নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কখনও আমি অথবা আমার মন অথবা আমরা দুজন মিলে অনুসন্ধান করে বেড়াই সত্য ও সুন্দরের; যা শুধু গুটিকয় মানুষের স্বার্থের জন্য নয়, বরঞ্চ এই সমগ্র মানবতার জন্য।

আবীরের ঘোড়া

আবীরের ঘোড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিবেদন

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:০০

বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে গেছে। সাথে প্রচণ্ড ঝড় যেন সবকিছু উড়িয়ে নিতে চাচ্ছে। রহমত আলি শুনেছিল কেয়ামতের সময় নাকি সব শেষ হয়ে যাবে কিন্তু মসজিদ অক্ষত থাকবে, কিন্তু মসজিদটাও উড়িয়ে নিয়ে গেলো চোখের সামনে। তবে কি যা ঘটছে তা কেয়ামতের চাইতেও ভয়ঙ্কর কিছু? কোন কিছুই আর চিন্তা করতে পারছে না সে। বাড়ির উঠানে পানি ঢুকে গেছে। বাড়ির চালা উড়ে গেছে উত্তরের বাঁশঝাড়ের কাছে। পোয়াতি বউ আর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা রহমত। উপায় না দেখে আমগাছে উঠিয়ে দিয়েছে মেয়েকে। মেয়ে ভয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। স্ত্রীকে এই অবস্থায় কীভাবে উঠাবে বুঝতে পারছে না। কোলে করে কয়েকবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমগাছটার প্রথম শাখা একটু উঁচু হওয়ায় তাতে কাজ হয়নি। মেয়ের মতন কাঁধে করে উঠানোর চেষ্টাটা বাকি ছিল। এইবার তাই করলো। বহু কষ্টে বউকে ঘাড়ের উপর উঠালো সে। ৮ মাসের এই পেট নিয়ে কুলসুমেরও উঠতে জান বের হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু অন্য কোন উপায় না থাকায় এই ঝুঁকিটা নিতেই হলো শেষমেশ। পানি উঠতে উঠতে আমগাছ ছুঁই ছুঁই করছে। ঘরের চাল বরাবর পানি চলে এসেছে। রহমত বুঝতে পারছে না, এখন কি হবে!

পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে গাছের যে ডালে কুলসুম ধরে আছে তা ছুঁতে আর ২ ফুট লাগবে। রহমত আলি মেয়েকে এতক্ষণ ধরে ছিল। বউয়ের এই অবস্থা দেখে সে মেয়েকে ছেড়ে বউকে উপরের ডালে উঠতে বলে নিজে নিচের ডালে নেমে আসলো। রহমতের অর্ধেক পর্যন্ত ডুবে গেছে। রহমত বউকে উপরের ডালে উঠতে বলল, যেখানে তার মেয়ে ডাল জড়িয়ে আছে। ঝড়ের চাপ কিছুটা মৃদু হয়ে আসলেও পানি বেড়ে চলছে অবিরাম। কুলসুম বলল আমি আর পারছিনা। কুলসুমের গলা পর্যন্ত পানি, রহমত কোন মতে একটা ডাল ধরে ভেসে আছে। উপরের ডালে উঠলে মেয়েসহ ভেঙ্গে পড়তে পারে। রহমত বলল, আল্লাহ্‌ ভরসা ময়নার ডালটা ধরে ভাসতে থাকো। কুলসুম একবার ভাবে যদি ময়নার ডাল ধরে ভাসতে চায়, মেয়ের ডালটা না জানি আবার ভেঙ্গে পড়ে। রহমত ভেসে ভেসেই বউকে ধরতে চায়, কুলসুম বুঝতে পারে এভাবে ওরা সবাই এক সাথে মারা পড়বে। রহমতের মাথা কাজ করে না; বলে, ময়নার ডালডা ধরো, মরলে সব একসাথে মরমু। কুলসুম হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমার ময়নারে বাঁচাইয়ো। বলতে না বলতেই ডাল ছেড়ে দিয়ে স্রোতের মধ্যে বিলীন হয়ে যায় কুলসুম। রহমত মেয়েকে বলে শক্ত করে ডাইল ধরিস মা। সেও স্রোতের মধ্যে ঝাঁপ দিবে এমন সময় আচমকা মনে পড়ে, তার ময়নাকে কে দেখবে? চোখের সামনে ময়নার ভেসে যাওয়া দেখছে আর চিৎকার করে বাপ বেটি কাঁদছে। কুলসুমের শাড়িটা অনেকক্ষণ পর্যন্ত দেখতে পায় এরপর কোথায় সব হারিয়ে যায়, জানে না। ময়নার কোমর পর্যন্ত পানি, রহমত এখনও ডাল আর মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে ভাসছে। ঘন্টাখানেক পর পানি থাম ধরে। সারারাত গাছের উপর থেকে, সকাল থেকে পানি কমা শুরু হলে দুজনেই নেমে আসে নিচে।

সবকিছু তছনছ করে দিয়ে গেছে সিডর। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা প্রশান্তি অনুভব করে রহমত। সাথে সাথেই বুকটা হু হু করে কেঁদে উঠে-কুলসুম আর পেটের বাচ্চাটার জন্য। সারা সপ্তাহ তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে আশেপাশের গ্রামে, নদীতে। কোথাও লাশটা পেলো না। এক মাইল উজানের দিকে একটা উঁচু গাছের মধ্যে শুধু শাড়িটা পেয়েছিল অর্ধেক প্যাঁচানো অবস্থায়। হয়তো গাছটা ধরে বাঁচার শেষ চেষ্টাটা করেছিল। পারে নি। শাড়িটাকে আমগাছের নিচে কবর দিয়ে রাখে রহমত। বউয়ের শেষ নিশানার তো তবু একটা ঠাই হলো- এতোটুকুই বা কম কিসের! রহমতের বেঁচে থাকার আনন্দ মরে গেছে। তবু ময়নার চোখের দিকে তাকালে মনে হয়, আবার বেঁচে উঠতে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.