নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খুকি ও নেংটি ইঁদুর

২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১২


এক সেকেন্ডেরও কম সময়। ধরতে পারেনি। নইলে এতক্ষণে বিড়ালের পেটে চালান হয়ে যেত নেংটি ইঁদুরটি।
ইঁদুরটি এক দৌড়ে গিয়ে তার গর্তে ঢুকে পড়ল। আর বিড়ালটি ওঁৎ পেতে বসে আছে গর্তের কিনারে। নয় বছরের খুকি ভাবতে লাগল ছোট্ট ইঁদুরটির কথা।
ছোট্ট একটা প্রাণী ইঁদুর। কত বিপদের মধ্যে বেঁচে আছে সে! তার চারপাশে অসংখ্য শক্রু। তার গর্তটি ছাড়া আশ্রয় নেওয়ার আর কোন জায়গা নেই। মানুষেরা দেখলে লাঠি নিয়ে তাড়ায়, কুকুর-বিড়ালে দেখলে খেয়ে ফেলতে চায়। সাপে দেখলে ছোবল মারে। কাক-পেঁচারা দেখলে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়।
কই, তার বন্ধু বলতে তো কেউ নেই! তার বিপদে এগিয়ে আসারও কেউ নেই। তার সমস্যায় সাহায্য করার কেউ নেই। কি ভয়ংকর আর বিপজ্জনক জীবন এই ছোট্ট ইঁদুরের! তার ঘর-সংসার আছে। তার ছেলেমেয়ে আছে। তাকে কামাই করে খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। তার ছেলেমেয়েদের খাওয়াতে হয়। তারপরেও ইঁদুরেরা দিব্যি বেঁচে আছে! কী করে সম্ভব?
নেংটি ইঁদুরকে নিয়ে চিন্তা করে খুকির মাথা গরম হয়ে যায়। সে ভাবে, আমি মা-বাবার আদুরে সন্তান। আমার চারপাশে যা কিছু আছে সবই আমার জন্যে। আমার কোনো দুঃখ নেই। আমার শক্রু নেই, সবাই আমার বন্ধু। আমি যখন যা চাই খুব সহজেই তা পেয়ে যাই। যা চাই না তাও পাই। আমার যা আছে তা আমার প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি। আমি খেতে না চাইলে আমাকে আদর করে খাইয়ে দেয়। কষ্ট যে কি জিনিস তা আমি জানি না। বিপদ আর সমস্যা কি তাও বুঝি নি। আমি কাঁদতেও পারি না। সবাই আমাকে আদর দিয়ে সবসময় হাসিখুশি করে রাখে। আমি একটা ননীর পুতুল!
আর ইঁদুরটি?
খুকি কাজে লেগে গেল
পরের দিন শুক্রবার। ঘুম থেকে উঠে কাজের মেয়ের চোখ গোল হয়ে গেল। সে এক দৌড়ে খুকির মা-বাবার ঘরে গেল। খালাম্মা, খালু তাড়াতাড়ি উঠেন। দেখে যান কি আজব কাণ্ড। ওঠেন, ওঠেন।
তারা ধড়ফড়িয়ে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে বলল, কী হয়েছে তোর? এভাবে ডাকাডাকি করছিস যে!
দেখেন আমাদের খুকির কাণ্ড দেখে যান।
খুকি আপন মনে নিজের কাজগুলো নিজের হাতে করছে। সে তার টেবিল গুছিয়ে নিল। সে তার ছ্ট্টো গোটা রুম ঝাঁট দিল। তারপর সে তার ছোট ছোট জামাগুলো নিয়ে গেল কলপাড়ে। সে নিজেই কাপড় ধুয়ে উঠোনের তারে ছড়িয়ে দিতে গেল। সে তারের নাগাল পাচ্ছিল না। ঘর থেকে একটি টুল টেনে বের করে নিয়ে গেল উঠোনে। সে তার কাপড়গুলো তারে ছড়িয়ে দিয়ে তাতে ক্লিপ এঁটে দিল। তারপর হাতে ঝাড়– নিয়ে উঠোন ঝাঁট দিতে শুরু করল।
খুকির বাবা পাখির মতো উড়ে এলো। সে তার হাত থেকে ঝাড়–টা কেড়ে নিয়ে বলল, মা, মা এগুলো কী করছ তুমি? এসব তো তোমার কাজ নয় মা। ঠাণ্ডা পানিতে কাপড় ধুলে তোমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে না মা, বলো। এসব কাজ করার জন্যে তো আমাদের কাজের লোক আছে। তুমি হঠাৎ করে এতসব কাজ শুরু করে দিলে কেণ? তোমাকে কেউ কিছু বলেছে মা, বলো। কার এত বড়ো সাহস তোমাকে কিছু বলে, কঠিন বিচার হবে।

