নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাচের ইঁদুর

০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩৬


বনে ছিল এক নাচের ইঁদুর। খুব নাচতে পারে সে।
এক বিড়াল ঝোঁপের ভেতর থেকে মাথা বের করে বলল, বাহ্, কী সুন্দর নাচ তোমার! নাচের তারিফ না করে পারলাম না।
ইঁদুর নাচ থামিয়ে ডান-বাম তাকিয়ে বলল, তোমাকে দেখে তো আর নাচানাচি হবে না, হবে কাঁপাকাঁপি। এই দেখো না কেমন কাঁপছি আমি, থত্থর! আজকে আমার প্রস্তুতি ছিল না এতেই তুমি এত্ত খুশি, যখন প্রস্তুতি নিয়ে নাচবো, তখন!
বিড়াল বলল, এরচেয়েও সুন্দর নাচতে পারো তুমি! তোমার ওই নাচ না দেখা পর্যন্ত আমি মুখে খাবার তুলছি না, হু।
বিড়ালের প্রশংসায় ইঁদুর আনন্দে নেচে-গেয়ে চলে গেল।
বিড়াল অনেক খোঁজ-খবর নিয়ে ইঁদুরের বাড়ির কাছে গিয়ে বসে আছে। হঠাৎ একটা ইঁদুর চিৎকার করে বলল, ওই যে একটা বিড়াল। আমাদের ধরার জন্য ও ফাঁদ পেতেছে। সাবধান হয়ে যাও সবাই!
নাচের ইঁদুরটি বলল, আরে না, আমি ওকে চিনি। ও অতোটা ভয়ংকর নয় যতোটা তোমরা মনে করছ। ও আমার নাচের ভক্ত, অনেক প্রশংসা করেছে আমার।
ও বিড়াল ভাই, ব্যাপার কি? নাচ দেখতে চলে এসেছ বুঝি? নাচের ইঁদুরটি বলল।
বিড়াল বলল, আমি তোমার নাচ দেখতে চলে এসেছি।
অন্য ইঁদুরেরা সতর্ক হয়ে বলল, বিড়াল আমাদের বড় শক্রু, ওর সাথে আবার কথা কিসের? চলো পালাই।
চোখের পলকে চলে গেল ইঁদুরেরা। শুধু ওই ইঁদুরটাই রয়ে গেল যার নাচ দেখে বিড়াল অনেক প্রশংসা করছে।
বিড়াল বলল, আমি নিজেকে বড় বুদ্ধিমান ও ভাগ্যবান মনে করছি। জীবনে এমন গুণী বন্ধু পাওয়া মানেই তো অনেক কিছু পাওয়া।
ইঁদুর আনন্দে আতœহারা। সে বিড়ালকে আদর-আপ্যায়নে খুশি করার জন্য মহাব্যস্ত হয়ে উঠল।
বিড়ালের প্রশংসায় ইঁদুর নাচ শুরু করে দিল ডিরিং-ডিরিং ঢুস-ঢাস। বিড়াল নাচের সাথে তাল মিলিয়ে হাততালি দিয়ে, মাথা ঝাকিয়ে, শীষ মেরে ইঁদুরকে উৎসাহ দিচেছ। ইঁদুর নাচতে নাচতে কাহিল হয়ে গেল। বিড়াল বলে, থেমো না বন্ধু, এত সুন্দর নাচ আমি দেখিনি, আমাকে উপভোগ করতে দাও।
নাচতে নাচতে ক্লান্ত ইঁদুর পড়ে গেল বিড়ালের সামনে। বিড়াল ঠেসে ধরল ইঁদুরের ঘাড়। বিড়াল বলে, ক্ষুধার পেটে নাচ আর ভালো লাগে না। নাচের মত তোমাকেও তো পছন্দ করি আমি। তবে আফছুছ এ জন্য যে, আমি এখন একটা ইঁদুরের সাথে তার নাচটাও খেয়ে ফেলবো। পারলে আমি ওটা আলাদা করে রাখতাম পরে উপভোগ করার জন্য।
ইঁদুর চিৎকার করে জীবন ভিক্ষা চাইল।
বিড়াল বলে, যে শক্রুর কথা বিশ্বাস করে এবং শক্রুকে বন্ধু মানে সে তো নিজেই নিজের মৃত্যু ডেকে আনে। আর যে নিজের প্রশংসার কথা শুনে খেই হারিয়ে ফেলে সে তো মস্ত বড় বোকা। বোকারা চালাকদের মত বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। বিড়াল গপাস গপ করে ইঁদুরটাকে আস্ত গিলে ফেলল।
ইঁদুর পেটে যাওয়ার আগে বিড়ালকে বলে গেল, আমি তোমার পেটে গিয়েও নাচব, মনে রেখো।
