![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শব্দের রহস্যময় বিশ্বে, আমি অহং নামক এক সৃষ্টিতত্ত্বে সঞ্চারিত হয়েছি। আমি ভাসমান চাঁদনির স্পর্শে হুমায়ূন আহমেদের বিশেষ ভাষায় রচনা করতে পছন্দ করি, সেই ভাষায় যে প্রেমের রঙ ছড়িয়ে দেয় শব্দের জগতে। কাব্যে আমার আবেগ তার সহজ সঙ্গী হয়ে বসে থাকে জীবনের রঙিন চিত্রে। জীবনের জটিলতায় আমি আত্মবিশ্লেষণে ডুবে থাকি জীবনানন্দ দাশের মতো আত্মপ্রবাহে নেমে আসি। আমার চিন্তা একটি বৃহত্তর অধ্যায়, যেটি শব্দের মহাকাব্যে রূপান্তর পায়। এই চিন্তায় আমি বিশেষ এক বৃহত্তর সত্তা খুঁজে পাই যা শব্দের কোমল সৃষ্টির মধ্যে অবস্থিত। এই সত্তার মধ্যে থাকা আমার ভবিষ্যৎ রহস্য হোক, আমার কথার আভাস হোক, শব্দের পাখি হোক আমার চিন্তার পাখির মতো মুক্তচিত্ত।
অরণ্য আর প্রকৃতি ভালোবাসতেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ভালোবাসতেন বলেই ‘পথের পাঁচালী’ ‘আরণ্যক’ ‘চাঁদের পাহাড়’-এর মতো প্রকৃতিঘেঁষা কালজয়ী উপন্যাসগুলো বেরিয়েছিল।
অরণ্য-প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন বলেই প্রায়ই বন-পাহাড়ের টানে বেরিয়ে পড়তেন। একবার ঘটল অঘটন, তাঁর জীবনের সবচেয়ে অঘটন।
পাহাড়ে পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি দিয়েছে। সেই রুপালি আগুন ঝরা রাতে তিন পথিক এগিয়ে চলেছে গাঢ় অন্ধকার ঠেলে। পুর্ণিমার উছলে পড়া আলো ওঁদের হাতছানি দেয়, ঘরছাড়া করে। চারপাশে সুনসান নীরবতা।
তক্ষক কিংবা ঝিঝিরা রাতের জয়গান করে। জোনাকির দল জ্বল-নেভে সেই শাল-মহুয়ার বনে। রাতজাগা পাখিরা ডানা ঝাপটায়। কখনো কলজে কাঁপানো তীক্ষ্ণ চিৎকারে কেঁপে ওঠে বন।
কখন যে বিভূভূষণে পেছনে ফেলে অন্য দুজন এগিয়ে গেছেন, তারা খেয়ালই করেননি। হঠাৎ এক আর্তচিৎকারে থেমে যান তাঁরা। বুঝতে পারেন, বিপদে পড়েছেন বিভূতিভূষণ। পিছন দিকে ঘোরেন সঙ্গীকে খুঁজতে। বেশি দূর যেতে হয় না।
পাহাড়ী ঢালে বসে পড়েছেন বিভূতি। জোসনার ম্লান আলোতেও স্পষ্ট দেখতে পেলেন তাঁর আতঙ্কিত চেহারা। সঙ্গীদের উপস্থিতিও লোকটা ভয় দূর করতে পারে না। ভয়ার্ত কণ্ঠে বার বার বলছেন, ‘এ আমি কী দেখলাম, এ আমি কী দেখলাম!’ সঙ্গী দূজন তাঁকে ধাতস্ত হওয়ার সুযোগ দিলনে। এক সময় অনেকটাই সুস্থ বোধ করলেন ভদ্রলোক। বললেন তাঁর ভয় পাওয়ার কারণ। অবিশ্বাস্য সে গল্প। সঙ্গীরা বোঝা আর না বোঝার দোলচালে।
