![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শব্দের রহস্যময় বিশ্বে, আমি অহং নামক এক সৃষ্টিতত্ত্বে সঞ্চারিত হয়েছি। আমি ভাসমান চাঁদনির স্পর্শে হুমায়ূন আহমেদের বিশেষ ভাষায় রচনা করতে পছন্দ করি, সেই ভাষায় যে প্রেমের রঙ ছড়িয়ে দেয় শব্দের জগতে। কাব্যে আমার আবেগ তার সহজ সঙ্গী হয়ে বসে থাকে জীবনের রঙিন চিত্রে। জীবনের জটিলতায় আমি আত্মবিশ্লেষণে ডুবে থাকি জীবনানন্দ দাশের মতো আত্মপ্রবাহে নেমে আসি। আমার চিন্তা একটি বৃহত্তর অধ্যায়, যেটি শব্দের মহাকাব্যে রূপান্তর পায়। এই চিন্তায় আমি বিশেষ এক বৃহত্তর সত্তা খুঁজে পাই যা শব্দের কোমল সৃষ্টির মধ্যে অবস্থিত। এই সত্তার মধ্যে থাকা আমার ভবিষ্যৎ রহস্য হোক, আমার কথার আভাস হোক, শব্দের পাখি হোক আমার চিন্তার পাখির মতো মুক্তচিত্ত।
**আপনি কি আপনার সন্তানকে বলেন,
তোমাকে মানুষ করার জন্য আমি এত টাকা খরচ করছি! এটা বোঝো!
বলবেন না। যা খরচ করেছেন, নিজের বুদ্ধিতে। সন্তান আপনাকে তেমন পরামর্শ দেয়নি। তেমন কিছু চায়ওনি।
সে আপনার কাছে পাশে থাকার ভরসা চেয়েছে। আপনি দেননি। পারলে সেটা দিন। ভরসা দিলে সন্তানের বোধ তৈরি হয়। তাতে টাকা লাগে না।
**আপনি কি বলেন তোমার ক্লাসের অমল সব বিষয়ে নব্বই শতাংশের বেশি নম্বর পায়, তুমি কেন পাও না?
বলবেন না। এক একজনের শেখার সীমা ও সামর্থ্য এক এক রকম। সুতরাং নম্বর পাওয়ারও। নয়তো ফিজিক্সে স্নাতক না হয়ে আপনিও নিউটন হতেন।
**আপনি কি আপনার সন্তানকে বলেন, তোমাকে ডাক্তার হতেই হবে। আমার বড় শখ! আমি তো হতে পারিনি!
বলবেন না। আপনি ডাক্তার না হয়ে ব্যবসায়ী হয়েও সমাজে প্রচুর সম্মান অর্জন করেছেন। স্ত্রী সন্তানদের প্রতি সব দায়িত্ব পালন করছেন। বছরে দুবার বেড়াতে যাচ্ছেন। সমাজের জন্য অনেক কিছু করছেন। আপনার সন্তানের গলায় সুর আছে, ওকে গানটাই শেখান। ও আনন্দে থাকবে। ডাক্তারির একটা সিট নষ্ট হবে না ওকে জোর করে ডাক্তারি পড়ানোর জন্য।
**আপনি কি আপনার বাম হাতে লিখতে চাওয়া শিশুকে ডান হাতে লিখতে বাধ্য করছেন? সে কষ্ট করে তা শিখছে আপনার অত্যাচারে?
করবেন না। ওরা বাম হাতটাই আসলে ডান হাত। ডানহাতি শিশুদের বাম দিকের মস্তিষ্ক বেশি কার্যকরী আর বামহাতি শিশুদের ডান দিক। উল্টো হাত ব্যবহার করতে বাধ্য করলে ও উল্টো দিকের কম কার্যকরী মস্তিষ্কও ব্যবহার করবে।
**আপনি কি আপনার শিশু খাবার খায় না বলে তার হাতে মোবাইল দিয়ে খাওয়ান?
করবেন না এমন। মোবাইলে নেশাগ্রস্ত হয়ে যাবে শিশু। সে তার পাঁচটা ইন্দ্রিয়ের ব্যবহারের দ্বারা পরিবেশ থেকে কিছু শিখবে না, যা তাদের জীবনের প্রথম পাঁচ বছরের শিক্ষণের প্রণালী।
