![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০১৭ সালের বর্ষার কোন এক সময়।
সকাল ৯.৩০,আজ সারাদিন আকাশ মেঘে-নুপুরে বাঝছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আকাশ প্রচণ্ড কালো । মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আবার থেমে যাচ্ছে।এমন দিনে সকাল আটটা বাজে রাকিব স্যারের ক্লাস, মেজাজ পুরাটাই ফরটি নাইন । সামান্য দেরী হলেই পার্সেন্টিস দেয় না । তাই তাড়াহুড়ো করে ছাতিটাও আনতে ভুলে গেলাম। আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। এমন সময় কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকতে বেশ আমোদ লাগে। সাথে গাঢ় পিঁয়াজ ও চানাচুর দিয়ে মুড়ি ভাজার কথা নাই বা বললাম । যখন ছোট ছিলাম আম্মু প্রায় বর্ষায় মুড়ি ভাজা করে নিয়ে আসত। মানুষের আমোদের পিছুটান গুলো খুব দুষ্টু হই, বার বার উস্কানি দেই। ব্যাচেলার হলে নাকি অনেক ইচ্ছের স্বাদ মাটির সাথে বিক্রিয়া করে দিতে হই। আমি আজ তাই করছি। অনিচ্ছাসত্ত্বেও রেগুলারিটি মেনটেইন করছি, ভদ্র ছেলের মত ক্লাসের প্রথম ব্যাঞ্চির উপর অধিকার স্থাপনের প্রচেষ্টায় আছি।
ক্লাস করে বের হবো মাত্র এমন সময়ে ঝুম বৃষ্টি।
আমরা যারা ছাতি আনিনি তাদের মধ্যে দু গ্রুপ তৈরি হলো ।.দাঁড়িয়ে থাকা গ্রুপ আর স্বেচ্ছায় বৃষ্টির হাতে আত্মসমর্পণ গ্রুপ । পরের গ্রুপটিতে দু-তিনজন ছাড়া আর কেউ আগ্রহ দেখালোনা । অনেকে মাথার উপরে ব্যাগ-ট্যাগ দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে । আমি ধীরে ধীরে বৃষ্টির মধ্যেই হাটা শুরু করলাম । সরাসরি হলে যাবো নাকি ক্যাফেটেরিয়ায় যাব ভাবছি । অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম ক্যাফেটেরিয়া থেকে এক কাপ গরম চা খেয়ে যাবো। বেশ ঠাণ্ডাবোধ করছি,শরীলের উষ্মতা প্রয়োজন আছে তাই সোজা ক্যাফেটেরিয়ায় চলে গেলাম । ক্যাফেটেরিয়ায় তেমন মানুষ জন নেই । পিছনের দিকে এক জোড়া কাপল ল্যাপটপে সম্ভবত কিছু দেখছে । আর একজন জানালা পাশে বসে বৃষ্টি দেখছে, শিঙাড়ার শেষ অংশটুকু হাতে ধরে । আর আমি চায়ের অর্ডার দিয়ে বসে আছি । পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফেইসবুকে লগইন করলাম । না কেউ ম্যাসেজ দেয় নি । দুই একটা নোটিফিকেশন চেক করলাম। হোম পেইজে নতুন একটা ভালোবাসার গল্প দেখলাম । হায়রে ভালোবাসা ! মাঝে মাঝে একটা হাতের এতো প্রয়োজন অনুভব করি কিন্তু সেই হাত বাড়ানোর কোনো মানুষ নেই । এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে গেছি ।
চা খাচ্ছি আর গল্প পড়ছি। বলা যায় আশেপাশের পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন । হঠাৎ পানির ছিটায় আবার বাস্তব জগতে ফিরে আসলাম । আমার খুব কাছে দাঁড়িয়েই দুইটা ছেলে আর তিনটা মেয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো । কোন কারনে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে গ্লাস থেকে পানি ছিটিয়ে মারতে গিয়ে ইস্ আমার গায়ে মিস টার্গেট। কখন আসলো এরা ? আমার গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়ার পর পুরো গ্রুপটা চুপ মেরে গেলো। যে মেয়েটি পানি ছিটিয়েছিল , বসে ছিলাম বলে তাকে এতক্ষন ঠিক মতো দেখতে পারছিলাম না। মেয়েটি আমার সামনে এসেই খুব অনুনয় করে সরি জানালো । কিন্তু মেয়েটাকে দেখে আমি অনুভূতি শুন্য হয়ে গেলাম । মানুষ এতো কিউট হয় কিভাবে? ঠিক যেন পরী থুক্কু পরী না পরীর চাইতে বেশি কিন্তু আমি তো কখনো পরী দেখিনি ! নীল ফ্রেমের চশমা পরা । রেশমি চুল । ফ্যানের বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে বারবার ওর মুখের উপর আছড়ে পড়ছে । মেয়েটি আমার কাছে শুনতে চাচ্ছে " ওকে, ঠিক আছে, সমস্যা নেই " এমন কিছু । কিন্তু আমি কিছুই না বলে হা হয়ে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর যখন ওরা হইতো বুঝলো আমি কিছুই বলবনা তখন নিজেরাই লজ্জায় ক্যাফেটেরিয়া থেকে বের হয়ে গেলো । আমি কি খুব অদ্ভুত একটা কাজ করে ফেললাম। মিনিমাম " ইটস ওকে " টাইপের কিছু একটা রিস্পন্স দেওয়া উচিৎ ছিল !
