নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সভ্য সমাজে চারাল শ্রেণীর একজন প্রতিনিধি

চারাল

একজন প্রকৃত চারাল

চারাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা, আমি, আমার সন্তান-----------দিন বদলাইছে না...

০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:১৭

ছোটবেলায় বাবার হতাশামাখা একটি কথা এখনও মাঝে মাঝে খুব মনে পরে, বড় হয়ে কি করে যে খাবা? পড়ালেখার প্রতি চরম অমনোযোগীটা আর চরম উম্মাতাল দস্যিপনা জীবন দেখে তিনি প্রায়শয় এই কথা বলতেন। তখন খুব রাগ লাগত, কেন আমার কি কোন যোগ্যতাই নাই যে জীবনে কিছুই করে খেতে পারব না। আর আমার মা ছিলেন আরও এক কাঠী সরশ। এমন একটি পুরা দিন ঠিক মনে করতে পারছি না, যেদিন তার একটিও বকা খাইনি। তবে তার হাতে ভাত খাই নাই, এমন একটি দিনও মনে করতে পারছি না।

আচ্ছা, যাই হোক, আজ শুধু আমার বাবা, আমার ও আমার সন্তানের কথা বলব।

বাবা, প্রায়সই আমাদের দুই ভাই এর সাথে খুব ভাব নিতেন, বলতেন- জীবনটা ঠিক বুঝলা না। যদি ৭ কিলোমিটার নৌকা বেয়ে দুরের স্কুল গিয়া পরতা তাইলে বুঝতা জীবন কেমন? তবে মজার বিষয় হোল আমার দাদাবাড়ির পত্রিক ভিটার সাথে লাগোয়া পুকুর পারেই ছিল একটা হাই স্কুল। তাহলে ওই স্কুলে কেন নয়? ৬ পুত্র সন্তানের জননী আমার দাদীর মনে ধারনা ছিল, বাড়ীর পাশের এই স্কুল পড়লে তার ছেলেরা সব মাস্তান হইয়া যাবে, স্কুলে মাতবারি করবে, তাদের পড়ালেখা কিছুই হবে না। তাই তিনি তাদের ভর্তি করলেন বাড়ি থেকে বহু দুরের স্কুলে। আমার দাদি যখন মারা যায় তখন তার বয়স ১০০ এর কিছু বেশি, আর মারা গেছেন তাও প্রায় ১০ বছর হবে হয়ত।



আমি আজও বিস্ময়ে ভাবি আজ থেকে এত বছর পূর্বে আমার দাদীর দারুন এই চিন্তা শক্তির কথা। কিভাবে সম্ভব? এটা সত্যি আমার দাদা/দাদি তার সন্তানদের লেখাপড়া ছাড়া আর কিছুই দিয়ে যাননি। ও হ্যাঁ, সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার আর নামের আগে একটা বিশেষ টাইটেল। হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা দুই ভাই এই লেজটা নাম থেকে বাদ দেয়ার জন্য জানপরাই পাগল। বাবা এটা নিয়ে খুব গর্ব করে আর কি যেন কি শোনাতে চাইতে, আমরা দুই বেয়াদব ভাই খালি হাসতাম আর মজা নিতাম......হিহি ( দাদি- তুমি আমার দেখা অন্যতম বিদুষী নাড়ী- সম্মান তোমার প্রতি)



ছোটবেলার একদিনের বিকালে একটা মুহূর্ত : এলাকার এক চাচা আর আমার বাবা বসার ঘরে বসে চা খাচ্ছেন। ওই চাচা বললেন- কি ভাই জায়গা জমি কিছু কিনবেন না, বাড়ি বানাবেন না? ছেলেপেলের জন্য কিছু করে জাবেন না? আপনার সাথের সবাইত তিন চার তলা তুলে ফেলল। বাবা মৃদু হেসে বললেন- আমার কাজ হোল ওদের লেখাপড়া শিখানো। ওরা ওদের নিজেরটা নিজেই করে নিবে। ওই দিনই বুঝছি আশা শেষ। আমার বাবা তার সন্তানদের পরিপুন্ন যোদ্ধা বানিয়ে জীবন যুদ্ধে ছেড়ে দিবেন। আমাদের যুদ্ধ তিনি করতে রাজি নয়। এই যুদ্ধ জয় করতে হলে আমাদেরই করতে হবে।



