নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলে নেয়া ভাল, এই ব্লগের প্রত্যেকটি লেখাই আমার না, প্রয়োজনের তাগিদে কিছু বিশেষ গুরুত্বপূর্ন লিখা আমি লেখকের সোর্স সহ এইখানে কপি করে রাখি।স্রেফ নিজের প্রয়োজনের কথা ভেবে। তাতে যদি আপনার সামান্য উপকার ও কখনো হয়ে যায়,সেটা আমার জন্যে সারপ্লাস।হ্যাপি ব্লগিং !

সাদ বিন

সাদ বিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ ইমাম আনওয়ার আল আওলাকি

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১১

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালোফর্নিয়াতে বিশাল এক মসজিদ, আমেরিকার বড় বড় মসজিদ সমূহের মধ্যে থেকে একটি। জুমার দিনে মসজিদের মিম্বারে দাড়িয়ে খুতবা দিচ্ছেন এক খতিব। হালকা পাতলা শ্মশ্রুমণ্ডিত এক তরুণ। শ্রোতারা তন্ময় হয়ে তার কথা শুনছে। ইংরেজি সাহিত্যে অপূর্ব দক্ষতা এই তরুণের। শুধু সাহিত্যমানই নয় বরং যেভাবে তার তার কথা মাঝে পাওয়া যায় সুগভীর জ্ঞানের নিদর্শন, ঠিক তেমনিভাবে তথ্য ও যুক্তি প্রমাণে মেশানো এক অভিনব উপস্থাপনা।

তিনি হলেন এই একবিংশ শতাব্দীর মহান দা'ঈ, মুজাহিদ, শহীদুদ দাওয়াহ আনওয়ার বিন নাসির আল আওলাকি (রহ)। জন্ম তার নিউ মেক্সিকোতে, তার পিতা মাতা ছিলেন ইয়েমেনি। ইয়েমেনে তার শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান সেখানেই অর্জন করেন। অতপর চলে আসেন আমেরিকায়, ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব নেন মাসজিদুল অনসারে। সাথে সাথে কলারাডো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি ডিগ্রী এবং সান ডিয়েগো ইউনিভার্সিটি থেকে এডুকেশন লিডারশিপে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। কিন্তু তিনি এটি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন যে, মূলত বাস্তব জ্ঞানের মূল উত্স হলো কুরআন ও সুন্নাহ, সে কারণে তিনি গভীরভাবে কুরআন অধ্যয়নে লিপ্ত হন। আর তার কুরআন তিলওয়াত ছিল সুমুধুর। তিলওয়াতের উপর তিনি স্বীকৃতি সনদও লাভ করেছিলেন।

তফিসরের বিষয়ে তার সবচে প্রিয় তাফসির ছিল ইবনে কাসীর ও সায়িদ কুতুব (রহ) এর তাফসির ফী জিলালিল কোরান। হাদিসের প্রতিও ছিল তার অত্যাধিক আগ্রহ। তিনি সহিহ বুখারীর দারস নেওয়ার জন্য ইয়েমেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা সফর করেন এবং হাদিসের উপর উচ্চতর সনদ লাভ করেন। ইলমে ফিক্বহে তার ডক্টরেট ছিল ফিক্বহে শাফেয়ীর উপর। তিনি পড়তে ভালবাসতেন। ইবনুল কাইয়ুম (রহ) এর আত্মশুদ্ধিমূলক কিতাব মাদারিজুস সালেকীন তিনি অধ্যয়ন করতেন এবং গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হতেন। এছাড়া তিনি আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখে ইবন কাসীর, তারিখুল ইসলামী ও খ্রিষ্ট ইতিহাসের অন্যান্য গ্রন্থ থেকে ইতিহাসের ইলম অর্জন করতেন। ইলম অর্জন যেন তার নেশায় পরিনত হয়েছিল। তিনি নামাজ আদায় ও জরুরি প্রয়োজন ব্যাতীত গ্রন্থাগার থেকে বের হতেন না। আর তিনি ইলম অর্জন করতেন আমলের জন্যই। একারণে আল্লাহ তাআলা তাকে অনেক মর্যাদা দান করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

''তোমাদের মধ্যে থেকে যারা ইমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদাকে অনেক উন্নীত করবেন।'' (সুরা মুজাদালাহ: আয়াত নং ১১)

তার জীবনের একটি অন্যতম অধ্যায় হলো দাওয়াহ তথা আল্লাহর দিকে আহবান। তিনি ইংরেজি এবং আরবি উভয় ভাষায় খুতবা দিতেন। তার ভাষা ছিল হৃদয়স্পর্শী। বয়ানের প্রভাব ছিল অত্যন্ত ব্যাপক। পশ্চিমা বিশ্বের শত শত যুবক তার বয়ানে প্রভাবিত হয়ে তাদের জীবনকে বদলে ফেলেছে। যাদের রাত কাটতো নারী ও মদ নিয়ে, গভীর রাতে আজ তাদের ঘর থেকে ভেসে আসে তিলওয়াতের সুর। দুনিয়াপ্রেমী এই যুবকগুলো আজ শাহাদাত পিয়াসী। তারা বদলে ফেলেছে নিজেদেকে এবং বদলাতে চায় সারা পৃথিবীকে।

শায়খের বয়ান কাফেদের এত অমুল্য ক্ষতি করেছে যা হয়ত তারা কখনই ভুলতে পারবে না, কেননা আজ আমেরিকা, ব্রিটেন এবং অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্রে মুসলিম তরুনদের মধ্যে যে জাগরণ, তার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ শায়খ আওলাকির ইংরেজি খুতবা। কেননা ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে তার শত শত বয়ান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে, যা যুবকদের অন্তরে আজও আন্দোলনের সৃষ্টি করে। তারা তাদের হারানো চেতনাকে ফিরিয়ে আনছে, নিভু নিভু ঈমানকে শানিত করছে। ইংরেজি ভাষায় তার সবচেয়ে জনপ্রিয় লেকচার গুলো হলো,

