নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে মেয়ে ভূত পুষতে চায়

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৬


আমাদের বাসায় বেড়াতে এসে এখন আর কেউ বড়ো স্বাচছন্ধ্যবোধ করে না। বাসায় মেহমানদের আদর-আপ্যায়ন, খায়-খাতির কম হয় না অথচ ইদানীং মেহমানেরা এসে আর বেশিক্ষণ থাকতে চায় না; নানা অজুহাত দেখিয়ে দ্রুত চলে যায়। বুশরার বেকার ছোট মামাটি বাসায় এসে আর যাওয়ার নামটি পর্যন্ত উচচারণ করতো না, সেও সেদিন বাসায় এসে ব্যস্ততার বড় ফিরিস্তি দিয়ে উধাও! যে স্ত্রী মেহমান ছাড়া এক বেলা ভাত খাওয়ার দুর্ভাগ্য হয় না বলে রাগে গজর গজর করত, সেও এখন মেহমান ছাড়া খাওয়া-খাদ্য ভালো লাগে না বলে আফসোস করে। এখন মেহমানশূন্য আনন্দ উপদ্রবহীন খাবার টেবিলে শূন্যতা বিরাজ করে।
মনের মাঝে এক ধরনের চাপা কষ্ট অনুভব করছি আমরা। যার মধ্যে কষ্টের কোনো ছাপ দেখা গেল না সে আমাদের কাজের বুয়া মরিয়ম। মেহমানের আগমনে আমরা যতই আনন্দ উপদ্রব করি মরিয়মের ততটা কষ্ট হয়। সে কাজের বুয়া বলে সচরাচর তার কষ্টের যেমন প্রকাশ ঘটে না, ঘটলেও বাসাভর্তি মনিবদের তা দৃষ্টিগোচর হয় না।

যারা নিয়মিত বাসায় বেড়াতে আসতেন তাদের কাছে ফোন করে বাসায় না আসার কারণ জানার চেষ্টা করলাম।
সবার একই জবাব, আসি না কি সাধে? আপনার বাসায় তো এখন আর খালি হাাতে যাওয়া যাবে না; জ্যান্ত ভূত নিয়ে যেতে হবে। আপনার মেয়ে বুশরার এ অবাস্তব আবদার মেটানোর ভয়ে আমরা পারত পক্ষে আপনার বাসামুখী হই না। ভূত পাবো কই? তাও আবার জলজ্যান্ত ভূত! তাকি সম্ভব? কী ভয়ংকর আবদার বলুন তো!

একটা পিচ্ছি মেয়ের অদ্ভূত আবদারের কারণে বাসায় মেহমান আসা বন্ধ হয়ে গেছে এটা কেমন কথা? মেজাজটা বিগড়ে গেল। বুশরাকে চাপা গলায় ডাক দিলাম।
সে বুঝতে পেরেছে মারাতœক কোনো অপরাধ না করলে বাবা সহজে এভাবে ডাক দেন না। আর ডাকাডাকির মধ্যেও এত ঝাঁঝ থাকে না। সে দৌড়ে এসে মাথা নিচু করে সভয়ে দাঁড়িয়ে দু‘হাতের আঙ্গুলে চিমটাচিমটি করতে লাগল।
-আচছা মা একথা কি সত্যি যে বাসায় মেহমান এলে তুমি নাকি ভূত এনে দেওয়ার আবদার কর? শুধু তাই না ভূত না নিয়ে এলে কখনও বাসায় আসবেন না এমন কথাও নাকি বলেছ মেহমানদেরকে?
-হ্যাঁ বলেছি। অনেকটা শক্তভাবে জবাব দিল বুশরা।
-কেন বলেছ তুমি? ভূত কি পুতুল খেলার জিনিস যে চাইলেই এনে দিবে আর তুমি ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে ঘুম পাড়াবে? ভূতের নাম শুনলে শির দাড়া সোজা হয়ে যায়। আর তুমি কি না বলেছ জ্যান্ত ভূত ধরে আনতে? তোমার কি মাথা ঠিক আছে? বাড়ির আশেপাশে ভূতের আনাগোনা টের পেলে মানুষ হাজার হাজার টাকা খরচা করে ওঝা বদ্যি, ফকির ডেকে এনে ভূত তাড়ায়, আর তুমি কিনা...। চিন্তা করতেও ভয় করে আমার! ইশ কী অসম্ভব কথারে বাবা!
-অসম্ভবের কী হলো আবার? বলেছি ভূত আনতে, ব্যস নিয়ে আসবে। ভূত না নিয়ে এলে বাসায় ঢুকতে দেব না কাউকে। আমি এমন কিছু চাইনি যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা বনে জঙ্গলে বাড়ির আশপাশে পাওয়া যায়। মেহমানেরা চকলেট দই মিষ্টি না এনে এখন থেকে ভূত ধরে নিয়ে আসবে।