আমি যেই বছর অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম , আমার ছোটটা ঢাকা মেডিকেলের প্রথম বর্ষের ছাত্র- আমার বাবা ওই বছরই চাকুরী থেকে অবসর নিলেন।

আমি মোটামুটি নিজের পেট চালানো বাবস্থা করে ফেললাম। শুধু মোটামুটি না বেশ ভালো ভাবেই। জীবন সংগ্রামে বেশ ভালো ভাবেই লড়তে থাকলাম। মাঝে মাঝে ফরিদপুর থেকে আমার বন্ধুরা ফোন দিয়ে আমাকে বলত- কিরে তোর বাপের দেখি বয়স কমে যাচ্ছে, পুরাই হিরো হইয়া গেছে, ধব্দধবে সাদা পাঞ্জাবী পরে ঘুরে বেরায়। লক্ষণ ভালো না। আমি বলি, কেন, মহিলা কলেজের সামনে দিয়া ঘুরে নাকি?? ;) ওরা উচ্চ সরে হাসে। ওরা বলে- তোর বাপের কাছে তোগো কথা জিগায়লে, তোর বাপ কয়- আমার কাজ আমি কইরা দিছি- এখন ওরা বুইঝা খাক। ওড়াত মনে হয় ভালই আছে। হম কথা ঠিক বাবা...... তুমি তোমার কাজ করছ, এখন আমি আমার মত জীবন যুদ্ধে লরছি, বেশ ভালো ভাবেই লরছি। আমার জীবন আমি বেশ ভালো ভাবেই উপভগ করছি। নিজের টাকায় মদ খাওয়া, ইচ্ছা মত উরাল দেয়া শিখে গেছি। যাইহোক থাঙ্কু ইউ... :)



বাবা আর আমার কিছু কথা বল্লাম্‌ এখন বাকি রইল তার নাতী মানে আমার পুত্রের কথা ঃ দুখের বিষয় হোল প্রকৃতি এখন কোন সাধন সঙ্গিনী জোগাড় করে দেয় নাই। তাই নিজ জীবনে ওই অধ্যায়ের কিছু নাই। তাই পরিচিত কিছু জনের সন্তান কে আপন সন্তান রুপে ভেবে দিন বদলের কথা শেষ করতে চাই।



গত সপ্তাহের একটি গল্পঃ



ভদ্র লোককে আমি চিনি প্রায় চার বছর ধরে। বয়স ৫০ এর কোঠায় হবে। চাকুরী সুত্রে আমি তাকে ভাই ডাকি। তার ছেলেকে বিদেশে পাঠাবেন পড়ালেখা করাতে। এই বিষয়ক বাকিং কিছু বিষয়ের জন্য তার সাথে আমার পরিচয়। ভদ্রলোক সুজগ পেলেই অনেক দুঃখের কথা বলত ( কেন জানি আমাকে লোকজনের বট বৃক্ষের মত মনে করে- ছায়া, বাতাশ, হাগা-মুতা সব কেন জানি আমার কাছেই আইসা খুইলা যায়). যাই হোক অতি সম্প্রতি তার পুত্রধন বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়া ফিরত এসেছে। গত সপ্তাহে আমার অফিসে পুত্রশহ তিনি আসলেন। ব্যাংকিং কাজ শেষ করে, তিনি আমাকে বললেন, ভাই আপনার সাথে একটু পার্সোনাল কথা আছে। আমি ওই দিন খুবই বিজি ছিলাম। প্রায় আধা ঘণ্টা তিনি বসে রইলেন। পরে তিনি আমাকে আড়ালে নিয়া গেলেন তিনি তার ছেলে সহ। তার ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন- ভাই আপনাদের ব্যাঙ্কে আমার ছেলেকে ধুকিয়ে দেন, ওর তো বিদেশি সার্টিফিকেট, বলেই তিনি আমার হাত চেপে দরলেন তার সন্তানের সামনে। আমি পুরা বিশ্বয়ে হতবাক হয়ে তার ছেলেকে দেখছিলাম - পশ্চিমা কায়দায় কাটা দারি-গোঁফ- চুলে ভালই জোঁকার লাগছিল ( ওর চাকুরীর কি দরকার- যেকোনো ওই টাইপ মাইয়া পতাইয়া - কাহিনি ঘার ঘার কি পরিবারের একজন হয়ে যাক)।