আমি একা একা হাঁটতে পছন্দ করি । আগে কোন উদ্দেশ্য থাকতো না । এখন সেই রেশমি চুল ,নীল ফ্রেমের চশমা পরা মেয়েটিকে দেখার জন্য হাঁটি । কখনো কল্পনায়ও আসেনি একটি মেয়ে আমার ভালোবাসার অনুভূতিতে এভাবে লেগে যাবে।
আজ ভার্সিটি জন্ম দিবস। সবাইকে ডিপার্টমেন্ট থেকে গেঞ্জি দিলো । সব ডিপার্টমেন্ট থেকে র্যালি বের হলো । মেয়েদের থেকে যখন র্যালি এসে ছেলেদের সাথে যোগ দিলো তখন ছেলেদের উল্লাস ধ্বনি আরও বেড়ে গেলো ।কিন্তু আমি খুঁজছি সেই নীল ফ্রেমের চশমা পরা এবং রেশমি চুল ওয়ালী মেয়েটিকে । কিছুক্ষন খোঁজার পর তাকে না দেখে হতাশ হয়ে পড়লাম। আজ সারাটা দিন এমনি গেল কোথায় তার দেখা পেলাম না । বিকেল ৫ টার দিকে কন্সার্টের স্টার জলসা। বেশ নামি দামি বেন্ড দল আসবে। মিস করা মোটেই ঠিক হবেনা। তাই সোজা অডিটোরিয়ামের পথ ধরলাম, কনসার্টে বেশ জোরালো চলছে অডিটরিয়ামে। কিন্তু আমি অপেক্ষায় আছি সে নীল মানবীকে খানিক একটু দেখতে। হঠাৎ অন্য পাশের দরজা দিয়ে একসাথে চার পাঁচটা মেয়ে ঢুকল । ঐ পাঁচ জনের মধ্যে ঐ মেয়েটিও ছিল ।। মেয়েটি গাঢ় নীল একটা শাড়ি পড়েছে। এমনিতে নীল শাড়ি আমার খুব পছন্দ তার মধ্যে সুন্দরি মেয়ের শরীলে । আজ আরও বেশি সুন্দর লাগছে তাকে। পুরো কনসার্ট জুড়ে আমি তার দিকে তাকিয়েই রইলাম । মেয়েটির একবার আনমনে এপাশ ওপাশ তাকাতে গিয়ে আমার সাথে চোখে চোখ পড়লো । এরপর থেকে মেয়েটিও মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখছে যে আমি ওকে দেখছি কিনা। রাত আটটা বাজলে মেয়েদের হল বন্ধ হয়ে যায় । তাই মেয়েরা আটটার দিকে বের হয়ে গেলো মেয়েটি অডিটরিয়াম থেকে বের হবার সময় আমার দিকে একবার আড় চোখে তাকালো । হইতো কোনো অদৃশ্য টানের বলে আমিও সাথে সাথে সীট থেকে উঠে ওর পিছু নেয়া শুরু করলাম । কিছুদিন যাবৎ এক টানা বৃষ্টি হচ্ছে । আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়নি তবে এখন অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। মেয়েটির হাতে কোন ছাতা নেই । সবচেয়ে অবাক হবার ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটার সাথে কোন বান্ধবী নেই । এখন অডিটোরিয়াম এর সামনে কোন রিকশাও নেই । আমি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারলাম না ।দ্রুত মেয়েটির সামনে গেলাম।
-ক্যামন আছো ? আমাকে চিনতে পারছো ?
