![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১ম পর্ব :
নাবিল স্কুলের পড়া রেডি করছে, এমন সময় ওর আপা এলো হাতে একটা পুডিং নিয়ে। এই নাবিল হা কর, এটা খা।
নাবিল বলল, পড়ার সময় ডিস্টার্ব করো না তো আপা। আমি এখন খাব না। তোমার হাতের বানানো পুডিং তোমার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে খাব। এগুলো তো কে জানি দিয়েছে?
রেগে গিয়ে কল্পনা ছোট ভাইয়ের বাম কানটা মলে দিল।
বলল, বড় বোনের সাথে ফাজলামি। আব্বু আসুক বলে দিব। তোর এই বয়সে এই অবস্থা। দাঁড়া, বড় ভাইয়াকে ডাকি।
চেচাঁমেচি শুনে অন্যরুম থেকে রায়হান এলো। কল্পনা আর রায়হান পিটাপিটি। রায়হান কল্পনার বছর দু’য়েকের বড়।
কল্পনা বলল, ভাইয়া দেখ, নাবিল আমাকে কি বলছে?
ততক্ষণে কল্পনা নাবিলের কান ছেড়ে দিয়েছে।
নাবিল কান মলায় ব্যথা পেয়ে বলল, একশ’বার বলব। হাজার বার বলব। কেন তুমি রিয়াজ ভাইয়ার সাথে কথা বলনি ঐ দিন।
পিটাপিটা হলেও রায়হানকে সমীহ করে কল্পনা। বড় ভাইয়ের সামনে নাবিলের কথায় ভয় মিশ্রিত লজ্জা পেয়ে অন্য রুমে পালিয়ে বাঁচল। কিন্তু মনে নানা সন্দেহ দানা বাধঁছে তাকে কিছু বলে কিনা? কল্পনা শুনতে পেল নাবিলকে রায়হান বকা দিচ্ছে। তোকে আর পন্ডিতগিরি করতে হবে না।
পাশের বাসা থেকে মিসেস রহমান এসে দেখল কল্পনা বিছানায় অন্যমরা হয়ে শুয়ে আছে। সকাল ১০টা বাজে। কিরে তুই আজ কলেজে যাবি না? মায়ের কথা সম্বেত ফিরে পেয়ে বলল, যাব তো। এই তো রেডি হচ্ছি।
রিয়াজের ক্লাশ আজ নেই। ১৪ তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। কলেজে আসা কল্পনার ফোনে।
স্যার ১টা টাকা দিন।
রিয়াজ পিছনে ফিরে দেখে। ৬/৭ বছরের ছেলে।
ছোট ভাইয়ের অসুখ। স্যার ১টা টাকা দিন। আবার বলল, ছেলেটি।
তোমার মা-বাপ নেই?
মা আছে বাপ নেই, স্যার।
রিয়াজ জানে ছেলেটি মিথ্যে বলছে। ওরা ট্রেনিং প্রাপ্ত। মানিব্যাগ থেকে ২টাকা দিয়ে বলে, তোকে আর এদিকে না দেখি মত। যা ভাগ?
ছেলেটি টাকা নিয়ে ওরে মারে, বাবারে বলে দে ছুট।
সিনেমায় দেখেছে এবং পত্রিকায় ও পড়েছে ভিক্ষাবৃত্তি সম্বন্ধে। একশ্রেণীর লোক ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। আর ভিক্ষুক বানানোর ট্রেনিং সেন্টার ও নাকি আছে বিভিন্ন স্থানে। এদের গড ফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গরীবের কোন ছেলে জন্ম নিলে মা-বাপ পয়সার বিনিময়ে ছেলে বা মেয়ে বিক্রি করে ফেলে। কালপ্রিটরা ছোট শিশুর কোন অঙ্গ বিকৃতি সাধন করে দেয়, যাতে আজীবন গোলামী করতে হয়। ছোট ছোট শিশুদেরকে দিনে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া হয়, সন্ধ্যায় সবাই ডেরায় ফিরে আসে। মালিক জমা নেয় কে কত টাকা আয় করেছে। যে একেবারে আয় করতে পারে না, তার রাতের খানা বন্ধ এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তাই অনেক সময় দেখা যায় ভিক্ষুকরা অনেক কৌশল করে, অনুনয়-বিনয় দ্বারা ভিক্ষা করে। ঐ শিশুগুলো যখন আর একটু বড় হয় তখন বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করে। বস্তিতে মেয়ে শিশুরা বিভিন্ন মাদ্রকদব্য সরবরাহের মত অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হয়।
লিচুতলায় রিক্তাকে পেয়ে যায়, কল্পনার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী।
রিক্তা বলে ভাইয়া কল্পনার জন্য অপেক্ষা করছেন নাকি?
ঠিক বলেছ। আসলে ক্লাশ তো নেই। কল্পনার ফোন করে আসতে বলেছে। দেরী কেন বুঝলাম না?
হয়তো জ্যামে পড়ছে ভাইয়া।
তাই হবে হয়তো।
রিক্তা চলে যেতে ঊদ্যত হলে রিয়াজ বলে দেখলে একটু দ্রুত আসতে বলো লিচু তলায়।
রিক্তা বলে, একটা রিং দিন না।
ভাল বলেছ।
রিক্তা বিদায় নেয়।
নিরিবিলি একটা রেষ্টুরেন্টে কল্পনা আর রিয়াজ মুখোমুখি। কল্পনা বলে, আমাদের ব্যাপারটা ভাইয়া জেনে ফেলেছে। তুমি আমার ভাইয়াকে তো চেনো মনে হয়।
না ঠিক চিনি না তবে, শুনেছি বিরাট ছাত্র নেতা।
আজ সকালে নাবিলকে নিয়ে যা হয়েছে সব বলে ক্ষান্ত হয়।
তো এটা কোন ব্যাপার হলো? এই খবরের জন্য আসতে বললা, আমার পরীক্ষা না সামনে সপ্তাহে। একটা মেসেজ দিলে হত না।
আরে বাবা, রাগ করো কেন? তোমার সাথে একটু দেখা করার ইচ্ছে হলো তাই?
