নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
"Every one being allowed to learn to read, ruineth in the long run not only writing but also thinking. Once spirit was God, then it became man, and now it even becometh mob."
~
ফ্রেডরিখ নিটশে
ফ্রেডরিখ নিটশে সম্ভবত পৃথিবীর সবচে জনপ্রিয় 'মব ফিলোসফার' , তার মৃত্যুর প্রায় দেড়শো বছর পরেও তিনি গ্লোবাল পপ কালচারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ মন্তব্যটি করলাম তার মেধা, সময় থেকে অগ্রবর্তী তার চিন্তা - চেতনার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই। নিটশে শুধু ভিন্নধাঁচের চিন্তা ধারণ করতেই তাই নয়, তার প্রকাশও করতেন সবচে ক্যাচি ফ্রেইজে, বা, চটকদার ভাষায়। সে সমস্ত চিন্তার সারমর্ম - এককথায় শিরোনাম আকারে তিনি যা দিতেন, তা খুব আই ক্যাচি বা দৃষ্টিনন্দন হলেও, আমাদের অনেকেরই সে শিরোনামের পেছনে লুকিয়ে থাকা গভীর তাত্ত্বিক আলাপে ডুব দেবার সক্ষমতা নেই। কিন্তু বিতর্কের টেবিলে প্রাসঙ্গিকতাবিহীনভাবে নিটশের চটকদার একটি কথা, এবং নিটশের নাম ছুঁড়ে দিলেই যেহেতু প্রতিপক্ষের ওপর প্রবল আধিপত্য এনে ফেলা যায়, শ্রোতাদের তরফ থেকে অর্জন করা যায় সম্ভ্রম - কাজেই আপাতত সে সমস্ত আই ক্যাচি ফ্রেইজের পেছনের তাত্ত্বিক আলাপ বিস্তারিত না বুঝেই আমাদের জীবন চলে যায় অনেক সুন্দররূপে। যদি কেউ প্রশ্ন করে - মানুষের চিন্তার যে বিগত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস - তার দু' একটা দয়া করে বলুন, তবে খুব চিন্তাভাবনা করে দেখবেন - মানুষ তিনটি উক্তি খুব অধিক ব্যবহার করে - এক, নো দাইসেলফ, যেটা সক্রেটিসের উক্তি হিসেবে বহুল প্রচলিত ( আসলে উক্তিটি সক্রেটিসের নয়, সক্রেটিসের জন্মেরও শত শত বৎসর পূর্বে, গ্রীক মিথলজির ঈশ্বর অ্যাপোলোর মাউথপিস / পার্থিব প্রবক্তা ডেলফির মন্দিরের দেয়ালে লেখা একটি প্রাচীন গ্রেশিয়ান প্রবচন), দুই, রেনে দেকারতের কোগিটো অ্যারগো সুম/ আই থিঙ্ক দেয়ারফর আই অ্যাম, এবং তৃতীয়ত, নিটশের - গড ইজ ডেড, অ্যান্ড উই হ্যাভ কিল হিম। এই তিনলাফে তিনহাজার বছরের চিন্তার ইতিহাস আমরা পার করে দিই। কারণ হয়তো এই যে - মানুষের চিন্তার ইতিহাসের আনুপুঙ্খিক পাঠ বলাইবাহুল্য, অত্যন্ত শ্রমসাধ্য কাজ, অথবা/এবং এই কারণে যে - মানুষের চিন্তার ইতিহাস বাদ দিয়েও আরামসে একটা জীবন পার করে দেয়া যায়, যদিও না বুঝেই বিবিধ প্রোপ্যাগান্ডার স্রোতে ভেসে ভেসে ।
