নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকলু

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১১


‘টুকলুু’ নামটি তার এমনি এমনি হয়নি। এ নামটির জন্য তাকে অনেক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ওর মাথায় বুদ্ধি, গায়ে জোর আর মনে সাহস-এই তিনে মিলে টুকলু।
টুকলু দিনের বেলা খায়-দায়-ফুর্তি করে আর ঘুমায়। রাতে বাড়ি পাহারা দেয়। গৃহস্থের অনেকগুলো ছাগল, গরু, হাঁস, মুরগ আছে। মাঝেমধ্যে চোর এসে ইতিউতি করে কিন্তু টুকলুর জন্য সুবিধা করতে পারে না।
দুই.
গ্রামে শিয়ালের খুব উপদ্রব। প্রায় রাতেই কোনো না কোনো বাড়ি থেকে হাঁস, মুরগ চুরি করে নিয়ে যায়। একদিন শিয়ালসর্দার আক্ষেপ করে বলে, ‘ইশ! টুকলুদের বাড়িতে অনেক মোটা তাজা হাঁস-মুরগ আছে আর এদের গায়ে আছে প্রচুর তেল। যদি খেতে পারতাম তো জীবনটা সার্থক হতো।’
এক শিয়াল আমতা আমতা করে বলে, ‘টুকলু বড় ভয়ংকর। টুকলুদের বাড়ি ঢুকলে জীবন নিয়ে ফিরে আসা যাবে না সর্দার। আমরা হলাম গিয়ে সবার চেয়ে চালাক প্রাণী। আর কুকুরটা হলো বোকার হদ্দ। তোরা গিয়ে প্রথমে ককুরটার সাথে ভাব করবি তারপর দেখাবি লোভ। দেখবে, এই বোকা কুকুর লোভে পড়ে আর ঘেউ ঘেউ করবে না; সে আমাদের চুরি করতে সাহায্য করবে, যাহ্।’

পরের দিন রাতে তিন শিয়াল গেল টুকলুর কাছে। টুকলু ওদের উপর ঝাপিয়ে পড়ার আগে শিয়ালেরা বলল, থামো থামো। আমরা আজ চুরি করতে আসিনি- এসেছি তোমার উপকার করতে। ভাই টুকলুু, তুমি আমাদের শত্রু মনে করলেও আমরা কিন্তু তোমাকে ভালো বন্ধু মানি। আমরা তোমার উপকার করতে চাই।’ টুকলুু অবাক হয়ে বলে,‘ তোমরা করবে আমার উপকার!’
‘তোমার মনিব মাছ-মাংস খেয়ে তোমাকে দেয় হাড় আর কাঁটা, ভাত খেয়ে দেয় ফেন, এসব খাবার খেয়ে গাও-গতরের কি ছিরি হয়েছে তোমার দেখ তো!’ ছিঃ কত অকৃতজ্ঞ আর কৃপণ তোমার মালিক! অথচ আমাদের একটু উপকার করলেই তুমি পাবে প্রতিদিন তাজা হাঁস-মুরগের মাংস যা খেয়ে তুমি হয়ে উঠবে অনেক সুঠাম ও শক্তিশালী।’
শিয়ালের কথা শুনে টুকলুু ঢোক গিলে বলল, ‘ঠিক বলেছ, এখন তোমাদের জন্য আমি কী করতে পারি আগে তা-ই বল।’
শিয়াল ফিস্ফিস্ করে বলে, ‘ভাই টুকলু, আমরা তোমার মালিকের খোপ থেকে প্রতিদিন মুরগ আর হাঁস নিয়ে যাব তুমি কিছুই বলতে পারবে না-একদম চুপচাপ থাকবে। চুরি করার সময় তুমি নাকডেকে ঘুমাবে, আর কিছুই করতে হবে না তোমাকে; যা করার আমরাই করব। আমরা তোমাকে প্রতিদিন একটা করে মোরগ ও হাঁসের মাংস দিয়ে যাব। তুমি কচাকচ, চপাচপ করে খাবে। আর শক্তিশালী হয়ে উঠবে, কী মজা!’
টুকলুু আনন্দে চোখ বড় করে বলে, ‘এত্ত!’
শিয়ালেরা বলে, ‘এত্ত‘র আর দেখলে কি। দিনে দিনে তোমার চুপ থাকার পুরষ্কার বেড়েই যাবে। খেয়ে খেয়ে তুমি হবে এ গাঁয়ের পালোয়ান। তোমার সাথে কেউ পারবে না, বুঝতে পারছ ব্যাপারটা কত আনন্দের আর গৌরবের?’ রাজি তো?
টুকলুু মাথা কাৎ করে বলল, ‘আমি রাজি।’

