নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তব জীবনের কিছু কথা তুলে ধরার প্রয়াস আমার। জানিনা কতটুকু পারবো। যাতে লেখার মাধ্যমে কিছু শেখাতে পারি মানুষকে তার জন্য দোয়া করবেন। ধন্যবাদ

ইলিয়াছ শুভ্র

জুনিয়র শুভ্র

ইলিয়াছ শুভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীল জামা (অণুগল্প) | ইলিয়াছ শুভ্র

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭

আমার পরিচিত এক বড় ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে, তিনি আমাকে একটা জব ঠিক করে দিয়েছেন। সামনের মাস থেকেই আমার জব শুরু। আমি ইলিয়াছ শুভ্র। খুবই সাধারণ ফ্যামিলির একটা ছেলে। আমাদের ফ্যামিলি মধ্যবিত্তের মধ্যেও পড়ে না। তার থেকেও নিচে খুবই সাধারণ ফ্যামিলি। তাই জব পাওয়ার ব্যাপারটা কম আনন্দের ছিলো না। সত্যি কথা বললে ঈদের আনন্দের থেকেও কম কিছু না। বরং, তার থেকে বেশি আনন্দের। বড় ভাইটি একটা প্রাইভেট কোম্পানির অনেক বড় পদের কর্মকর্তা। আমার জবও তার কোম্পানিতেই ঠিক করে দিয়েছে। সেলারি ১০,০০০ টাকা। এটাও কম কিসের। একটা সাধারণ ফ্যামিলির ছেলের জন্য এটা অনেক বড় কিছু। ফ্যামিলিকে নিয়ে সুখে থাকার চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে এই জবের সেলারি।

জবটা ঠিক করে বাসায় এসেই ছোট বোনকে বলি,
-নীরা, সামনের মাসে তোরে একটা নীল রঙের জামা কিনে দিবো। তোর তো নীল রঙ পছন্দ৷ তোর পছন্দের জামাটাই কিনে দিবো যা।
-ভাইয়া! তুই টাকা কোথায় পাইছিস?
-এখনো পাইনি। তবে সামনের মাস থেকে পাবো।
-মানে? কি বলতেছিস? আমি কিছুই বুঝতেছি না।
-পিচ্চি মাইয়া, তুই কি বুঝবি।
-বলো না ভাইয়া প্লিজ?
-শুন, ভাইয়া একটা জব পাইছি।
-সত্যি!!
-আরে চুপ আস্তে। শুন, এখন কাউকে বলবি না। যেদিন জব করতে যাবো সেদিন সবাইকে সালাম করে চমকে দিবো। বলবো, আমি জব করতে যাচ্ছি। কেমন হবে বলতো?
-ভাইয়া, খুব ভালো হবে। সবাই সেদিন অনেক খুশি হবে। হঠাৎ এতো খুশি হয়ে কি যে করবে সবাই আল্লায়ই জানে।
-আচ্ছা এখন যা। কিন্তু মনে রাখিস এটা কাউকে বলা যাবে না।
-আচ্ছা বলবো না। তুইও মনে রাখিস আমার নীল জামার কথা।
-মনে থাকবে যা।
নীরা চলে গেলো রান্না ঘরের দিকে। আমি আমার রুম চলে আসলাম। কিন্তু কিছুতেই স্থির থাকতে পারছিনা। কারণ, জবের সেলারি দিয়ে কী কী করবো, শুধু এটাই ভাবতেছি। মাথায় একবার এক ভাবনা আসে। যাইহোক, এভাবে ভাবতে ভাবতে দুপুরে খাওয়া সময় হয়ে গেলো। নীরা আমাকে ডাকতে আসলো,
-ভাইয়া, গোসল করতে যা। গোসল করে খেতে আয়।
-আচ্ছা, আসতেছি যা।
-আর শুন, নীল জামার কথা মনে রাখিস।
এইবলে নীরা দৌঁড় দিলো। নীরা ভেবেছিলো আমি হয়তো বিরক্ত হয়ে মারতে যাবো। তাই দৌঁড়ে পালিয়েছে।

গোসল শেষ করে খেতে বসলাম। আজ কেনো যানি মনে হচ্ছে ক্ষিধে চলে গেছে কোথাও। একদমই ক্ষিধে নেই। আজ খুশিতেই পেট ভরে আছে। খেতে যখন বসেছি তখন অল্প হলেও খেতে হবে, তাই খেয়ে নিলাম। না হলে সবাই নানা প্রশ্ন করবে। প্রশ্ন করতে করতে হয়তো জবের কথা শুনেই যাবে। তাই বুঝতে না দেওয়ার জন্য অল্প করে খেয়ে নিলাম। আর নীরা আছে তার কাজে। আমার কানের কাছে এসেই বলে নীল জামা, নীল জামা। আমার কানটা ঝালাপালা করে দিচ্ছে।