আমার আজকের আলোচনার সূত্রধর সেই 'মব ফিলোসফার' নিটশে, যিনি মরালীটি বা নৈতিকতাবোধ,রিলেজিয়ন বা ধর্ম, নিহিলিজম, সুপারম্যানের আইডিয়াসহ - দর্শন চর্চার ইতিহাসের শুরু থেকে দার্শনিকদের তাড়িয়ে ফেরা অনেক নতুন, পুরাতন প্রশ্নের খুবই চমকপ্রদ এবং মৌলিক উত্তর দিয়েছেন। অপরদিকে নিটশে এবং তার অনুগামী দর্শন / তত্ত্বচর্চাকারীদের ব্যাপারে অভিযোগ আছে অ্যাডলফ হিটলারের মত ব্যক্তিত্বদের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে তাতিয়ে তোলার, অনুপ্রেরণা জাগানোর। সার্বজনীন সত্য বলে কিছু নাই, বাস্তবতার কোন সার্বজনীন সংজ্ঞা নাই, আছে কেবল পারস্পেক্টিভ - এ সমস্ত তত্ত্ব খাড়া করে পৃথিবীকে তারা ঘোলাটে করে তুলেছেন, যার ফলশ্রুতিতে সমগ্র মানবজাতির সার্বজনীন অধিকার নিয়ে দাবীদাওয়া তুলবার জন্যে কোন স্পেসিফিক ইডিওলজিক্যাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। আর এই ঘোলাটে অবস্থায়, যখন সত্য কি, মানবাধিকার কি - এই সমস্ত প্রশ্নের কোন নির্দিষ্ট জবাব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে, নিটশে সমাধান দেন এই বলে যে - ক্ষমতাই হচ্ছে এ অবস্থার একমাত্র সক্রিয় বস্তু। সহজ অর্থ করলে - বন্দুকের নলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসবে সমস্ত সত্য, অধিকার, নীতিনৈতিকতার গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা। উনিশ শতকের গোঁড়া থেকে, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে ছড়ানো নিজ নিজ ঔপনিবেশিক অঞ্চল থেকে সঞ্চিত অর্থের জোরে ইউরোপে যে শিল্পবিপ্লব, পুঁজিবাদী বিকাশ, এবং উপনিবেশবাদের পরিশীলিত রূপে বর্তমান পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির হেজিমনি - তার তাত্ত্বিক দিকটির ভীত নিটশে সামাল দিয়েছেন , সচেতনে বা অবচেতনে।
সে যাই হোক, শখের বসে কেনা পেঙ্গুইন ক্লাসিকস সিরিজের নিটশে রিডার বইটি আজ সকালে উল্টে পাল্টে দেখার সময় হঠাৎ নিটশের উপরোক্ত উক্তিটি চোখে পড়লো। নিটশে এখানে দাবী করছেন - সমাজে ব্যাপকভাবে লিখতে পড়তে জানার হার বৃদ্ধি শুধুমাত্র লেখকদের লেখার মান নয়, বরং সমস্ত চিন্তার জগতকেই টেনে নীচে নামিয়ে দেবে। একসময় ঈশ্বর ছিল সর্বেসর্বা, হিউম্যানিজম বা মানবতাবাদী আদর্শের চর্চা প্রবল হবার পর ঈশ্বরের জায়গা নিয়ে নিল মানুষ, আর এখন মানুষের জায়গা দখল করে নিচ্ছে মব, বা জনতার আগ্রহ, অভীক্ষা।
কাজেই, বোঝা যাচ্ছে, যদিও নিটশে 'মব ফিলোসফার' বা আমজনতার দার্শনিক, তিনি ব্যক্তিগত জীবনে মব মেন্টালিটি পছন্দ করতেন না।
আমার চিন্তার কারখানা শিরোনামের সিরিজ ব্লগের প্রথম কিস্তিতে চিন্তা করবার জন্যে দুটো প্রশ্ন আপনাদের জন্যে উপহার-
১। আপনিও কি নিটশের মত মনে করেন , শিক্ষার হার বাড়লে/পাঠকের সংখ্যা বাড়লে/ সব বিষয়ে সবার মতামত দেয়ার মত ক্ষেত্র তৈরি হলে তা সামগ্রিকভাবে মানবজাতির চিন্তার মানকে টেনে নীচে নামিয়ে আনবে?