একটু বিব্রত স্বরে আমি বললাম
-হম চিনছি ! আপনি সেই হা বাবা ! আজ সারাক্ষন ও হা করে ছিলেন আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি না শোনার ভান করে বললাম
-তোমার বান্ধবীরা কোথায় ?
-ওরা তো আসেনি
-দেখলাম যে একসাথে ঢুকলে চার পাঁচ জন ?
-আমি ওদের সাথে আসিনি ।
-তুমি কোন ইয়ার ?
-ফার্স্ট ইয়ার । আপনি?
-সেকেন্ড ইয়ার
- বড় ভাই !
- হুম।
-ভাইয়া ! একটা রিকশা ঠিক করে দিতে পারবেন? আমার হল বন্ধ হয়ে যাবে এখনি
-ওকে দাঁড়াও
বৃষ্টির মাঝে আমি রিক্সা খুঁজতে নামলাম । জীবনে রিক্সা খোঁজার মাঝে কোনদিন আনন্দ পাই নি। তবে আজ পাচ্ছি, রিক্সা যত দেরি তে পাওয়া যাবে আনন্দ স্থায়িত্ব তত বেড়ে চলবে, সমানুপাতিক বলা যায়। অবশেষে রিক্সা পাওয়া গেল। মনে মনে রিক্সা ওয়ালাকে কয়েক ডুজ গালি মেরে দিলাম। "পিঁপড়ার বাচ্চা আর কোন জায়গা পেলিনা,এখানে আসতে হল তোর"। কুত্তার একটি মূল্য আছে বিদেশীরা কুত্তাকে ফ্যামিলির একজন সদস্য মনে করে। সেই দিক দিয়ে পিঁপড়ার বাচ্ছা কুত্তার বাচ্ছার চাইতে উত্তম গালি ইংরেজিতে বলতে গেলে বলা যাবে son of ant। যাইহোক মেয়েটি রিক্সায় চলে যাবার সময় আমাকে থ্যাঙ্কস জানালো ।তখনো আমি রিপ্লাই দিতে ভুলে গেলাম । সত্যিকারের হা বাবার মতো আবার তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।
আকাশী নীল শাড়ী ,
নীল টিপ ,
নীল ফ্রেমের চশমা ,
রেশমি চুল সব কিছু
আর একটু ভালোবাসা।
আমার মাথা একেবারে গোব্লেট করে দিচ্ছিলো ।
মেয়েটি চলে যাবার পর আমি জিভে কামড় দিলাম। ধেৎ তার নামটাই জানা হয়নি। এত বড় ভুল হা-বা গোবা ছেলেরাও তো করেনা। । এরপর নিয়মিত সোজা রাস্তায় না এসে দুই কিলোমিটার দুরে ঘুরে ওদের ডিপার্টমেন্ট এর সামনে দিয়ে আসা যাওয়া করতে লাগলাম । কোন নীল ফ্রেমের চশমা পরা মেয়ে দেখলেই তাকিয়ে থাকি।বন্ধুরা এর মধ্যে লুইচ্চা নাম উপাধি দিয়ে দিল। তবুও আমি একটু সচেতন হলাম না।যাইহোক মেয়েটিকে একদিন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে দেখলাম । আমি সাথে সাথে কোন কিছু কেনার ভাব করে ঢুকলাম ।
-মামা ! এক হাজার টাকার ভাঙতি হবে ?
-না মামা !