Lives of the Prophets,
The Hereafter,
The Life Of Muhammad (sw),
The Life and Times of Abu Bakr (ra),
The Life and Times of Umar Bin Al Khattab (ra),
The story of Ibn Al- Akwa (ra),
Constants in the Path Of Jihad

৯/১১ এর পর যখন বিশ্বব্যাপি কাফেররা মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতন করতে থাকে, তখন শায়খ মাতৃভূমি ইয়েমেনে চলে যান, যেখানে তার দাওয়াহ পূর্বেই পৌছেছিল এবং বিভিন্ন জিহাদী কার্যক্রম চলছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে ইয়েমেনে তারা দাওয়ার কাজ যথারীতি চলতে থাকে। এতে অবিশ্বাস্য রকমের সারা পাওয়া যায় পুরো ইয়েমেন জুড়ে। কিন্তু বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ তা সইতে পারে না। ইয়েমেন সরকারকে তারা চাপ দিতে থাকে শায়খকে গ্রেফতারের জন্য। অবশেষে শায়খের উপর নেমে আসে সেই পরীক্ষা, যে পরীক্ষা দিতে হয়েছে যুগে যুগে সত্যের দিকে আহবানকারীদেরকে। গ্রেফতার হলেন শায়খ। বন্দী হলেন জালিমের কারাগারে। কারাগারে তিনি নীরবে তিলওয়াত, সালাত, কিতাব অধ্যয়নে সময় কাটাতে লাগলেন, তাই এই বন্দী দশা তার ইলম ও ফিক্বহকে আরো বৃদ্ধি করে।

শায়খ আনওয়ারের পরিবার ছিল অনেক প্রভাবশালী। তারা সরকারকে তার মুক্তির জন্য চাপ দিতে থাকে। অপরদিকে আল্লাহর অশেষ রহমতে ইয়েমেনী প্রশাসন ও মার্কিন তদন্তকারীরা তার বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো অভিযোগ প্রমানে ব্যর্থ হয়। তাই তারা তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্তি পেয়ে তিনি পুনরায় দাওয়াহ এবং জিহাদে মনোনিবেশ করেন এবং মুজাহিদিনরা ইয়েমেনের অনেক এলাকায় ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। আল্লাহর বিধানই সেখানে সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছিল। সেই এলাকাগুলোতে যেন শুধু আল্লাহরই দাসত্ব চলত।

এভাবেই জয় পরাজয়, আনন্দ, বেদনা, আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে সময় কাটছিল তার। কিন্তু মার্কিনিদের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী তা সহ্য করতে পারছিল না। তাই তারা সেখানে ড্রোন হামলা শুরু করে, যাতে অনেক নিরপরাধ মুসলিম হামলার শিকার হয়ে শাহাদাতের সুধা পান করেন।

একদিন রাত্রিবেলা মুজাহিদিনগন তাদের তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পে ছিলেন, হঠাৎ শুনতে পেলেন কান ফাটা আওয়াজ। জমিন থরথর করে কেপে উঠলো, যেন পুরো শহরে ভূমিকম্প হলো। সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লেন, কেননা শায়খ ক্যাম্পের বাইরে বাইরে সফরে ছিলেন। ফজরের সালাতের পর মুজাহিদিনগন সকলেই চিন্তিত ছিলেন। হঠাৎ শায়খ সেখানে উপস্থিত হলেন, তার চেহারায় মুচকি হাসি। সবাই তার হাসি দেখে বুঝতে পারলেন যে, এই আক্রমনের লক্ষ্য তিনিই ছিলেন। কিন্তু এই যাত্রায় আল্লাহর শত্রুরা ব্যর্থ হয়। ঘটনাটি ছিল- শায়খসহ কয়েকজন মুজাহিদ গাড়িতে করে সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ করে তারা বিকট বিস্ফোরনের আওয়াজ শুনতে পেলেন, যাতে শায়খের গাড়ির কাচ ভেঙ্গে যায়। তিনি ভাবতে লাগলেন হয়ত তার গাড়ির উপরই আক্রমণ হয়েছে। তিনি চালককে নির্দেশ দিলেন গাড়ি দ্রুত চালাতে, যাতে বিপদসংকুল এলাকা দ্রুত পার হওয়া যায়। তিনি তার ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলেন, জনপদ থেকে দুরে ফাকা স্থান দিয়ে গাড়ি চালানো জন্য, যাতে মুসলমানের জান মালের কোনো ক্ষতি না হয়।

অতঃপর তারা একটি উপত্যকার দিকে রওনা করেন যেখানে ঘন গাছপালা ছিল। ড্রাইভার গাড়ি থামায়। সকলে গাড়ি থেকে বের হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। মার্কিন ড্রন গাড়ির উপর ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করে। গাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাণে বেচে যান শায়খ।

কিন্তু এর কিছুদিন পর শায়খের উপর ফের ড্রোন আক্রমন হয়, এবং এই যাত্রায় ড্রোন তার প্রথম চেষ্টাতেই লক্ষ্য স্থির করে ফেলে। শাহাদাতের কোলে ঢলে পড়েন শায়খ। দিনটি ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১১; পরিসমাপ্তি ঘটে ইলম, দাওয়াহ, জিহাদ, বিপ্লব ও বিদ্রোহ মিশ্রিত একটি জীবনের। আল্লাহ তাআলা শায়খকে শহীদ হিসেব কবুল করুন এবং তাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.