২। নিটশের এ উক্তির সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কোন সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায় কী?
প্রিয় পাঠক, আসুন চিন্তা করি। আপনার চিন্তার ফলাফল আমাকে জানাতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। আপনার চিন্তার সাথে আমার চিন্তা মিলবে এমনটাও নয়। আমার চিন্তার সাথে আপনার চিন্তা মেলার কোন প্রয়োজনীয়তা আছে এমনটাও নয়। কিন্তু আপনার মতামতের প্রতি আমার শ্রদ্ধা থাকা বাঞ্ছনীয়, যাতে চিন্তার ভিন্নতা সত্যেও আমরা পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকতে পারি। এবং, আসুন চেষ্টা করি, দ্রুত আমাদের চিন্তার কনক্লুশান না টানবার, এবং ভিন্ন ভিন্ন পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে প্রশ্নগুলোকে অ্যাপ্রচ করবার।
(যারা নিটশের পুরো টেক্সটটি পড়তে চান তাঁদের জন্যে -
“Of all that is written, I love only what a person hath written with his blood. Write with blood, and thou wilt find that blood is spirit.
It is no easy task to understand unfamiliar blood; I hate the reading idlers.
He who knoweth the reader, doeth nothing more for the reader. Another century of readers--and spirit itself will stink.
Every one being allowed to learn to read, ruineth in the long run not only writing but also thinking.
Once spirit was God, then it became man, and now it even becometh mob.
He that writeth in blood and proverbs doth not want to be read, but learnt by heart.
In the mountains the shortest way is from peak to peak, but for that route thou must have long legs. Proverbs should be peaks, and those spoken to should be big and tall.
The atmosphere rare and pure, danger near and the spirit full of a joyful wickedness: thus are things well matched.
I want to have goblins about me, for I am courageous. The courage which scareth away ghosts, createth for itself goblins--it wanteth to laugh.
I no longer feel as you do: this cloud which I see under me, this blackness and heaviness I laugh at - precisey this is your thundercloud.
You look up when you desire to be exalted. And I look down because I am exalted.
Who of you can at once laugh and be exalted?
He who climbs upon the highest mountains laughs at all tragedies, real or imaginary.
Courageous, untroubled, mocking, violent - that is what wisdom wants us to be: wisdom is a woman and loves only a warrior ..." ( Thus Spoke Zarathustra, A Nietzsche Reader, Penguin classics, page: 16 - 17)
২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৩৯
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্যে ধন্যবাদ স্যার! তবে, একটু কষ্ট করে ভেবে দেখার অনুরোধ, এই প্রসঙ্গগুলিকে আরও ভিন্ন কিছু দৃষ্টিভঙ্গীতে বিচার করা সম্ভব কিনা।
২| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:০৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি শিক্ষক মানুষ, ১৫০ বছর আগের কোন এক মানুষের ধারণা, যাকে বাংগালীদের চেনার কথা নয়, তার কথা নিয়ে আলোচনা কেন? আপনার ধারণা তুলে আলোচনায় আসেন! পোষ্টের নাম দিয়েছেন, "চিন্তার কারখানা-১", এবং এমন ১ জনের চিন্তাকে সামনে আনছেন, যাকে ব্লগারেরা চেনার কথা নয়।
২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৪৬
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: স্যার, আপনার সঙ্গে আমার পূর্বআলোচনার স্মৃতি সুখকর নয়। আমার ব্লগে আসতে মানাও করেছিলাম বোধয়। তবুও যখন পদধূলি দিলেন, আপনার এই অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্যের সূত্র ধরে অপ্রাসঙ্গিক দু'একটি কথা যোগ করি। আপনার উপরোক্ত মন্তব্যে আপনি একজন রিডাকশনিস্ট, এবং একজন জেনেরালাইজার। দুটো শব্দই খুব উচ্চমার্গীয় তাত্ত্বিক গালি। উপরের লেখাটি বড়, ওটার অর্থ পাঠ করে বের করা কষ্টসাধ্য, আপনার কাছে হয়তো বা সময় নষ্টের সামিল। কিন্তু দুটো বিশেষণ যে আপনাকে দিলাম, ও দুটো একটু কষ্ট করে গুগল করুন। জীবন পাল্টে যাবে। শুভকামনা রইল আপনার জন্যে।
৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: দুটো প্রশ্নই খুব কঠিন। হুটহাট করে উত্তর দেওয়া ঠিক হবে না।
২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: উত্তর দেয়া জরুরী নয়। লেখাতেই মেনশন করা আছে। ভালো থাকুন স্যার!
৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬
পদ্মপুকুর বলেছেন: যদিও একটা লেখায় আপনি আমাকে দর্শনের শিক্ষার্থী বলে মন্তব্য করেছিলেন, কিন্তু আমি তা নই। আমার ডিপার্টমেন্টের একটা সহযোগী কোর্স ছিলো এইথিজম অ্যান্ড দ্য ক্রিটিক অব রিলিজিয়ন নামে। সেখানেই অস্তিত্ববাদী এইসব দার্শনিকদের সম্পর্কে কিছুটা পড়ে মানে মানে করে পাশ করে বেরিয়েছি। সে হিসেবে আপনার এই আলোচনায় দাখিল হওয়াটা আমার জন্য কঠিন।
তবে নিৎশের 'উই হ্যাভ কিলড দ্য গড' এর সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন নীরুকুমার স্যার। আমাদের প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নিজের স্থুল চাওয়াগুলোকে ঈশ্বরের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে আমরা ঈশ্বরত্ব থেকে সাধারণত্বে নামিয়ে এনেছি, সে অর্থেই নিৎশে বলতে চেয়েছেন যে আমরা ঈশ্বরকে মেরে ফেলেছি।...
গুরুত্বপূর্ণ কথাটা হলো- সার্বজনীন সত্য বলে কিছু নেই এবং বাস্তবতার কোনো সার্বজনীন সংগা নেই। সে হিসেবে নিৎশে যখন এ কথাটা বলেছেন, তাঁর পার্সপেকটিভে হয়তো ঠিকই ছিলো। কিন্তু এখনকার জন্য অবসোলেট হয়ে গেছে। আমি ব্লগার রাশিয়ার সাথে একমত।
সীমিত পরিসরে খোলা চিন্তার দোকানে একটু চা খেলাম আর কি!
২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:০১
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: বাহ বাহ! এতদিন তো ভয়ে ভয়ে লিখতাম, কবে দর্শন সংক্রান্ত আমার কোন চাপাবাজি আপনার কাছে রেডহ্যান্ডেড কট খেয়ে যায়। এখন তো কলম দিয়ে কেবল মেশিনজ্ঞানের গুলি বের হবে!
আপনি কি তবে সাংবাদিকতা ও গণসংযোগের ছাত্র ছিলেন?
আর আমার পোস্ট সংক্রান্ত অংশের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জেনেই ক্ষান্ত দিলাম। কে কি বলে, শোনার জন্যেই লেখা!
শুভকামনা হজরত!
৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:১৭
পদ্মপুকুর বলেছেন:
৬| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৪৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
লেখক বলেছেন, " আপনার উপরোক্ত মন্তব্যে আপনি একজন রিডাকশনিস্ট, এবং একজন জেনেরালাইজার। দুটো শব্দই খুব উচ্চমার্গীয় তাত্ত্বিক গালি। "
-লেখার তলা নেই, গরুর রচনা লিখে উচ্চমার্গীয় তাত্ত্বিক গালি দিচ্ছেন; আপনার ছাত্রদের জন্য প্রশ্নফাঁসের ব্যবসা করেন?