দেখি ও একা দাঁড়িয়ে কিছু চানাচুর , বিস্কুট ,চিপস কিনছে । এখন যদি কথা না বলতে পারি তবে কিছুই হবে না । ও আমাকে খেয়ালই করলো না ।ও যখন টাকা দিয়ে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে বের হয়ে গেলো, সাথে সাথে আমিও বের হলাম ।আমাদের ডিপার্টমেন্ট ভবনের সামনে চলে আসতেই ওর পাশে গিয়ে বললাম ,
-"তোমার নামটাই তো জানা হল না"
ও কিছুটা চমকে গেলো ।পরক্ষনেই নিজেকে সামলে বলল
,-"ওহ আপনি!! আমি পুস্পিতা ডাক নাম পুস্পো। "
-"খুব সুন্দর নাম তো।আমি শুভ।"
ও হাসি দিয়ে বলল , হুম !
-"তোমার ফেইসবুক আইডি আছে ?"
-"নাহ"
কই কি এই মেয়ে, কোন গ্রহে বসবাস করে??
-"ওহ ! এই যুগের একটা মেয়ের ফেইসবুক আইডি নেই ? খুব অবাক হলাম !"
-"ভাইয়া ! এসব আমার ভালো লাগে না"
-"হুম ! ফেইসবুক আসলেই ভালো না । আমিও ছাড়তে চাচ্ছি। একবারে চীরদিনের জন্য ছাড়বো । কিন্তু আমার একজন ভালো বন্ধু দরকার । মনে করো বাস্তব জগতের বন্ধু।তাহলে ছেড়া দেওয়া আরো সহজ হই যাবে?"
-"হুম ভালো। "
তখন কিছুটি সময় নিয়ে হুট করে বলে বসলাম ।
-"তুমি কি আমার বন্ধু হবে ?"
-"হাহাহা। আমার লাভ কি ?"
তার হাসি দেখে মেজেটা আকশে উঠে গেল।যাইহোক মেজাজ আকাশে রেখে শান'ত গলায় বললাম
-"বন্ধুত্তের মোড়কে বিশ্বাস উপহার দেবো তোমাকে। আর বিশ্বাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় । প্রতিটা মানুষের একজন বিশ্বাসী বন্ধুর প্রয়োজন হয় । আমি সেই মানুষটি হতে চাই"
-"আপনাকে বিশ্বাস করবো কি করে ?"
-"নিজেকে বিশ্বাস করো ?-"
-"জানিনা"
-"তাহলে কি করে বুঝাবো ?"
-"আপনি যদি অন্য ছেলেদের চেয়ে ভিন্ন না হন তাহলে ওদেরকে বিশ্বাস না করে আপনাকে বিশ্বাস করবো ক্যান?"
এমন কথা শুনে আমি চুপ মেরে গেলাম । আসলেই কিভাবে বুঝাবো আমি অন্যদের থেকে ভিন্ন । যে কখনো বিশ্বাস ভাঙবেনা । যে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বিশ্বাস এর জন্য পথ তৈরি করবে । এমন কি করা যায় হঠাৎ যাতে সে বিশ্বাস করে আমি সবচেয়ে বিশ্বাসী।আমি সবচেয়ে ভিন্ন ।আমি সবচেয়ে যোগ্য তার জন্য ।
-"তুমি বলো আমি কি করবো ?"
-"আমি কেন বলবো ? আপনি এমন কিছু বলেন যাতে আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি । তবে প্লীজ, আমি কোন ভায়োলেন্স চাই না । সিনেমার মতো হাত কেটে আমাকে লাভ লেটার দেয়া কিংবা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করতে যাবেন না ।আমি এসব প্রচণ্ড অপছন্দ করি । "
তাহলে ভালো হল হাত কাটা থেকে রেহায় পাওয়া গেল,সে জিনিসটি আমি খুব ভয় পাই। নিজের ক্ষতি করা কি লাভ। তারপর আমি বিড়বিড় করে বললাম
-"আগে বন্ধু হবার তো সুযোগ দাও । তাহলেই বুঝবে আমি ক্যামন !"
-"আপনাকে আমি বন্ধু করলে তো হলই । কিন্তু আপনাকে আমি কেন বন্ধু করবো সেটা আমাকে বলবেন না ?"
-"কারন তোমাকে প্রথম দেখার পর থেকেই সব সময় তোমাকে নিয়ে চিন্তা হই"
-"আমি যদি বলি অন্য কেউ ও আমাকে নিয়ে চিন্তা
করে ? এখন সেই অন্য কেউ কে বাদ দিয়ে ক্যান
আপনাকে বন্ধু বানাবো ?"
