![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শব্দের রহস্যময় বিশ্বে, আমি অহং নামক এক সৃষ্টিতত্ত্বে সঞ্চারিত হয়েছি। আমি ভাসমান চাঁদনির স্পর্শে হুমায়ূন আহমেদের বিশেষ ভাষায় রচনা করতে পছন্দ করি, সেই ভাষায় যে প্রেমের রঙ ছড়িয়ে দেয় শব্দের জগতে। কাব্যে আমার আবেগ তার সহজ সঙ্গী হয়ে বসে থাকে জীবনের রঙিন চিত্রে। জীবনের জটিলতায় আমি আত্মবিশ্লেষণে ডুবে থাকি জীবনানন্দ দাশের মতো আত্মপ্রবাহে নেমে আসি। আমার চিন্তা একটি বৃহত্তর অধ্যায়, যেটি শব্দের মহাকাব্যে রূপান্তর পায়। এই চিন্তায় আমি বিশেষ এক বৃহত্তর সত্তা খুঁজে পাই যা শব্দের কোমল সৃষ্টির মধ্যে অবস্থিত। এই সত্তার মধ্যে থাকা আমার ভবিষ্যৎ রহস্য হোক, আমার কথার আভাস হোক, শব্দের পাখি হোক আমার চিন্তার পাখির মতো মুক্তচিত্ত।
একদিন লক্ষ করলাম, সে (শাওন) ঝিম ধরে কম্পিউটারের ফেসবুকের পাতার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের পাতায় অশ্রুবিন্দু।
আমি বললাম, সমস্যা কী?
কেয়ারগিভার বলল, কোনো সমস্যা না। সামান্য মন খারাপ। কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
আমি বললাম, আমাকে বলো, দেখি, মন খারাপ কাটানোর চেষ্টা করতে পারি কি না।
-তোমাকে বলব না। তোমার মন খারাপ হবে।
আমি বললাম, সহজে মন খারাপ হবে, এমন মানুষ আমি না। বুঝতে পারছি, ফেসবুকে পাঠানো কারও কমেন্ট পড়ে তুমি আপসেট হয়েছ। কী লিখেছে?
শাওন পড়ে শোনাল। কেউ একজন লিখেছে, তোমার উচিত শিক্ষা হয়েছে। আমি খুশি যে তোমার স্বামীকে ক্যানসার দিয়ে আল্লাহ তোমাকে শিক্ষা দিলেন। এই শিক্ষা তোমার আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল।
শাওনের মেয়ে লীলাবতী যখন মারা গেল, তখনো সে এ ধরনের চিঠিপত্র পেত। লেখা থাকত, তোমার কঠিন শাস্তি হওয়ায় আমরা খুশি। আরও শাস্তি হবে। এই ধরনের কথা।
আমি শাওনকে বললাম, পৃথিবীতে মানসিক অসুস্থ অনেক মানুষ। তাদের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমরা ভাবব সুস্থ মানুষদের কথা। তোমার ফেসবুকে শত শত মানুষ কত চমৎকার সব কথা লিখছে। লিখছে না?
-হ্যাঁ।
-এর মধ্যে একজনের কথা চিন্তা করো। সে চলে গেছে মক্কায়, কাবা শরিফে। সেখান থেকে তোমাকে জানিয়েছে, আমি স্যারের জন্য দোয়া করতে এসেছি। শাওন আপু, আপনি একটুও চিন্তা করবেন না। এর পরও কি মন খারাপ করা তোমার উচিত?
শাওন বলল, না, উচিত না।
-তাহলে মিষ্টি করে একটু হাসো।
-হাসতে পারব না।
বলেও সে হাসল।
আমাদের আশপাশে বিকৃত মানসিকতার মানুষের সংখ্যা কি বাড়ছে? মনে হয় বাড়ছে। একজনের কথা বলি, সে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য হাস্যকর কাণ্ডকারখানা শুরু করল। একটা পর্যায়ে গেটের সামনে স্ট্রাইক করার মতো অবস্থা। মহা বিরক্ত হয়ে তাকে আসতে বললাম। ২৩-২৪ বছরের যুবক। কঠিন চোখমুখ। আমি বললাম, এখন বলো, আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য এত ব্যস্ত হয়েছ কেন? বিশেষ কিছু কি বলতে চাও?
-চাই।
-তাহলে বলে ফেলো।
-আপনার লেখা আমার জঘন্য লাগে।
-এই কথাটা বলার জন্য এত ঝামেলা করেছ?
-হ্যাঁ! কারণ সরাসরি এই কথা আপনাকে বলার কারোর সাহস নাই। সবাই আপনার চামচা।
-আমি বললাম, আরও কিছু কি বলবে?
-হ্যাঁ।
-বলে ফেলো।
সে ইংরেজিতে বলল, আই ওয়ান্ট ইউ টু ডাই সুন।
আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম (ইংরেজিতে), আই হোপ অ্যান্ড প্রে ইউ হ্যাভ আ লং অ্যান্ড মিনিংফুল লাইফ।”
—হুমায়ূন আহমেদ (নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ)
©somewhere in net ltd.