নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফের গল্পগুচ্ছ

মন নামের ডাকবাক্সে বদ্ধতালা ঝুলিয়ে, একা পথে হেঁটে চলা মরুভূমির খোঁজে

অদিতি মৃণ্ময়ী

যুগ যুগান্তরে চলে এসেছি প্রথার বিপ্রতীপে, বসবাস তাই আগুনের বিপরীতে।।

অদিতি মৃণ্ময়ী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি মৃত্যু সংবাদ

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭

১।



শামীমা অফিসের কাজের ফাঁকে এ সময়টা একটু জিরিয়ে নেয়, এসময় যে কারো ফোন খুব বিরক্তিকর। ফোন বেজে চলছে। পৃথিবী ফোন করেছে। তার নিজের মেয়ে। ফোনটা রিসিভ না করলেই নয়।

-হ্যালো, পৃথিবী?

ওপাশ থেকে কেউ একজন কেঁদে উঠল।

-হ্যা আন্টি। আজকি একটু সময় বের করে আসা যাবে? মন ভালো নেই। ও আর নেই মা। আমি কি করব এখন?

-ও নেই মানে? কে নেই? কি হয়েছে?

-আমার বন্ধুটা। ও আর নেই। কাল রাতে নাকি চলে গেছে অনেক দূরে। সবায় বলছে যে মারা গেছে।



শামীমা মেয়ের কথা শুনে কি করবে বুঝতে পারছিল না। মজার ব্যাপার হল, মেয়ে তাকে মা ডাকছে! কাগজপত্রে সে এখন মেয়ের মা না। মেয়ে তার বর্তমান বাবা মার সাথে থাকে। স্বামী মারা যাওয়ার পর বাসার থেকে চাপ দেই বিয়ের জন্য অনেক , তখনই আলাদা হয়ে যাওয়া। মেয়েকে তার চাচা চাচী এডোপ্ট করে নেয়। পৃথিবী সব জানে, চাপা অভিমানের বসে আন্টিই ডাকে এখনো।



-ইয়ে মানে, আমার তো আজকে একটু ভিসা অফিসে যাওয়া লাগবে, তুমি কান্না থামাও, খেয়ে নিয়ে ঘুমাও। কেমন? এগুলো নরমাল ব্যাপার। মৃত্যুটা খুবই স্বাভাবিক। আসলে ফেব্রুয়ারীতেই হয়ত ফ্লাই করব। একটু বিজি একারণে।



পৃথিবী জানত এমনটাই বলবে। শামীমা আন্টির ভিসা অফিসে আজ কাজ নাই। আন্টির ইচ্ছা নাই এইসব ব্যাপারে মাথা ঘামানর। তাই আসবেনা।

ঐশীকে ফোন দেওয়া হয়েছিল। ও বলল ওর নাকি পড়া আছে বিকালে, অথচ কাল রাতে নিশান বলেছিল যে আজ ঐশীর সাথে ডেটিং বিকালে! ফোন ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে যখন বলল যে , "দোস্ত, ও আর নাই। নাঈম ইড নো মোর, প্লীজ আমার বাসায় আয়, কান্না পাচ্ছে, কি করব জানিনা" ঐশী শান্তনা দিয়ে বলল, যে সে আজ আসতে পারবেনা।





২।



মিসেস হক পায়চারী করছে, রুমের পাশ দিয়ে। মেয়ে মেঝের উপরে বসে কাঁদছে, আর বারবার কি জেন হাতড়াচ্ছে। ধুর সব আদিক্ষেতা! কোন ছেলে মারা গেছে তার জন্য এত আদিক্ষেতা! ওড় বাবায় ওকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় ঊঠিয়েছে।



-পৃথিবী। মা তুমি খেয়ে নিও। খাবার রেখে গেলাম। এভাবে কাদতে হয় না। মৃত্যুটা খুব স্বাভাবিক।

-মা, আমার খিদা নাই। মা ও নাই। কিচ্ছু নাই। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নাই।



মি,হক বাসায় এসেছে এইমাত্র, সব শুনে মেয়ের পাশে বসে আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।



ফাইয়াজ, বোনের কান্না সোঝ্য করতে পারে না। বোনের জন্য পিজ্জা নিয়ে এসে খাওয়ানর চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে বাসার টিচারদের পড়াতে আসতে মানা করাও হয়ে গেছে।



মেয়ের কান্না থামছে না। বারবার চিৎকার করে উঠছে।



মি,হকের চিন্তা হচ্ছে, মেয়েটা কিছু করে না বসে, কখনো কারো মৃত্যুতে এভাবে কাঁদতে দেখেনি মেয়েকে। ছেলেটা শুধুই বন্ধু ছিল নাকি অনেক বেশী কিছু?





