয়ারে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একা এবং কয়েকজন, এবং হাসান আজিজুল হকের আগুনপাখি। সম্প্রতি ইংরেজিতে অনুবাদ করে শেষ করলাম শহিদুল জহিরের নভেলা জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা। অনুবাদটার যাতে একটা ভালো প্রকাশক পেয়ে যাই, এই বিষয়ে আপনারা আমাকে আপনাদের প্রার্থনায় স্মরণ রাখতে পারেন।

তবুও যদি পড়ে যেতে চান, অভূতপূর্ব সৌন্দর্যমণ্ডিত বিচ্ছিন্নতার জগতে আপনাকে স্বাগতম!

(ছবিতে জয়গোস্বামীর কবিতাসমগ্র হাতে মেট্রো সিটিবাসের উক্ত যাত্রী লেখক স্বয়ং। একটা এক্সপিরিমেন্টাল ফটোস্যুটের একটি ছবি এটি। ছবিটি তুলেছে রাশেদ কবির সৌমিক)

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:১০

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: বেশি বই পড়ার কুফল(!) হিসেবে অসামাজিক এর তকমা পেয়েছি।

২২ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: বাইরের জাজমেন্ট বই পড়ার "কুফল" এর প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপে এসে নিজে একজিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসে ভোগা শুরু করবেন, যখন এম্প্যারিকেলি দেখবেন সমাজ সফল - বিফল মানুষ চিহ্নিতকরনের ক্ষেত্রে উন্নত রুচি - উন্নত পাঠাভ্যাস - মানবিক হওয়াটাকে কোন গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠী হিসেবে বিবেচনা করে না। তৃতীয় ধাপে এসে এই অস্তিত্ববাদী যাতনার বিপরীতে একটা নিজে থেকেই একটা ডিফেন্স মেকানিজম তৈরি হয়ে যাবে, অথবা আপনি নিজেকে "লুজার"দের কাতারে রেখেই বইয়ের জগতে ডুবে থাকবেন। পরবর্তী স্টেজগুলির জন্যে শুভকামনা।

২| ২২ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম কথা হলো ভালো লিখেছেন।
এবং আমি গর্ব করি বলি, আমি প্রচুর পড়ি। পড়তে ভালো লাগে।
তবে ইদানিং পড়া কমিয়ে দিয়েছি।

আপনি ভালো থাকুন।

২২ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, শুকরিয়া। আপনার প্রায় প্রতিটি ব্লগারের পোস্টে মন্তব্য করবার একটা প্রয়াস লক্ষ্য করি। আগে তা প্রায়ই প্রাসঙ্গিকতাবর্জিত হত। এখন অবশ্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক মন্তব্যই দেখি। কিন্তু এত এত মন্তব্য করার পেছনে আপনার ফিলসফিটা কি, তা জানার আগ্রহ আছে আমার। সময় থাকলে শেয়ার করবেন। শুভকামনা রইল।

৩| ২২ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৩৪

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ১ম স্তরের জ্ঞান মানুষকে অহংকারী করে, ২য় স্তরের জ্ঞান মানুষকে বিনয়ী করে এবং ৩য় স্তরের জ্ঞান মানুষকে নিশ্চুপ করে দেয়।
ভালো থাকুন।

২২ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শুকরিয়া। আপনার শেয়ার করা প্রবাদের সাথে একটা সম্পূরক প্রশ্ন - আপনি নিজেকে কোন স্তরের জ্ঞানী মনে করেন? প্রথম? দ্বিতীয়? তৃতীয়?
শুভেচ্ছা।

৪| ২২ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১৫

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: বই পড়া ভালো।বই পড়লে জ্ঞান বৃদ্ধ পায়।জড়তা হারিয়ে যায়।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:১২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আচ্ছা।

৫| ২২ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনন্যসাধারণ  লেখা।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:১২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শুকরিয়া।