বাবা আমাকে কেউ কিচ্ছু বলেনি। ঝাড়–টা আমার হাতে দাও তো। তুমি ঘরে গিয়ে বসো। দেখো আমি সুন্দর করে এই কাজগুলো করতে পারি। যাও, যাও, বলে খুকি তার বাবাকে ঠেলে ঘরে নিয়ে দিয়ে এল। খুকির মা বাবা-মেয়ের ঝগড়া দেখছিল।
খুকি উঠোন ঝাঁট দিয়ে ঘরে এসে পড়তে বসে গেল। তার মা এক গ্লাস দুধ নিয়ে তার সামনে ধরল। বলল, মা, আমার লক্ষ্মী মা অনেক পরিশ্রম করেছ; এই নাও তোমার পুরস্কার।
খুকি দুধে চুমুক দিল। তার মা বলল, কাজ করা ভাল তবে তুমি এখন অনেক ছোট। শোনো মা, তোমার কাজগুলো করে দেওয়ার জন্যে লোক আছে। তুমি মন দিয়ে পড়ো। কাজ করতে হবে না তোমার।
মা আমার কাজগুলো আমাকে করতে দাও। লেখাপড়া করেই এসব কাজ করা যায়। এখন থেকে আমার কোনো কাজে বাধা দিতে পারবে না। দেখো আমি পারি কি না।
মা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল। খুকির মা খুকির বাবার সামনে গিয়ে খুকির মতো হাত আর মাথা ঝাকিয়ে বলল, লেখাপড়া করেই এসব কাজ করা যায়। এখন থেকে আমার কোনো কাজে বাধা দিতে পারবে না। দেখো আমি পারি কি না। বলেই দুজনে হাহ্হা হিহহি করে হাসতে লাগল।

খুকিটা ইঁদুর হয়ে গেল নাকি?
খুকি তার রুম থেকে ছুটে গিয়ে তার বাবা মাকে বলল, এখন থেকে আমাকে আর এত আদর করবে না। কথায় কথায় আমার কাজে সাহায্য করতে আসবে না। আমাকে আদর করে খাইয়ে দিতে হবে না। আমার কাজ আমি নিজের হাতে করব। বুঝেছ এবার?
মা-বাবা কৌতূহলী হয়ে বলল, আচ্ছা মা তুমি হঠাৎ করে এগুলো কী শুরু করলে, কী হয়েছে তোমার, শুনি।
খুকি তার হাতের আঙুল খামচি দেওয়ার মতো করে বলল, না, আমার কিছুই হয়নি। আমি একটা নেংটি ইঁদুর। কিচ্ কিচ্ কিচ্।
মা-বাবা খুকির কথা শুনে আনন্দে হেসে উঠল।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল গল্প।

২৫ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:০১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:৪১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: গল্পটা ভালোই তবে ছবির মেয়েটা সাহসী। মেয়েরা কিন্তু ইদুরকে ভয় পায়

২৫ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:০১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: দুঃসাহসীনী!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.