নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ না।

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

“খাট” একটি ভেষজ মাদকদ্রব্য

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:০৯

বেশ ক বছর ধরে বাংলাদেশে 'খাট' বিক্রি হচ্ছে পত্রিকায় এই খবর দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আরো ড্রাগ? আচ্ছা, এই ‘খাট’ কি এমন জিনিষ যে আফ্রিকা থেকে আমদানী করে ছাগলের মত চিবুতে হবে? তারপর আসবে তথাকথিত “ফিলিংস” যেটা এনজয় করবে মাদকসেবীরা। এক থেকে দুই ঘন্টা ধরে ধীরে ধীরে একটি একটি করে পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়া হয়। অ্যামফেটামিন জাতীয় নির্যাস ছড়িয়ে পড়ে দেহে, মস্তিষ্কে। তথাকথিত ‘ফিলিংস’ থাকে চার থেকে ছয় ঘন্টা পর্যন্ত।

খাট বা কাত যাকে ইথিওপিয়ান আমহারিক ভাষায় বলে চিয়াট(ch'at), সোমালি ভাষায় ক্বাদ্‌, আরবীতে আল ক্বাত। (কিংবা কাট, গাট, বা কাড… আরো যে কত নাম আছে! যেমন, 'জিমা'।) পাতা যত তাজা, ফিলিংস তত কড়া। পাতা পুরোনো হয়ে গেলে ফিলিংস হয়না।
‘ফ্রোজেন পাতা চিবুনো অর্থহীন। কিন্তু কি করা? এছাড়া আর যে উপায় নেই। রেফ্রিজারেটেড কন্টেইনারে করে আমদানী হয়।’ - বলছিলো সোমালিয়ান এক খাটসেবী। মজার ব্যাপার হল এই ‘খাট’ বৃটেনে এই সেদিনও বৈধ ছিলো কারন এর মাদকতার মাত্রা বুঝতে বহুদিন সময় লেগেছে। ২০১৪ সাল থেকে এটা ব্যান করা হয়েছে এবং এক ধাক্কায় এটাকে ক্লাস-সি ড্রাগ হিসেবে গণ্য করা হয় কেননা এর প্রভাব অ্যামফেটামিনের মত। ১৯৮০ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) খাটকে "ড্রাগ অফ এ্যাবিউস" হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে যা এর ব্যবহারকারিকে ডিপেণ্ড্যাবল করে তুলতে পারে। তবে ডব্লিউএইচও খাট আসক্তিকে সিরিয়াস গ্লোবাল প্রবলেম বলে মনে করে না।

‘খাট’ আসে হাঁটু বা কোমর সমান প্ল্যান্ট থেকে যার ছোট ছোট সবুজ আমাদের দেশের এক আঁটি শাকের মত 'আঁটি' আকারে বাজারে বিক্রি হয়। হর্ন অফ আফ্রিকা বা আফ্রিকার শিং বলে পরিচিত উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার ইরিত্রিয়া, জিবুতি, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, কেনিয়া, এবং আরব উপদ্বীপ অঞ্চলের বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমীরাত, সমগ্র ইয়েমেন, ইরাক এবং জর্ডান। এই অঞ্চলে ‘খাট’ হাজার বছর ধরে ব্যাবহার হয়ে এসেছে। বর্তমানে ইয়েমেন আর ইসরায়েল ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশে ‘খাট’ অবৈধ এবং ওখানে কিছু কিছু দেশে খাটসহ কেউ ধরা পড়লে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এক সময় এসব দেশে ‘খাট’ ছিলো অতি সাধারণ সামাজিক একটা খাবার যা আমাদের দেশের পান-সুপারির মত ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কালক্রমে ‘খাট’ এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রমাণীত হওয়ায় বিভিন্ন দেশ একে একে ‘খাট’কে অবৈধ ঘোষণা করা শুরু করে। কিছু মানুষ পান-সুপারী খাওয়াকে আসক্তি বলে মনে করেন কিন্তু পান-সুপারীতে কোন প্রকার মাদকের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। অতএব পান-সুপারী পৃথিবীর কোথাও অবৈধও নয়।

‘খাট’ এর ব্যাপ্তী ঘটেছে বিশ্বব্যাপী। বর্তমান পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ‘খাট’ পাওয়া যায়। বৈধ অথবা অবৈধ উপায়ে।

