নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ নকল বীর

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৩


দরজা খুলেই চিৎ হয়ে পড়ে গেল সুরুজালি। ’কী হয়েছে, কী হয়েছে’ করতে করতে ছুটে এলো ঘরের লোকজন। সুরুজালি ’বাঘ বাঘ’ বলে আঙুলে ইশারা করতেই সবাই বাইরের দিকে তাকালো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার! কারোর কলজেজুড়ে পানি নেই। সুরুজালিকে ফেলে দেৌড়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল তারা।

এক মুহূর্ত পরে সুরুজালি মোচড় দিয়ে উঠে দাঁড়ালো এবং দ্রুত দরজার খিল লাগিয়ে দিল। সে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখল, বাঘটি দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। কিন্তু বাঘটিকে এত শ্রীহীন, দুর্বল আর মনমরা লাগছে কোনো? সুরুজালির ভয় কিছুটা কেটে গেলো। কিন্তু দরজা খুলল না সে।

’বড়ো বিপদে পড়ে এখানে এসেছি। দয়া করে আমাকে দেখুন। আমাদের বাসস্থান সুন্দরবন এলাকা তেলে-পানিতে সয়লাব। দেখুন তেল-পানি আর কাদায় মাখামাখি আমার শরীর। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। দয়া করে আমাকে রক্ষা করুন।’ বাঘটি মিনতি করে বলল সুরুজালিকে।

বাঘটি উঠোনে শুয়ে পড়েছে। সুরুজালি বাঘের এই দুরবস্থা দেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। তার মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি খেলা করতে লাগল। সে বাঘটাকে বলল, ’আমার একটি শর্ত মানলে পরে আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারি।’
বাঘ দুর্বল স্বরে বলল, ’এখন আমি খুব দুর্বল। হাত-পা চলছে না আমার। তোমার শর্ত পুরণের মতো কোনো শক্তি এখন আমার নেই। তবে, দুর্বলরা কেবল সব শর্ত পুরণের প্রতিশ্রুতি দিতে পারে।’
’আমার শর্তটি পুরণের জন্য শক্তির দরকার নেই। তুমি রাজি হলেই হবে।’ বলল সুরুজালি।
’কী সেই শর্ত?’ মিনমিন করে জানতে চাইল বাঘ।
‘একেবারেই সোজা। তুমি আমার এই লোহার খাঁচার ভেতরে গিয়ে বিশ্রাম করো। আমি তোমার বিপদ তাড়াবার ব্যবস্থা করি।’ বলল সুরুজালি।
দুর্বল বাঘটি কাঁপতে কাঁপতে কোনমতে লোহার খাঁচায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
সুরুজালি মনের আনন্দে দেৌড়ে গিয়ে খাঁচার দরজায় একটি বড় তালা লাগিয়ে দিল।
বাঘ করুণভাবে সুরুজালির দিকে তাকিয়ে রইল।

সুরুজালি টিউবওয়েল থেকে বালতি বালতি পানি এনে বাঘটির গায়ে ঢালতে লাগল। বাঘের গায়ের তেল ও কাদা পরিষ্কার হয়ে গেল। তারপর সে কিছু খাবার দিল বাঘের সামনে। বাঘটি খেলো। এখন সে বেশ সুস্থ। বাঘটি উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু খাঁচা এত ছোট যে সে ভালভাবে নড়াচড়া করতে পারছে না।

দুই.
’সুরুজালির বাড়িতে বাঘ ধরা পড়েছে’, ‘সুরুজালি বন থেকে একটা বাঘ ধরে এনেছে-এমন সব খবর হাত পা মেলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। পরের দিন এলাকার লোকজন বাঘ দেখার জন্য ছুটে এলো সুরুজালির বাড়ি। সুরুজালি আনন্দে ছটফট করতে লাগল। সে বাইরের উঠোনে গেলো এবং কেৌতূহলী মানুষদের সামনে গিয়ে বীরের মতো বলল, ’লড়াই করে বনের সবচেয়ে হিংস্র আর শক্তিশালী বাঘটাকে বশে এনেছি। বাঘ দেখতে হলে টাকা-পয়সা লাগবে। মাগনা বাঘ দেখা যাবে না।’
লোকজনের আর তর সয়রা। তারা আঙুল খাড়া করে বলল, ’টাকা পয়সা লাগে দেবো, বাঘটা আগে দেখতে দাও! এই লও টাকা; এখন পথ ছাড়ো-বাঘ দেখি।’

