নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত ছোটোগল্প রস

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৩৬


‘এই, যাবি?’
‘কই?’
‘কংকরিদের বাড়ি।’
‘এত রাতে, এই কনকনে শীতে?’
‘রস খাবো। কংকরিদের ঘরের কোণে খেজুরগাছে ঘটি বাধা! এতক্ষণে ভরে গেছে। ঘটিসুদ্ধ সাবাড় করে দেবো, চল্।’
‘কংকরিটা যা ত্যান্দোড়রে বাবা! এই ডাকাত মেয়ে যদি টের পায়, তখন?
‘তখন? এই যে কালো চাদরটা দেখছিস, এটা গায়ে প্যাঁচিয়ে ভয়ংকর ভূত হব। তারপর এমন ভয় দেখাবো না, কংকরি আর দিশা-মিশা পাবে না। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ধুপ করে পড়ে যাবে মাটিতে। তখন তার মুখে চিল্লাচিল্লি করার জোর থাকবে না, মুখ দিয়ে খালি লাল-নীল ফেনা বেরোবে; আর এই ফাঁকে তুই ঘটি নিয়ে সোজা চলে আসবি বাংলা ঘরে। চল্।’

চলে গেলাম গাছতলায়। রন্টি তার গায়ের চাদর, মাফলার, স্যুয়েটার খুলে আমার হাতে দিল। গায়ে তার স্যান্ডু গেঞ্জিটা শুধু। আমি তার কাপড়গুলো গলায় প্যাঁচিয়ে দাঁড়ালাম। সে কাঁপাস্বরে বলল, ‘খোকা, বুকটা কেমন ডিবডিব করছে, দেখ।’
‘ধ্যুৎ। ভীরুদের মতো কথা বলিস না তো! আমি আছি না, ভয় কীসের?’ তাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম, যা ওঠ্।
রন্টি কষে নেংটি দিল। সে হাতের তালুতে থুতু ঘষিয়ে গাছে উঠছে। আমি কালো চাদর আর মাফলার প্যাঁচিয়ে ভয়ংকর ভূত হয়ে খেজুরগাছের আড়ালে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
রন্টি রশি খুলে ঘটিটা হাতে নিয়েছে মাত্র। এখন নেমে আসবে।
এই মুহূর্তে ঘটাংঘট শব্দে দরজা খুলে গেল। প্রচণ্ড গতিতে আমার বুক ধড়ফড় করছে। আর কানে করছে শোঁ শোঁ শব্দ। কংকরি বিড়ালের মতো হেঁটে গাছতলায় এসে ইতিউতি করছে।
আমি একটা লাফে ধুপ করে তার সামনে গিয়ে পড়লাম; সে খপ করে ধরে ফেলল আমাকে। বাঘের হাতে হরিণ পড়ার দশা। হাত ছুটাই তো কান প্যাঁচিয়ে ধরে, কান ছুটাই তো চাদর টেনে ধরে। সাংঘাতিক বিপদ! শেষে বাইন মাছের মতো মোচড়াতে মোচড়াতে দিলাম ভোঁ দৌড়। কিন্তু চাদরখানা রয়ে গেলো তার হাতে।
দুঃসাহসিনী কংকরি গাছের দিকে তাকিয়ে ‘রসচোর’ ‘রসচোর’ করে চিৎকার করতে লাগল। মানুষজন এসে পড়ল বলে। রন্টি কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সে অর্ধেক গাছ নেমে ঘটিসহ লাফিয়ে পড়ল নিচে। ডাকাত মেয়ে কংকরি ধরে ফেলল তাকে। গাছের তলে চোরে-ঘটিতে আর কংকরিতে বিরাট ধস্তাধস্তি। রন্টি গোঁ-গ্যাঁ করতে লাগল। কংকরি ছাড়ে না রস চোরাকে।
রন্টি কিছুতেই ছুটতে পারছে না। এখন পাড়ার লোকের কিল খাবে নাকি! সে টাকি মাছের মতো কংকরির হাত ফসকে বেরিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে পালালো। ধুপ করে বাংলা ঘরে ঢুকে হাঁটু ধরে সমানে হাঁপাতে লাগল সে। তার গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জিটা ঝুলছে, নেংটি অর্ধেক খোলা, গায়ে রস-কাদা আর খামচির দাগ। কাঁপছে। আমি তার নেংটি খুলে দিতে গিয়ে বললাম, ‘চিনতে পারে নি তো আবার?’
‘সর, কোনো কথা বলবি না তুই, একদম চুপ। আমাকে বিপদের মুখে ফেলে দৌড়ে চলে এলি। জীবন নিয়ে টানাটানি। পায়ের জোরে বেঁচে এলাম। পানি দে, পানি খাব। মুখে খালি ফটর ফটর।’ শুকনো মুখে বারকয়েক ঢোক গিলে কথাগুলো বলল রন্টি।
আমি তাকে শান্ত¦না দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেলাম না।