বনপথের সৌন্দর্যে আনমনা পিছিয়ে পড়েন খানিকটা লোকটা বিভূতি। ভাবেন, জোর পায়ে হেঁটে ধরবেন সঙ্গীদের। তখনই দেখতে পান একটা শবযাত্রা। একদল লোক খাটিয়া কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলেছে শশ্মানের দিকে। ক্ষণিকের জন্য থেমে যায় দল। কাঁধ থেকে নামায় খাটিয়া। বিভূতিভূষণ ততক্ষণে পৌঁছে গেছেন শবযাত্রীদের খুব কাছে। তাঁর ইচ্ছে হলো, মৃত লোকটার মুখ দেখবার। মৃতের মুখের কাপড় সরিয়ে দেখলেন। সর্বনাশ, এ কাকে দেখছেন! নিজের লাশ খাটিয়ায়! চোখ কচলে দেখলেন কোনো ভুল হচ্ছে কিনা। কিন্তু হুবহু নিজের চেহারা। আত্মসম্বরণ করতে পারলেন না বিভূতি। ভয় জমে গেলন স্রেফ। শিরদাঁড়া বেয়ে চলেছে ভয়ের শীতল স্রোত। গগণবিদারী একটা চিৎকার দিলেন। ভদ্রলোকের সঙ্গী দুজন যতক্ষণ চলে এসেছেন কাছে, ততক্ষণে শবযাত্রীরা সরে পড়েছে ওখান থেকে।
এ ঘটনার পর কখোনা সুস্থ্য হতে পারেননি ভদ্রলোক। মৃত্যুভয় তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। ধরেই নেন ওপারের ডাক এসে গেছে। এজন্যই দেখেছেন নিজের লাশ। মাসখানেকের মধ্যেই মারা যান বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্য অকালে হারায় কালজয়ী এক কথাসাহিত্যিককে।
অথচ বিভূতিভূষণ ছিলেন আপদমস্তক শিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ছিলেন। সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা যেমন করেছেন, ভূগোল, মহাকাশচর্চা কিংবা বিজ্ঞানআন্দোলনেও তিন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। অজপাড়াগাঁয়ে নিজের স্কুলে তাঁরই উদ্যোগে আয়োজিত হত বিজ্ঞান উৎসবের। তা না হলে, আচার্য প্রফুল্ল রায়ের মতো বিজ্ঞানীর সাহচর্য তিনি পেতেন না। সেই মানুষটাই কখোনো কখোন অদ্ভুত সব কাজকর্ম করতেন, যা একজন লেখকের চরিত্রের সঙ্গে বেমানান।
পথের পাঁচালী লিখে রাতারাতি বিখ্যাত হয়েছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই সিক্যুয়াল ছিল অপারজিত। পথের পাঁচালির নায়ক অপু অপরাজিত উপন্যাসে সম্পূর্ণ এক অন্য মানুষ। পরিণত, কুসংস্কারমুক্ত, যুক্তিবাদী। কিন্তু এর বিভুতিভূষণ পুরোপুরি যুক্তিবাদী কিংবা কুংসংস্কারমুক্ত ছিলেন না। তিনি তন্ত্রমন্ত্র মানতেন, প্রেতচর্চা করতেন, প্ল্যানচেট করে আত্মা নামানোর দাবি করেছেন। এজন্য চাকরিও চলে গিয়েছিল তাঁর।
বিভূতিভূষণের মধ্যে তন্ত্রচর্চার বিষয়টা প্রথম ধরা পড়ে, তাঁর প্রথম স্ত্রী গৌরীর মৃত্যুর পর। মাত্র কয়েক মাসের সংসার ছিল। তারপর হঠাৎ করেই টাইফয়েডে মারা যান গৌরী। বিষণ্ণ হয়ে পড়েন বিভুতিভূষণ। এর আগে-পরে বাবা, দুইবোন ও মায়ের মৃত্যু—একের পর এক স্বজন হারানোর বেদনা সইতে হয় তাঁকে। কাপালিক-তান্ত্রিকদের খপ্পরে পড়ে, তাদের দর্শনে আকৃষ্ট হন। নিজেও জড়িয়ে পড়েন প্রেত চর্চায়।
সূত্র: পথের কবি/কিশলয় ঠাকুর
২| ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৪২
এম ডি মুসা বলেছেন: ভালো ফোঊ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯
মিথমেকার বলেছেন: তাঁকে নিয়ে এই তথ্য জানতাম না, বেশ অবাক হয়েছি।