নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উর্বর মস্তিষ্কের কার্যকলাপে জবাবদিহি করতে বাধ্য নহে।

ছোট সাহেব

উর্বর মস্তিষ্কের কার্যকলাপে জবাবদিহি করতে বাধ্য নহে।

ছোট সাহেব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেখ হাসিনার উত্থান, শাসন, এবং পতন: স্বৈরশাসনের পরিসমাপ্তি

১০ ই আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৭:৩১

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য নাম। তিনি ১৯৮১ সালে তার পিতার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তবে, তার শাসনকালে বারবার স্বৈরাচারী শাসন, দুর্নীতি, এবং সম্পদের লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে, যা তার নেতৃত্বকে বিতর্কিত করেছে। শেষ পর্যন্ত, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে তার শাসনের পতন ঘটে, যা দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

প্রারম্ভিক উত্থান

১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সেই শূন্যতায় পা রেখে শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং দলকে পুনর্গঠন করতে সক্ষম হন। তার নেতৃত্বে দলটি পুনরায় জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং ১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে। এই সময়ে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তার প্রথম শাসনামল ছিল স্থিতিশীলতা এবং কিছু অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাথমিক সূচনা।

ক্ষমতার পুনরায় অধিকার

২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর, শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠেন। তার শাসনের অধীনে আওয়ামী লীগ দেশের প্রতিটি স্তরে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। তবে, এই শাসনামলেই তার স্বৈরাচারী মনোভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়। বিরোধী দলগুলোকে দমন, গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ, এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে থাকেন। এই শাসনামলে একাধিক নির্বাচনকে বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যেখানে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

স্বৈরাচারী শাসন এবং সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ

শেখ হাসিনার শাসনের সবচেয়ে বড় সমালোচনার বিষয় ছিল তার সরকার ও দলের ব্যাপক দুর্নীতি এবং সম্পদের লুটপাট। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, তার শাসনামলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের সম্পদ ব্যাপকভাবে লুট করা হয়েছে। বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির অভিযোগ এতই ব্যাপক ছিল যে, সেগুলো দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। জনগণের মাঝে অসন্তোষ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, যারা শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।


গুম, খুন, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন

শেখ হাসিনার শাসনামলকে কেন্দ্র করে যে সব অভিযোগ ওঠে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল গুম এবং খুনের মাধ্যমে বিরোধীদের দমন করার অভিযোগ। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি অনুযায়ী, তার শাসনের সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, এবং সাধারণ নাগরিকদের অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, এবং গুম করার ঘটনা বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মৃতদেহ পরে উদ্ধার করা হয়েছে, যা তার সরকারের বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ দেয়।

এইসব ঘটনাগুলো শেখ হাসিনার শাসনের স্বৈরাচারী এবং মানবাধিকারবিরোধী চরিত্রকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেছে, যা দেশের জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তার পতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গুম এবং খুনের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় একটি কালো অধ্যায় হিসেবে স্মরণ করা হবে, যা ভবিষ্যতে দেশকে আরেকবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি থেকে রক্ষা করতে সতর্ক করবে।

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং পতন

শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসে ২০২৪ সালে। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রসমাজ এবং তরুণ প্রজন্ম তার স্বৈরাচারী শাসন এবং দেশের সম্পদ লুটপাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছিল। এই প্রতিবাদগুলো ক্রমশ ব্যাপকতা লাভ করে এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র জনতার ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়। আন্দোলন এতটাই ব্যাপক ছিল যে, সরকারের পক্ষে তা দমন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এই গণঅভ্যুত্থানে দেশের সাধারণ জনগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনও অংশ নেয়। সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ধীরে ধীরে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পদত্যাগের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। তার পতন ছিল দীর্ঘকাল ধরে জমে থাকা জনগণের অসন্তোষের ফলাফল এবং এক নতুন রাজনৈতিক দিগন্তের সূচনা।

পরিণতি এবং ভবিষ্যতের দিশা

শেখ হাসিনার পতন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। তার দীর্ঘ শাসনামল স্বৈরাচারী শাসন এবং দুর্নীতির জন্য সমালোচিত হলেও, এই অভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নতুনভাবে সংগঠিত করার সুযোগ এনে দেয়। এই পতনের পরবর্তী সময়কালে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, এবং সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়।

তবে, তার শাসনের ছায়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ওপর থেকে যেতে পারে। তার সময়কার দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অসমতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার দেশের সমাজ ও অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। নতুন নেতৃত্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে এই সমস্যাগুলো সমাধান করা এবং দেশের জনগণের বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করা।

সমগ্রভাবে, শেখ হাসিনার উত্থান, শাসন এবং পতন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার শাসনামল থেকে দেশ এবং জনগণ অনেক কিছু শিখেছে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান হতে পারে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.