![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সংসারে সবাই সুখী হইবার জন্য জন্মায় নাই। ইহাতে আমাদের উজোর-আপত্তি করিবার মত কিছুই আর অবশিষ্ট নাই। বিশ্ববিখ্যাত আইনষ্টাইনের বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত শুধুমাত্র পদার্থবিজ্ঞানে নহে সংসার বিজ্ঞানেও সত্য। অনেকের অভিমতে অবশ্য সংসারকে বিজ্ঞান রূপে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। কিন্তু সংসারের মত এমন অফুরন্ত ও দৃষ্টিগ্রাহ্য বিজ্ঞান বোধহয় এই বিশ্বসংসারে আর একটিও জন্ম লয় নাই। আপেক্ষিকতার উপস্থিতি ও সত্যতা তাই সংসারেও সত্য। উদাহরণরূপে যাহাকে গ্রহণ করা যায় তাহা সংসারের নিত্যদিনের পণ্য। কিন্তু বিজ্ঞজনেরা অবশ্য আমার এই দৃষ্টিগ্রাহ্য ও পরিস্থিতি ব্যতিরেকে দৃষ্টিকটু পণ্যের মূল্যায়নকে বড়ই অবমূল্যায়ন করিবেন। ইহা আমার দুরাশা নহে আক্ষেপ, কিন্তু আপাত পরিস্থিতির অনুকূলে তাহাদিগকে উপেক্ষা করা ছাড়া আমার আর উপায়ন্তর নাই।
কোন এক ধনীর পুত্রের বান্ধবীর বাবার যদি অফুরন্ত না হলেও অঢেল পয়সা থাকে এবং সেই তরুণ ও তরুণীর সম্পর্কের গভীরতা যদি গভীরতর দিকে গমন করিতে করিতে তাহাদিগের আবাসস্থল পর্যন্ত পৌছিয়া যায় তখন তাহা ক্ষুদ্র সম্পর্কের আশ্রয় ছাড়িয়া সংসারের আশ্রয় না লইয়া পারে না। হয়ত কোন একদিন ভোরবেলা তরুণীটি তাহার বন্ধু ও বন্ধুর পরিবারবর্গকে আনন্দে চমকিয়া দিবার অভিপ্রায়ে তাহার পিতার বাটী ছাড়িয়া শুধুমাত্র সকালটুকু উদযাপনের জন্য তরুণটির গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইল। এবং আনন্দের উল্লাসকে অতিমাত্রায় বাড়াইয়া দিবার লক্ষ্যে সকাল বেলার জল খাবার হিসেবে সে বেশ কয়েকপদ দামী ও সুস্বাদু খাবার তরুণটির গৃহে রন্ধন করিয়া পরিবারবর্গকে আহার করাইল। সর্বোপরি তরুণটির পরিবার মনে মনে বেশ খুশি হইল এই ভাবিয়া যে তরুণীটি বেশ সাংসারিক, তাহার অহংকার নাই বললেই চলে ( যেহেতু ধনীর দুলালী হইয়াও সে রান্না ঘরে যায় ) ইত্যাদি, ইত্যাদি... আরও কত কি ? –
কিন্তু আমাদের এই আলোচ্য তরুণীটি যদি কোন এক মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণের সহিত সম্পর্ক পাতিয়া বসি’ত এবং কোন এক দিন ভোরবেলা এরুপ একটি ঘটানাই ঘটিত তাহা হইলে কি একই মনোভাবের উদয় হইত, তরুণটির পরিবারবর্গের মনে ?
না।। যেহেতু উহারা মধ্যবিত্ত তাই নিছক একটি বিলাসিতাপূর্ণ সকাল পাইবার জন্য কতগুলো দামী ও সুস্বাদু খাবার রান্না করিবার কোন প্রয়োজন ছিল না, কেননা উহা না করিলেও সংসারে তাহাদিগের মর্যাদার কিছু খতি-বৃদ্ধি হইত না। অথবা হয়ত উহারা ভাবিয়া বসিতেন এই খাদ্যের খরচটকু দিয়া তরুণীটির পরিবারকে বেশ ভালভাবেই আপ্যায়ন করা যাইত এবং ফলশ্রুতিতে তাহাদের পারিবারিক মর্যাদা কিছুটা হইলেও বৃদ্ধি লাভ করিত। হয়ত গৃহিণীটি ভাবিয়া বসিলেন তরুণীটির সাংসারিক বুদ্ধি একেবারেই শূন্য (তাহার খরচের বাহার দেখিয়া) । হয়ত তরুণটির ভগ্নি ভাবিলেন ‘ তাহার রান্না ঘরে ঢুকিবার অধিকার যেন তাহার বাবার সম্পতি ’ ………. ইত্যাদি আরও কতকিছু যে পরিবারটির মানসকোষ্ঠে উদয় হইল তাহার পূর্ণ প্রতিফলন বড়ই কষ্টসাধ্য, অন্তত আমার মত সল্পবিজ্ঞের নিকট।
উপরিউক্ত ২ টি পরিবেশে তরুণীটি যে মনোভাব লাভ করিল তাহার কোনটি সত্য ও সঠিক , সে বিচার কে করিবে ? একদিকে তরুণীটির নির্মল হৃদয়কে উপেক্ষা করা যায় না অন্যদিকে মধ্যবিত্তের পারিপার্শ্বিকতায় তাহার সাংসারিক ব্যয় সংকোচনের অভিপ্রায়কে দোষারোপ করা নিতান্ত নির্দোষ কর্ম নহে। এমতাবস্থায় আপেক্ষিকতা ছাড়া এই দ্বিতত্তীয় সমস্যার সমাধান অবশ্য ত্রুটিপূর্ণ।
অন্যদিকে সংসারে ভালটুকু সংরক্ষণ করিবার পূর্বে সংরক্ষণের পাত্রসৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা আবশ্যকীয়। আমরা সবাই সত্য বলিবার জন্য ও সৎ হইবার জন্য ব্যস্ত হইয়া পড়ি কিন্তু সত্য ও সততার অবস্থান করিবার পরিবেশ সৃষ্টি করিবার প্রয়াস নাই বললেই চলে।
আক্ষেপ
©somewhere in net ltd.