নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন খেটে খাওয়া মানুষ। তাই যারা ঘাম ঝরায় তাদের কষ্ট আমাকে ব্যাথিত করে। যে কোন ক্ষেতে উগ্রতা অপছন্দ করি। তবে অন্যায় দেখলে মুখ বন্ধ রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। সদা শান্তির পক্ষে।\n

মাটি আমার মা

আমার কাছে কোন দলই বেশী বড় নয়, আমার দেশের স্বার্থ আগে। কারো বিশ্বাসে আঘাত করা পছন্দ করি না। সদা শান্তির পক্ষে। তবে দেশের স্বার্থে ভিন্ন ব্যাপার। সকল জাতি,ধর্ম, গোষ্টির প্রতি আমি সন্মান জানাই।

মাটি আমার মা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ফুপুর শেষ অবলম্বনও শেষ হয়ে গেল-

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩

চোখের জল আর ফেলতে ইচ্ছে করে না। তবু চোখ ভিজে যায়, মায়ের মুখে যখন শুনি সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা। সময়কাল ১৯৭১ সাল। আমি তখন মায়ের কোলে দুধের শিশু। মা বলেন বাবা, চাচা, বড় চাচা মিলে বাগিচায় বাংকার খুড়ে রেখেছিলেন। যখনই গুলির শব্দ নিকটবর্তী হতো তখনই দাদা, দাদী, আমার মা, আমাকে এবং ছোট ফুফুকে নিয়ে দৌড়ে বাংকারে ঢুকে যেতেন। বাংকারের বুদ্ধিটা বাবা চাচাদেরই। সে অনেক কথা, আজ শুধু একটা ঘটনা বলব।