মেয়ের তো দেখি রেশমি চুলের মধ্যে ভীষণ প্যাঁচ!!!। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। বড্ড প্যাঁচের মধ্যে পড়ে গেলাম । সত্যিই নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো । বন্ধুরা আমাকে সবসময় কথার পণ্ডিত বলে আখ্যা দেয়, আজ যেন সব কথা পুরিয়ে গেল আমি চুপ হয়ে দাঁড়িয়েই রইলাম। মনে হচ্ছে খুব বড় অপরাধ করে ওর সামনে অপরাধ স্বীকার করছি । আমি বললাম ,
-"আমি কখনো ওভাবে চিন্তা করিনি । আমাকে ভাবতে হবে । "
তখন পুস্পো ঠোটের কোনে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল ,
-"আপনি ভাবতে থাকেন । আর যেদিন প্রমান করতে পারবেন আপনি সবার থেকে ভিন্ন , সবার থেকে বিশ্বাসী । সেদিন আমরা বন্ধু হবো । ক্যামন ? ভালো থাকবেন । আমাকে যেতে হবে ।"
এই কথা গুলো বলে পুস্পো চলে গেলো । আমি
সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম । রুমে এসে বিশাল টেনশনে পড়লাম । কি করবো কিছুই মাথায় আসছেনা । ছোট ক্যাম্পাস । এক মেয়ের পিছনে কয়েকদিন ঘুরলেই জানাজানি হতে টাইম লাগবেনা । প্রেসটিজ পুরা পান্তা ভাত হয়ে যাবে । পরের দিন ক্লাস করে আনমনেই ওদের ডিপার্টমেন্ট এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । ওর ক্লাস কখন শেষ হবে অথবা শেষ হয়ে গেছে কিছুই জানিনা । ক্লাস টাইমে ওদের ডিপার্টমেন্ট এর সামনে আর বিকেলে ওদের হল থেকে একটু দূরে পুকুরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার বদ অভ্যাসে পরিনত হল । তবে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কিছুদিন এর মধ্যে ওর ক্লাস এর সময় সূচীর একটা আনুমানিক ধারনা পেলাম । রবিবার ল্যাব আছে বিকেলে । সোমবার আর মঙ্গলবার সকাল দশটা ত্রিশ এ ক্লাস শেষ হয় ......। শুধু ক্লাস না ও বিকেলে কবে কখন হাঁটতে কিংবা ঘুরতে বের হয় তার ও একটা আনুমানিক ধারণা পেলাম । দুই সপ্তাহে অন্তত একবার মাইঝদি ঘুরতে যায় বান্ধবীদের নিয়ে । তবে অবশ্যই বৃহস্পতি বার পছন্দের রেস্তোরাঁ কাউন্ট্রি লাউঞ্জ । ক্যাম্পাসে ঘুরলে সন্ধ্যার পর বের হয় । চালাক মেয়ে । সাথে দুজন বডী গার্ড বান্ধবী থাকে । আর কিছু কষ্টকর তথ্য পেলাম । ডিপার্টমেন্ট এর অনেক ছেলেই ওর উপর ক্রাশ । স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে কারো প্রতি ওর কোনো আগ্রহ নেই । কয়েকটি ছেলে পিছু নিলে মেয়েরা এমনি হই, মোড ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। খারাপ না তদন্তের অগ্রযাত্রা ভালোই চলছে।