৩।



পৃথিবী ঘড় থেকে বেরিয়ে, ডাইনিং স্পেসের কাছে দাড়িয়েছে। বাবা, মা, আর বড় ভাই ফাইয়াজ তাকে নিয়ে আলোচনা করছে।

-আমি আগেই বলেছিলাম, এই ছেলেটা সুবুধার নাহ। নিশ্চয় কোন সম্পর্ক ছিল তোমার মেয়ের সাথে।

-আহ! থামো না। এখন এসব বলে কি লাভ? ছেলেটা তো আর বেঁচে নেই, তাই না?



-মা থাম না। এত কথা বল না। আশেপাশের লোকজন জানলে উলটো পালটা মানে বের করবে। এটা নিয়ে এত ঝামেলা করো না তো।

-আরে ঝামেলার কি আছে! মেয়ে বড় হচ্ছে, এমনিই তো আউট অফ কন্ট্রোল। তুই কি ভাবিস আশেপাশের মানুষ তোর বোনকে নিয়ে কিছু বলে না? আরে আমার ছেলেটা একেবারে সহজ সরল আর মেয়েটা পুরো বিগড়ে গেছে!



-আচ্ছা এগুলো বলে এখন কি লাভ? মেয়েটা খেয়েছে নাকি তাই দেখ তো। আর ফাইয়াজ তুই জানিস কিভাবে মারা গেছে ছেলেটা?

-আরে আমি তো ওরে চিনিই না! আর তোমার মেয়ের ফ্রেন্ড সার্কেল মানেই তো, অর্ধেকের বেশীই এডিক্টেড পোলাপাইন। ওদের খোঁজ দিয়ে আমি কি করব!



পৃথিবী এগুলো সহ্য করতে পারছিল না। হু হু করে কেঁদে ফেলল। বাবা , মা, ফাইয়াজ সবায় হটাথ তার উপস্থিতি টের পেয়ে চুপ! পৃথিবী এখন ছাদে যাবে , কিছুক্ষণ একা থাকার দরকার।





৪।



ট্যাংকির উপর বসে পা দুলাতে আর আকাশের দিকে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ার মজায় আলাদা! সব দুঃখ কষ্ট বের করে দিতে বেশ মজা লাগে। এক প্যাকেট মালব্রো, আকাশ, বাতাস , শীত! উফ!

ফোন বেজে চলেছে, নাঈমের ফোন, রিসিভ করাটা জরুরী নয় তবে দরকারি!

-হ্যাল্লো।

-কি রে "ড্রামা কুইন" ? আমাকে মেরে ফেলা কতদূর এগুলো? জানাজা শেষ আমার?

-হা হা হা. আরে ব্যাটা, তোরে মাটি দেওয়াও শেষ! লোল। মাইন্ড রিফ্রেসমেন্টের জন্য এরম ড্রামা অত্যাবশ্যক, বুঝলি গাধা? আমি এই কয়দিন টেনশনে আছি, ডিপ্রেসনেও, এইগুলা বাসার লোকজনের মধ্যে ঢুকায়তে পারার মজায় আলাদা! তাছাড়া সবার সাইকোলজি বুঝা যাই, এ ব্যাপারটা এনজয়েবল!

-তা কি বুঝলি?