একটা একটা করে খাটপাতা চিবুতে থাকলে আস্তে আস্তে এর প্রভাব আসে। প্রথমে হাসিখুশী ভাব আসে, সব কিছুতে আনন্দ কিংবা মজা। অনেক কথা বলা, পেট খালি কিংবা মন উজাড় করে সব বলে ফেলা। নিয়মিত খাট সেবন করলে ঘুম কমতে কমতে শূণ্যের কোঠায় নেমে আসে। খাবার দাবারের প্রতি অনীহা চলে আসে আর মনে দ্বিধা এবং অনিশ্চয়তা বিরাজ করে। সারাক্ষন বিরক্ত বা ক্ষিপ্ত থাকা, কথায় কথায় রেগে যাওয়া এমনকি আক্রমনাত্বক আরচণও খাটসেবীদের মধ্যে চলে আসে। ‘খাট’ এবং গাঁজা (Herbal Cannabis), এই দুই নেশার প্রভাবের মধ্যে প্রচুর মিল পাওয়া যায়।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় সেই বারো’শ খ্রীষ্টাব্দ থেকে উত্তর-পূর্ব আফ্রিকান, ভূ-মধ্য সাগরীয় আর আরবরা ‘খাট’ এর ব্যাবহার করে আসছে। তখন বিষন্নতা এবং দূর্বলতা দুর করার জন্য আলকেমিস্টরা খাট চিবুতে বলতো। দিন মজুর বা ক্ষেতমজুররাও তখন খাট ব্যাবহার করতো লম্বা সময় ধরে কাজ করার জন্য। যদিও প্রাচীনকাল থেকেই খাট এর ব্যাবহারকে ধর্মীয় এবং সামাজিক দিক থেকে অশোভন বলে সমালোচনা করা হত।
ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলে একজন খাটচাষী ফসল সংগ্রহ করছে। © The New York Times

“খাট” আধুনিক বিশ্বের ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, জিবুতি, কেনিয়া, উগান্ডা, ইসরায়েল (যেখানে এর নাম গাট), থাইল্যান্ড, এবং *ইয়েমেনে বৈধ। ইসরায়েলে বৈধ কারন সেখানে প্রচুর পরিমানে ইয়েমেনি ইহুদির বসবাস। আবার ইয়েমেনে ব্যাপক পরিমানে খাট চাষ হয় যেটা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং বলা হয় একবার দুর্ভিক্ষের সময় ইয়েমেনের অর্থনীতিতে বিশেষ সহায়কের ভূমিকা রাখে এই ভেষজ মাদকদ্রব্য ‘খাট’।

তবে ইসরাযেল সকারের এন্টি-ড্রাগ অথরিটি ‘খাট’ দিয়ে বানানো কোন এ্যালকহলিক পানীয় উৎপাদন বা বিক্রি ২০১২ সালের জুন মাস থেকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। অর্থাৎ দক্ষিন ইসরায়েলের জনপ্রিয় এ্যালকহলিক পানীয় আরাক (৪০-৬০% এ্যালকহল সমৃদ্ধ স্পিরিট)-এর সাথে কুচিকুচি করে কাটা কাঁচা ’খাট’ আর আঙ্গুরের রস মেশানো প্রবল শক্তিশালী পানীয় এখন সেখানে আর বানানো যাবেনা। তার পরও, ‘খাট’ দিয়ে বানানো প্রচুর জুস ইসরায়েলে এখনও বর্তমান এবং জনপ্রিয়।

বিশ্বের বাকী সব দেশগুলোতে সরকারীভাবে ‘খাট’ বৈধ নয়।

বৃটেনে কারো কাছে যদি ‘খাট’ পাওয়া যায় আর সেটা যদি প্রথমবারের মত হয় সেক্ষেত্রে তাকে লিখিতভাবে Khat Warning দেওয়া হবে। দুই বছরের মধ্যে দিত্বীয়বার একই ব্যক্তির নিকট ‘খাট’ পাওয়া গেলে তাকে ৮০ বৃটিশ পাউন্ড জরিমানা করা হবে। একই ভাবে তৃতীয়বার পাওয়া গেলে তাকে এ্যারেষ্ট করে কোর্টে পাঠানো হবে। সেক্ষেত্রে ‘খাট’ সাথে থাকার জন্য (Possession) দুই বছর পর্যন্ত, আর চালান, বিক্রী বা উৎপাদনের উদ্দেশ্য (Supply and production) প্রমাণীত হলে চৌদ্দ বছরের জেল হতে পারে।