খাওয়া শেষে আমি আমার রুমে এসে শুয়ে পড়ি। আর ভাবতে থাকি জবের সেলারি দিয়ে কার জন্য কী কী কিনবো। মাথাতে আজ শুধুই এই ভাবনা। কোনোভাবেই আজ এইসব ভাবনা মাথা থেকে যাচ্ছে না। অনেক ভাবার পর ঠিক করেছি। বাবার জন্য দুটো লুঙ্গি আর একটা শার্ট। বাবার লুঙ্গিগুলো অনেক জায়গায় ছিঁড়ে গিয়েছে। তাই লুঙ্গি দুটো কিনবো। আর মায়ের জন্য দুটো শাড়ি। মায়েরও পরনের শাড়িগুলো অনেক ছিঁড়ে গিয়েছে। এইসব দেখতে দেখতে মনের ভিতরে ক্ষত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কি আর করার আছে। বেকার থাকাকালে তাদের জন্য কিইবা আর করবো। আর ছোট বোনের কথা কি আর বলবো। নীল জামা তার খুব পছন্দ। কিন্তু কে এনে দিবে তাকে নীল জামা। একদিকে বাবা হচ্ছে সাধারণ এক দিনমজুর। তার ভাইয়া তো থেকেও নেই। উলটো ভাইটা ফ্যামিলির জন্য অনেক বড় বোঝা হয়ে গিয়েছে এখন। অন্য মেয়েদের গায়ে যখন নতুন নতুন জামা দেখে। তখন নীরার খুব মন খারাপ হতো। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতো না। হয়তো সাধারণ ফ্যামিলির ছেলে-মেয়েদের এটাই অনেক বড় গুণ। সামনের মাস থেকে তো জব পেয়েছি, দেখি এখন কার কতটুকু ইচ্ছে পূরণ করতে পারি।

দেখতে দেখতে প্রায় মাসের শেষের দিকে চলে এসেছি। যতোই জবের কাছাকাছি আসতেছি ততো ই আনন্দের মাত্রা বেড়েই চলছে। আর নীরার কথা না বললেই নয়। যেদিন বলেছি তাকে নীল জামা কিনে দিবো। সেদিন থেকে প্রত্যেকদিন অন্তত একবার হলেও আমার কানের কাছে এসে বলবে নীল জামার কথা মনে রাখিস।

আজ মাসের শেষদিন। ৩০ তারিখ। আমার জন্য বিশেষ দিন। কারণ, আজ শেষ হচ্ছে আমার বেকার জীবন। বেকার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে আজ। এটা শুধু আমি আর নীরা ই জানি। নীরা আমার কথা মতো কাউকেই কিছু বলেনি। কারণ, আমি তাকে বলেছি নীল জামা কিনে দিবো। না হলে নীরা যে মেয়ে তার পেটে কোনো কথাই থাকে না। মা না হয় বাবা কাউকে না কাউকে এতক্ষনে বলে দিতো। শুধু নীল জামা দিবো না ভেবে কাউকে বলেনি। যাইহোক, আজ আমার বেকার জীবনের খাতা শেষ করতেছি।

বিকাল বেলায় হঠাৎ করে সেই বড় ভাই যিনি জব ঠিক করে দিয়েছেন তার মোবাইল থেকে একটা টেক্সট আসে! তিনি আমাকে টেক্সট করেনি কোনোদিন। যতোকথা হতো সব ফোনেই হতো। তাই কিছুটা অবাক হয়েছি। টেক্সটা খুলে দেখি লেখা ছিলো,
শুভ্র, ভাই তোকে ফোন করে কথা বলার সেই সাহস টা আমি হারিয়ে পেলেছি। তাই টেক্সট করলাম। কিছু মনে করিস না ভাই৷ ভাই তোকে যে জব ঠিক করে দিয়েছিলাম। আজ আমাকে বস ফোন করে বলে যে, সে পদের জন্য তার নাকি কোন আত্বীয় এসেছে। তাই সে জবটা এখন তার আত্বীয়ই করবে। তোকে না করে দিতে বলেছে। কিছু মনে করিস না ভাই। আমি আর কি করবো বল। আমিও তো তার কোম্পানিতেই জব করি। শুভ্র, প্লিজ ভাই তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।

মাথায় কিছুই কাজ করতেছে না। একেবারে চিন্তা চেতনাহীন হয়ে রইলাম কিছুক্ষণের জন্য। কতো কি ভেবে রেখেছিলাম। কতো স্বপ্ন বুনেছিলাম। কতো আশা জাগিয়েছিলাম। কিন্তু, এখন কি হবে! নীরাকে কি বলবো। তার নীল জামার কি হবে। কোথা থেকে তার পছন্দের একটা নীল জামা এনে দিবো। ছোট একটা আশা তার সেটাই পূরণ হবে না! চোখের পানি পড়তেছে। পড়ুক। এই চোখের পানি দিয়ে কি হবে। নীরা আসে যদি জিজ্ঞেস করে তার জন্য নীল জামা এনেছি কি না। তখন কি জবাব দিবো!!

পরেরদিন সকাল হলো এইদিন আমার জব করার কথা ছিলো। কিন্তু আজও সেই প্রত্যেকদিনের মতো হয়ে গেলো। নীরাও কিছু বলছে না। জবে যাওয়ার কথাও না। কিছুক্ষণ পর নীরা এসে বললো,
-ভাইয়া, যা মুখ ধুতে যা। মুখ ধুয়ে চা খেতে আয়।
-আচ্ছা আসতেছি যা।
-আর ভাইয়া শুন, আমার নীল জামা লাগবে না।
আমি তো হতোবাক
-কেনো! কি হয়েছে?
-না, সব মেয়েরাই নীল জামা পড়ে, তাই এখন আমার আর নীল জামা ভালো লাগে না। আমার নীল জামা লাগবে না।
এটা বলার সময় নীরার চোখ দুটো ভেজা ভেজা ছিলো। চোখের কোনে একফোঁটা পানিও ছিলো। আমি বুঝে গিয়েছি নীরা হয়তো আমার মোবাইল থেকে টেক্সটা পড়ে নিয়েছে। তাই আমিও আর কি বলবো। কিছু বলার ছিলো না। বিছানা থেকে উঠে, নীরার চোখের কোনে যে একফোঁটা পানি জমে ছিলো। শুধু পানিটা সরিয়ে দিলাম।

অণুগল্প; নীল জামা
লেখক; ইলিয়াছ শুভ্র (জুনিয়র শুভ্র)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.