নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
প্যাট্রিক মোদিয়ানো সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার জয় করেন ২০১৪ সালে। সে বছরেই আমি মোদিয়ানো'র আলোচিত উপন্যাস 'মিসিং পারসন' (১৯৭৮) ড্যানিয়েল ওয়েইসবোর্টের ইংরেজি অনুবাদ (১৯৮০) থেকে বাংলায় অনুবাদ করি, এবং পরের বছরের বইমেলায়তে অনুবাদকর্মটি মলাটবদ্ধ আকারে বাজারে আসে। এ বছর চমন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী এনাম রেজা ভাইয়ের আগ্রহে অনুবাদকর্মটি তাঁর প্রকাশনা সংস্থা থেকে পুনঃপ্রকাশ হচ্ছে।
'মিসিং পারসন' - উপন্যাসে প্রবেশের পূর্বে সহায়ক তথ্য হিসেবে জেনে রাখা ভালো হবে যে প্যাট্রিক মোদিয়ানো'র জন্ম ১৯৪৫ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর ফ্রান্সের প্যারিসে, এক ইহুদী পরিবারে। প্যাট্রিক মোদিয়ানোর বাবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, মোদিয়ানোর জন্মের বছর তিনেক আগে, হিটলারের নাজি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারাতে হারাতে কোনক্রমে বেঁচে যান তাঁর এক বন্ধুর সহায়তায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত সাহিত্যকর্মের পরিমাণ নেহায়েত কম নয়, কিন্তু মোদিয়ানো'র রচিত এ উপন্যাসের বিশেষত্ব এই যে, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাজি বাহিনীর নিস্রংসতার শিকার ইহুদীদের প্রতি বাহ্যিক সহানুভূতি থেকে সৃষ্ট কোন সাহিত্যকর্ম নয়। বরং উপন্যাসের রচয়িতা এমন একটি পরিবারের অংশ যারা সরাসরি সেই নিস্রংসতা চোখে দেখেছেন, এবং তাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই পার্থক্যটুকু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অন্যান্য সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম থেকে মোদিয়ানো'র উপন্যাস মিসিং পারসনকে পৃথক করে। ধার করা আবেগ, আর স্বতঃস্ফূর্ত জৈবিক অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক।
'মিসিং পারসন' উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র গায় রোল্যান্ড স্মৃতিবিভ্রাটে আক্রান্ত এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তাঁর জীবনে বিদ্যমান স্মৃতি বলতে স্রেফ একদশকের মতন সময়কাল ধরে কর্মরত থাকা একটি বেসরকারি গোয়েন্দাসংস্থার দিনগুলি। এর বাইরে তাঁর অতীত জীবন সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন। তবে তিনি এটা জানেন, স্মৃতিসংক্রান্ত তাঁর এ সমস্যার সূত্রপাত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে। 'মিসিং পারসন' উপন্যাসের ঘটনার চাকা গড়াতে শুরু করে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। তাঁর প্রারম্ভেই আমরা আবিষ্কার করি, যে বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থায় গায় কাজ করতেন তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই ফুসরতে বিদ্যমান সামান্য কিছু তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে গায় রোল্যান্ড শুরু করেন কুয়াশার চাদরে ঢাকা তাঁর অতীত জীবনের তত্ত্বতালাশ। গোয়েন্দা হিসেবে সফল একটি ক্যারিয়ারের প্রায় পরিসমাপ্তির মুখে এসে তিনি কি সমাধা করতে পারবেন তাঁর জীবনের সবচে ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ কেইসটি? তিনি কি খুঁজে বের করতে পারবেন, তিনি কে? নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিজের অতীত - বর্তমান - ভবিষ্যৎ হারানো আরও অসংখ্য হতভাগ্যের মত একজন 'মিসিং পারসন' হয়েই তাঁর জীবনের ইতি ঘটবে?