বাংলাদেশে ‘খাট’ এখনও লিষ্টেড নারকোটিকস এর তালিকায় পড়েনি। তবে গত কয়েক মাসে বিশাল আকারের ‘খাট” ধরা পড়া এবং আফ্রিকান দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ বেড়ে যাওয়া আর আঁটি আঁটি ‘খাট’ আমদানী কতৃপক্ষের নজর এড়ায় নি।

আশা করছি কতৃপক্ষ এই নতুন মাদক ‘খাট’ কে সরকারীভাবে অবৈধ ঘোষণা করবে এবং এর বানিজ্য বা বিতরণের সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবে।

আর কোন নতুন উপদ্রব চাই না।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: এই জাতীয় আরেকটা জিনিস দেখতাম উত্তরাঞ্চলে। গুল। গুল কি ড্রাগের আওতায় পড়ে?

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৪

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: কষ্ট করে আমর বোরিং পোষ্ট পড়ে কমেন্ট করেছেন। আন্তরিক ধন্যবাদ।
গুল আমিও দেখেছি, জর্দার কৌটার মত কৌটায় বিক্রী হয়। আমি যতদুর জানি সাদাপাতা কিংবা জর্দার মত গুলও চিইউয়িং টোব্যাকো শ্রেণীর যা সম্পর্কে বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী প্রতিকার মন্তব্য:- ‘গুল হলো তামাকের প্রচণ্ড ক্ষতিকর সংস্করণ’। বাংলাদেশ, ইণ্ডিয়ায় এটা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ব্যান হয়েছে বলে শুনিনি এখনও।

নাহ্, এই ধরনের টোবাকো ড্রাগের আওতায় পড়ে না।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪০

নতুন বলেছেন: বাংলাদেশে ‘খাট’ এখনও লিষ্টেড নারকোটিকস এর তালিকায় পড়েনি। তবে গত কয়েক মাসে বিশাল আকারের ‘খাট” ধরা পড়া এবং আফ্রিকান দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ বেড়ে যাওয়া আর আঁটি আঁটি ‘খাট’ আমদানী কতৃপক্ষের নজর এড়ায় নি।

এটা তো খুব শীগ্রহী দেশে চাষাবাদ শুরু হবে।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:৫২

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: হতে পারে এবং ফলনও ভালো হবে।
কিন্তু সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া (নর্থ-ইষ্ট আফ্রিকা) বা মিডল-ইষ্ট এর মত আবহাওয়া না হলে সেই পরিমান নেশা হবে না। সুতরাং কাষ্টমারেরা ইম্পোর্টেড আইটেমেই বেশী আগ্রহী হবে। :) :p

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৭

সোনাগাজী বলেছেন:



লন্ডনের বাংগালী তরুণরা মাদকে জড়িত?

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪১

শাহ আজিজ বলেছেন: বেশতো , চলুক না বাংলা পানীয়র বদলে । সউদি আরবে খাট সেশন হয় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ছুটির শুরু থেকে । সবাই বিশাল ড্রইং রুমে চারিদিক ঘিরে বসে আর সোনা বা রুপার পাত্র থেকে তুলে চাবায় । এটা কবে নিষিদ্ধ হয়েছে জানিনা তবে ব্যাবহার বন্ধ নেই ।

নেশার জন্য একটা কিছু চাই
একটা কিছু চাই ।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:২০

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।
২০১৯ সালে এই বিষয়টা নজরে আসে যখন বৃটেনে খাট ব্যাবহার বেড়ে যায়। তখন কিছু খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম বৃটেনে খাট ২০১৪ সালে খাট নিষিদ্ধ করা হয়। আর সৌদি আরবে সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ করা হয় আরো আগে, ১৯৫৭ সালে। কিন্তু কন্ট্রোল হয়তো করে না।

৫| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:১৯

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।
২০১৯ সালে এই বিষয়টা নজরে আসে যখন বৃটেনে খাট ব্যাবহার বেড়ে যায়। তখন কিছু খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম বৃটেনে খাট ২০১৪ সালে খাট নিষিদ্ধ করা হয়। আর সৌদি আরবে সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ করা হয় আরো আগে, ১৯৫৭ সালে। কিন্তু কন্ট্রোল হয়তো করে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.