না, রাগ কললাম কই?
দু’জনের মাঝে একটু নীরবতা পর্দা ঢেকে দিলো।
নীরবতা ভঙ্গ করে কল্পনা বলল, কি ভাবছ নীরবে?
নীরবতা নয়, ভাবছি এই পরীক্ষার প্রিপারেশনের মাঝেও নানা বই পড়তে হয়, নইলে এক গুয়েমি লাগে। সকালে কাজী নজরুল ইসলামের “রাজবন্দীর চিঠি” বইটা আবার পড়েছি। বারবার পড়ি। মনে হয় আমার জীবনের সাথে কিছুটা মিল আছে।
তা তুমি রাজবন্দী কবে থেকে? তুমি কল্পনা বন্দী?
রাজবন্দী না তবে প্রেমের ব্যাপার স্যাপার তো। ওখানে ভাল ভাল কোটেশন আছে। পড়তে পারো।
না, আমি ওসব বই ঘাটাঘাটির মধ্যে নেই। আমার প্রেম বই বর্হিভুত প্রেম।
আমি তো মেয়েরা গল্প-উপন্যাস পড়া বাড়িয়ে দেয়, প্রেমের পড়লে।
“জানি ভালবেসে আত্মদানেই তৃপ্তি। বিশ্বাস করি যে, যাকে সত্যিকার ভালবাসা যায়। সে অপমান-আঘাত করলে হাজার ব্যথা দিলেও তাকে ভোলা যায় না। প্রিয়ের দেয়া সেই ব্যথাও যেন সুখের মত প্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু তাই বলে এত প্রাণ ঢালা ভালবাসার বিনিময়ে একটু ভালবাসা পাবার জন্যে প্রাণটা হা হা করে কেঁদে উঠে না-এ যে বলে সে সত্যি কথা বলে না।”
“ব্যথার দান”এ আছে- “কামনা হচ্ছে সাময়িক উত্তেজনা। প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত চিরন্তন।”
তো শুধু নজরুল থেকে কেন তোমার ভান্ডার থেকে কিছু বলো।
“এমনিভাবে কাউকে আমি ভালবাসি নাই
দাও তোমার বুকে আমায় একটুখানি ঠাঁই।”
একটু খানি না পুরোটাই তো দিয়ে দিলাম। যাও, হইছে।
“বুঝিতে পারে না যেজন এ জীবনে প্রেম কি
জন্মই তার বৃথা হওয়া ছাড়া আর কি?”
কাব্য কথা এবার বন্ধ করো। বাস্তবে আসো।
এটা কি বাস্তবতার বাইরে?
থাম, থাম। আর বলতে হবে না। তোমার সাথে কথায় পারা আমার কয়েক জনমেও হবে না।
প্রেম মানুষের জীবনে সত্যি বিরাট প্রভাব ফেলে। চিন্তা-চেতনায় বড় পার্থক্য আনে। প্রেম যে কি? আমি যা বুঝি, প্রেম হল আসলে এক অনন্ত সুখময় অনুভুতি। কল্পনা অনেক সময় অসীম আকাশ পানে ধাবিত হওয়া। একে অপরের জন্য বিশ্বাসের বন্ধটা মজবুত করা, পরস্পরকে বুঝতে পারা। অন্যের মনে কি আছে তা অনুসন্ধান করা। অপরের সৌন্দর্যপূর্ণ হৃদয় সাগরে ডুব দিয়ে মণি-মুক্তা আহরণ করা। ঝঞ্জা-বিক্ষুদ্ধ প্রতিকুলতাকে স্বাগত জানিয়ে দুঃসাহসিক এক অভিযানে শামিল হওয়ার নাম প্রেম।
ভাবছি আমাদের প্রেমের পরিণতিটা কী হতে পারে?
কেন তোমার সংশয় আছে কিনা?
না, তোমার আমার ব্যবধানটা একটু বেশী।
তুমি ধনীর আদরের দুলালী, তোমার মা-বাবাও শিক্ষিত। ব্যাংকার বাবা, সিনিয়র অফিসার আয় রোজগারও ভাল। নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকো। দুই ভাই, দুই বোনের সুন্দর সংসার। গার্ডিয়ানের আসা একটা ভাল ঘর এবং ভালো বর দেখে...আর আমি?
অজ পাড়া গাঁয়ে বাড়ি, জায়গা জমি নেই কাড়ি কাড়ি। বাপ করে চাষাবাদ, ওখানেই হবে আমার বসবাস। শহুরে মেসের জীবন। তিন বোন এক ভাই আছে ছোট। আমি সবার বড়। আমার সামনে অনেক দায়িত্ব। কবে চাকরি পাব, নাকি জীবিকার সন্ধানে বাইরে চলে যেতে হয়?
কেন শহরে আস্তে সেটেল হবে। তোমার স্বপ্ন আছে না?
স্বপ্ন না কল্পনা জানি না। হয়তো কল্পনা বিলাস?
কেন বিলাস হবে? আমার সাথে রসিকতা করো না। সিরিয়াস হলে, সব ঠিক হয়ে যাবে।
তাই যেন হয়।
এবার সুবোধ বালকের মত রুমে গিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও গে। আবার হ্যামপার হলে আমার উপর যাতে দোষ না চাপে।
(আগামী পর্বে সমাপ্য..)
©somewhere in net ltd.