মেয়ের এ দৃপ্ত কঠিন কথায় আমরা স্বামী-স্ত্রী হতভম্ভ হয়ে গেলাম। কপালে চোখ তুলে বললাম,
-এগুলো কী বলছ মা? এটা কলা না লেবেনচুষ যে জঙ্গল থেকে ধরে কিম্বা বাজার থেকে কিনে আনবে। কে যাবে তোমার জন্য ভূতের সন্ধান করে গিয়ে মরতে। কার এমন সাধ্য সাহস যে ভূত ধরতে যায়! তাও আবার জলজ্যান্ত ভূত!
-এসব বুঝি না আমি ভূত আমাকে এনে দিতেই হবে। ভূত নিয়ে আসবে তো বাসায় সসম্মানে প্রবেশ করবে। ভূত না নিয়ে আসবে তো প্রবেশ নিষেধ। আমি মেইন দরজায় এরকম একটা নোটিশ টানিয়ে রাখবো এখন বুঝলে বাবা।

বুশরার বড় ভাই মাহির এখানে দাড়িয়ে চুপ করে তার কথাগুলো শুনছিল। সে রাগে গজর গজর করছে। আদরের বোনের অন্ততঃ ভূতের আবদারটি মেনে নিতে পারছে না মাহির। সে চোখ লাল করে রাগে ক্ষোভে আংগুল খাড়া করে বুশরাকে বলছে, ঘরে ভূত আনলে আমরা বুছি তোমার ভূতের সাথে ঘর-সংসার করবো, নাহ্? ঘরে ভূত আনলে পরে কী অবস্থা হবে তাকি অনুমান করতে পারছো? বাসায় ভূত ঢুকলে কে কীভাবে পালাবে তা আমি জানি না তবে হুঁশ থাকতে আমি ভূতের সামনে পড়ব না। লক্ষ টাকা দিলেও না। দরজা জানলা ভেঙ্গে লাফিয়ে গিয়ে নিচে পড়ব, তারপর উর্দ্ধশ্বাসে যেদিকেই চোখ যায় সে দিকেই ছুটে পালাবো। কারো সাধ্য নেই আমাকে ফেরায়। কথাগুলো বলে মাহির রাগে কাঁপতে লাগল।
ছেলের কথায় একমত হয়ে আমিও বললাম, আমি আর তোমার মা যদি পালাবার সুযোগ নাও পাই তা হলে ভয়ে মরার আগে মাথা উঁচু করে চোখ বন্ধ করে সোঝা ভূতের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। চোখ খুলে ভূতটাকে এক নজর দেখব। তারপর একটা শব্দ শুনতে পাবে। ধপ করে পড়ে যাওয়ার শব্দ। ফ্লোরে একদম ভূতের সামনে গিয়ে পড়ে যাবো। তারপর শরীরটাকে একটা শক্ত ঝাঁকুনি দিয়ে নিস্তেজ হয়ে যাব। তুমি কি চাও ভূতের ডরে আমরা এভাবে মরে ভূত হয়ে যাই? বলো!

