নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিবেকের ছায়া

২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯


মা-বাবা আদর করে ছেলের নাম রেখেছিলেন ’ধনু’। সেই ধনু এখন বড় হয়েছে; তার সাথে পাল্লা দিয়ে বড় হয়েছে তার নামটিও। ’ধনু’ হয়ে গেছে ’ধনুডাকাত’। এখন ’ধনু’ নামে তাকে কেউ চেনে না, ’ধনুডাকাত’ নামে তার বিস্তর পরিচিতি।
ধনু ডাকাতের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। তার যেমন গায়ের শক্তি তেমনি দুঃসাহস। শরীর তার একটুও ভাঙ্গেনি, হিংস্রতাও কমেনি, চোখদুটি জবা ফুলের মত লাল। তাকে দেখলে মনে এক ধরনের ভয় জেগে ওঠে।
একরাতে ডাকাতি করে বাড়ি ফিরছিল ধনু ডাকাত। নীরব-নিস্তব্দ গভীর রাত। পথের দু‘পাশে ছোট বড় নানা জাতের গাছ, মাঝেমধ্যে লতাপাতার কুন্ডলী। তার কাঁধে একটা ঝোলা। কোমরে গামছা বাধা।
ধনু ডাকাতের মনে হল, কিছু একটা তার পিছু নিয়েছে, তার পায়ে পায়ে হাঁটছে। কিন্তু ভয় পেল না সে।
কে? আমার গায়ে গায়ে হাঁটছিস! কী চাস? কথা কস না কে? কোন সাড়া না পেয়ে রাগের চোটে পেছনে ঘাড় ফিরিয়েই থ হয়ে গেল দুর্ধর্ষ ধনু ডাকাত।

একটি ছায়া! অবিকল তার আকৃতির ছায়াটি তার সামনে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে। ছায়া তো হয় কালো কিন্তু তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ধবধবে সাদা একটা ছায়া। ধনু ডাকাত যা বলছে, যা করছে, সাদা ছায়াটিও তাই বলছে-করছে। ধনুর চক্ষু ছানাবড়া।
ধনু ডাকাত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার হাঁটতে লাগল। পেছনে তাকাল না, আড়চোখে দেখল ছায়াটি আগের মতই তাকে অনুসরণ করছে। এই নির্জন রাতে একজন মানুষ আর একটি সাদাছায়া লাগালাগি করে হাঁটছে। রা-শব্দ নেই। শুধু হনহনিয়ে হাঁটা। কি মুশকিল!

হঠাৎ থমকে দাঁড়াল অসম্ভব রাগী ধনু ডাকাত। গভীর রাতে চলাফেরা করে তার অভ্যেস। রাতে-বিরাতে চলতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে ভূত-পেরেতের সাক্ষাৎ পেলেও থোরাই কেয়ার করে সে। কিন্তু এমন ছায়ারহস্যের মধ্যে পড়েনি কোনোদিন। কিন্তু ধনু ডাকাত তো সহজে ভয় পাওয়ার লোক নয়। ধনু পেছনে না ফিরেই ভারী গলায় বলল,
‘তুই কে রে! বলেই সটান দাঁড়িয়ে গেল সে। দাঁড়িয়ে গেল ছায়াটিও। এবার দু’জন মুখোমুখি হলো।
কি চাস? বল।
-আমি আপনার বিবেক। আমি এইমাত্র আপনার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছি। আপনার ভেতরে আর থাকতে পারছি না আমি। বলল ছায়াটি।
-তুই আমার বিবেক? বাইরে কী করস তুই? বিবেক ছাড়া মানুষ চলে কীভাবে? বলল ধনু।
-না, আপনি বিবেক ছাড়া মানুষ নন। আপনার ভেতরে রয়েছে আরেকটা বিবেক। অতি দুষ্ট ও বদ বিবেক। সে আপনাকে বশ মানিয়ে আপনার ভেতরে অর্জন করেছে প্রবল শক্তি-সামর্থ। আপনাকে সে ভুলপথে পরিচালিত করছে প্রতিনিয়ত। তার কথায় আপনি চলছেন-বলছেন আর ভয়ঙ্কর সব অপকর্ম করে যাচ্ছেন। আমার কোনো কথাই শুনছেন না আপনি। তাই আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। আমি আপনাকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে চাই। হয় আপনি আমার কথামত চলবেন, নয় আমি আপনাকে চিরতরে ত্যাগ করে চলে যাব?

