নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: নকল বীর

০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:০৫

দরজা খুলেই চিৎ হয়ে পড়ে গেল সুরুজালি। ’কী হয়েছে, কী হয়েছে’ করতে করতে ছুটে এলো ঘরের লোকজন। সুরুজালি ’বাঘ বাঘ’ বলে আঙুলে ইশারা করতেই সবাই বাইরের দিকে তাকালো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার! কারোর কলজে জুড়ে পানি নেই। সুরুজালিকে ফেলে দেৌড়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলো তারা। এক মুূহূর্ত পরে সুরুজালি উঠে দাঁড়ালো এবং দরজার খিল লাগিয়ে দিল।

’বড়ো বিপদে পড়ে এখানে এসেছি। আমাদের বাসস্থান সুন্দরবন এলাকা তেলে-পানিতে সয়লাব। দেখুন তেল-পানি আর কাদায় মাখামাখি আমার শরীর। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। দয়া করে আমাকে রক্ষা করুন।’ বাঘটি মিনতি করে বলল সুরুজালিকে।

সুরুজালি বাঘের এই দুরবস্থা দেখে দরজা খুলে দাঁড়ালো। তার মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি খেলা করতে লাগল। সে বাঘটাকে বলল, ’আমার একটি শর্ত মেনে নিলে পরে আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারি।’

বাঘ দুর্বল স্বরে বলল, ’এখন আমি খুব দুর্বল। তোমার শর্ত পুরণের মতো কোনো শক্তি এখন আমার নেই। তবে, দুর্বলরা কেবল সব শর্ত পুরণের প্রতিশ্রুতি দিতে পারে।’

’আমার শর্তটি পুরণের জন্য শক্তির দরকার নেই। তুমি আমার এই লোহার খাঁচার ভেতরে গিয়ে বিশ্রাম করো। আমি তোমার জীবন রক্ষার ব্যবস্থা করি।’ বলল সুরুজালি।

দুর্বল বাঘটি কাঁপতে কাঁপতে লোহার খাঁচায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।

সুরুজালি মনের আনন্দে দেৌড়ে গিয়ে খাঁচার দরজায় একটি বড় তালা লাগিয়ে দিল।

বাঘ করুণভাবে সুরুজালির দিকে তাকিয়ে রইল।

সুরুজালি বালতি বালতি পরিষ্কার পানি ঢেলে বাঘটিকে গোসল করালো। খাবার দিল। বাঘটি সুরুজালির যত্ন পেয়ে বেশ সুস্থ হয়ে উঠেছে।

দুই.

’সুরুজালির বাড়িতে বাঘ ধরা পড়েছে’, এমন খবর হাত পা মেলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। এলাকার লোকজন বাঘ দেখার জন্য ছুটে এলো সুরুজালির বাড়ি। সে বাইরের উঠোনে গেলো এবং কেৌতূহলী মানুষদের সামনে গিয়ে বীরের মতো বলল, ’জীবন-মরণ লড়াই করে বনের বাঘটাকে বশে এনেছি। বাঘ দেখতে হলে টাকা-পয়সা লাগবে। মাগনা বাঘ দেখা যাবে না।’

লোকজনের আর তর সয়না। তারা আঙুল খাড়া করে বলল, ’টাকা পয়সা লাগে দেবো, বাঘটা আগে দেখতে দাও! এই লও টাকা; এখন পথ ছাড়ো-বাঘ দেখি।’

সুরুজালি টাকা পয়সা নিয়ে একজন একজন করে পাঠিয়ে দিল বাঘের খাঁচার দিকে।

অল্প দিনেই অনেক ধনী হয়ে গেল সে। তার আনন্দ দেখে কে।

একদিন বাঘটি সুরুজালিকে বলল, ‘দেখো, আমি এখন একদম ঠিক আছি। আমি তোমার উপকারের কথা চিরদিন মনে রাখব। খাঁচার তালাটি খুলে দাও। আমি বনে চলে যাই।’

সুরুজালি কপালে চক্ষু তুলে বলল, ‘কী বলছ তুমি এসব! আমি তোমার জীবন রক্ষা করেছি, এখন আমার অনেক কিছু চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার আছে। আমার ইচ্ছা পুরণ করা তোমার কর্তব্য।’

বাঘটি বলল ‘তুমি তো কম কিছু পাওনি। আর কী চাই তোমার?’

‘আমি বীরের মর্যাদা পেতে চাই।’ বলল সুরুজালি।

বাঘ অবাক হয়ে বলল ‘বীর? চালাকি করে তুমি হবে বীর!!'