নোবেল বিজয়ের পূর্বে প্যাট্রিক মোদিয়ানো বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে তারকা ছিলেন না, যে অর্থে মিলান কুন্দেরা, সালমান রুশদি, বা হারুকি মুরাকামি নোবেল পুরস্কার না পেয়েও বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে তারকাখ্যাতিসম্পন্ন । নোবেল বিজয়ের পরেও প্যাট্রিক মোদিয়ানো বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে কোন সেলিব্রেটি সাহিত্যিকে পরিণত হন নি, যে অর্থে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, আলবেয়ার কাম্যু, বা গ্যাব্রিয়েল গারসিয়া মারকেজ নোবেল বিজয়ী সেলিব্রেটি সাহিত্যিক। সাধারণ পাঠক - যারা বই পড়তে ভালবাসেন তাঁদের মাঝে, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার অ্যাকাডেমিক অঙ্গনেও মোদিয়ানোকে নিয়ে অ্যাকাডেমিশিয়ান/ শিক্ষক - গবেষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া, তাঁর নোবেল বিজয়ের পরেও, পরিলক্ষিত হয় নি। ব্যাপারটা বেশ বিস্ময়করই, কারন তাঁর উপন্যাস 'মিসিং পারসন'কেই যদি বিচ্ছিন্নভাবে উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করি, দেখা যায় তা বিবিধ আঙ্গিক থেকে পাঠ ও বিবেচনা করা সম্ভব। উপন্যাসটিতে একটি ভয়াল যুদ্ধের করাল থাবায় স্মৃতিভ্রংশ, ও নিজের পরিচিত পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একজন মানুষের অতীত খুঁজে ফেরার মানবিক ও শ্বাসরুদ্ধকর একটি গল্প তো আছেই, সঙ্গে আছে নিজভূম, বন্ধুবান্ধব, ও আত্মপরিচয় থেকে বিচ্ছেদের তাড়নাজাত ডায়াস্পোরা সাহিত্যের স্বাদ; আছে যুদ্ধ এবং বিভীষিকা/ ওয়ার অ্যান্ড ট্রমার চাক্ষুষ প্রতিবেদন যার সাইকোঅ্যানালাইটিক পাঠ ও বিশ্লেষণ খুবই সম্ভবপর; এবং আছে আত্মপরিচয়শূন্যতা - নির্মাণ - বিনির্মাণের চক্রাকার আবর্তন। অর্থাৎ, উপন্যাসটি কয়েকটি লেয়ার বা স্তরে পাঠ করা সম্ভব যা স্রেফ আনন্দের জন্যে সাহিত্যপাঠ / প্লেজার রিডিং এর সুযোগ যেমন তৈরি করে দেয়, একই সঙ্গে সিরিয়াস পাঠক - গবেষকের হাতে তুলে দেয় সাহিত্যতত্ত্বের গভীরে ডুব দিয়ে বইটির উপজীব্য সময় - চরিত্রাবলী - দর্শনের নতুনতর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, ও অর্থ উন্মোচনের চাবিকাঠি।
মিসিং পারসন ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হলে সে বছরেই ফরাসী সাহিত্যের সম্মানজনক পুরষ্কার প্রি গনক্যুরে ভূষিত হয়। এ উপন্যাস ও তাঁর লেখকের ব্যাপারে আগ্রহ জাগানিয়া আরও অনেক তথ্যের সংযোজন সম্ভব, তবে গুণী পাঠক এ অনুবাদ পাঠ শেষে আগ্রহান্বিত হয়ে নিজেই হয়তো তা খুঁজে নেবেন, এই আশায় অনুবাদক হিসেবে আমার কর্তব্য আপাতত সমাপ্ত মনে করছি।
রকমারিতে বইটির প্রি অর্ডার নেয়া হচ্ছে - আগ্রহীদের জন্যে প্রি অর্ডার লিঙ্ক
০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:১০
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ , রাজীব ভাই। এই অনুবাদকর্মটি অবশ্য প্রতিভা নয়, পরিশ্রমের ফসল। শুভকামনা আপনার জন্যে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: আমি বলেছিলাম না আপনি একজন প্রতিভাবান মানুষ। বই আমি অবশ্যই সংগ্রহ করবো।