তিন.
পরের দিন রাতে টুকলু অপেক্ষা করতে লাগল। হঠাৎ ‘কোঁ-ও-ও‘ শব্দ শুনতে পেল টুকলু আর অমনি সে উঠোনে পড়ে নাক ডেকে ঘুমুতে লাগল। তিন শিয়াল নিশ্চিন্তমনে গিয়ে ঢুকলো হাঁস-মুরগের খোপে। তারা চুপি চুপি খোপ থেকে হাঁস ও মোরগ নিয়ে যেই বের হতে যাচ্ছে অমনি ওরা ফট্টাস করে আটকে গেল টুকলুর মনিবের পাতানো ফাঁদে। আর যায় কই। ফাঁদে পড়া তিন শিয়াল হুড়োহুড়ি আর কান্না শুরু করে দিল খোপের ভেতরে। মনিব লাঠি নিয়ে এসে শুরু করল ধুমধাম পিটনি। শিয়াল হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ‘আমাদের একটি কথা শুনুন।’ মনিব বলে,‘ মরার আগে কী কথা বলবি, বল।’
শিয়াল বলে, ডাকুন আপনার অকৃতজ্ঞ টুইকলাকে, কথাগুলো তার সামনেই বলি।’
মনিব ‘টুকলুু‘ বলে ডাক দিতেই চোখ কচলাতে কচলাতে আর হাই তুলে এসে হাজির হলো টুকলু। সে অলসভাবে বলে, ‘কী হয়েছে এখানে? এত লোক আর এত চেঁচামেচি কীসের? ইশ, একটু টেরও পেলাম না। কী গভীর ঘুমে ছিলাম রে আমি!’
রক্তাক্ত শিয়াল রাগে কটমট করে বলে, ‘তোর মালিক আমাদের পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে ফেলল আর তুই কিনা বলছিস এখানে হচ্ছেটা কি, টের পেলাম না। তুই আমাদের কি বলেছিলে আর কি করেছিস? তুই একটা মিথ্যাবাদী বজ্জাত কুকুর ছাড়া আর কিছুই না।’
টুকলুু হাই তুলে বলে, ‘না রে চালাক শিয়াল, ‘আমি মিথ্যাবাদীও নই, অকৃতজ্ঞও নই। আমি বুদ্ধিমান আর বিশ্বস্ত। বুদ্ধির কাছে চালাকি টিকে না। আমি আমার কথা রেখেছি। কথা দিয়েছিলাম, চুরির সময় নাক ডেকে ঘুমাব, আমি তাই করেছি। আর আমার আমার মনিবকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম আমার মনিবকে।’
শিয়াল কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, ‘তুই আমাদের চুরি করতে বলে তোর মনিবকে সতর্ক করে দিয়েছিস? এখন আমাদের কী হবেরে টুকলু!’
টুকলু হাই তুলে বলল, ‘কী আর হবে, অতি চালাকের যা হয়, তা-ই হবে তোদের।’

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫৯

শোভন শামস বলেছেন: সুন্দর, লিখে যান

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: টুকলু।
আমার এক চাচা আছেন। বদ লোক। নামাজ পড়তে পড়তে কপালে স্থায়ী দাগ বসিয়ে ফেলেছেন। তাকে আমি মনে মনে ডাকি টিকলু বলে।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: বুকে সাহস অর্জন করুন এবং একদিন চাচাকে সরাসরি বলে ফেলুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.