![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মনে করি নিজের সম্পর্কে লেখার মত বয়স,সময় বা যোগ্যতা কোনটাই আমার এখনও হয় নি ।তাই কিছু না লেখাই ভাল নয় কি ।তবে ব্লগে এসে একেবারে কিছু না লিখলে কেমন হয় ।আসলে নামটা দেইভাবে দেয়ার উদ্দেশ্য হল শুধু বাকের ভাই নামে তো অনেকেই আছে তাই শেষে রিটার্ন লাগিয়ে নিজে থেকে একটু ভিন্নতা দেয়ার ট্রাই করলাম ।তেমন ভাল কিছু আমার মাঝে নেই ।মারাত্মক বদরাগী আর ডানপিটে স্বভাবের ছেলে ।সত্যের ক্ষেত্রে নিজের বাপকেও ছাড় নেই ।এই তো অবসর সময়ে আসলে বর্তমানে সারাটা দিনই আমার অবসর বলে বিবেচিত ।সারাদিন ভার্চুয়ালেই কেটে যায় ।আর এটা ছাড়া কাজ বলতে আমার প্রিয় কিছু কবুতর রয়েছে তাদের সাথে দিনে তিনবার সময় কাটানো,খাবার দেয়া কিছুক্ষন খেলা করা ।এই তো ফেবু আর কবুতর এই নিয়েই আমার সারা বেলা ।আপ্তত এইটুকুই থাক ।সময়ে অসময়ে পরিবর্তন হবে বলে আশাবাদি ।
আগরতলা
৫/৮/৭১
শ্রদ্ধেয় মামা,
আচ্ছালামু আলাইকুম। প্রায় তিন সপ্তাহ হল এখানে আসেছি।
এপ্রিলের শেষ দিকে আমি প্রথম মেঘালয়ে ১৫ জন ছাত্র নিয়ে যাই।
লোক পাঠাবার Chain নিয়ে কাপাসিয়া চলে আসি ।এ পর্যন্ত কাপাসিয়া হতে প্রায় ৫০০ শত ছেলে ট্রেনিঙ্গের জন্য পাঠিয়েছি ।এখানে আসার পূর্ব পর্য্ন্ত প্রত্যেকটি বাজার বাংলাদেশ সরকারের নামে ট্যাক্স করেছি ।
স্থানীয় বিভিন্ন Regiment- এর লোক ও ছাত্র নিয়ে সেখানে একটা বাহিনী ও গঠন করা হয়েছে ।
থানার অস্ত্রগুলি আমরা ছিনিয়ে নিয়েছিলাম । কাপাসিয়ার থানার যুবক শ্রেনীরাই আমাদের এখন সহযোগিতা করিতেছে ।
স্থানীয় জনসাধারণের মনোবল অক্ষুণ্ন আছে । কাপাসিয়ার রশিদ মিঞা, টুকের হারুন(ভূঞা গোষ্ঠী) ,তরগাওয়ের রাজু,ইদুরিয়ার হজরত আলো আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ।আজকে কাপাসিয়া হতে ২৪ জন ছাত্র এসেছে ।
তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে কাপাসিয়ায় পাক বাহিনী ২টা ঘাঁটি করেছে ।
গোসিঙ্গা ,শ্রীপুর ,ঘোড়াশাল,পলাশ,শিবপুর,মনোহোরদি,মঠখোলা,কাও- রাইদ ইত্যাদি বিভিন্ন ঘাটি হতে কাপাসিয়ায় চতুর্দিক থেকে আক্রমন চালাচ্ছে ।প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নেই পাক বাহিনী হানা দিতেছে
এ পর্যন্ত ২০ জন লোককে তারা গুলি করে হত্যা করে হত্যা করেছে । ১৫/১৬ জন মেয়ে কে ধরে নিয়ে গেছে।
গ্রামের পর গ্রাম তারা জ্বালিয়ে দিতেছে। কাপাসিয়ায়,রাওনাইদ,বরুন, আমরাইদ,টুক,আড়ালিয়া,আড়াল ইত্যাদি গ্রামে হানা দিয়ে লুটতরাজ করছে ও অসংখ্য বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে ।আমাদের সংগঠনের জড়িত কারো বাড়িঘর নেই ।
প্রত্যেক দিনই আগরতলায় কাপাসিয়া হতে শত শত শরণার্থী আসতেছে।
শিবপুর, রায়পুর, মনোহরদিতে ন্যাপ পার্টি ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত । মনে হয় কোন স্বার্থবুদ্ধি নিয়ে তারা কাজ করছে ।
আমাদের কর্মীরা ঐ সমস্ত জায়গায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে ।ন্যাপ পার্টি সেখানে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করেছে ।
তাদের সাথে আমাদের সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ।চট্টগ্রামে এ ধরনের সংঘর্ষে আমাদের প্রায় ২০ জন কর্মী নিহত হয়েছে ।