-বুঝলাম যে, আমি একা না, সব শালায় ড্রামাবাজ। জীবনটাই ড্রামা! এখন রাখ তো ফোন, মজা নিতে দে।

-উক্কে টাটা। টেক কেয়ার।



আসলেই তো! জীবনটায় ড্রামা! সবায় কি সুন্দর অবলীলায় নিজের স্বার্থের জন্য মিথ্যা বলে! কি সুন্দর নাটক করে! আমার এইসব সিলি নাটক তারা কেমনে না বুঝে ঠাকা! অদ্ভুত! কষ্ট গুলো অদ্ভুত কিন্তু সুন্দর। আমাদের প্রত্যেকের পড়ে থাকা মুখোশ গুলোও অদ্ভুত রকম সুন্দর! ।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৫

ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: মরি গেলা ভালা হইতো, যুবতী মাইয়া ছাদে বইয়া বিড়ি খায়, নাউজুবিল্লাহ। এই দ্রেশ্য দেখনের আগে আমার মরন হইলো না কেনু? কেনু? কেনু?

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৮

অদিতি মৃণ্ময়ী বলেছেন: আমারো সেই কথা, আপনে মরেন না ক্যাড়ে! :/

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৪

প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার বলেছেন: :-0

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭

অদিতি মৃণ্ময়ী বলেছেন: হু হু হু হু :/

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১০

মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: আমরা এখন ২১০০ সালে অবস্থান করছি, যেখানে অদিতি মৃণ্ময়ী আমাদের সমসাময়িক একখানা গল্প উপহার দিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে অতি মূল্যবান গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৯

অদিতি মৃণ্ময়ী বলেছেন: গল্পর মূল বক্তব্য না বুঝে স্যাটেয়ার করাটা খুব সহজ! হা হা হা! কিছু মানুষের ক্যাচক্যাচানী বেশ মজার।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৪

অদিতি মৃণ্ময়ী বলেছেন: রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা পড়ে থাকলে একটা প্রশ্ন, ওখানের সব ক্যারেক্টার, গল্প বিশেষ করে কেতকী'র চরিত্রটি ঠিক কতটা ক্ষাপ খেয়েছিল তৎকালীন সময়ের সাথে?

৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৭

মামুন রশিদ বলেছেন: জীবন একটা ড্রামা :|| B:-)

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৯

অদিতি মৃণ্ময়ী বলেছেন: ড্রামা ছাড়া আর কি আছে জীবনে?

৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৩

অদিতি মৃণ্ময়ী বলেছেন: এখানে অনেকে না বুঝে " সমসাময়িক" কথাটা তুলে স্যাটেয়ার করছেন, তাদের জন্য কিছু কথা।

১, আশেপাশে খোঁজ নিয়ে দেখেন তো, ব্যাপারটা সমসাময়িক কি না? একটা ছেলে সিগারেট খাবে ব্যাপারটা নরমান, আর একটা মেয়ে খাইলেই দোষ! বাহ বাহ!
বিদ্রঃ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

২, সব লেখা কি সমসাময়িক হতেই হবে? রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা পড়ে থাকলে একটা প্রশ্ন, ওখানের সব ক্যারেক্টার, গল্প বিশেষ করে কেতকী'র চরিত্রটি ঠিক কতটা ক্ষাপ খেয়েছিল তৎকালীন সময়ের সাথে?
ভেবে উত্তর দেবেন প্লীজ।

ধন্যবাদ।

৬| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১২

এক্স রে বলেছেন: ১, আশেপাশে খোঁজ নিয়ে দেখেন তো,
ব্যাপারটা সমসাময়িক কি না?
একটা ছেলে সিগারেট
খাবে ব্যাপারটা নরমান, আর
একটা মেয়ে খাইলেই দোষ! বাহ বাহ!
বিদ্রঃ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও তরুনীর ধূমপানের দৃশ্য অবশ্যই সুরসুরি জাগানীয়া।

গল্পটা ভালো লেগেছে। জীবনটা আসলেই ড্রামা। সমবয়সী ব্লগারের কাছ থেকে বড় বড় কথা পেয়ে পুলোকিত :-)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৬

অদিতি মৃণ্ময়ী বলেছেন: স্যাটেয়ার করলেন না তো? :পি

হ্যা, ব্লগে কিছু মানুষের চুলকানি একটু বেশীই ;) ব্যাপার নাহ। খাউজানি আলা কচু বলে কথা, এস লাইক এস শফী হুজুর।

৭| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৫

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: ভালো লাগলো !

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৭

অদিতি মৃণ্ময়ী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে , অভি :) ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.