![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ হিসেবে মর্মান্তিক বোকা। বোকা মানুষেরা ভালো হয়। আমিও ভালো। আমি জানি একদিন আমি থাকব না। একজন আরিফ রুমির অনুপস্থিতিতে কারো বিশেষ কিছু যাবে আসবে না। এ শহরে আগের জ্যাম লাগবে, বর্ষায় কদম ফুটবে, লোডশেডিং এর রাতে ফিনিক ফোটা জোছনা আসবে- কি অদ্ভুত প্রকৃতি আমাকে তা দেখতে দিবে না
"পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
ইনি হলেন রুদ্র আহম্মেদ
আমার অফিসের বস।
আর স্যার, ও হলো শ্রেয়া আমার স্ত্রী।"
আমি মিষ্টি করে হাসলাম শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে।
কিন্তু শ্রেয়ার চোয়াল বিস্ময়ে ঝুলে পড়েছে।
"রুদ্র তুমি? এত্ত দিন পর?....
তুমি আবীরের বস? অথচ অথচ...."
অথচ আমি তার প্রাক্তন প্রেমিক, এ কথাটা শ্রেয়ার মুখ দিয়ে বেরোল না।
আবীর সাহেবও বেশ অবাক হয়েছেন বলে মনে হলো।
"শ্রেয়া, তোমরা আগে থেকে পরিচিত?"
শ্রেয়া কিছু বলার আগেই, আমি দ্রুত বললাম-"হ্যা আবীর সাহেব, শ্রেয়া আমার ইউনিভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড।"
আবীর সাহেব মুক্তাঝড়া হাসি দিলেন-"রিয়েলি? দ্যাট'স আ গ্রেট সারপ্রাইজ!"
শ্রেয়া এখনো ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
ওর চিন্তা আমি স্পষ্ট ধরতে পারছি।
আমি একসময় বইয়ের মতো পড়তে পারতাম এই মেয়েটাকে।
শ্রেয়া নিশ্চয়ই ভাবছে, চার বছর আগে যে ছেলেটার সাথে দীর্ঘ দিনের ভালবাসার সম্পর্ক কোন কারণ ছাড়াই এক লহমায় চুকিয়ে দিয়েছে, কাউকে না জানিয়েই বাবার পছন্দে আমেরিকা ফেরত ছেলের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে, সেই ছেলে এত দ্রুত শক কাটিয়ে এত ভাল একটা পজিশনে স্টাবলিশড হলো কি করে?
"কি ভাবছ শ্রেয়া?"
আবীর সাহেব তার এক কলিগের সাথে গল্প করছেন, এদিকে খেয়াল নেই।
এই ফাঁকে প্রশ্নটা করলাম শ্রেয়াকে।
"কিছু ভাবছি না, তুমি ভালো আছো?"
"কিছু তো একটা ভাবছই!"
"আমি...আমি আসলে অবাক হচ্ছি তোমাকে দেখে।
আমি ভাবতাম খুবই দুর্বল মনের ছেলে তুমি।
আমি তোমাকে না জানিয়ে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করেছি, এই ধাক্কাটা এত দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে ধারণা ছিল না আমার। সবসময়ে এক ধরনের অপরাধ বোধে ভুগতাম তোমার কথা ভেবে। অথচ তুমি দিব্যি সুখেই আছো!"
আমি মৃদু হেসে বললাম,"দেখলে তো তোমার ধারণা ভুল। আসলে তোমার যেদিন বিয়ে হলো, সেদিনই আমি স্কলারশিপ নিয়ে ডেনমার্কে পাড়ি জমাই।
দু'বছর পর পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরি।
তারপর ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কাজটা জুটিয়ে ফেলি তোমার হ্যাজব্যান্ডের অফিসে। অবশ্য আবীর যে তোমার বর সেটা আগে জানতাম না!"
শ্রেয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল-
"যাক, তুমি বাঁচালে আমায়। আমি তো সবসময় তোমার কথা ভেবে ভেবে দুঃশ্চিন্তায় ভুগতাম।"
আমি আস্বস্তের হাসি হাসলাম।
দু'ঘন্টা পর। অফিস পার্টি শেষ। আবীর আর শ্রেয়া হাত ধরাধরি করে গাড়িতে গিয়ে উঠল।
শ্রেয়াকে উঠিয়ে দিয়ে আবীর হেটে এল আমার দিকে। আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল-
"ধন্যবাদ রুদ্র। সত্যি, আপনার অভিনয়ের প্রশংসা করতে হয়। এই অভিনয়টুকু না করলে শ্রেয়া কখনো সুখী হতো না।"
আমি আমার সেই আস্বস্তিকরণ হাসিটা দিলাম আবার।
আবীর-শ্রেয়াদের গাড়িটা চলে গেল দূরে, অনেক দূরে......ওরা চলে যেতেই আমার বুকটা হাহাকার করে উঠল, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হলো-"আমি মিথ্যে বলেছি শ্রেয়া । আমি অফিসের বস নই! আমি টিউশনী করে চলা, পুরনো ঘিঞ্জি মেসে থাকা অকর্মা-বেকার যুবক। যেদিন তোমার বিয়ে হলো, সেদিন আমি ডেনমার্ক যাইনি। আমি সারারাত ছাদে বসে থেকেছি... তোমার কথা ভেবেছি ।
তোমার ধারণা ঠিক, আমি মানসিক ভাবে আসলেই দুর্বল।
আমি ভালো নেই শ্রেয়া,
আমি ভালো নেই!"
©somewhere in net ltd.