আজ আমাদের মাত্র একটি ক্লাস হল । আমি ক্লাস শেষে ওদের ডিপার্টমেন্ট এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি । আকাশ টা আজও খুব কালো । যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। মাঝে মাঝেই অনেক দূরে বিজলী চমকাচ্ছে । পুস্পো যখন ক্লাস শেষ করে ডিপার্টমেন্ট ভবন থেকে বের হল তখন বৃষ্টির মাত্রা অনেক বেড়ে গেল । ও আমাকে দেখে নিচে তাকিয়ে হালকা একটা হাসি দিয়ে ওদের হলের দিকে হাটা শুরু করলো । আমিও একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ওর পিছে আপন মনে হাঁটতে লাগলাম ।ঠিক সিনেমার ভদ্র ঘুন্ডারা যেমন সুন্দরি নায়িকাদের পিছু নেই, তবে ভদ্র ঘুন্ডারা নায়ক হই তাই আমার নিরুৎসাহিত হওয়ার কিছুই নেই। ওর হাতে খুব সুন্দর একটা রঙিন ছাতা । মাঝে মাঝে ছাতাটা একটু নিচু করে পিছনে ফিরে আমাকে দেখছে । বৃষ্টির পানিতে আমার শার্ট প্যান্ট ভিজে একাকার অবস্থা । আমার চুল থেকে পানি আমার গাল বেয়ে বেয়ে নিচে গড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে পানির প্রবল গতিবেগ এর কারনে সামনের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে । ওর হলের কিছু দূরে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম । ও হলের গেট দিয়ে ঢোকার সময় ও একবার আমাকে দেখে নিলো । আজ ও অনেক বার তাকিয়েছে। এই তাকিয়ে থাকা কে কি বলে আমি জানিনা। এটা কি প্রশ্রয় ? নাকি পরে তোকে দেখে নেবো টাইপ লুক ছিল ? কিছু বুঝলাম না।।
পরের দিন পুস্পো বাসে তিন নম্বর সারিতে বসে আছে। আজ তার মাইঝদি তে ঘুরতে যাওয়ার সময়। বাসে প্রচণ্ড ভীর । শ্বাস করার ও জায়গা নেই । আর আমি পিছনের গেটে বাঁদরের ন্যায় ঝুলে আছি । বাস এর গেটে ঝোলার অভ্যাসটা কলেজ লাইফ থেকে পাওয়া । বাস চলছে আমি গেটে দাঁড়িয়ে বাতাস খাচ্ছি। পুস্পো মাইঝদি তে নামলো । সাথে দুজন বান্ধবী আর ঐ ছেলে দুটি । আমি ও নেমে গেলাম আর টিকটিকির মত ওদের পিছু লেগে আছি। ওরা একটা ফাস্ট ফুড এর দোকানে ঢুকে গেলো। আর আমি পাহারাদারের মত বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম একটু দূরে । কিছুক্ষণ পর হঠাৎ বিদ্যুতের বেগে ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে সে বেরিয়ে এলো । পিছনে আরেকটি মেয়ে ওকে ডাকছে , পুস্পো ! এই পুস্পো ! আমি বোঝার চেষ্টা করলাম কি হয়েছে । এখন ওরা সবাই বের হয়ে এসেছে। আমি ওদের খুব কাছেই হাঁটতে লাগলাম ।
একটা মেয়ে ওদের মধ্যে একটা ছেলেকে বলছে ,
-এতো দ্রুত প্রপস করতে গেলি ক্যান গাধা ?
এই কথা শুনেই আমার বুকে প্রচণ্ড আঘাত লাগলো । মাথা টা ঘুরছে, মনে হচ্ছে পায়ের নিচে মাটি নেই। আমি আর ওদের পিছু নেয়া ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম । এতো খারাপ লাগছে আমার কি করবো বুঝতে পারছিনা।কেন জানি মনের মধ্যে করুণ বেদনার নিত্য বাজিতেছে। আমি হাইওয়ে রোড ধরে একা একা হাঁটতে লাগলাম । আজ মাইঝদির রাস্তা গুলো এমনিতেই ফাঁকা ফাঁকা একদম যানবাহন শুন্য অবস্থা । আমি একটা ছোট রাস্তার মধ্যে সামান্য ভীর দেখে ঢুকলাম । দেখলাম একজন অন্ধ লোক গলা ছেড়ে লালন গীতি গাইছে
" মিলন হবে কত দিনে ?