৭| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৫১
আহমেদ জী এস বলেছেন: সাজিদ উল হক আবির,
চিন্তা ভাবনার তো নির্দিষ্ট কোনও পথ নেই, সূত্রও নেই - এক একজন মানুষ একেক পথে চিন্তা করে তাই চিন্তার অলিগলিরও শেষ থাকেনা।
তেমন হলে চিন্তার মান , কে চিন্তা করছেন , কতোখানি প্রজ্ঞাবান তিনি এসব বিচারে চিন্তা উর্দ্ধগামী হয়ে শিখর ছুঁতে পারে আবার নিম্নগামী হয়ে গিরিখাতে পড়ে যেতেও পারে।
বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে চিন্তার মান বেশির ভাগই নিম্নগামীই বটে কারন এ সমাজে একজনে বলেন বাকীরা তার ধুঁয়ো তোলেন একটু এদিক সেদিক করে এবং যেহেতু সমাজের মানুষের বৃহদাংশের ঘটে সৃষ্টিশীল বুদ্ধিমত্তা-জ্ঞান-প্রজ্ঞা তেমন নেই তাই সব “রা”ই একই সুরে বাজে।
ব্লগার রাশিয়া বলেছেন সবাই লেখাপড়া করলে চিন্তার মানের উন্নতি ঘটবে। আপনিও বলেছেন - শিক্ষার হার বাড়লে, পাঠকের সংখ্যা অর্থাৎ পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়লে.....।
আমি মনে করি - লেখাপড়া করলেই বা শিক্ষার হার বাড়লেই যে চিন্তার মানের উন্নতি ঘটবে তা কিন্তু নয়। কারন -
শেখা, জানা ও বোঝা হলো জ্ঞানের তিনটি স্তর । পাঠশালায়, আমরা পড়ি বা শিখি বা এক কথায় বিবিধ অক্ষর জ্ঞান লাভ করি অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহন করি । লাভ করি কি করে এগুলো সাজিয়ে বাক্য তৈরী করতে হয় তার জ্ঞান । এ পড়া বা শেখাটাই কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান নয় । মনে করুন প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা পড়ি বা আমাদের শেখানো হয় এই বাক্যটি – “বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ”। এই গণতন্ত্রই বা কি জিনিষ কিম্বা রাষ্ট্রই বা কাকে বলে এ বিষয়ে আমাদের জানা থাকেনা । এগুলো জেনেই বা লাভ কি এ জাতীয় মাথাব্যথাও আমাদের হয়না । বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র না হয়ে অন্য কিছু হলে ক্ষতিটা – ই বা কি হতো তাও আমারা ভাবিনে । আমরা শুধু মুখস্থ করি । উচ্চতর বিদ্যালয়ে আরো একটু উঁচু ক্লাসে এই শেখানো বাক্যটি সম্পর্কে আরো কিছু জানা হয়ে যায় । এই জানাটা হয় আগ্রহ থেকে । এভাবে বয়স বাড়ার কিম্বা আরো কিছু শেখার সাথে সাথে আমরা গনতন্ত্র কি তা বুঝি । রাষ্ট্র-ই বা কি তা বুঝতে পারি । সঠিক গণতন্ত্র বা সফল রাষ্ট্রের সুফল-ই বা কি, কুফল-ই বা কি সে সম্পর্কে একটা ধারনাও তৈরী হয়ে যায় । এই শিক্ষা বা জানা আমাদের কুশলী করে, আমাদের নৈপুণ্য বাড়ায়, চেতনার প্রসার ঘটায় আর বাড়ায় বিদ্যা-বুদ্ধি । আমাদের এই “জানা” যদি অভিজ্ঞতার আলোকে বোধের আওতায় এসে জীবনের প্রয়োগিক ক্ষেত্রে সফলতার সাথে প্রযুক্ত হওয়ার উপযোগী হয় তবেই তাকে বলতে হয় “জ্ঞান” । আর যিনি তা বোঝেন ও এর প্রয়োগও করেন তিনিই তো জ্ঞানী ?
