![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসসালামু আলাইকুম। আমি আমাতুস সামী তাহেরা। আমি ২০১৯ সালে সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ থেকে ইউনানী চিকিৎসার উপর বি.ইউ.এম.এস. ডিগ্রী অর্জন করেছি। আমি আমার এই ব্লগে ইউনানী চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা করব যাতে সাধারণ মানুষ স্বল্প খরচে ও ঘরোয়া ভাবে নিজেদের চিকিৎসা করতে পারে।
প্রতিটি চিকিৎসার কিছু মূলনীতি রয়েছে। যেমনঃ- এলোপ্যাথি চিকিৎসার উদ্দেশ্য হল রোগের লক্ষণের বিপরীত ধর্মী ঔষধ প্রদান। অপরদিকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মূলনীতি হল “Similia Similibus Curantur” অর্থ্যাৎ সদৃশ্, সদৃশ্যবিধান আরোগ্য। ঠিক তেমনি ইউনানী চিকিৎসারও একটি মূলনীতি আছে।
ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী মানবদেহ ৭ টি মূলভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হলঃ-
১. আরকান বা মৌলিক উপাদানঃ
মানবদেহ ৪ টি মৌলিক উপাদান নিয়ে গঠিত। উপাদানগুলো হল – অগ্নি, বায়ু, পানি ও মাটি। অগ্নি বলতে অগ্নি জাতীয় উপাদান অর্থ্যাৎ অক্সিজেন, ফসফরাস, ক্লোরিন ও ফ্লোরিনকে বুঝায়। তেমনিভাবে বায়ু বলতে নাইট্রোজেন; পানি বলতে হাইড্রোজেন এবং মাটি বলতে মাটি জাতীয় উপাদান অর্থ্যাৎ কার্বন, সালফার, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদিকে বুঝায়।
২. মিযাজ বা প্রকৃতিঃ
প্রতিটি মানবদেহের একটি মিযাজ রয়েছে। এই মিযাজ হল পূর্বে উল্লেখিত ৪ টি মৌলিক উপাদানের সংমিশ্রণের ফলে সৃষ্ট অবস্থা। প্রতিটি উপাদানের নির্দিষ্ট মিযাজ বা প্রকৃতি রয়েছে। যেমন অগ্নির মিযাজ উষ্ণ ও শুষ্ক, বায়ুর মিযাজ উষ্ণ ও আর্দ্র, পানির মিযাজ শীতল ও আর্দ্র এবং মাটির মিযাজ শীতল ও শুষ্ক। এই ৪ টি মৌলিক উপাদানের অনুপাতের উপর ভিত্তি করে মানবদেহের মিযাজ গঠিত হয়।
৩. আখলাত বা ধাতুরসসমূহঃ
মানবদেহের প্রধান ৪ টি ধাতুরস হল- রক্ত, শ্লেষ্মা, পিত্ত ও অম্ল। এই ধাতুরসসমূহেরও নির্দিষ্ট মিযাজ রয়েছে। যেমন- রক্তের মিযাজ উষ্ণ ও আর্দ্র, শ্লেষ্মার মিযাজ শীতল ও আর্দ্র, পিত্তের মিযাজ উষ্ণ ও শুষ্ক, অম্লের মিযাজ শীতল ও শুষ্ক। যখন এই ধাতুরসসমূহের মধ্যে তারতম্য ঘটে তখন দেহের সাম্যাবস্থা ব্যহত হয় এবং দেহ রোগাক্রান্ত হয়।
ইউনানী চিকিৎসার মূলনীতি
৪. আযা বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা হয়। মূল অঙ্গ যেমন- মস্তিষ্ক, ফুসফুস, কিডনী, হৃদপিন্ড, যকৃত প্রভৃতি। আনুষঙ্গিক অঙ্গ যেমন- চুল, নখ, হাড়, চামড়া ইত্যাদি।
৫. আরওয়াহ বা জীবনীশক্তি
ইউনানী চিকিৎসা মতবাদ অনুযায়ী, জীবনীশক্তি ৩ প্রকার। হৃদযান্ত্রিক জীবনীশক্তি, স্বাভাবিক জীবনীশক্তি ও মানসিক জীবনীশক্তি।
উদাহরণস্বরূপ- যখন কোন ব্যাক্তির পক্ষাঘাত (paralysis) হয়, এর অর্থ হল তার দেহের স্বাভাবিক জীবনীশক্তি দুর্বল হয়ে গিয়েছে। অনুরূপভাবে মানসিক রোগীদের মানসিক জীবনীশক্তি বিঘ্নিত হয়, অপরদিকে মুমূর্ষ রোগীদের হৃদযান্ত্রিক জীবনীশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।
৬. কোওয়া বা শক্তি
ইউনানী চিকিৎসা মতবাদ অনুযায়ী, শক্তিও ৩ প্রকার। হৃদযান্ত্রিক শক্তি, স্বাভাবিক শক্তি ও মানসিক শক্তি। প্রতিটি জীবনীশক্তি প্রতিটি শক্তির উপর কাজ করে।
উদাহরণস্বরূপ- যখন কোন ব্যাক্তি মানসিক আঘাত পায়, তখন মস্তিষ্কের ধাতুরসের মধ্যে তারতম্য দেখা দেয়, ফলে তার মানসিক জীবনীশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তার দেহের মিযাজ পরিবর্তিত হয়, সবশেষে তার মানসিক শক্তি পরিবর্তিত হয়ে যায়। ফলে সে অন্য সাধারণ ব্যাক্তির মত স্বাভাবিক আচরণ করে না।
৭. আফাল বা ক্রিয়া
ইউনানী চিকিৎসা মতবাদ অনুযায়ী ক্রিয়া মূলত ২ প্রকার। একক ক্রিয়া ও যৌগিক ক্রিয়া।
ইউনানী চিকিৎসা মতবাদ অনুযায়ী যখন ধাতুরসসমূহের মধ্যে তারতম্য ঘটে তখন দেহের সাম্যাবস্থা ব্যহত হয়, দেহের মিযাজ পরিবর্তিত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিঘ্নিত হয় এবং দেহ খুব সহজেই রোগাক্রান্ত হয়। তাই ইউনানী চিকিৎসার মূলনীতি হল- ধাতুরসসমূহকে সাম্যাবস্থায় ফিরিয়ে আনা, দেহের মিযাজকে ঠিক করা, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরায় ফিরিয়ে আনা যাতে দেহ রোগের বিরুদ্ধে লড়তে পারে এবং দেহ রোগমুক্ত হয়।
___আমাতুস সামী তাহেরা
বি.ইউ.এম.এস. (ব্যাচেলর অফ ইউনানী মেডিসিন এন্ড সার্জারী)
সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ঢাকা, বাংলাদেশ।
©somewhere in net ltd.