আমার মনের মানুষের ও সনে ? "
এতো সুন্দর কণ্ঠ আমি কখনো টিভি কিংবা রেডিওতে শুনিনি । একেই বলে প্রকৃতি প্রদত্ত কণ্ঠ । সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে ওনার কাছে গান শিখতে পারতাম ! আর এভাবে রাস্তায় গলা ছেড়ে গাইতে পারতাম !গানের সুরে সব কষ্ট, ইচ্ছে,আশা দুর করতে পারতাম। মানুষের চাওয়ার বোঝাটা এক একটা পাহাড়ের চাইতে কম নই। তার মাঝে বড় পাহাড় প্রেমের বোঝাটা। গান শুনছি, মাথাটি অনেক ভার অনুভব করছি ।শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে আর খুব শীত শীত লাগছে । এখানেই ঘুমিয়ে পড়তে খুব ইচ্ছে করছে। বুঝতে পারছি আমার জ্বর আসছে । কিভাবে অতদুর যাবো ? প্রচণ্ড জ্বরের ঘোরে তবুও কিভাবে কিভাবে যেন অটো রিক্সায় চলে আসলাম ক্যাম্পাসে । রাতে ধুম জ্বর উঠলো। খুব ঠান্ডা লাগছিল, কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে, সারা শরীলে কেমন জানি ব্যথা, কম্বলের ভিতর দিয়ে একটু একটু কেঁপে উঠছি। তবুও মাথার মধ্যে সেই লোকটার গান " মিলন হবে কত দিনে ? আমার মনের মানুষের ও সনে ? " বাজছে । আমি হারিয়ে গেলাম গভীর অচেতনে ।
।
।
।
।
রাতে খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখলাম । দেখলাম পুস্পোকে নিয়ে আমি নদীর পাশে হাঁটছি । পাশে বড় বড় সাদা কাশ ফুলের বাগান । একটু পর পর সেই কাশফুল গুলো বাতাসের তালে তালে মাথা নুয়ে আমাদের অভিবাদন জানাচ্ছে । পুস্পো একটু পর পর রাগ করে আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে । আমি ওর পিছে হাঁটছি ওকে ধরার জন্য । মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আমি ক্যাম্পাসে হাঁটছি ওর পিছু পিছু । কিন্তু সেই গানটি এখনো শুনছি আমি । মনে হচ্ছে বহুদূর থেকে ভেসে আসছে । একসপ্তাহ জ্বরের ঘোরে একদম বেহুশ ছিলাম আমি।
দুইটা ক্লাস টেস্ট , তিনটা প্র্যাকটিকাল ক্লাস মিস করেছি । এতো দুর্বল ছিলাম যে বন্ধুরা রিক্সায় করে ( আমার হল থেকে মাত্র দুই মিনিটের রাস্তা ) মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আনলো । ডাক্তার বলেছে ভাইরাস জ্বর। প্রেমের সুত্র থেকে ভাইরাস জ্বর ভাগফল নাকি ভাগশেষ কোন্ সুত্র কাটানো যায়? মাথায় আসছেনা। কিছু বুঝলাম না! পুস্পো ঐ ছেলের প্রপোস করার সাথে আমার ভাইরাস জ্বরের কি সম্পর্ক । কোন সুত্র মিলেনা,মনের বিজ্ঞান অনেক কঠিন বিজ্ঞান। আর মেয়ে জিনিসটির সমীকরণ পৃথিবীর সব চাইতে কঠিন সমীকরণ যার আদৌ সমাধান আছে কিনা কি জানি। এক সপ্তাহ পর জ্বর কমে গেলো ।কিন্তু শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। পুস্পোকে দেখা হয়নি কতদিন !
ওহ ! আমি আজ শেষ বার এর মতো দাঁড়িয়ে আছি । আমি পুস্পিতাকে বলবো ,"আমি আসলে নিজেকে তোমার বিশ্বাসী প্রমান করতে ব্যর্থ হয়েছি । এতদিন যা করেছি তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও " ।এই বলে প্রেম খেলা থেকে চির বিদায় নিব, জীবনানন্দ দাশের জন্য কবিতা এসেছে বিজ্ঞান নই। সবার দ্বারা সব কিছু সম্ভব হই না আমাকে দিয়ে হইতো প্রেম বস্তুটা গিলানো সম্ভব না।
আমি ওদের ডিপার্টমেন্ট এর সামনে দাড়িয়ে আছি। আজ এতো রোদ ! মাথার মধ্যে ঝিম ঝিম ব্যথা শুরু হয়েছে । মাথার দু সাইডে টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি । আমার কি আবার জ্বর উঠবে নাকি ?
পুস্পো ওদের ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে আসার পর আমি ওর পিছু নিলাম । ও অবশ্য আমাকে দেখেনি ।কিন্তু হাঁটার সময় অনুভব করলাম আমার প্রচণ্ড দুর্বল লাগছে । পা আর আগাচ্ছেনা ।আমি মাতালের মতো এলোমেলো পা ফেলছি । উফফ ! সব কিছু আঁধার হয়ে আসছে ক্যান ?আমার এমন লাগছে ক্যান!!