আমি তাকে বললাম- আপনি ছেলের জন্য চাকুরী খুজচেন। উনি বললেন ভাই চাকুরীর যে অবস্থা। কি করবো? আমি তাকে আবার বললাম। আর কি কি করছেন এই ছেলের জন্য? উনি বললেন- অনেক কষ্ট করে একটা ফ্লাট কিনছি। ওর আশ্রয়ের বাবস্থা করে দিছি।

এর পর মনে মনে কিছু প্রশ্ন তাকে করলামঃ

তার গার্ল ফ্রেন্ড জোগাড় করে দিছেন?

মদ খাওয়া সিখাইসেন, সাথে বিরি?

বিয়া করাইবেন না। মাইয়া দেখসেন?

আপনার পোলায় কি আপনারে দাদা ডাক সুনাইয়তে পারবো? নাকি আপনারই নিজের কইরা নিতে হবে?

কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকে বললাম, আচ্ছা দেখি কি করা যায়( আমার নিজের চাকুরিই কবে চইলা যায়, তার ঠিক নাই)? আজ খুব বিজি আছি। কেন জানি মনে হোল উনি একটু সাহস পেল। আর ওনার ছেলেকে দেখে মনে হোল ওর বাপের কাছ থেকে বিদায় নিয়েই, ওর গার্ল ফ্রেন্ড কে ফোন করবে আর বলবে-

Ohh honey Im free now, was so bz with pappa. where r u?

Ok be there soon....(XXXXXXXXXXXXXXX)



আমার সন্তানের গল্প এখানেই শেষ... ও এখন ডেটিং করতে গেছে। বাপ বেটা দুইজন বাংক গেছিলাম টাকা তুলতে। ওর কিছু টাকা দরকার ছিল ওর হানির মনে হয় আজ জন্মদিন। এক ধিলে দুই পাখি মারছি- ওর চাকুরীর জন্য একটু চেষ্টা করলাম।



আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ Independent University ইর অধ্যাপিকা রাজিয়া সুলতানা খান এর সাথে মাঝে মাঝে মধুর আড্ডায় মশগুল হওয়ার সুযোগ হয়। উনি ওনার অনেক অভিজ্ঞটার কথা আমার সাথে শেয়ার করেন। সেদিন তিনি কিছুক্ষণ বসার পর বললেন- তোমার কাছে আসলে কেন জানি খুব ভালো লাগে, কি সব উল্টাপাল্টা বল, আমার খুব ভালো লাগে। যেখানেই যাই সেখানেই গার্ল ফ্রেন্ড এর সাথে সমস্যা, বিবাহিত জীবন নিয়া সমস্যা, এত অল্প বয়সে সব বিয়ে করে ফেলছে, আরও কত কি??

আমি বললাম এই সমস্যা থাকবে না, যেদিন গার্ল ফ্রেন্ড এর জন্য গিফট কেনার জন্য কেউ টিউশনি করবে। বিয়ে করে নুতন বউকে নিয়ে বাসর করার খাট নিজের টাকায় বানাবে। নিজের কষ্টের মূল্য নিজে ছাড়া অন্য কেউ ঠিক মত কোন দিন বুঝবে না। ভালবাসা গাঢ় আর বন্ধন আরও দঢ় হবে নিশ্চয়।



নূতন দামী কেনা আইফন, সাইকেল, ক্যামেরা কিম্বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের সময়, সন্তান ওই গুলোর মাঝে নিজের কষ্টের উপার্জন করা টাকার অংশ দেখতে পাবে, অথবা বাবার কে জিজ্ঞাসা করবে- বাবা তুমি তো বেতন পাও ৪০০০০, তাইলে ৪৫০০০ টাকা দিয়া কিনা দিলা কেমনে???????-------------



একদিন দিন বদলাবে নিশ্চয়। প্রকৃতি পরিবর্তন পছন্দ করে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৪২

বাংলার নেতা বলেছেন: কষ্টকরে টাকা উপার্জন করা সত্যিই কষ্টের!



ভাল লাগল! শুভকামনা রইল!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.