দুই.
সকালে আমাদের ডাক পড়ল কংকরিদের বাড়ি। গেলাম। উঠোন ভর্তি মানুষ। রসচুরির নালিশ বসেছে। আমাদের দেখে একটা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। আমি আর রন্টি মাতবরের সামনে গিয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ালাম। লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে গেল।

ঘর থেকে বিছার মতো লাফিয়ে এল কংকরি। সে চাদর আর গেঞ্জির টুকরো দেখিয়ে বলল, ‘দেখেন আপনারা, দেখেন, রস চুরির প্রমাণ দেখেন। এরা আজ করেছে রস চুরি কাল করবে ডাকাতি।’
মাতবর আমাদের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ‘বাবারা, রস চুরি করতে গেলি কোন দুঃখে, চাইলে কি দিত না?’
‘চাইলেও দেয় না, না চাইলেও দেয় না। এদের মতো কিপটা মানুষ এই পাড়ায় নাই। চুরি করব না তো কি,’ তেজ দেখিয়ে বলল রন্টি।
তার কথা শুনে সবাই হোঃ হোঃ হাঃ হাঃ করে হেসে উঠল।
কংকরি রাগে কাঁপতে কাঁপতে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। মাতবর বলল, ‘মা কংকরি তুই থাম। একটা কাজ কর। ঘর থেকে দুই গ্লাস খেজুরের রস নিয়ে আয় তো দেখি।’
কংকরি রাগের চোটে থপ থপ পা ফেলে ঘরে গেল এবং রস ভর্তি গ্লাস এনে মাতবরের হাতে দিল। মাতবর দুই হাতে দুটি গ্লাস নিয়ে আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘নে, খা।’
আমি মনে করেছি এটা বোধ হয় চুরির কোনো শাস্তি । ইতস্তত করে রসের গ্লাস হাতে নিলাম। রন্টির দিকে তাকাতেই সে আমাকে ধমক দিয়ে বলল, কী দেখস আবার তুই? এখন সমাদরের রস খা। এক টানে খেয়ে ফেল। আর না খেতে পারলে আমাকে দে। দেখ কেমনে খাই।
মাতবর বলল, না, না, যারটা সে খাবে। খাও।
রন্টি একটানে রসটুকু খেয়ে বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুছে আমার দিকে তাকাল। আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে মুখটা তিতা খাওয়ার মতো করে রসটুকু খেয়ে ফেললাম।
মাতবর মাথা ঝাকিয়ে আফসোস করে বললেন, ‘আহারে আমরা এ বয়সে কত কি করেছি। কখনো নালিশ বসে নাই। পোলাপান মানুষ এরা, এই সামান্য রস খেতে গিয়ে মেলা নাজেহাল হয়েছে। মাফ করে দে মা কংকরি। এই তোরা আর চুরিমুরি করিস না বাপ, যাহ্।’
হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
চলে আসার সময় কংকরি রাগের চোটে ‘রসচোর’ বলে গ্লাসের অবশিষ্ট রস ছুঁড়ে মারল আমাদের গায়ে।
কংকরির দেওয়া সেই ‘রসচোর’ নামটি আমাদের গায়ে আজও আঠার মতো লেগে আছে!


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রামের মজাই অন্য রকম। শহরের ছেলেমেয়েরা আনন্দ পায় না। তারা নানান দিভাইস নিয়ে সময় কাটায়।

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৪১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: অভিনন্দন

৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:২৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অভিনন্দন আপনাকে

৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:৪১

কালো যাদুকর বলেছেন: সুন্দর গল্প। অভিনন্দন। আচ্ছা পত্রিকাতে লিখা পাঠানোর উপায় কি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.