**আপনি কি আপনার সন্তানকে নাচ গান আঁকা আবৃত্তি সাঁতার সবকিছুর জন্য কোচিং ক্লাসে দিচ্ছেন?
দেবেন না। এতে শৈশব ব্যাহত হয়। বিকেল বেলার শিশু অন্তত আনন্দ পাওয়ার জন্য এসব করুক। সবকিছুর মধ্যে প্রতিযোগিতা ঢুকিয়ে দিলে শিশু স্বার্থপর হয়। অবসাদগ্রস্ত বা দুশ্চিন্তাপ্রবণ হয়।
**আপনি কি আপনার সন্তানকে সবার সঙ্গে মিশতে দিচ্ছেন না স্ট্যাটাসের দোহাই দিয়ে?
করবেন না। এতে আপনার শিশুর কমিউনিকেশন স্কিল তৈরি হবে না। আপনি গোটা জীবন থাকবেন না তার পাশে। আপনি জানেন না, বড় হয়ে সে আপনার স্ট্যাটাসের হবে কিনা। তখন তার সাধারণ সমাজে মিশতে অসুবিধা হবে। অথবা সাধারণ সমাজ তাকে ব্রাত্য করে রাখবে।
**আপনি কি সর্বদা আপনার সন্তানের নিন্দা করেন? তাকে বকাঝকা করেন? বলেন , তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না?
বলবেন না। তাতে শিশুর ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাসে চির ধরবে। সে ভাববে, আমার বাবা মা আমাকে মানুষ মনে করে না, অন্যেরা করবে কেন?
**আপনি কি আপনার আপনার সন্তানকে স্কুলের বই ছাড়া অন্য কোনও বই পড়তে উৎসাহ দেন না?
এরকম করবেন না। এতে সে কূপমন্ডুক সাধারণ জ্ঞানহীন মানুষে পরিণত হবে। সমাজে চলার ক্ষেত্রে যা খুবই খুবই অসুবিধাজনক।
**আপনি কি সন্তানকে লুকিয়ে মদ খান?
খাবেন না। এতে শিশুরও তার প্রতি নিষিদ্ধ আগ্রহ জন্মাবে। হয় মদ খাওয়া ছাড়ুন অথবা সন্তানের সামনে খান। আপনার নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি আগ্রহ শিশুকে সেদিকে আকৃষ্ট করবে। সেও নিষিদ্ধ কিছু করে আপনাকে লুকাবে।
*"সন্তানের ব্যর্থতায় আপনি কি ভেঙে পড়ে তাকে তিরস্কার করেন?
করবেন না। জীবনের সবকিছু যুদ্ধ নয়, একশ শতাংশ সফল কোনও মানুষ নয়, চেষ্টায় সব হয়, এসব আপনি ছাড়া তাকে কে বোঝাবে?
**আপনি কি সন্তানকে মিথ্যে বলেন?
বলবেন না। একসময় শিশু বুঝতে পারবে আপনি মিথ্যে বলছেন তখন তার আপনার প্রতি অশ্রদ্ধা হবে, অথবা সেও মিথ্যে বলতে শিখবে।
**আপনি যে সবকিছু জানেন না, সেটা সন্তানকে বলতে লজ্জা পান?
পাবেন না। অজানা ব্যাপারে সে আপনাকে প্রশ্ন করলে বলবেন, জেনে বলব। তাতে তার মস্তিষ্কে বার্তা যাবে, সবকিছু সকলে জানতে পারে না । তার জন্য শিখতে হয়, পড়তে হয়।
সন্তান আপনার গিনিপিগ নয়। তার মানুষ হওয়ার জন্য খরচ করা আপনার লগ্নি নয়, কর্তব্য, তাই তাতে লাভ ক্ষতি বিচার নয়।
আপনি হয়তো সন্তানের প্রতি খুব কড়া। আপনার তুঘলকিতে আপনি হয়তো সামনে দিয়ে মাছি গলতে দিচ্ছেন না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, যেদিন বুঝবেন পিছন দিয়ে হাতি গলে আপনার সাধের আমিত্বের বাগানকে তছনছ করে দিয়েছে, তখন আর কিছু করার থাকবে না। বরং সহজ থাকুন সন্তানের কাছে। তার নাগালে রাখুন নিজেকে। ফ্যান্টাসির বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর সব সন্তান চান তার বাবা মা মানুষ থাকুন। ঈশ্বর নয়।
পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
০১.০৩.২০২৪
© Palash Bandyopadhyay
Copied from Kamrul Hasan bhaia's post.
©somewhere in net ltd.