এই “জ্ঞানী”দের অভাব যে বড্ড বেশি এদেশে। এদেশে এখন তো আর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, নজরুল, সুকান্ত আর মধুসুদন, বুদ্ধদেব বসুদের জন্ম হয়না তাই চিন্তার প্রসারতাও বাড়েনা।
এখানে ‘সেফুদা” না কি যেন নামের অনেক সেলিব্রিটিদেরই জন্ম আছেন যাদের পিছনে হুক্কাহুয়া দেয়ার লোকের অভাব নেই । এরা যখন নীটশের “ মব” হয়ে ওঠে তখন চিন্তারা স্বভাবতই নিম্নগামী হয়ে রাস্তার ড্রেনের পানির দূর্গন্ধই বাড়াবে।
এতো কিছু বলার পরেও সহ ব্লগার রাশিয়া আর পদ্ম পুকুর এর সাথে একমত। চিন্তার ভিন্নতা থাকবেই কিন্তু তার “মনজিল” একটা-ই হলে ঈশ্বরকে আর মরতে হয়না।
২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫৩
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: বিষদ মন্তব্যে ধন্যবাদ হজরত। কিন্তু একটা কথা বলুন দয়া করে , স্পেসিফিক্যালি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাথে আমাদের চিন্তার প্রসারতা বৃদ্ধির কি সম্পর্ক? আর, চিন্তাশীল মানুষের উদাহরণ দেবার কালে আমরা ৫০ এর দশক পর্যন্ত এসেই থেমে যাই কেন? শুভকামনা আপনার জন্যে! ভূতের গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় বিশেষ পুরস্কার যাতে আপনার শিকেতেই ছেঁড়ে এই প্রার্থনা করি!
৮| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০০
কোলড বলেছেন: I really like your blog. Can you please correct the Bengali rendition of Nietzsche? In German language the name ended in "e" is pronounced as "a" and thus It should be নিটশা.
২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫৫
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: Thank you for your comment dear Hazrat! Your insightful comments inspire me. However, the correction you provided seems a long hassle as so many Nietzches are there. Probably I will keep it in my mind next time. Stay safe!
৯| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫৩
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: যারা চিন্তার কারখানায় এসে আড্ডা দিলেন, তাঁদের ধন্যবাদ, এবং সাথে আরও কিছু চিন্তার সূত্র -
১। নিটশে নিটশের মেধার জায়গা থেকে কথাটি বলেছেন, এবং হিটলার, যিনি ডারউইনের ন্যাচারাল সিলেকশনের একজন পাঁড় ভক্ত ছিলেন, সুপারম্যান থিওরিতেও বিশ্বাস করতেন - তিনি নিটশের চিন্তার সঙ্গে নিজের চিন্তাকে মেলাতে পেরেছিলেন। আমি নিজেও নিটশের এ ভাবনার সাথে খানিকটা একমত। আমার মনে পরে ঢাবির ইংরেজি বিভাগে ছাত্র যখন ছিলাম , আমাদের সবচে ভালো শিক্ষকদের একজন একদিন ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষেদের সঙ্গে বলেছিলেন - তোমাদের ঘিলুতে ঢোকে এমন লেকচার দেয়ার জন্যে আমাকে প্রায় মাটিতে নেমে কথা বলা লাগে, যেখানে আমার আকাশে ওড়ার কথা।
