![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শব্দের রহস্যময় বিশ্বে, আমি অহং নামক এক সৃষ্টিতত্ত্বে সঞ্চারিত হয়েছি। আমি ভাসমান চাঁদনির স্পর্শে হুমায়ূন আহমেদের বিশেষ ভাষায় রচনা করতে পছন্দ করি, সেই ভাষায় যে প্রেমের রঙ ছড়িয়ে দেয় শব্দের জগতে। কাব্যে আমার আবেগ তার সহজ সঙ্গী হয়ে বসে থাকে জীবনের রঙিন চিত্রে। জীবনের জটিলতায় আমি আত্মবিশ্লেষণে ডুবে থাকি জীবনানন্দ দাশের মতো আত্মপ্রবাহে নেমে আসি। আমার চিন্তা একটি বৃহত্তর অধ্যায়, যেটি শব্দের মহাকাব্যে রূপান্তর পায়। এই চিন্তায় আমি বিশেষ এক বৃহত্তর সত্তা খুঁজে পাই যা শব্দের কোমল সৃষ্টির মধ্যে অবস্থিত। এই সত্তার মধ্যে থাকা আমার ভবিষ্যৎ রহস্য হোক, আমার কথার আভাস হোক, শব্দের পাখি হোক আমার চিন্তার পাখির মতো মুক্তচিত্ত।
কাঠের তৈরি ব্যাট দিয়ে কিংবা গোলাকার আকারের বল হাতে একজন লোক আমাকে মুগ্ধ করেছেন,তিনি আর কেউ নন বঙ্গরাজ্যের সাকিব আল হাসান।
রবী ঠাকুরের একটি বিখ্যাত লাইন আছে,
"আমারও পরাণ যাহা চায়"
এই লাইন টা কবি "নলিনী" কে নিয়ে লিখেছিলেন। নিশ্চয়ই কবি ছিলেন প্রেমরোগী,তার জন্য এতো মুগ্ধতা ছড়ানো লাইনটি তিনি লিখতে পেরেছিলেন। এই লাইনটি কবিগুরু যে লাইনটি লিখেছেন, এই লাইনে আছে মহাসমুদ্রের মত বিশাল ব্যথা।এই ব্যাথা আমার আর সাকিব আল হাসানের।
সাল টা ২০০৯.
আমার বয়স ৪বছর। তখন তো কিছুই বুঝতাম না আব্বুর সাথে সাথে সাকিব সাকিব করতাম।তখন সাকিব কে নিয়ে একটা আলাদা উত্তেজনা ছিল সবার মাঝে।এমনকি অনেকেই নিজেকে সাকিব আল হাসান বলতো।শান্তি পেতো বলে।
রান সংখ্যা, রেকর্ডস স্টেট ওসব নিয়ে কথা বলবো না। শুধু বলব তিনি এরকম একজন রহস্যময়ী ক্যারেক্টার এত বর্ণিল চরিত্র। শব্দে আটকে রাখতে পারলে তো হতোই। তিনি যা করেছেন তাতে শব্দ বিশেষণে তাকে বেঁধে রাখা সম্ভব নয়।
সাল টা ২০১২,
খেলা তখন বুঝতে শিখেছি।সে সময় সবার মুখে মুখে শুনতাম বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কথ। ভাবতে লাগলাম আমাদের দেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেটও খেলে তাও আবার দেশের খেলোয়াড় বিশ্বসেরা । সেবার এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। সেদিনের দুই রানের বেদনাদায়ক আর এখনো মনে পড়লে চোখ দিয়ে অশ্রুঝড়ে।তবুও এগারো জনের খেলায় একজন হারেনি তিনি হারতে জানেন না। তার জন্ম হয়েছিল শুধু জেতার জন্য। শচীন সাঙ্গাকারা আফ্রিদি লাসিথ মালিঙ্গাদের পিছনে ফেলে হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা।।
সালটা ২০১৫,
একই সঙ্গে বিশ্বের একজন ক্রিকেটার তিন ফরমেটেই বিশ্বসেরা হয়েছিলেন সেটা আবার বাংলাদেশ থেকে হয়েছিলেন।নামটা আর নতুন করে বলার নেই নামটা অবশ্যই সাকিব আল হাসান।
সাল টা ২০১৯,
ছোট দেশ থেকে একজন বড় তারকা হওয়ার পথ টা সহজে ছিল না। সাকিব আল হাসান বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন ছোট দেশ থেকেও একজন কিংবদন্তি হওয়া যায়। বিশ্বকাপের মতো একটি বড় আসরে ৬০০+ রান এবং ১০+ উইকেট নেওয়া যায়।রান সংখ্যা, উইকেটের সংখ্যা আরো দাঁড়াতে পারতো যদি বাংলাদেশ সেমি খেলতে পারতো,হতে পারতেন সাকিব আল হাসান টুর্নামেন্ট সেরা।
সাল টা ২০২৩,
২৩ বিশ্বকাপ সাকিবের ক্যারিয়ারে ছিল সবচেয়ে হতাশা জনক এক বিশ্বকাপ।নানা বাধা নানা সমালোচনা নিয়ে নিজের নামের পাশে তকমা লিখিয়েছিলেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডার হিসেবে। দেশকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলানোর জন্য নিজের নামকে করেছিলেন কলঙ্কিত। আঙ্গুল ভাঙ্গা নিয়ে খেলে হয়েছিলেন ম্যান অব দ্যা ম্যা। বিশ্বকাপের গন্তব্য শেষ হলো পথিকের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেতাব নিয়ে।মনে পড়ে লঙ্কা দের বিপক্ষে ম্যাচটার কথা? তাদের মাঠে তাদের বিপক্ষে বাংলা থেকে একজন করে ছিলেন প্রতিবাদ।নিজের ক্যারিয়ারের দিকে না তাকিয়ে অদম্য সেই সাহসী ছেলেটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালি মাথা নোয়াবার নয়। সাকিব আল হাসান মনে করিয়ে দিলেন নজরুলের সেই আগুন জড়ানো চার লাইন,
"মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম, মোরা ঝরনার মতো চঞ্চল।
মোরা বিধাতার মত নির্ভয়, মোরা প্রকৃতির মত সচ্ছল।
মোরা আকাশের মতো বাধাহীন,
মোরা মরু-সঞ্চার বেদুঈন।"
এমন অনেক চমকে পূর্ণ দামাল ছেলের 17 টি বছর কেটেছে বাংলার পতাকা কাঁধে নিয়ে। এরকম কোন নামিদামি লিগ নেই সাকিব আল হাসান খেলেননি।বিগ ব্যাশ,কাউন্টি,আইপিএল, সিপিএল সব জায়গায় নিজের দেশ কে রিপ্রেজেন্ট করেছেন।
কাশ্মীরে ঘরের ভেতর সাকিবের ছবি টানানো, অস্ট্রেলিয়ার নাবালক ছেলের সাকিব আল হাসান হতে চাওয়া, ইংল্যান্ডের মানুষের গায়ে সাকিব নাম লেখানো, ওয়েস্ট ইন্ডিজে সাকিবের নামে নাম রাখা! এইতো সেদিন ক্যারিবিয়ান তারকা রোমারিও শেফার্ড বললেন, "সাকিব তার দেশের জন্য যা করেছেন এটা দারুন! এটা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে যখন কথা বলবেন, সাকিব কে নিয়ে কথা আপনাকে বলতেই হবে।"
অথচ আমরা কিছু মানুষ এই মানুষ টা কে ভুয়া খেতাবে ভূষিত করেছি।এটা কি তার প্রাপ্য?
©somewhere in net ltd.