গুষ্টি কিলাই !!!

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫০

কেতাবী পড়ালেখার ব্যাপারে আমাদের অধিকাংশের মতামতই প্রায় একই রকম।শতকরা হিসেবে তা প্রায় ৯৫ শতাংশই ধরে নেয়া যায় যারা এই লেখাপড়াকে একটা 'ফালতু' জিনিস আখ্যায়িত করে থাকেন।আমি তাদের সাথে পুরোপুরি একমত বিধায় তাদের মতামত কে শ্রদ্ধা দেখানোর একটা প্রয়াস তৈরী হল অনেকটা অবচেতন মনেই।



আর হ্যা,বাকি ৫ শতাংশের কথা আর বললাম না এই জন্য যে ৯৫ শতাংশ লোকই তাদের কে চেনেন বিধায় নতুন করে তাদের কে পরিচয় করিয়ে দেবার ইচ্ছে বা যুক্তি দুটোই অনর্থক।



এই লেখার প্রথমেই স্মরন করতে চাই মা বাবার এক অমিয় বানী যেটা কর্নকুহরে প্রবেশ ব্যাতীত অদ্যবধি কেউ বড় হতে পারেন নি।

"লেখা পড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে"...মনে পড়ে কথাটা?? আগে শুনে ভালই লাগতো।ইচ্ছে হত পড়ালেখা করার।কিন্তু বাস্তবতা দেখে এই যুক্তির যৌক্তিকতা নিয়েই মনে প্রশ্ন আসে বেশি। প্রায় সব মানুষই তো শিক্ষার অমূল্য আলোয় আলোকিত। তাদের কয়জনে চড়ে নিজের টাকায় কেনা গাড়ীতে বা নিজের টাকায় তৈরী বাড়ীতে...?

কিছু দালিলিক প্রমান দেখনোর চেষ্টা করবো যা দ্বারা অনেকেই বুঝবেন যে পৃথিবীতে এমন অনেকেই বিখ্যাত হয়েছেন যাদের কাছে কেবল পড়ালেখাটাই মূখ্য বিষয় ছিল না।

বিল গেটস দিয়ে শুরু করা যাক।তাকে চেনেন না এমন লোক বিংশ শতাব্দীর এই পৃথিবীতে নেই বলেই আমার বিশ্বাস।তার কিছু উক্তি এখানে তুলে ধরা হল...

" I failed some subjects in exam but my friend passed all.Now he is an engineer in MICROSOFT and I am the OWNER of MICROSOFT"...সেই লোকই আবার বললেন..."For a good professional engineer i used to study late in the exam.It teaches u to manage time and take emergencies".. কথাগুলো দ্বারা বোঝাই যাচ্ছে যে তিনি কেতাবী পড়ালেখাটাকে কতটা আপন করতে পেরেছিলেন !!!

টমাস আলভা এডিসনও কেতাবী পড়ালেখার অযৌক্তিকতা নিয়ে অনেক সজাগ ছিলেন।তার মতে..."কালকে আমার পরীক্ষা কিন্তু এটা আমার কাছে বিশেষ কোন ব্যাপারই না কারন শুধুমাত্র পরীক্ষার খাতার কয়েকটা পাতাই আমার ভবিষ্যত্‍ নির্ধারন করতে পারেনা....!"

কেতাবী পড়ালেখার ব্যাপারে কিছু খোলামেলা আলোচনা করে নিই।আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আসলে পড়ালেখার মধ্যে এতটাই জটিলতা তৈরী করে রাখা হয়েছে যেটার পেছনে কোন নিখাঁদ যুক্তি খুজে পাওয়া কষ্টকর।অনেক সময় আপনি এতটাই হতাশ হয়ে পড়বেন যে এই শিক্কার উদ্দেশ্য সম্পর্কেই আপনার অনাস্থা তৈরী হতে পারে।



ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত কতগুলো বিষয় ছিল প্রায় বিষিয়ে ওঠার মত।চারুকারু,ড্রয়িং,শারিরীক শিক্ষা এই সাবজেক্টগুলো পড়ানোর কি এমন দরকার ছিল যেটা এস এস সি বা সমমানের পরীক্ষায় আর গুরুত্বই পায়না।তবে কি আমরা বলতে পারি না যে এইগুলো কেবল বোঝা বাড়ানোর জন্যে।

আরো কিছু কথা।নাইন টেনে আমরা যারা বিজ্ঞান এর ছাত্র ছিলাম কি দরকার ছিল তাদের কে সমাজবিজ্ঞান নামে একটা অযথা সাবজেক্ট পড়াবার? একটা কমার্সের ছাত্র নিজের সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করেই যেখানে সাইন্স নেয় না সেখানে কেন তাকেই আবার জোর করে উদ্ভিদের শরীরতন্ত্র,বিভিন্নতা,শ্রেনী বিন্যাস,অনু পরমানুর গঠন ইত্যাদি পড়িয়ে একজন আদর্শ "ব্যাংকার" বানানো হয়?

এইগুলা কোন অযৌক্তিক যুক্তি??

আমাদের কে ইতিহাস পড়ানো হয় ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবার জন্যে না বরং কি করে কত গুলো জন্ম সাল মৃত্যু সাল মুখস্থ করে নাম্বার বাড়ানো যায় তাই আমরা শিখি।কয়জন আছেন যারা রাসূল (সাঃ),হিযরত,খিলাফাত,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ,আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ,আমাদের জাতীয় চার নেতা,বুদ্ধিজীবিদের জীবন থেকে পাওয়া অর্জন গুলো সম্পর্কে পুরোপরি অবহিত?? যদি অবহিত হয়েই থাকেন তবে কয়জন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নির্ধারিত টেক্সট গুলো থেকে তা জেনেছেন বলতে পারেন?কেন হবে এমনটা?

