![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এমন(ছবির লেখাটা দেখুন) প্রচারণা চালিয়ে যারা মনুষ্যত্বকে তুলে ধরবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের মাপকাঠিটা আসলে টাকা নয়। আমার অফিসের অধস্তন কর্মচারীটির নিজস্ব ব্যবসা আছে। তার মাসিক আয় ২০০০০ টাকার কম নয় (এইখানে পায় ৭০০০ টাকা)। আমি একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে তখনকার সময়ে বেতন পাই ১৮০০০ টাকা। তাই বলে সে আমাকে তুই বলেনা। কিন্তু আমি বলি, কারণ জানি আমি তার ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ একজন স্থানীয় শ্রমজীবী যার আয় আমার চেয়ে কম, কিন্তু তার রাজনৈতিক পরিচয় আছে। আমি তাকে তুই বলিনা। বলিনা কারণ, তার দৌড় যতদূর পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে ততটা আমি দৌড়াতে পারিনা।
বাংলা ভাষায় তুই শব্দটা উপস্থিতি তুচ্ছার্থে। অনেকে বলে থাকবেন আপনজনকে তুই বলি আমরা। এ প্রসঙ্গে আমার বিশ্ববিদ্যালয় বাসযাত্রার গল্প বলি। আমার জুনিয়র যথাস্থানে নামায়নি বলে বাস সহকারীকে তুই বলে সম্বোধন করছিল। আমি তার কাছে জনতে চাইলাম ‘তুই’ কেন বলল। সে জানাল কাছের মানুষত তাই তুই বললাম। বাস সহকারীটির নাম জানতে চাইলাম তার কাছে। না, সে জানেনা। তাকে শুধু বললাম- বুদ্ধিটা খরচ কর, এটা সঞ্চয় করবার মত জিনিস নয়।
আপনজনকে তুই বলে থাকি, কিন্তু তার আগে অনুভব করা দরকার আদৌ আমরা আপন কিনা। আপনজন ও তুই এর প্রচলন হয় সেইসব সমাজব্যবস্থা থেকে যেখানে ভাষা শুধু ভাব প্রকাশের জন্য ( প্রত্যন্ত ও আঞ্চলিক, পাহড়ী বাঙ্গালী, … )। তাও প্রায় শতাধিক বছর আগের কথা। কিন্তু বর্তমানে ভাষার মূল প্রয়োজন ভাব প্রকাশেরর জন্য হলেও; ভাষা সভ্যতা, বিনয় ও মানবিকতার পরিচায়ক হয়ে উঠেছে। একটা উদাহরণ টানব।
আমার বন্ধুকে ফোন করে বললাম-
(১) তুইনা কাল আসবি বলেছিলি? (বিনীত স্বরে)
(২) তুইনা কাল আসবি বলেছিলি? (রাগত স্বরে)
একই বাক্য স্বরের ভেদাভেদ অনুযায়ী ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে বন্ধুর মনে। তাহলে ভাবুন- শব্দকে আশ্রয় করা স্বরের বিভিন্ন ভঙ্গি; আর সেই শব্দের ভিন্নতা আমাদের সম্পর্কে কতটা অবদান রাখতে পারে।
যে কথা বলছিলাম, ব্যবহারটা ঠিক অর্থের মাপকাঠিতে আমরা করছিনা। সাইকোলজিস্টদের মতে, fixed mindset and growth mindset নামক দুই ধরনের মানসিকতার পরিচয় পাওয়া গেছে (এর বর্ণনা আজ থাক)। আমাদের মধ্যে একটা মানসিকতা তৈরী হয়েছে এমন যে, আমরা সবসময় অপরকে দাবিয়ে রাখতে চাই, বাধ্যগত করে রাখতে চাই। আমরা অনেকটা fixed mindset এর পথ অনুসরণ করছি আমাদের ছেলেবেলা থেকেই।
শুরুতে উল্লেখ করা উদাহরণ অনুযায়ী আমি আবারও বলছি,- এমন মানসিকতা ঠিক অর্থনীতি নির্ভর নয়, এটা আমাদের পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নির্ভর। এবং অবশ্যই এখানে আমাদের mind setting এর অন্যতম পথ, অর্থাৎ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।
আমার মনে হয় পাঠশালায় শুধু ধর্মীয় শাস্র নয়, একটা নতুন বিষয়, যেমনঃ “দর্শন ও নৈতিকতা” বা এমনই কোন বিষয় থাকা দরকার। এখানে পুরোটাই আলোচনার বিষয়, এইখানে শুধু এমন শিক্ষা দিবনা যে, “ সর্বদা সত্য কথা বল”। এখানে আমরা আলোচনা করব কেন সত্যি কথা বলব তা নিয়ে।
পরিশেষে গল্পের মত এখনও বেঁচে থাকা আশার কথা বলিঃ
রাজশাহী রেলস্টেশনের সামনের বাসস্টপ। আমি ঢাকা ফেরার যাত্রী রাত ১২ টার বাসে। ১১:২২ নাগাদ হাত ও পা পোলিওতে আক্রান্ত একজন ভিক্ষুক ভাত খেতে চাইল আমার কাছে। নিয়ে গেলাম হোটেলে, অনেক কিছু খেতে বললাম। কিন্তু সে শুধু একপ্লেট ভাত ও মুরগি নিল। সাথে মাছ ও গরু নিতে বলেছিলাম, নেয়নি। দেখে মনে হল সিগেরেট খায়। তাই একটা বেনসন সিগেরেট দিতে চাইলাম। সে শুধু একটা ডার্বি সিগেরেট নিল আর বলল,- “ যে জিনিসের সামর্থ্য আমাদের নেই, সুযোগ পেলেও তার অভ্যাস থেকে আমাদের দূরে থাকা ভাল ”। (শিখলাম তার কাছ থেকে কিছু)
শিক্ষার জন্য পাঠশালা কিংবা সার্টিফিকেট যতটা না দরকার তার চেয়ে ঢেড় বেশি দরকার dynamic mindset এর পথটা তৈরী করা। ভাবা দরকার। বুদ্ধিটা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সঞ্চয় করবার জিনিস নয়, খরচ করবার জিনিস।
০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ৯:২০
আরিফুর রহমান খান বলেছেন: উৎসাহ পেলাম ভাই।
২| ০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪০
সোজোন বাদিয়া বলেছেন: আপনার উপলব্ধিকে সম্মান জানাই। দীর্ঘজীবী হোন।
০৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬
আরিফুর রহমান খান বলেছেন: আপনার অনুভূতি জেনে সত্যিই খুব ভাল লাগল
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ৯:০৬
এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: দারুন লেখা