২। আমার মনে পরে হুমায়ূন আহমেদের কথা। বাংলাদেশের নিম্ন - মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে জন্ম নেয়া মেধাবী এই লেখক আজীবন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষদের জন্যেই লিখে গেলেন। কোন নিরীক্ষাধর্মী রচনায় গেলেন না। হুমায়ূন আহমেদ একটা প্রতীকী নাম এখানে, সৃজনশীলতার জগতের সকলে যদি একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর মেধার / বোধের / গভীরতার মানুষদের উদ্দেশ্য করেই লিখতেন (অবশ্যই এটা একটা ইউটোপিয়ান পৃথিবীর কল্পনা) তবে পৃথিবীর ইতিহাস আরও সুন্দর ভাবে লেখা হত।
৩। সবশেষে চিন্তা করে দেখুন সাকিব আল হাসানের মেয়েকে নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ার তাণ্ডব। যারা মেয়েটিকে নিয়ে নোংরা মন্তব্যগুলি করলেন, যারা সুযোগ পেলেই মেয়েদের ইনবক্স কুরুচিপূর্ণ ম্যাসেজে ভরে ফেলেন - তারাও তো সার্টিফিকেট অনুযায়ী শিক্ষিতই। নিটশে - এই ম্যাড ম্যাড মবদের অপছন্দ করতেন। তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতায় আগমন কামনা করতেন না। তার জন্যে তাকে কি দোষ দেয়া যায়? নিটশে তো মাথা গরম ফিলসোফার, তার চে অনেক ভদ্রভাষায় লিখে যাওয়া কার্ল মার্ক্স পর্যন্ত বলেছিলেন - পৃথিবীর সর্বত্র শান্তিপূর্ণ কমিউনিস্ট গভর্নমেন্টের অভ্যুত্থান (কাগজে কলমে) সম্ভব হতে পারে, শুধুমাত্র ভারত আর আফ্রিকা ছাড়া। কারণ ওখানকার মানুষরা বর্বর। এখানে লাগবে সশস্ত্র অভ্যুত্থান।
১০| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৪২
বিপ্লব০০৭ বলেছেন: আপনার ৯ নং কমেন্টের ৩ নং পয়েন্ট # মার্কস কোথায় বলেছেন যে, পৃথিবীর সর্বত্র শান্তিপূর্ণ কমিউনিস্ট গভর্নমেন্টের অভ্যুত্থান (কাগজে কলমে) সম্ভব হতে পারে, শুধুমাত্র ভারত আর আফ্রিকা ছাড়া। কারণ ওখানকার মানুষরা বর্বর। এখানে লাগবে সশস্ত্র অভ্যুত্থান।
রেফারেন্স চাচ্ছিলাম।
ভালো থাকুন।
২৫ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:৫৪
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: প্রশ্নে ধন্যবাদ স্যার। উক্ত তথ্যটি সলিমুল্লাহ খানে খানান , জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত রাজনৈতিক তথ্য ও তত্ত্ব নাম্নী সিরিজ বক্তৃতামালায় ৮ ই মে ২০১৯ সাল "ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলুশান অ্যান্ড কার্ল মার্ক্স" শীর্ষক বক্তৃতায় প্রদান করেন। আমার জন্যে রেফারেন্স হিসেবে এতটুকুই যথেষ্ট ছিল, যেহেতু ঐ তিনমাস ব্যাপী গতিশীল সিরিজ বক্তৃতায় আমি সশরীরে উপস্থিত ছিলাম। আপনার ব্যবহারের সুবিধার্থে উল্লেখ করছি ১৮৫৩ সালে কার্ল মার্ক্স রচিত 'The Future Results of British Rule in India' শীর্ষক প্রবন্ধটি, যেখানে কার্ল মার্ক্স শুরুয়াদে ভারতীয় উপমহাদেশকে বর্বরদের দেশ উল্লেখ করে সেখানে প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ কলনিয়াল স্যাটেলমেন্টকে লেজিটিমাইজ করেন। এডওয়ার্ড সায়ীদ - নিজে মার্ক্সের এ ভিউকে অরিয়েন্টালিস্ট দৃষ্টিভঙ্গী বলে উল্লেখ করেছেন।
১১| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:৩২
চাঁদগাজী বলেছেন:
বাংলাদেশে যারা কোথায়ও সুবিধা করতে পারে না, তারা শিক্ষকতায় যায়, আপনার অবস্হা সেটাই তো?