ইঁদুরটা নাচানাচি করছে এবং পেটটা একেক সময় একেক দিকে মার্বেলের মত ফুলে উঠছে। বিড়াল ‘ওরে বাপরে‘ বলে উল্টা-পাল্টা দৌড়াতে লাগল।
যতই দিন যাচেছ ততই বাড়ছে বিড়ালের কষ্ট। কোথাও তার আরাম নেই, শরীর ফুলে গেছে, মুখ বেয়ে লোল পড়ে আর পেটটা ঝুলে মাটির সাথে প্রায় লেগে গেছে। বিড়াল এ কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যার কাছে যায় সেই বলে, তোমার পেট থেকে ইঁদুরটা বের করতে হলে যেতে হবে ইঁদুরেরই কাছে, আমরা তোমাকে কোনো সাহায্য করতে পারবো না ভাই।
অবশেষে উপায়হীন বিড়াল ইঁদুরের বাড়ি এসে সবাইকে ডেকে একত্র করে বলে, ইঁদুর ভাইয়েরা, শোনো, নাচের ইঁদুরের মত তোমরাও আমার মহান বন্ধু। আমার এ বন্ধুকে বড়ো ভালোবেসে আমার পেটে তুলে রেখেছিলাম। তার নাকি এখন আর ভালো লাগছে না। বিড়াল চোখের জলে বলে, তাকে এ মুহূর্তে পেট থেকে বের করে আনো বন্ধুরা!
ইঁদুরেরা কিছুই বলল না, পিটপিট করে তাকিয়ে রইল।
বিড়ালের ঝুলে যাওয়া পেট, মুখের লোল আর চোখের পানি দেখে একটা ইঁদুর পাশের ইঁদুরকে ঠেস মেরে বলে, ‘দেখ্ দেখ্ আমাদের মহান বন্ধুর কি অবস্থা! মনে হয় তার পিশাব-পায়খানা সব আটকে গেছে!‘ তার কথা শুনে একটা ইঁদুর ফিক করে হাসি দিতেই সবার মুখে খলখলিয়ে হাসির খই ফুটে উঠল। হাসি আর থামে না। হাসির সাথে যোগ হয়েছে কাশি। কয়েকটা ইঁদুর হাসি আর কাশিতে ধনুকের মত বাঁকা হয়ে গেছে।
ইঁদুরের এমন রসিকতা দেখে বিড়াল রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে- নাচের ইঁদুরকে বাঁচানোর পরিবর্তে তোমরা আমার সামনে হাসি-তামাশা করার সাহস পেলে কোথায়?
একটা ইঁদুর তেড়েমেড়ে গিয়ে বিড়ালের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, এটা সাহসের কথা নয় দোস্ত, তোমার মহান বন্ধু তোমার পেটেই নিরাপদ। আমরা এত বোকা নই যে তোমাকে বিশ্বাস করে বিপদ ডেকে আনি! তুমি যা করেছো এতেই তুমি আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তুমি একটা বজ্জাত-মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। এখান থেকে ভালোয় ভালোয় চলে যাও।
বিড়াল মন খারাপ করে চলে গেল।
বিড়ালের পেটে যখন তখন নেচে উঠে ইঁদুরটি। বিড়ালের কষ্ট দেখে ইঁদুরেরা হাসে আর সুর করে বলে,

মিথ্যা এবং প্রতারণা অনেক মন্দ কাজ
পেয়ে গেলে হাতে হাতে কঠিন প্রমাণ আজ।


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:২৩

সাগর শরীফ বলেছেন: খুব সুন্দর মেসেজ দিয়েছেন স্যার।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
ঠিক বলেছেন।
ভাল থাকবেন।

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: মিথ্যা আর প্রতারনা থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: গল্পের ম্যাসেজ কি মানুষ গ্রহণ করে!

৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

মিথ্যাবাদী লোভীদের এমন পরিনতি হয়
তবে কেউ তা মনে রাখেনা সুখের সময়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.