ধনু ডাকাতের পেশা ডাকাতি। সে এইমাত্র ডাকাতি করে এসেছে। তার তিরিক্ষি মেজাজ আরো তিরিক্ষি হচেছ। ধনু ডাকাত একটা বোতল বের করে মুখে দিতেই ছায়াটি ছোঁ মেরে নিয়ে গেল বোতলটি। ধনু রাগে আগুন হয়ে গেল। সে কোনো কথা না বলে কটি থেকে বের করল একটা ছুরি। অন্ধকারে ছুরিটি কেমন ঝিলিক দিয়ে উঠল। ধনু ডাকাত ছুরিটি নাড়াচাড়া করে ছায়াটিকে দেখিয়ে বলল,
এটা কি তুই চিনস?
চিনি, এটা একটা ছুরি, জবাব দিল ছায়াটি।
ধনু বলল, এটা দিয়ে কী করি জানস?
আলবৎ জানি, ছায়াটি বলল।
যদি জানস তো কোন সাহসে আমার সামনে এখনও দাঁড়িয়ে আছিস। আমি এই ছুরি দিয়ে তোকে চাক চাক করে ফেলব। তুই ভাগ এখান থেকে।
ছায়াটি দিব্যি দাঁড়িয়ে রইল আগের মত। একটু নড়া-চড়াও করল না।

ছায়াটি সরলভাবে বলল, এ জীবনে আপনি কয়টি ভালো আর কয়টি খারাপ কাজ করেছেন, আপনার নির্মমতা কত মানুষের জীবনে কত দুঃখ-যন্ত্রণার কারণ হয়ে আছে, কত কান্না, কত হাহাকার কত অশ্র“ ঝরিয়েছেন আর কত মানুষের অভিশাপ বয়ে চলেছেন আপনি। একটু ভেবে দেখেন তো ওসব কি আপনার বেঁচে থাকার জন্য খুব প্রয়োজন ছিল? বেঁচে থাকার জন্য কি এরচেয়ে ভালো কোনো পথ নেই? তবে কেন মানুষ হয়ে পশুর মতো কাজ করে এভাবে মানুষের অভিশাপ নিয়ে চলেছেন আপনি? বলুন, জবাব দিন।

ধনুডাকাত ঝিম মেরে বসে রইল। তার দু‘চোখ বন্ধ হয়ে এলো। তার হাতে নির্মমভাবে আহত-নিহত হওয়া ও লুটপাটের সময় মানুষের আহাজারির করুন চিত্র বিচিত্রভাবে ভেসে উঠল। তার দু‘চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। তার সমস্ত শরীর ঘেমে সয়লাব।
প্রচন্ড বেগে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ধনু। মনে হলো তার শ্বাসের সাথে একটা দানব বেরিয়ে গেল। ধনু ডাকাত উঠে দাঁড়ালো এবং হঠাৎ করে ছায়াটিকে ঝাপটে ধরে আলিঙ্গন করতে লাগল। পরে সে সবকিছু ছুড়ে ফেলে দিয়ে সোজা বাড়ি চলে গেল।
তারপর ধনুডাকাতকে আর রাতের অন্ধকারে ঘরের বাইরে কদম ফেলতে দেখা যায়নি।

প্রতিকী ছবি নেট থেকে সংগৃহীত













মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি গত শতকে ফেরত গেছেন; গত শতকের লোকেরা বিবেক নিয়ে নাটক, কবিতা ইত্যাদি রচনা করতেন।

২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:০২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন:
বিবেক বোধকে জাগ্রত করা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লক্ষ।
বিবেকের কোনো স্থান কাল ভেদ নেই।
আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
শুভেচ্ছা রইল।

২| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:২১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর লেখা ।

২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:০৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: সাহিত্য পড়ে বিবেক বোধ জাগ্রত হবে এমন সাহিত্য বাংলাদেশে কে লিখে? কারা লিখছে?

৪| ২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৫৯

মা.হাসান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। বাচ্চাদের কথা ভাবার মতো লোক কম। আপনাকে স্যালুট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.