উপদেশ

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩০

জামিল-ভাইজান কি এলাকায় নতুন?
হাসান- জ্বি, কালই এলাম।
জামিল-খুব ভালো এলাকা। চুরি বাটপারি নাই।
হাসান-জ্বি।
জামিল- ভাইজানের কি মনটা খারাপ, নাকি শরীরটা?
হাসান-জ্বি সামান্য সর্দি।
জামিল-সিজনটা ভালো না, বেশি করে গরম পানি সাথে একটু মধু মিশিয়ে খাবেন। আর এতেও না কমলে তিনদিন পর এন্টিবায়োটিক চালায় যাবেন। আপনার কাছে খাতা কলম আছে?

হাসান খুবই অবাক ভদ্রলোকের এহেন যত্নবান পরামর্শে।

হাসান-না, খাতা কলম নেই।
জামিল- ঐ রহিম, একটা কাগজ কলম দে।

রহিম নামের ছেলেটি দোকানের ভেতর থেকে কাগজ কলম নিয়ে এলো।

রহিম- কাকা ধরেন।

জামিল গোটা গোটা বাংলায় কিছু একটা লিখছে।

হাসান-বাহ! বেশ তো আপনি কি ডাক্তারির পাশাপাশি দোকানও চালান?

জামিল এইবার মুচকি হাসি দিয়ে বলল, এই আর কি! এইসব না জানলে হয়?

আসলেই এইসব না জানলে হয় না। কিন্তু এন্টিবায়োটিক সম্পর্কে মানুষের এমন উদাসীনতা দেখে তার খুব খারাপ লাগলো।

হাসান-কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া তো এইসব ঠিক না। অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

জামিল- আরে কিচ্ছু হবে না। কত দেখলাম!

হাসান আর কথা না বাড়িয়ে বললেন, ধন্যবাদ আপনার পরামর্শের জন্য। আমাকে ২ প্যাকেট ময়দা দিতে পারবেন?

জামিল- রহিম, ভাইয়েরে ২ প্যাকেট ময়দা দে। তা ভাই কোন বাড়িতে উঠলেন? এই এলাকার সবাই আমারে খুব সম্মান করে। আপনার বাড়িওয়ালারে আমার কথা বইলেন।

হাসান- আমি ২ টা বাসার পরে যে ২ তলা বাড়ি ঐখানে উঠেছি।

জামিল- ও আচ্ছা, ঐটা তো কুদ্দস সাহেবের বাসা ছিল, উনি তো ঐটা বিক্রি করে দিছে, তাই না?
হাসান- জ্বি, আমিই কিনেছি।

জামিল এইবার একটু নড়েচড়ে বসলো। ভাই থেকে সম্বোধন মুহূর্তেই স্যারে চলে গেল।

জামিল- ও কিছু মনে করবেন না স্যার, আমি ভাবছিলাম আপনি ভাড়াটিয়া।
হাসান- না, না কি বলেন মনে করবো কেন। আপনি তো বেশ আন্তরিক। দামটা কত হলো?

ততক্ষণে রহিম একটা পলিব্যাগে ময়দা এনে দিয়েছে।

জামিল- স্যার, ১২০ টাকা। স্যার, আপনার পেশা কি?
হাসান- আমি একজন ডাক্তার। (টাকাটা পরিশোধ করতে করতে) ঢাকা মেডিকেলে পড়াই। আসি তাহলে, আবার কথা হবে।

জামিল এমনিতেই একটা ভুল করে লজ্জিত। এখন বুঝতে পারছে ভুলটা পরিমাপের দিক থেকে আরও বড়। জামিল নির্বাক হয়ে হাসান সাহেবের চলে যাওয়া দেখছে, আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছে, জীবনে আর কখনই সে দোকানদারি ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে পরামর্শ দিবে না। কেননা, এর বাইরের জ্ঞান তার জন্য নয়।

০ টি +০/-০