পুস্পোকে এখনই ডাকতে হবে ।ঐ তো সামান্য সামনে আছে । আমি সর্বশক্তি দিয়ে পুস্পো বলে চিৎকার করে ডাকলাম । মেয়েটা শুনতে পেলো কিনা কি জানি!!!
।
।
।
।
।
এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। চোখ মেলে দেখি আমি মেডিকেল সেন্টারে শুয়ে আছি। আমার হাতে স্যালাইন লাগানো । আমার আশে পাশে যে অনেক উৎসুক জনতার ভীর সেটা আমি না দেখেই বুঝতে পারছি । ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন
" এখন ক্যামন লাগছে ? "
-"এইতো ভালো !"
-"রোদের মধ্যে সম্পূর্ণ হাটা নিষেধ । ছাতা নিয়ে হাঁটবে। মনে থাকবে ?"
আমি কিছু বললাম। ডাক্তার এর রুম থেকে বের হয়ে হয়ে দেখলাম পুস্পো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে । পুরাটাই অবাক, "এই মেয়ে আবার এখানে আসল ক্যান?"
-"তুমি এখানে ?"
-"আমাকে ডাক দিয়ে অজ্ঞান হলে আমি কি করবো ? আপনার জন্য ক্লাসটা মিস গেল। ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।"
আমি কি বলব কিছু বুঝতে পারলাম না। পুস্পোর মুখে লাজুক হাসি । ও আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমাকে চেয়ে চেয়ে তার অনেক বছরের কোন এক তৃপ্তি পূরণ হচ্ছে।
।
।
।
।
।
এই প্রথম ক্যাম্পাসে পুস্পোর পাশাপাশি হাঁটছি শুধু পুস্পো না ক্যাম্পাসে কোন মেয়ের পাশাপাশি হাঁটাটাও প্রথম। মাঝে মাঝে ওর ডান হাতের আঙুল ছুঁতে চাচ্ছি কিন্তু ও আঙুল সরিয়ে নিচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে । পুকুর পাড়ে আসার সাথে সাথে আবার অঝোরে বৃষ্টি শুরু হল। পুস্পো ওর বিশাল হ্যান্ড ব্যাগ থেকে কালারফুল টিপ ছাতাটা বের করে দুজনের মাথার উপর ধরলো । কিন্তু আমার মাথার সাথে একটু পর পর বাড়ি লাগছে ছাতার সাথে ।
" দাও ! আমি ধরি ছাতাটা "
-"নাহ আমি ধরবো"
-"আমি যে বাড়ি খাচ্ছি একটু পর পর ।"
-"এতো লম্বা ক্যান তুমি ?"
-"মানুষ লম্বা বি এফ এর জন্য পাগল ।আর মেয়ে কি বলে এসব ?"
-"হুম তোমারে বলছে ? "
-" আমি জানি"
-"কিভাবে জানো, আগে নিশ্চয় প্রেম করছে"
-"কল্পনায় করেছি তবে এখন বাস্তবে করছি।আচ্ছা দাও দুজন মিলে ধরি ।"
আমি ছাতি ধরার ছলে ওর হাত শক্ত করে ধরলাম । জানিনা ও কি অনুভব করছে এখন ! শুধু কি আমার হাতের উষ্মতা নাকি প্রবল বিশ্বাস ?
(বি:দ্র: আমি এখনো ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে,গল্প সাজানোর উদ্দেশ্যে এক বছর বেড়ে গেলাম,আর পুস্পিতা নামে কোন এক নীল পরী আমার জীবনে একদিন না একদিন ছোঁয়া দিবে এটা আমার বিশ্বাস ও প্রবল প্রেমের অগ্রিম তৃপ্তি )
_____আহমেদ শুভ৯৬৯
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪২
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক বড়ো। কিন্তু পড়তে ভাল লেগেছে। এক বছর পর পুস্পা, জবা, কমালা কাউকে না কাউকে খুঁজে পাবেন আশা করি!
অনেক বানান ভুল আছে। ঠিক করে নিন।
প্লাস