পাক বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত থাকায় আমাদের সংগঠনের নেতৃস্থানীয় প্রায় সকলেই স্ব স্ব এলাকা ছেড়ে এসেছেন ।কর্মীদের মধ্যে অনেকেই আত্বগোপন করে কাজ করতেছেন ।এ হেন শূণ্যতায়(আমাদের) ন্যাপ পার্টি কৌশলে জনমনে স্থান করে নেওয়ার চেষ্টা করতেছে ।
অপর দিকে আমাদের কর্মীগণ কাজের কোন নির্দেশন পাচ্ছে না । কোন প্রচার-পত্র ভিতরে পাঠানো হয় না ।
নেতৃবর্গ ও কর্মী দের কোন খবর নেন না । আগরতলায় এসে তাই অনুভব করলাম । জয়বাংলা অফিসের মানুষ ভাল ব্যাবহার পায় না ।
বিভিন্ন ক্যাম্পগুলিতে সংগঠনের পক্ষ হতে কেও খোঁজ খবর নেন না । অন্ততঃ৫/৭ হাজার ছেলে youth camp এ দুই আড়াই মাস যাবৎ পড়ে আছে ।তাদের ট্রেনিং এর কোন ব্যাবস্থা করা হচ্ছে না ।অনেকে স্বাস্থ্যহীন অবস্থায় দেশে ফিরেও গেছে ।
এখানে প্রত্যেক নেতাই স্ব স্ব জেলার ছাত্রদেরকে ট্রেনিং এ দিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কায়েম রাখবার চেষ্টায় লিপ্ত বলে আমার মনে হল ।টাকা পয়সা, করচের বেলায়ও তাই ।আমাদের থানার প্রায় ১৫০ জন ছেলে বিভিন্ন ক্যাম্পে পড়ে রয়েছে ।
এর মধ্যে নরসিংগর ক্যাম্পে ৫২ জন,হাফানিয়া ক্যাম্পে ৬০ জন,দূর্গা চোধুরী পাড়া ক্যাম্পে ১৮ জন রয়েছে অন্যান্য জিলার(লোকজন) কর্মীবৃন্দ আগরতলায় আসলে তাদের থাকা-খাওয়া,দেখাশোনা করার ব্যাবস্থা আছে । কুমিল্লার নেত্রীবৃন্দ কুমিল্লা হাউসে থাকেন ।আমার আশ্রয় নেই কংগ্রেস ভবনের উন্মুক্ত মাঠে।
আগরতলায় মইজুদ্দিন ভাই আসার পরে আমাদের অনেকটা ভরসা হয়েছে । সংগঠনের দিক হতেওঅনেকটা Chain up- হইতেছে । ছাফিরুদ্দিন ভাই, ডাঃছামাদ,আমাদের মফিজ উদ্দিন মাষ্টার সাহেব যতদূর পারেন , আমাদের খোজ খবর নেন । মাইজুদ্দিন ভাই বলেছিলেন আপনার সাঙ্গে এখানেই দেখা হওয়ার সম্ভবনা আছে ।সেজন্যই এতদিন কোন চিঠি দেই নাই ।পত্রে বিস্তারিত জানাতে পারলাম না। আর মনের অবস্থা ভাল না থাকায় সবকিছু ধারাবাহিক ভাবে উল্লেখ করতে পারলাম না । মাইজুদ্দিন ভাইকে সব বলেছি ।
এখানে প্রথমত: আঃ রব চৌধুরী ও শেখ ফজলুল হক মনি , আঃ কুদ্দুছ মাখন প্রমুখের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় ।জয়বাংলা আফিসে কাজের কোন Chain না পেয়ে তাদের কাছে আসি ।তারা আমাদেরকে থাকার জায়গা করে দেয় । তাদের মারফত ২০/২৫ জন ছেলে কে ট্রেনিং-এ পাঠাই।
মাইজুদ্দিন ভাই আসার পর উনার মারফত আরো ২০ জন ছেলে কে ট্রেনিং-এ পাঠানো হয় ।
ছাত্র নেত্রীবৃন্দের মধ্যেও লক্ষ করা গেল যে তারা ভাল ক্যাটাগরীর ট্রেনিং দিয়ে নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টায় লিপ্ত ।তাঁরা দিবারাত্র পরিশ্রম করেন । বিভিন্ন ক্যাম্প গুলির খোজ খবর নেন ।শেখ ফজলুল হক মনি এখন অসুস্থ ।
আগামী কল্য আমি গেরিলা বাহিনী নিয়ে কাপাসিয়ার পথে রওনা হব। দোয়া করবেন।
বাংলা দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেন শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়তে পারি ।
ছেলেবেলা আপনার কাছে থেকেই দেশ সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম । দেশের চরম প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার প্রাক্কালে আপনাকেই বার বার মনে পড়ছে আর মনে পড়ছে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু কে ।
শাহাবউদ্দিন মামাকে চিঠি লিখতাম কিন্তু উনি নাকি কলকাতায় নেই
মামীর নিকট আমার সালাম রইল।
আপনারই স্নেহধন্য
আতাউল হক ।
তথ্য সূত্রঃ-তাজউদ্দীন আহমদের চিঠি**
©somewhere in net ltd.