‘চুপ, একদম চুপ। এ কথা তুমি একবারও মুখে আনবে না। বীর আমাকে হতেই হবে। ব্যাপারটা কত গেৌরবের, বুঝতে পারছ তুমি?’ বলল সুরুজালি।

তিন.

এলাকার মানুষ বলে, ‘তোমার গায়ে এত শক্তি আর সাহস নেই যে তুমি একটা বাঘকে পরাস্থ করতে পার। তোমার এ গল্প কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে- সুরুজালি?’

সুরুজালি শরীর ঝাকিয়ে বলল, ‘কী করলে তোমরা বিশ্বাস করবে, শুনি?’

‘তুমি যদি এই বাঘটির সাথে প্রকাশ্যে লড়াই করে জিততে পারো তখনই আমরা তোমাকে দেব বীরের মর্যাদা আর সাথে পাবে লক্ষ লক্ষ টাকা পুরষ্কার।’ বলল এলাকার লোকেরা।

সুরুজালি তুড়ি মেরে বলল, ‘তাহলে তোমাদের তিনটি কাজ করার আছে এখন।

এক. আমার সাথে বাঘের প্রকাশ্যে লড়াইয়ের আয়োজন করতে হবে,

দুই. তোমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লক্ষ লক্ষ টাকা জোগাড় করতে হবে আর

তিন. বীরের জন্য বিজয়মালা তৈরি করতে হবে।’

সুরুজালির কথা শুনে এলাকার লোকেরা কেৌতূহলে ফেটে পড়ল। তারা ঢোল কাঁড়া পিটিয়ে এলাকায় ঘোষণা করে দিল, ‘সুরুজালির সাথে বাঘের প্রকাশ্যে মরণপণ লড়াই হবে। এ লড়াইয়ে সুরুজালি জিততে পারলে তাকে বীরের খেতাব ও লক্ষ লক্ষ টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে...।’

এদিকে সুরুজালি খাঁচাবন্দী বাঘের কানে কানে বলল, তোমার সাথে আমার প্রকাশ্যে লড়াই হবে। এ লড়াইয়ে তুমি ইচ্ছে করেই পরাজিত হবে। আমি তোমাকে পরাস্থ করে তোমার বুকের উপর দাঁড়িয়ে বিজয়ের হাসি হাসব। তুমি পরাজিত হয়ে বীর সুরুজালিকে কুর্ণিশ করবে। আমি হব বীর সুরুজালি আর তুমি পরাজিত বাঘ লেজ গুটিয়ে চলে যাবে বনে। মুক্তি পাওয়ার এটাই তোমার শেষ সুযোগ। কথাটা মনে থাকে যেন?’

সুরুজালির কথা শুনে বাঘ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

চার.

বিশাল মাঠ?। লড়াইয়ের মঞ্চ তৈরি। খাঁচাবন্দী বাঘটিকে রাখা হয়েছে মঞ্চে। হাজার হাজার মানুষ টিকিট কেটে ‘বাঘ-সুরুজালির লড়াই’ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। দর্শকে পরিপূর্ণ মাঠ, আনন্দ কেৌতূহলে ফেটে পড়ছে।

বাঘের খাঁচার দরজা খুলে গেল। বাঘটি খাঁচা থেকে বেরিয়ে এলো, হালুম-হুলুম!

হাজারো মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি আর হাততালিতে কান ফেটে যাচ্ছে।

সুরুজালির গায়ে যত না শক্তি তার চেয়ে বহু গুণ ত্যাজ দেখিয়ে, বাঘকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে এক লাফে বাঘের উপর গিয়ে পড় সে। চলছে বাঘে-সুরুজালির লড়াই। হঠাৎ বাঘটি প্রচণ্ড হিংস্র হয়ে উঠল এবং বাঘটি থাবা মেরে সুরুজালিকে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর বাঘটি গড় গড় আওয়াজ করে সুরুজালির বুকের উপর গিয়ে বসল। সুরুজালি হাঁপাতে হাঁপাতে বাঘকে দুহাতে ঠেলে দিয়ে বলে, ’তুই কি ভুলে গেছিস আমার কথা? তুই আমার বুকে নয়; আমি তোর বুকে চড়ে বসব। দোহাই, তুই আমাকে বীর হতে দে।’

‘আমি আমার শক্তির অপমান করতে পারি না’ বলেই ক্রুদ্ধ বাঘ সুরুজালিকে নিয়ে মুহূর্তে উধাও হয়ে গেলো।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.