যাইহোক এগুলো আমার মনের কথা।সকলের ভাল লাগবে তা আমি বলিও না।

মুখস্ত বিদ্যায়ও তো আমরা ব্যাপক পারদর্শী।এই ট্রেন্ডটা আমদের মদ্ধ্যে অনেকটা ফিলোসফির মত কাজ করে।অথচ আইনষ্টাইন বলেন..."Why should i memorize something? I can get so easily from a book"....

পোলাপাইন সি জি পি এ নিয়াও তো পুরা তুলকালাম লাগাইয়া দেয়।আচ্ছা তাইলে এই কথাটা কেন এত্ত ফেমাস??..."Grades doesnt measure intellegence and age doesnt define maturity"

উচ্চতর শিক্ষাক্ষেত্র টাও কেমন যেন অযৌক্তিকতার আবরনে মোড়ানো।আমদের পাঠ্যবইগুলো সবই ইংরেজীতে প্রকাশিত।আমাদের অনার্স লেবেলের পরীক্ষা নেবার পদ্ধতিও ইংরেজী ভাষায়।তবে কেন আমদের কে এইচ এস সি পর্যন্ত বাংলায় পড়িয়ে এতটা পরিবর্তনের ঘোল খাওয়ানো হয়? টিচাররাও তো বাংলায় ই তাদের লেকচার দেন আর আমাদের উপড়ে দায়িত্ব বর্তায় সেগুলো পরীক্ষার হলে বসে কনভার্ট করার।কোন জিনিস মাতৃভাষায় শিখলে সেটার আউটপুট টাই যে সবচে বেশী তাই কি নয়?

কথায় বলে প্রয়োজনীয়তা উদ্ভাবনের জনক। আমিও তাই বিশ্বাস করি।নিজের সুপ্ত মনন থেকেই অনেক বড় কিছু আবিস্কার করা সম্ভব।আরকিমিডিস পরীক্ষায় ভালো মার্ক্স পাবার জন্য তরলের ভেজাল নির্নয়ের সূত্র আবিস্কার করেন নি।এপল এর প্রতিষ্ঠাতা স্টীভ জবস এর ও আমার আপনার মত এত দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী জোটেনি।তিনি বেশ গর্ব করেই বলেছিলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ার সিদ্ধান্তটাই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত।আর আমদের পড়ালেখাটার উদ্দেশ্য হল বেরিয়ে যাবার পর ভালো একটা চাকরী।মানবজাতির কল্যান এর কথা চিন্তা করে পড়ালেখার কথা আমাদের কে সেই ছোটবেলায়ই ফরমালিন খাইয়ে ভুলিয়ে দেয়া হয়।

আর আমাদের জন্য পি এইচ ডি,মেডিকেল,ইঞ্জিনিয়ারিং,এম বি এ ইত্যাদি বড় ডিগ্রী গুলোই মানুষের নজর কাড়ার অলংকার হয়ে দাড়িয়েছে।সমাজে কয়েকটা সালাম পাওয়ার জন্য কি আপ্রান চেষ্টা!!

যার মনযোগ যেখানে আমরা তাকে সেখনে মুক্ত ও স্বাধীন ভাবে বিচরনের সুযোগ দেই না।সামাজিক খ্যাতিই আমাদের বেচে থাকার মাধ্যম।একে ভিক্ষাবৃত্তি বললে কি খুব দোষ হবে?

আঈনষ্টাইন তো যথার্থই বলেছেন..."Everything is a genius! If you judge a fish on its ability to climb a tree,it will live its whole life believing that it is stupidd!!"

আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থা আমদের সেখায় প্রতিযোগিতার কথা যেখানে বাকি সবাই আপনার প্রতিদ্বন্দী।আর একটা বোকা লোক রকেট প্রকৌশলী ও ভারতের রাষ্ট্রপতি এ পি জ়ে আব্দুল কালাম বলেন "সফলরা কারো সঙ্গে প্রতিযোগীতা করে না।তারা তাদের নিজেদের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করেন...। ...আমাদের দেশের শিক্ষাবিদরা তাকে হাইব্রিড জাতের বোকা ছাড়া কিছু বলবেন না বলেই কেন জানি মনে হয়..

অনেকেই বলে যা নিবারন করা যায় না তা সহ্য করে যাও।ভাল কথা। শুনে ভালো লাগে।কিন্তু আমার প্রশ্ন যারা যুক্তি দিয়ে যুক্তির যৌক্তিকতা বিচার করেন তারাও কি এইটা মেনে নিবেন?? প্রশ্নটা থেকেই যাবে...

লাষ্টে একটা গান...আমাদের ছোট ভাই বোনদের জন্য...

"রঙ মশাল..

আমিও পুড়ে যাবো এইভাবে

এই আলো কতদূর পৌছুবে?

মুখচোরা..

আমিও জানি চোখ এড়াতে

খুঁজতে বেরোই ঘুম সে মাঝরাতে

মুখফুটে কি ক্ষমা চাওয়া বারন?

আমার দশটা পাঁচটার স্বপ্নেরা সাধারন..

কেউ বোঝে না....

ভুল করেছি

ভুল করেছি

আমি জানি

কেউ বুঝবেনা

এই বুকজুড়ে কতখানি

তাই তোদের গায়ে আঁচড় লাগার ভয়টা ভীষন পাই....

ভাবতে পারিনা

ভাবতে পারি না"........

০ টি +১/-০