৬| ২২ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৮

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: আপনার সাথে আমার অনুভূতি অনেকটাই মিলে গেলো।
বই পড়া মানুষকে বদলে দেয় ভেতর থেকে।
কিন্ত এখন শো অফের যুগ। বই পড়া নিভৃতচারী মানুষের জায়গা ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসছে। বন্ধুভাগ্য আমারও বেশ খারাপ তবে বই আছে বলেই নিজেকে অতটা একা মনে হয়নি।তবে চারপাশের অনুভূতিহীন মানুষগুলোর দেয়া আঘাত খুব লাগে।
তবুও একটা জিনিস মনে করি নিজের যখন প্রজন্ম হবে তাদেরও আমি অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ হিসাবেই গড়ে তুলতে চাইব। কারন ভোঁতা সেলিব্রিটি হওয়ার চেয়ে একজন শার্প নিভৃতচারী হওয়া অনেক ভাল।

মনে হচ্ছে আপনার সাথে আডডা বেশ জমবে।আপনার লেখাটি ৮৫ ভাগ আমার মনের কথাই প্রকাশ করেছে।
শুভকামনা রইল।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:১৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: লেখাটি পুরো পড়ে মন্তব্য করলেন, এ জন্যে বিশেষ ধন্যবাদ। সমমনা কাউকে খুঁজে পাওয়াও, তাও স্রেফ লেখার থ্রুতে - বেশ আনন্দের ব্যাপার। কথা হবে, আমার বা আপনার পরবর্তী কোন লেখায়। ভালো থাকুন। নিরাপদ থাকুন। শুভকামনা।

৭| ২২ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:১৫

মৌরি হক দোলা বলেছেন: পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বন্ধু বই :) :)

করোনার ছুটিতে ভাইয়া ব্লগে! :)

শুভকামনা...

২৩ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:১৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: করোনার ছুটিতেই এই জার্নাল টাইপের লেখা লিখবার সময় পাচ্ছি, দোলা। না হলে সময় সংকীর্ণ। তুমি বেশ গুছিয়ে লেখো। আমার ভালো লেগেছে তোমার লেখা পড়তে। চালিয়ে যাও। নিরাপদ থেকো। শিবচর তো লকডাউন করেছে।

৮| ২৩ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:০৯

আলাপচারী প্রহর বলেছেন: ভালো লেখা। বই পড়ে পড়ে আজ আমি ব্যর্থ মানুষ আমার সংসারের তাবৎ মানুষদের মূল্যায়নে।

২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আমাদের মাপার স্কেল আমাদেরই তৈরি করে নিতে হবে ভাই। সমালোচনা হজম করার ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া পথ নেই। রুচিশীল না হওয়াটা নিজের সত্ত্বার উপর জুলুম, আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে রুচিশীল হওয়াটা নিজের দৈনন্দিন জীবনের ওপর জুলুম।

৯| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: আমি খুব সম্ভবত প্রথম থেকে দ্বিতীয় স্তরের পথে আছি।
ধন্যবাদ।

১০| ২৯ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৫৭

নায়লা যোহরা বলেছেন: বেশ B-)

১১| ০৯ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:৩০

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: লেখক বলেছেন: " বাইরের জাজমেন্ট বই পড়ার "কুফল" এর প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপে এসে নিজে একজিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসে ভোগা শুরু করবেন, যখন এম্প্যারিকেলি দেখবেন সমাজ সফল - বিফল মানুষ চিহ্নিতকরনের ক্ষেত্রে উন্নত রুচি - উন্নত পাঠাভ্যাস - মানবিক হওয়াটাকে কোন গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠী হিসেবে বিবেচনা করে না। তৃতীয় ধাপে এসে এই অস্তিত্ববাদী যাতনার বিপরীতে একটা নিজে থেকেই একটা ডিফেন্স মেকানিজম তৈরি হয়ে যাবে, অথবা আপনি নিজেকে "লুজার"দের কাতারে রেখেই বইয়ের জগতে ডুবে থাকবেন।" সহমত ।

তারপরেও আমি বইয়ের জগতে ডুব দিয়েই মরতে রাজি । বিশ্বের এই বিশাল রাজ্যটিতে যখনই প্রবেশ করি এমনই একধরণের প্রশান্তি চলে আসে মনে যা আমি কারো সাথে শেয়ার করতে রাজি নই - কোনোক্রমেই ।

০৯ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শুভেচ্ছা আপনার জন্যে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.