বুশরা খুশিতে বলল, হ্যাঁ চাই। তোমরা মরে ভূত হলে আমার খুব মজা হবে। মা ভূতকে আমি বাবা বলে ডাকবো আর বাবা ভূতকে ডাকবো মা বলে। তোমরা বাতাসে মিশে যেখানে সেখানে উড়ে বেড়াবে। আমি যখনই তুড়ি মেরে একটা ইশারা দিব তখনই গাছের ডালাপালা নেড়ে শোঁ শোঁ ভনভন পনপন করে চলে আসবে আমার সামনে। তখন আমি যা বলব তাই করবে তোমরা। যা চাইব তাই এনে দিবে। ইশ কী মজা হবে তখন! তোমরা ভূতের ভয়ে কখখনও পালাবে না। ভূত হবে তোমরা। প্লিজ কথা দাও।
মেয়ের এসব রং ঢং এর কথায় পায়ের রক্ত চেল চেল করে মাথায় ওঠার জো হয়েছে। রাগ ক্ষোভ, দুঃখ কষ্ট এক হয়ে আমাদের অবস্থা এমন হলো যে, মুখ থেকে কোনো রা বেরোলো না। শুকনো গলায় বার কয়েক ঢোক গিলে ভূতপাগলী বুশরার ভবিষ্যৎ অমঙ্গল কল্পনা করে করুণার দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলাম। ভূত নিয়ে দিনে দিনে তার বাড়াবাড়ি, মাতামাতি সীমার বাইরে চলে গেছে। সে এখন আর সুস্থ স্বাভাবিক নেই। ভুতুড়ে রোগে ধরেছে তাকে। আমরা তাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম।

তিনদিন পর আমরা বুশরাকে নিয়ে এক মনোচিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে হাজির হলাম। তিনি একজন নামকরা চিকিৎসক। কী সমস্যা শুনি, -ডাক্তার এ কথা বলতেই আমরা দু হাত নেড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে চোখ বড় করে মুখ বিকৃত করে নানান অঙ্গভঙ্গিতে বুশরার ভূত বিষয়ক জটিল রোগের কঠিন সমস্যার কথা নানাভাবে বুঝিয়ে বললাম। ডাক্তার খুব মনোযোগের সথে এসব শুনে মুচকি হেসে বললেন, আচছা রোগটা কার?
-তাহলে এতক্ষণ মুখে ফেনা তুললাম কার কথা বলে! কী শুনলেন ডাক্তার সাহেব? -বলেই জোরে বুশরার ডান হাত চেপে ধরে ডাক্তারের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললাম, এই যে আমার ভূত পাগলী মেয়ে বুশরা। যে ভূতের নাম শুনলে ছেলে বুড়ূ সবাই পালায় এখন আমার এই দশ বছরের মেয়ে বাসায় ভূত পোষার জন্য পাগলামী করে সবাইকে অস্থির করে তুলেছে। আমাদের আদরের মেয়েটি মোটেও সাধারণ রোগের শিকার হয়নি। ভয়ানক ভুতুড়ে রোগে ধরেছে ওকে। বহু চিন্তা করেই আপনার কাছে এলাম। বুশরার মা একটু আগ বাড়িয়ে বলছে দেখেন না তার মুখ থেকে ভূতের কথা ছাড়া আর কোনো কথা নি বের করতে পারেন। ভারী ত্যান্দড় মাইয়া আমার। আমাদের হম্বি-তম্বি, উত্তেজনা আর ডাক্তারের গভীর মনোযোগ দেখে বুশরা চুপ করে আছে। খানিকটা ভয় ও চিন্তার ছাপ দেখা গেল তার মুখে। বুশরা ডাক্তারের অস্থির চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।
আপনারা মা বাবা দু‘জনেই বাইরে গিয়ে বসেন। বুশরার সাথে আমি একটু একা কথা বলব। ডাক্তারের এ কথায় কী একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না। বাইরে গিয়ে আমরা অস্থিরভাবে পায়চারি করতে লাগলাম।
মিনিট চল্লিশেক পরে আমাদের ডাক পড়ল। দ্রুত পদে চেম্বারে ঢুকলাম। আমার স্ত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, ধরতে পারছেন নি কিছু ডাক্তারসাব? রোগটা ভালো হবে তো? ডাক্তার পা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে রহস্যের হাসি দিয়ে বললেন, রোগটা মূলত তার নয়-আপনাদের। আঁৎকে উঠে বললাম, আমাদের! আমরা আবার কী করলাম? ডাক্তার বললেন, অনেক কিছুই করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। এখন আরেকটু করলেই সে ভালো হয়ে যাবে। আমরা দু‘জনেই গলা বাড়িয়ে বললাম, দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র মেয়ে, তার জন্য আমরা অনেক কিছুই করতে পারি, ডাক্তার সাব।

