নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একাকি ভাবনা

বাদশা মিন্টু

সাধারণকে দেখি অসাধারণ হিসেবেসাধারণ সবাই আমার আপনআমি সাধারণের ভিড়ে খুঁজি সেই অসাধারণকেযাকে নিয়েই জীবন যাপন।

বাদশা মিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোর চোর চোর-কত্ত রকম চোর (পর্ব-১)

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৫



আজ দুটি চুরির খবর মিডিয়ায় তোলপাড়। এক, সানি লিওনের পেন্টি চুরি হয়েছে। রাগিনী এমএমএস-২ ছবির সেট থেকে চুরি গেছে তার দামি এই অন্তর্বাস। (সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া) ৫০ হাজার রুপি দামের এই অন্তর্বাস যে চোর নিয়েছে সে নিশ্চয়ই বুদ্ধিমান চোর। অন্তত বাংলাদেশে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা চোরের চেয়ে তো বেশি বুদ্ধিমান।

আমরা কতো রকম চুরির কাহিনী শুনেছি বা নিজেদেরও চুরি গেছে কতো কিছু। চোর কতো স্মার্ট হয়, ভাবতেই ভালো লাগে। এদেরকে অনেকে আদর করে আঞ্চলিক ভাষায় ‘চুর’ ‘চুরা’ ‘চুত’ আরও চ বর্গীয় নামে ডাকেন।

তবে খুশির খবর হল পটুয়াখালির দুই চোরকে আজ র্যাব ঢাকার শ্যামপুর থেকে আটক করেছে। পটুয়াখালির চোর মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কিশোরগঞ্জে গিয়ে সোনালী ব্যাংকে সিঁদ কাটল! আর ওদিকে সানি লিওনের ছবির সেটে গিয়ে দামি গয়না বাদ দিয়ে ধূসর রঙের পেন্টিটাই হাপিশ করে দিল চোর। বাংলাদেশি সিঁদেল চোর এখনও যথেষ্ট স্মার্ট হতে পারে নাই।

যাই হোক আজকে চোর নিয়ে কিছু কথা শুরু করলাম।

শুরু করি জিএম কাদেরের কথা দিয়ে। গত ডিসেম্বরে তিনি বলে দিলেন যে, যে যত বড় চোর সে নাকি তত বড় নেতা। কথাটি কী সত্যি? জানতে ইচ্ছা করে। তবে এহেন পরিস্থিতিতে আগে জেনে আসি চুরি কী আর কেনো মানুষ চুরি করে। কথায় বলে, অভাবে স্বভাব নষ্ট আসলে কি তাই? না সব সময় ঠিক নয়। যারা চুরি করে তাদের স্বভাব নষ্টের দরকার হয় না।

চোর কে?

চুরি যে করে সে চোর। চোরের সংস্কৃত হচ্ছে তস্কর। যে চুরি পেশা হিসেবে নিয়েছে সে পেশাদার চোর। সমাজের চোখে চুরি অপরাধ এবং চোর অপরাধী। কিন্তু এখন চোরকে দেশপ্রেমিক বা ইমানদারও বলা হয়। যে যত বড় চোর সে তত বড় ধনী। চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ে ধরা।

চুরি মানে না বলে বা অগোচরে কিছু হাতিয়ে নেওয়া। চুরি কখনও এত নিপুণ হয় যে তা শিল্পের পর্যায়ে চলে যায়। অনেক সময় ম্যুভিতে এমন চুরি দেখানো হয়। বাস্তবেও এমন কিছু চোরের দেখা পাওয়া অসম্ভব নয়। আপনার বাড়ির কোনো জিনিস চুরির বিষয়টিই একটু মনে করুন না কেন।

চুরি কিন্তু ছোঁয়াচে এবং সংক্রামক। এটি শেখানোও যায় এবং সুযোগের অভাবে অনেকেই এই পথে যায় না। সুযোগের অভাবেই সত্ থাকে অনেকেই।

চোর হতে পারে, সিঁধেল চোর, ছ্যাঁচোর/ছিচকে চোর, বাটপারি, ছিনতাই, ডাকাতি, লুণ্ঠন,ঠগ,ঠেঙাড়ে, জোচ্চুরি, ডিজিটাল চুরি, চামড়া চুরি আর লুল।

প্রাচীন আমলের বা এনালগ চুরির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে সদ্যঘটিত সিঁধ, ডিজটাল চুরি, জোচ্চুরি। শেষের দুটো নাম এখনকার হলেও পদ্ধতিগুলো পুরোনো। আমরা প্রতিদিন যেসব চুরির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি সেগুলো আপনি আমি ভালো করেই জানি।