১২| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:০৯
ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: চমৎকার পোস্ট! আমার কাছে দর্শন কোনো উত্তর খোঁজার জায়গা মনে হয় না, এটা হল প্রশ্ন তোলার জায়গা, যা ভাবাবে, চিন্তা করতে বাধ্য করবে। প্রশ্ন চিন্তার জন্ম দেয়, তাকে শানিত করে, উত্তর থামিয়ে দেয়।
নিটশে খুবই চমকপ্রদ প্রস্তাবনা করেছেন, আমি ইংরেজি অংশটুকু পুরো পড়িনি, ভাষাগত দূর্বলতা আছে আমার। কিন্তু আপনি যে দুইটি পয়েন্টে ভাবনা ছুড়ে দিয়েছেন তা আমাকে ভাবিয়েছে। আমার প্রাথমিকভাবে মনে হল শিক্ষার হার বাড়ানোর প্রথম ধাক্কায় মান কমে তলানিতে যাবে। কারণ তখন কোয়ালিটি থেকে কোয়ানটিটি প্রাধান্য পায়। আর 'শিক্ষা' বলতে সেইটা কি প্রকৃত শিক্ষা নাকি জিপিএ-৫ শিক্ষা সেখানেও প্রশ্ন থাকে। যদি আন্তরিক প্রচেষ্টায় যথাযথ প্রক্রিয়ায় একটা জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করা হয়, ইন দ্য লং রান সেটার কিছু সুফল পাওয়া যাবে। যেমন আইসল্যান্ড টাইপ কিছু দেশের কথা ভাবা যায় যেখানে সকল জনগোষ্ঠী শিক্ষিত, সেখানে মব সাইকোলজি কেমন দাঁড়িয়েছে সেটা একটু দেখা যেতে পারে।
আর উনি এই কথা বাংলাদেশকে ভেবেই লিখেছেন কিনা বা আমাদের কথা কীভাবে উনি ১৫০ বছর আগেই লিখলেন সেটাই ভাবছি।
শুভকামনা রইলো! চিন্তার কারখানায় বাতি না নিভুক...
২৫ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৩৭
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শুকরিয়া হজরত! কতোদিন পর আবার আপনার সাথে বাতচিতের সুযোগ। ২০১৪ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সেই পারফর্মেন্স পোয়েট্রির প্রতিযোগিতায় দেখা হয়েছিল, তারপর আবার এই আজ কে।
আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দু' একটি কথা যোগ করি। দর্শন পাঠের একটা মৌলিক নিয়ম হচ্ছে - যতদূর সম্ভব হয় চেষ্টা করতে হবে কনক্লুশান না টানবার। যত ভিন্ন ভিন্ন পয়েন্ট অফ ভিউ আছে - সবগুলো থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখবার। যদি এই সূত্র মেনে আমি আমার কথাকেই আলোচনার টেবিলে শেষ কথা বলে মনে না করি , তবে আমাদের পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ে, সমাজটাও একটা মানবিক সমাজ হয়ে ওঠে।
আর নিটশে প্রসঙ্গে যে কথাগুলো বললেন - কোয়ানটিটির উপরে কোয়ালিটির প্রাধান্যের বিষয়টি উল্লেখ করলেন - এ সংক্রান্ত মতামত আমাদের চিন্তাকে ঋদ্ধ করবে।
আপনার নতুন কবিতা পাঠের সুযোগ থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না। সর্বাঙ্গীণ শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩০
রাশিয়া বলেছেন: আমি নিটশের সাথে একমত না। সবাই লেখাপড়া জানলে চিন্তার মানের আরও উন্নতি ঘটবে বলে আমি মনে করি। কারণ তখন একটি ইস্যুতে একেকজন একেকভাবে চিন্তা করবে। সবাই নতুন আইডিয়া জেনারেশনে উদ্বুদ্ধ হবে হবে চিন্তার বিভিন্নতা পাওয়া যাবে। বাংলার সাহিত্যাকাশে রবীন্দ্রনাথ যখন এককভাবে রাজত্ব করত, তখন মানুষের চিন্তাধারা ছিল একমুখী। কিন্তু পরবর্তীতে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, নজরুল, সুকান্ত আর মধুসুদনের মত তৃণমূল থেকে ঊঠে আসা সাহিত্যিকদের কল্যাণে আমরা চিন্তাধারার অপর দিকটি দেখতে সমর্থ হয়েছি। এতে বরং চিন্তাধারার আরো বিকাশ ঘটেছে।