সুরুজালি সবার কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে একজন একজন করে পাঠিয়ে দিল বাঘের খাঁচার দিকে। ‘কী ভয়ংকর, কত বড়ো বাঘ!’
পরের দিনগুলোতে লোকজনের আনাগোনা আরো বেড়ে গেল। সবাই টাকা দিয়ে বাঘ দেখছে।
সুরুজালি অল্প দিনেই অনেক ধনী হয়ে গেল। তার আনন্দ দেখে কে।

একদিন বাঘটি সুরুজালিকে বলল, ‘দেখো, আমি এখন একদম ঠিক আছি। বন্দী জীবন আর ভাল লাগে না। আমি তোমার উপকারের কথা চিরদিন মনে রাখব। যদি পারি তো আমি তোমার উপকার করবো। কারণ তুমি আমার জীবন রক্ষা করেছো। তুমি খাঁচার তালাটি খুলে দাও। আমি বনে চলে যাই।’

সুরুজালি বাঘের আবদার শুনে কপালে চক্ষু তুলে বলল, ‘কী বলছ তুমি এসব! আমি তোমার জীবন রক্ষা করেছি, এখন আমার অনেক কিছু চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার আছে। আমার ইচ্ছা পুরণ করা তোমার কর্তব্য।’
বাঘটি রাগ করে বলল ‘অতি লোভের ক্ষতি অনেক বেশি। তুমি তো কম কিছু পাওনি। আর কী চাই তোমার?’
‘আমি বীরের মর্যাদা পেতে চাই।’ বলল সুরুজালি।
বাঘটি অবাক হয়ে বলল, ‘বীরের মর্যাদা! চালাকি করে বীর হওয়া যায় না।’
‘হ্যা, আমি মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে হলেও বীরের মর্যাদা চাই। এটা অর্থ-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি, যশ-খ্যাতির চেয়েও অনেক বড় একটা বিষয়। টাকা পয়সা সবাই কামাই করতে পারে কিন্তু বীর সবাই হতে পারে না। বীরের বীরত্বের কাহিনী বেঁচে থাকে চিরকাল। আমার উত্তর পুরুষ হবে বীরের বংশধর। তারা যুগে যুগে আমার বীরত্বের কাহিনী নিয়ে গর্ব করবে। আর আমি সেটাই চাই।’ বলল সুরুজালি।

এলাকার মানুষকে আমি বলেছি, ‘আমি তোমার সাথে লড়াই করে তোমাকে পরাস্থ করে এই খাঁচায় বন্দী করেছি। এই কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। কিন্তু আমি তাদের বুঝিয়ে দিতে চাই যে, আমি প্রকৃতই একজন বীর।’
‘মানুষ তো সত্যি কথাই বলছে। তুমি তো আমাকে ধরে আনোনি। আমি নিজেই এসে তোমার লোহার খাঁচায় বন্দী হয়েছি।’ বলল বাঘটি।
‘চুপ, একদম চুপ। এ কথা তুমি একবারও মুখে আনবে না। আমাকে বীর হতে হবে। ব্যাপারটা কত মজার আর গেৌরবের, বুঝতে পারছ তুমি?’ বলল সুরুজালি।
বাঘটি বলল, ‘তা হলে তুমি আমাকে মুক্তি দিচ্ছ না।’
‘আগে আমার গলায় বীরের জয়মালা এসে পড়ুক; তারপর †তামার কথা।’ বলল সুরুজালি।