সিঁধকাঠি দিয়ে দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে সিঁধকেটে চুরি করে এমন চোর ধরা পড়েছে কিশোরগঞ্জের ঘটনায়। এ পদ্ধতিতে চুরি করা সবচেয়ে কঠিন। অনেক দিন ধরে ভক্তি সহকারে একজন গুরুর কছে এ বিদ্যা অর্জন করতে হয়। সিঁধকাঠি মানে; শাবল বা খুন্তির মতো বিশেষ ও রাজমিস্ত্রির কাজে দক্ষ ব্যক্তিরা এ ধরনের কাজ করে থাকেন। (ইচ্ছে করলে শশাঙ্ক রিডেম্পশন বা ডন টু মুভি দুইটা দেখতে পারেন)। সিঁদকেটে চুরি করা খুবই বুদ্ধিমত্তার কাজ। সাহস এবং শিল্প দুটোই খুব বেশি পরিমান লাগে এই কাজে। ব্যাংকে সিঁদ কেটে চুরির ঘটনা প্রমাণ করেছে এখনও আমাদের দেশে এই শিল্পটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। এখনও কিছু কিছু সাহসী চোর টিকিয়ে রেখেছে আদিমতম পেশাটিকে। অন্তত ভারতের চোরদের মতো নিম্নাংগের পোশাক তো আর চুরিতে নামেনি। টাকার অংকটাও নেহাত্ কম না। ১৬ কোটি। দেশের সব মানুষের ভাগেই এক টাকা করে পড়ে।

চোর-চ্যাঁছোড়, বাটপার, ডাকাত, কালো বিড়ালদের কথা আমরা সবাইতো জেনে গেছি! এখন চামড়া চুরি করে যাঁরা মানে যারা লুল তাদেরকে কতোজন চিনতে পারছি! একটা বড় লুল ধরা পড়বে সেই আশায় আছি। পরের পোস্টটা দিব লুল চোর নিয়া।



এখন চোর নিয়া একটা গল্প।

আগেকার যুগে তো আজকালের অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধাময় হোটেল কিংবা মুসাফিরখানার ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু বাণিজ্য ছিল, ব্যবসায়ী ছিল, মালামাল নিয়ে তাদের এক শহর থেকে অন্য শহরে, দূর দূরান্তে যাবার প্রয়োজন ছিল। দূরের মুসাফিরদের জন্যে তখন ছিল সরাইখানার ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীরা এসব সরাইখানায় রাতের বেলা বিশ্রাম নিয়ে সকালে আবার রওনা দিতো গন্তব্যে। এরকম সরাইখানার মধ্যে দূর্গের মতো একটি সরাইখানা ছিল বেশ নামকরা। দূর্গের মতো বলার কারণ হলো দেয়ালগুলো ছিল বেশ উঁচু উঁচু। আর এতে প্রবেশের মূল দরোজা ছিল ইস্পাতের তৈরি মজবুত। কোনো চোরের পক্ষেই ওই দরোজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার সাধ্য ছিল না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তমনে এই সরাইখানায় বিশ্রাম নিতো।



সরাইখানার ভেতর এবং বাইরের পরিবেশ ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। তিন চোর যুক্তি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা যে-কোনো ভাবেই হোক ভেতরে ঢুকবেই। চুরির পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য ছিল এই প্রাসাদে যে চোর ঢুকতে পারবে না বলে একরকম রূপকথা ছড়ানো হয়েছে, সেটা ভেঙে দেওয়া। তিনচোর বহু চিন্তাভাবনা করে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো মাটির অনেক নীচ দিয়ে একটা টানেল বানাবে যে টানেল সরাইখানার প্রতিরক্ষা প্রাচীরের নীচে দিয়ে ভেতরে গিয়ে শেষ হবে। প্রয়োজনীয় হাতিয়ার আর যন্ত্রপাতি নিয়ে তারা টানেল খুঁড়তে শুরু করে দিলো। অনেকদিন পর তারা টানেলের কাজ শেষ করলো সরাইখানার ভেতরের একটি কূপের মাঝখানে এসে। এরপর কোনো এক অন্ধকার রাতে চোরেরা নীরবে নিঃশব্দে টানেলের ভেতর দিয়ে এসে সরাইখানায় ঢুকে পড়লো এবং ব্যবসায়ীদের মালামাল সব চুরি করে টানেলের ভেতর দিয়েই আবার চলে গেল।



সকাল হতে না হতেই সরাইখানায় চুরির খবর বিদ্যুতের মতো ছড়িয়ে পড়লো। খবরটি শুনে গভর্নর দেরি না করে ঘোড়ায় চড়ে সরাইখানায় পৌঁছে গেল। তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না-এতো মজবুত দেয়াল পেরিয়ে কিংবা লোহার দরোজা ভেঙে চোর ঢুকতে পারে সরাইখানায়। শাসকের পাইক পেয়াদারা ভালো করে পুরো সরাইখানা ঘুরে ফিরে দেখলো,কিন্তু কোত্থাও কোনো নাম নিশানাও দেখলো না। না কোনো সিঁদ কাটার চিহ্ন আছে না আছে কারো পায়ের ছাপ। গভর্নর বললো: ‘তাহলে নিশ্চয়ই এটা সরাইখানারই কারো কাজ হবে’। সরাইখানার ভেতরে হৈ হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। দারোয়ানদেরকে ডেকে এনে লাথি ঘুষি মেরে কথা বের করতে চাইলো। কিন্তু কিছুতেই তারা বলতে পারলো না কে চুরি করেছে। চোরদের সাথে তাদের হাত থাকার বিষয়টিও বোঝা গেল না। এইফাঁকে চোরেরা কিন্তু মালামাল নিরাপদ স্থানে রেখে সরাইখানায় ফিরে এলো কী কাণ্ড ঘটছে তা দেখার জন্যে।