আমার তৃতীয় ফুফুর বিয়ে হয়েছিল, আমাদের পাশের গ্রামে। ফুফার বাবা আর ফুফা আড়তদারী ব্যবসা করতেন। গ্রামের বাজারে বড় দোকান ছিল। যু্দ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই যতটুকু সম্ভব ব্যবসা করতেন। সহজ সরল ছিলেন বাপ বেটা দু’জনই। নামাজ কালমা পড়তেন নিয়মিত। কারো ধারে পাছে ছিলেন না। মুক্তির সংগ্রামের স্বপক্ষে থাকলেও সাহসীকতার অভাবে রনাঙ্গনে যাননি। বাজারে দোকান করতেন আর বাড়ী আসা যাওয়া করতেন। তবুও নিকটবর্তী বাড়ীর রাজাকার কলিমুদ্দীন, রহমত শেখরা (ছদ্ম নাম কারন মূল নাম ভুলে গেছে) তাকে প্রায় বিরক্ত করত। টাকা না দিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে যেত। পাক বাহিনীকে দিয়ে শায়েস্তা করার ভয় দেখাত। একদিন ফুফা বাজারে, এই সময় কয়েকটা গরু গোয়াল খেকে নিয়ে গেল। তবু ফুফা প্রতিবাদ করলেন না। দিন দিন জুলুম বাড়তে লাগল। এ দিকে আমার ফুফুর প্রথম সন্তান মানে আমার ফুফাত ভাই জন্মালো। সেই ভয় ভীতির মধ্যেই ফুফা এবং তার বাবা প্রথম সন্তানের জন্ম উপলক্ষে খুব ছোট করে কিছু আত্মীয় স্বজন খাওয়ালো। এদিকে আশে পাশের কয়েকটি গ্রামের বাজারে আগুল দিল পাক বাহিনী এবং রাজাকাররা। ভৈরাগীর হাট, কালীর হাট উল্লেখযোগ্য। কিছু মুসলিম বাড়ীতে আক্রমন হল, আর হিন্দু বাড়ীগুলো লুটপাট, করে জ্বালিয়ে দিল। মায়ের কাছে শুনেছি বহু হিন্দু নারী সেই সব আক্রমনে সম্ভ্রম হারিয়েছে। এই আক্রমন গুলোতে সরাসরি পাকবাহিনীর সাথে অংশ গ্রহন করেছে স্থানীয় রাজাকার, আলবদর, আল সামসরা। অক্টোবর মাসের শেষ বা নভেম্বরের শুরু হবে সময়টা। পাক বাহিনী অনেক স্থানে নাকানিচুবানী খাচ্ছে। একদিন রাজাকাররা ফুফাকে তার দোকানের সব দিয়ে দিতে বলল। এতে ফুফা ক্ষীন তর্ক জুড়ল। তাঁর তর্কের সাহসীকতা তাদের পছন্দ হলো না। তারা হুমকী দিয়ে চলে গেল। পরের দিন রাতে বাপ বেটা নামাজ কলমা পড়ে শুয়ে আছে। ফুফু এবং তার শ্বাশুড়ী বাজার থেকে আনা বাজার রান্না বান্না করছে। রান্না হলে তারা এক সাথে খাবে। রাত ১০টা কি ১১টার সময় আমার ৩ মাস বয়সী ভাই কেঁদে উঠে চুপ হয়ে যায়। ফুফু এবং তাঁর শ্বাশুড়ী মনে করল হয়ত ও ক্ষুধায় কাঁদছে। তাই হাতের কাজ শেষ করে যাবে সিদ্ধান্ত নিল। রান্না শেষে বৌ শ্বাশুড়ী এক সাথে ঘরে গেল। ঘরে শুধু আমার ছোট ভাইটি ছাড়া কেউ নেই। বাপ বেটা একদম হাওয়া। রান্না ঘর দুরে থাকাতে তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাপ বেটা চুপ ছিল। ধস্তা ধস্তি যা হয়েছে, ফুফু দূরে থাকাতে শব্দ পায়নি। ফুফার মাথার টুপিটা চাউলের বড় মটকীতে পাওয়া গেল। ধারণা করা হল রাজাকারদের দেখে ফুফা আত্মগোপন করতে মটকীতে ঢুকেছিলেন। যা হোক বাড়ীর অন্যরা সারা বাড়ী খুজল বাপ বেটাকে পেল না। রাত একটার দিকে নিকটবর্তী খালের পাড়ে কয়েক রাউন্ড রাইফেলের গুলির শব্দ হল, সেই সাথে বাপ বেটার মরন আর্তনাদ। হারিকেন হাতে সবাই সেই দিকে এগুলো, কিন্তু জানোয়ার বাহিনী খালের পাড় থেকে হুঙ্কার ছাড়ল, যে এগুবে তাকে গুলি করা হবে। ওরা ফজরের আজান পর্যন্ত কাউকে এগুতে দিল না। আমার ফুফু এবং শ্বাশুড়ী জ্ঞান হারিয়ে পড়েছিল। সকালে জানোয়ারা সরে গেল। সবাই কাছে গিয়ে দেখল ফুফুর শ্বশুর মৃত আর ফুপা তখনো জীবিত। বাপ বেটাকে তুলে বাড়ীতে আনা হলো, গুলি করে বেয়নেট চার্জ করা হয়েছিল দু জনের উপরই। অনেক চেষ্টায় একজন ডাক্তার আনা হলো কিন্তু সে শেষ রক্ষা করতে পারল না। রাইফেলের গুলি বের হবার সময় পিঠের দিক থেকে অনেক বড় একটুকরা নিয়ে গিয়েছিল। সকাল ১০টা নাগাদ ফুফু আমার বিধবা হয়ে গেল। ফুফা মারা যাবার পরদিন ফুফুকে স্বপ্ন দেখাল, বাবুকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখ সাতদিন পর আমি এসে ওকে নিয়ে যাব। সেই দিন সকাল বেলা থেকে ছোট ভাইটার ভীষন জ্বর হল। অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখানো হল, কোন কাজ হল না।ঠিক সাতদিন পর জুম্মার পর আমার ছোট ভাইটি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করল। আমার ফুফুর আর কোন অবলম্বন রইল না। আমার সেই ভাইটি জীবিত থাকলে আজ পিতার হ্ত্যার বিচার চাইতে পারত। ও নাই আমি আছি, আমি প্রজন্ম ৭১। আমার কাছে এদেশের নোংরা রাজনীতির উর্ধ্বে রাজাকারের বিচার। আমি বিচার চাই। সেই রাজাকাররা আজো বেঁচে আছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.