তিন.
এলাকার মানুষ বলে, ‘তোমার গায়ে এত শক্তি আর মনে এত সাহস নেই যে তুমি একটা বাঘকে পরাস্থ করতে পার। তোমার এ গল্প কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে- সুরুজালি?’
সুরুজালি শরীর ঝাকিয়ে বলল, ‘কী করলে তোমরা বিশ্বাস করবে, শুনি?’
সবাই বলে উঠল, ‘তুমি যদি এই বাঘটির সাথে প্রকাশ্যে লড়াই করে জিততে পারো তখনই আমরা বিশ্বাস করবো যে তুমি প্রকৃতই বীর। শুধু তাই নয় তোমাকে আমরা অনেক টাকা পুরষ্কার দিব এবং তোমাকে বীরের মর্যাদা দিয়ে মাথায় তুলে রাখব।’
সুরুজালি একটা তুড়ি মেরে বলল, ‘তাহলে তোমাদের তিনটি কাজই করার আছে এখন।
এক. আমার সাথে বাঘের প্রকাশ্যে লড়াইয়ের আয়োজন করতে হবে।
দুই. তোমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অনেক টাকা জোগাড় করতে হবে আর
তিন. বীরের জন্য বিজয়মালা তৈরি করতে হবে।’
সুরুজালির কথা শুনে এলাকার লোকেরা কেৌতূহলে ফেটে পড়ল। তারা ঢোল কাঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা করে দিল, ‘সুরুজালির সাথে বাঘের প্রকাশ্যে মরণপণ লড়াই হবে। এ লড়াইয়ে সুরুজালি জিততে পারলে তাকে বীরের খেতাব ও অঢেল টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে...।’
সবার কান খাড়া হয়ে গেলো। ‘বাঘের সাথে সুরুজালির লড়াই?’ এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দ উত্তেজনার ঢেউ খেলতে লাগল।
এদিকে সুরুজালি বাঘের কানে কানে বলল, তোমার সাথে আমার প্রকাশ্যে লড়াই হবে। এ লড়াইয়ে তুমি ইচ্ছে করেই পরাজিত হবে। আমি তোমাকে পরাস্থ করে তোমার বুকের উপর দাঁড়িয়ে বিজয়ের হাসি হাসব। তুমি পরাজিত হয়ে হাজার হাজার দর্শকের সামনে বীর সুরুজালিকে কুর্ণিশ করবে। আমি হব বীর সুরুজালি আর তুমি পরাজিত বাঘ লেজ গুটিয়ে চলে যাবে বনে। মুক্তি পাওয়ার এটাই তোমার শেষ সুযোগ। কথাটা মনে থাকে যেন?’

চার.
বিশাল মা?। লড়াইয়ের মঞ্চ তৈরি। খাচাবন্দী বাঘটিকে রাখা হয়েছে মঞ্চে। হাজার হাজার মানুষ টিকিট কেটে ‘বাঘ-সুরুজালির লড়াই’ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। দর্শকে পরিপূর্ণ মা?। আনন্দ কেৌতূহলে ফেটে পড়ছে তারা।
হুইশেল বেজে উঠল। সুরুজালি প্রস্তুতি নিয়ে বাঘের খাঁচার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো এবং সে নিজের হাতে খাঁচার দরজা খুলে দিল। বাঘটি খাঁচা থেকে বেরিয়ে এলো-হালুম-হুলুম!
হাজারো মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি আর হাততালিতে কান ফেটে যাচ্ছে।
সুরুজালির গায়ে যত না শক্তি তার চেয়ে বহু গুণ ত্যাজ দেখিয়ে, বীরের মতো লাফিয়ে এবং বাঘকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে এক লাফে বাঘের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। বাঘ হংকার ছেড়ে শরীরটাকে ঝাকি দিতেই সুরুজালি ছিটকে পড়ে গেল। সুরুজালি সোজা হয়ে দাঁড়ালো এবং বাঘের সাথে বীরত্ব দেখাতে লাগল। তালির শব্দ বেড়ে গেল।
চলছে বাঘে-সুরুজালির লড়াই। দর্শকদের হই চই আর তালি থামছে না। এক সময় বাঘটি ক্ষেপে গিয়ে থাবা মেরে সুরুজালিকে মাটিতে ফেলে দিল। বাঘটি গড় গড় আওয়াজ করে সুরুজালির বুকের উপর গিয়ে বসল। সুরুজালি বাঘকে দুহাতে ঠেলে ঠেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ’তুই কি ভুলে গেছিস আমার কথা? তুই আমার বুকে নয়; আমি তোর বুকে চড়ে বসব। শুয়ে পড়। আমি তোর বুকে চড়ে বসি। দোহাই, তুই আমাকে বীর হতে দে। আমি তোকে মুক্ত করে দেব।’
‘আমি আমার শক্তির অপমান করতে পারি না’ বলেই ক্রুদ্ধ বাঘ সুরুজালির ঘাড় কামড়ে ধরল। অতঃপর ভয়ংকর বাঘটি সুরুজালিকে নিয়ে মুহূর্তে উধাও হয়ে গেল।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: মূল কথাটা ভালো। নিজের সম্মান রক্ষা করে থাকতে পারে যে, সেই প্রকৃত বীর।

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২১

অতি মানব বলেছেন: অসাধারন আপনার লেখা,ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.