নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলে নেয়া ভাল, এই ব্লগের প্রত্যেকটি লেখাই আমার না, প্রয়োজনের তাগিদে কিছু বিশেষ গুরুত্বপূর্ন লিখা আমি লেখকের সোর্স সহ এইখানে কপি করে রাখি।স্রেফ নিজের প্রয়োজনের কথা ভেবে। তাতে যদি আপনার সামান্য উপকার ও কখনো হয়ে যায়,সেটা আমার জন্যে সারপ্লাস।হ্যাপি ব্লগিং !

সাদ বিন

সাদ বিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন মধ্যবিত্ত বাবার গল্প

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৪৯



বাবার জীবনের গল্পটা অনেক্ষন ধরে শুনলাম আজ।সাদাসিধে জীবনের গল্প।সংগ্রামের গল্প।জীবন সমুদ্রে অনিশ্চয়তার যাত্রায় ক্রমাগত পথচলা এক নাবিকের গল্প।৭৬ এ এস এস সি পাশ করেন। বরিশাল বোর্ড ছিল না তখন।যশোর বোর্ডের অধীনে সেকেন্ড ক্লাশ পেয়ে উত্তীর্ন হওয়া ১৭ বৎসরের যুবক।ঘুড়ি ওড়াবার সময় নেই হাতে।পরিশ্রান্ত হেড মাষ্টার বাবার পরিবার এত স্বচ্ছল নয় যে বাড়ির পাশের মাঠে গিয়ে তাইরে নাইরে না করা যায়। একটি বৎসর কোন কাজকর্ম ছাড়া চলে ঠিক ,তবে পরিবারের মেঝ ছেলের দায়িত্ববোধ থেকে ৭৭ এর শেষ দিকে এসে ভর্তি হন ডিপ্লোমা ইন ফার্মেসী তে,বরিশাল মেডিকেল কলেজ।সেকেণ্ড ইয়ারে ওঠার সময় পুরো ক্লাশে সেকেন্ড হন। স্কলারশীপ দেয় কলেজ থেকে। এই প্রথম নিজের উপার্জনের কিছু টাকা পাঠান বাবার কাছে। ১০০০টাকা। জীবন এর পরে চলেছে স্রোতাস্বিনী নদীর মত। লজিং থেকে,ম্যাচে থেকে, টিউশানি করে অবিরত বয়ে গিয়েছে একটি নদী।থামা নেই।স্তব্ধ হওয়ার সুযোগ নেই।সময়ও নেই। ৩ বছরের মাথায় ডিপ্লোমা পাশ করলেন। এর পর আরো এক বছর চাকরীর জন্যে ঘোরা। অবশেষে উপর ওয়ালার রহমত। চাকরী হল পিরোজপুর ফ্যামিলি প্ল্যানিং অফিসে। পুরো বাঙ্গলাদেশ থেকে ৩০০ কর্মচারী নেয়া হল সরকারী ভাবে।ডিপ্লোমা ডিগ্রিটার সুবাদে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে একটা চাকরী পাওয়া। পরিবারের নিশ্চয়তার নিঃশ্বাস পড়ল অবশেষে। ধর্মভীরু মন মানসিকতার কারনে সংগত কারনেই সেখানে আড়াই বছরের বেশী চাকরি করার সুযোগ হয়ে উঠল না। ম্যাটারনিটি ওয়েলফেয়ার রিলেটেড চাকরী হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য মহিলা রোগী আসত।ব্যাপারটার সাথে মানিয়ে নেয়া আর যাই হোক একজন পর্দানশীল পুরুষের পক্ষে স্বস্তিকর নয়। ওখানকার এক ডাক্তারের সাথে পাড়ি জমালেন তাই পিরোজপুর থেকে বহুদূরে রাংগামাটিতে। রাবেতা হাসপাতালে।এলাকার নাম মাঈনীমুখ।লংগদু থানা। কিছুদিন চাকরীর পর ট্রান্সফার হলেন রাবেতা, কক্সবাজারে।১৯৮৭ সালের জানুয়ারী মাস ছিল তখন। চাকরী চলছে।জীবন ও চলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে করে।এরই মধ্যে শখ জাগলো পড়ালেখার ক্যারিয়ার টাকে একটূ আপগ্রেড করার। ১৯৮৯ সালে প্রাইভেটে বি এ পাশ করলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।চট্টগ্রাম কলেজে সেন্টার পড়েছিল পরীক্ষার। এখানেও রেজালট অপরিবর্তিত।সেকেন্ড ক্লাশ। রাবেতার চাকরী চলল ৯৩ পর্যন্ত।৯৩ এ এসে জয়েন করলেন দেশের একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইষ্টার্ন রিফাইনারীতে। অগাষ্ট মাস ছিল তখন। আরেকটা কথা একটু বলে রাখা দরকার,আব্বুর বিয়ে হয় ১৯৮৯,জানুয়ারীতে।৯০ এ আম্মুকে নিয়ে আসেন কক্সবাজারে। আমি হলাম ৯১ এ। ২৯ শে এপ্রিল প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় হল।আর আমি হলাম এর প্রায় এক মাস পর ২৪শে মে’।রিফাইনারীর চাকরীটাই আপাতত চলছে আব্বুর।পড়ালেখাতে মাঝখানে আরেকটু আগালেন ২০০২ এ। মাষ্টার্স পাশ করলেন ইসলামের ইতিহাসে। এটাও প্রাইভেটে।



এখন পর্যন্ত এভাবেই চলছে আব্বুর মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প। এই মধ্যবিত্ত জীবনটাই স্বচ্ছলতার সেতু গেড়ে দিয়েছে আব্বুর দুই প্রজন্মের রক্তকনিকায়।আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আমি,আর আমার দাদুভাইয়া।আমার টেনশন নেই পড়ালেখার খরচ যোগানোর। আর দাদু ভাইয়ারও টেনশন নেই রাত ২ টা বাজে উঠে ওষুধের অভাব নিয়ে ভাবার।আব্বুই প্রতিমাসের ওষুধ ,যাবতীয় খরচ দিয়ে যাচ্ছেন দুই দাদা নাতির।এভাবেই নিজের ঠোটের কোনে খুজে পাচ্ছেন এক আত্নতৃপ্তির হাসি।সবই আল্লাহর ইচ্ছায়।আব্বুর কাছে আমার তেমন কিছু চাওয়ার নেই এখন আর।আমি আমার কাছেই চাই এখন আব্বুর জন্য।স্রষ্টা আমার আব্বুকে নেক হায়াত দিয়ে বাচিয়ে রাখুক আরো বহুদিন। আর আব্বুর কলিজায় আমি একটা প্রশান্তির কারন হয়ে বেচে থাকি আমার বাকিটা জীবন



...রাব্বির হামহুমা কা’মা রাব্বায়ানি সাগীরা।





(৮/০৩/২০১৪,সকাল ১১,৫১)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.