বলছিলাম, চোরেরা মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রেখে সরাইখানায় ফিরে এসেছিলো কাণ্ড দেখার জন্যে। এসেই তারা দেখলো দারোয়ানদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কষ্টে বেচারাদের চিৎকার আকাশে ছড়ালো। চোরদের সর্দার দারোয়ানদের কষ্ট দেখে মনে মনে বললো: ‘যারা কিছুই করে নি, তাদেরকে খামোখা এমন শাস্তি দেওয়া আল্লাহর গায়ে সইবে না’! এই বলে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বললো: ‘থামো’! সাথে সাথে সবার দৃষ্টি পড়ে গেল তার ওপর। চোরের সর্দার আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললো: ‘এদের সবাইকে ছেড়ে দাও! তারা নিদোর্ষ। আমিই চুরি করেছি’! গভর্নর তার দিকে তাকিয়ে বললো: ‘তুই চুরি করেছিস, কীভাবে’? চোরের সর্দার বললো: ‘আমি একটা টানেল তৈরি করেছি,যার সংযোগ কূপের সাথে’। সবার কূপের কাছে চলে গেল।



গভর্নর জিজ্ঞেস করলো: ‘ব্যবসায়ীদের মালামাল কোথায়, যদি সত্যি বলে থাকিস তাহলে বল্ চুরি করা মালগুলো কোথায়?' চোর বললো: ‘কূপের ভেতরে। যে কেউ গিয়ে দেখে আসতে পারে।’ কিন্তু কেউ যেতে সাহস করলো না। অবেশেষে চোরের সর্দারের পরামর্শে তার কোমরে শক্ত দড়ি বেঁধে দেওয়া হলো এবং তাকেই পাঠানো হলো কূপের ভেতর। চোর তো টানেল পর্যন্ত পৌঁছে কোমরের দড়ি খুলে দড়ির মাথায় বড়ো একটা পাথর বেঁধে টানেল পথে পালিয়ে গেল। তার সঙ্গীরাও আস্তে আস্তে পেছনে যেতে যেতে সরাইখানার সদর দরোজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।গভর্নরসহ সরাইখানার ব্যবসায়ী মুসাফিররা অনেক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করলো কিন্তু কূপের ভেতর পাড়ি জমানো চোরের কোনো খবরই হলো না।



সবাই পরামর্শ করলো, কী করা যায়..কী করা যায়...অবশেষে গভর্নরের আদেশে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একজন সেপাই গেল কূপের ভেতর। সে টানেলের পথটি পেয়ে গেল এবং সেই পথ দিয়ে বের হয়ে সরাইখানার মূল দরোজায় এসে চিৎকার করে উঠলো। সবাই কূপের কাছেই জটলা পাকাচ্ছিল। চিৎকার শুনে সেপাইকে দেখে সবাই বুঝে গেল-‘চার সত্যিই বলেছে’ সরাইখানার সাথে বাইরে যাওয়া আসার জন্যে একটা পথ আছে। গভর্নর তাড়াতাড়ি দারোয়ানদেরকে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দিলো। গভর্নর কীসব ভাবতে ভাবতে আনমনেই কথা বলছিল। হঠাৎ এক ব্যবসায়ী মুসাফির-যার কিছু মাল চুরি হয়েছিল-চিৎকার করে বললো: ‘আমি আমার মালামাল ঐ সাহসী এবং বীরোচিত চোরকে দান করে দিলাম। আমার মালগুলো তারই, সেগুলো তার জন্যে হালাল করে দিলাম। কেননা ঐ চোর ছিল খুবই বুদ্ধিমান। এরকম একটা টানেল বানানো যে-সেই কথা নয়। এতো কঠোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে এরকম একটা নিরাপদ পথ আবিষ্কার করা চাট্টিখানি কথা নয়। তারচেয়ে বড়ো কথা হলো: চোরটির সাহস এবং পৌরুষ। সে নিজেকে নিশ্চিত বিপদে ফেলে নিরীহ দারোয়ানদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে। চুরি একটা খারাপ কাজ, সন্দেহ নেই। কিন্তু কেউ যদি খারাপ কাজ করেও বসে, তারচেয়ে উত্তম হলো চোরটির মতো সাহসী এবং পৌরুষদীপ্ত হওয়া।’



এই ঘটনার পর থেকে কেউ কোনোরকম খারাপ কাজ করার পরও যদি এই চোরের সর্দারের মতো সাহসিকতার পরিচয় দেয়, তার ব্যাপারে ঐ চোরের প্রসঙ্গ টেনে বলে: ‘চোর হলেও সাহসী হও’।

(রেডিও তেহরান থেকে সংগৃহীত)











মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.