ডাক্তার বললেন, আপনাদের মেয়ের আসলে তেমন কিছুই হয়নি। তাকে নিয়ে যান বই মেলাতে। সেখানে দু‘একজন শিশুসাহিত্যিকের সথে আলাপ-পরিচয় করিয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা অবাক হয়ে বললা, তা‘হলে আপনি ফেল? শিশুসাহিত্যিকের কাছে রেফার করলেন যে! ডাক্তার অট্টহাসিতে বললেন, আরে না, না, না। বুশরার জন্মদিন ও উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষে আপনারা ও তার আতœীয়-স্বজনেরা অসংখ্য ভূতের বই উপহার দিয়েছেন নিশ্চই। এ বইগুলো পড়ে ভূতের স্বভাব চরিত্র আকার প্রকৃতি ব্যবহার চলন বলন স¤পর্কে একটা চিত্র বিচিত্রভাবে তার মনে অঙ্কিত হয়ে গেছে। ভূতেদের মধ্যে ভালো-মন্দ আছে। বুশরা বিড়াল কুকুর বা পাখি পোষার মতই মনে করছে ভূত পালার বিষয়টিকে। তার এ ভূল না ভাঙ্গা পর্যন্ত অস্থিরতা তো কিছু থাকবেই। আমরা মুখ বাড়িয়ে চোখ টাটিয়ে মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ, হ্যাঁ সত্যি বলেছেন তো ডাক্তার সাব। সেলফ ভর্তি ভূতের বই। গো-গ্রাসে পড়েছে সব।
এখন একুশের বই মেলা চলছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে। নিয়ে যান মেলায় সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
পরের দিনই ঢুকলাম বই মেলায়। ছিমছাম নিরাপদ পরিবেশ। বই আর বই। ছেলে মাহির আর মেয়ে বুশরা মহানন্দে গভীর মনযোগে ষ্টল থেকে ষ্টলে ঘুরে ঘুরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বই দেখছে। এর পরেই শিশুকর্ণার। ভূত-পেতনি আর রূপকথার বইতে ঠাঁসা স্টলগুলো। আব্বু পেয়ে গেছি -বলে বুশরা চিৎকার দিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল এক ষ্টলে। ষ্টলের ভেতরে বসে আছেন মাঝবয়সী এলোমেলো বাবড়ি চুল ওয়ালা পাতলা-চিতলা ও লম্বামত একটা লোক। চোখে গোলাকার গ্লাস ও চিকন ফ্রেমের চশমা।
হালকা তামাটে মোছে ঢাকা ঠোঁট। চকলেট কালারের খদ্দেরের পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা
পরা লোকটিকে দেখিয়ে প্রকাশক বললেন, লেখক এখানেই আছেন। বই কিনলে তাঁর অটোগ্রাফ পাবেন। এ কথা শুনেই লাফিয়ে উঠল বুশরা। সে বলল এখানকার অনেক বইই আমার পড়া। আমি লেখকের সাথে একটু কথা বলতে চাই, প্লিজ।
লেখক ষ্মিতহাস্যে এগিয়ে এসে ষ্টলের ডালাটা ফাঁক করে ভেতরে নিয়ে টুলের ওপর বসালেন বুশরাকে।
বুশরা কৌতূহল আর আগ্রহ মিশিয়ে লেখককে বলছে, আমি আপনার অনেক বই পড়েছি। খুব ভালো লেখেন আপনি। ভূতকে ভয় পাই না আমি মোটেও। বুশরা আক্ষেপ করে বলছে , আসলে একটা ভূতও দেখিনি আমি। আচ্ছা আপনি ভূতকে নিয়ে যা লিখেছেন তাকি ভূত দেখে লিখেছেন না এমনি এমনি বানিয়ে লিখেছেন ওসব গল্প? লেখক মৃদু হেসে বললেন, বারে, শুধু দেখে লিখব কেন, ভূতকে দাওয়াত করে বাসায় এনে এক সাথে বসে খাওয়া দাওয়ার পর আলাপ গল্প করে তারপরেই না লিখলাম! ভূতের গল্প তো বানিয়ে লেখার জিনিস না, জানের ভয় আছে না?

বুশরা হেলে দুলে লেখকের দুই কাঁধে দুই হাত রেখে আবদার অভিমানে বলল, তাহলে আমাকেও ভূতের সাথে আলাপ পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, এক্ষুণি। আমি ভূতের সাথে গল্প করবো। তারপর দাওয়াত করে বাসায় নিয়ে যাবো ভূতকে। কথায় বনলে আমাদের সথেই থেকে যাবে ভূতটা। পড়ালেখায়, খাওয়া-দাওয়ায়, আনন্দ-ফুতিতে কেটে যাবে তার সময়। দেখবেন দুদিন থাকলে আর কোথাও যেতে চাইবে না সে। ভূতকে ভূত রাখব না, হেভী ষ্মার্ট বানিয়ে ফেলব না আমি!

লেখকের চক্ষু ছানাবড়া । তিনি লক্ষ করলেন, এতো সাংঘাতিক মেয়ে! দস্তুর মত ভূতের ভক্ত। তিনি বুশরাকে আদর করে কাছে টেনে কানে কানে অনেক কিছুই বললেন। বুশরাও লেখককে নানা ইশারায় হাত মাথা নেড়ে সায় দিয়ে যাচ্ছে। লেখক যা বলছেন বুশরা তার ষোলোআনাই অনুধাবন করতে পারছে তার চেহারায় তা ®পষ্ট। তাদের গোপন শলা পরামর্শ শেষ হতেই আচছা, আচচা ঠিক আছে ঠিক আছে বলতে বলতে খুশি মনে বুশরা গোপন রহস্য জানার অহংকার নিয়ে ডালাটা ফাঁক করে বেরিয়ে এলো। আমার হাত ধরে টেনে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো। লেখক এতক্ষণ গোপনে যা বলেছে তা সবলে প্রকাশের জন্য সে ব্যাকুল হয়ে উঠল। সে হাঁপিয়ে দাপিয়ে সাবধানে আমাকে বলল, বাবা এ বয়সে ভূত দেখা মোটেও ঠিক হবে না। আমি বললাম, কেন রে মা? ঠিক হবে না কেন?
সে আমাকে একটা ধাক্কা মেরে হাত উল্টিয়ে বলল, তোমরা আসলে কিচছু বুঝনা। ভূত কখখনো শিশুদের সামনে আসে না, বাবা। এদের চেহারা দেখলে আমরা বোবা হয়ে যেতে পারি, ধুপ করে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারি। আবার পাগল হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। ভূতকে আমরা যতটা খারাপ মনে করি ভূত আসলে ততটা খারাপ না। আসলে ওরা শিশুদের খুব ভালোবাসে। আদর করে। তাই ওরা এখন আমাদের সামনে আসবে না। আমাদের যদি ক্ষতি হয়ে যায়! মাঝে মধ্যে ওরা শুধু বড়দের সামনে আসে, গল্প করে, এখন বুঝেছ বাবা?
অবাক দৃষ্টিতে বুশরার বুদ্ধিদীপ্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তার কথাগুলো শুনছিলাম। তারপর মাথা নেড়ে জবাব দিলাম, বুঝেছি মা, তা হলে ভূত দেখার জন্য এখন কী করতে হবে তোমার?‘

বুশরা বিজ্ঞের মত জবাব দিল, ভূত দেখার জন্য এখন আমাকে দ্রুত বড় হতে হবে বাবা।


ছবি: নেট থেকে সংগৃহীত

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪১

জুন বলেছেন: ছবিটি রাজশেখর বসুর "ভুষুন্ডির মাঠে" গল্পের পেত্নীর ছবি। এই গল্প পড়লে এখনো হাসি চেপে রাখা দায়।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: বাহ।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: শুভেচ্ছা।

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: শিশুদের অপার জানার অপার কৌতুহল থেকেই থাকে ।তবে বুশরার জানার ইচছা একটু বেশী ।

তবে সমাপ্তিটা ভাল হয়েছে।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


শুরুটা ফানি ছিলো

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লাগলো।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: শুভেচ্ছা।

৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: একবার এক মেয়ে আমাকে বলল, সে সাপ পুষতে চায়। আমি যেন তাকে একটা সাপ যোগাড় করে দেই।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: তাই নাকি। ভয়ংকর কথা।

৭| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:২১

মা.হাসান বলেছেন: চমৎকার গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.