![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাসপোর্ট অফিস নিয়ে গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতা…………
আমার এক ভাই কয়েকদিন আগে ফোন দিল
- কোথায় আছিস?
- রুমে আছি ভাই ।
-ভার্সিটি খুলছে তোর?
-হ্যা ভাই খুলসে ।
-কালকে বিকেলে তোর কাছে যাব । পাসপোর্ট বানাতে হবে তাই । ১টু খোজ খবর নিস ।
- ঠিক আছে ভাই ।
দুপুরে ভার্সিটি তে ক্লাশ শেষ করে পাসপোর্ট অফিস গেলাম । তখন দুপুর ১.৩০ টা । কোথায় গিয়ে কি করতে হবে জানার জন্য তথ্য কেন্দ্রে গেলাম কিন্তু অনেক বড় লাইন । কর্মরত এক আনসার ভাই কে জিজ্ঞেস করলাম তিনি ভাব দেখিয়ে বলে ফেললেন যে দুপুর ১টা’র আগে এসে জেনে যেও । পরে পাসপোর্ট করতে আসা এক ভাইয়ের কাছে জানলাম যে কি কি করতে হবে । ভাই এর কাছ থেকে জানতে পারলাম যে দালাল দের ১২০০-১৫০০টাকা দিলে পাসপোর্ট এর কাজ তাড়াতাড়ি হবে তানা হলে ঘুরতে হবে ।
পরদিন ভাই আসলো । অনলাইনে ফরম পূরণ করল । পরদিন ফরম সত্যায়িত করতে করতে আর টাকা জমা দিতে গিয়ে দুপুর ১২.৩০ টা বাজল । পাসপোর্ট অফিস গেলাম । বলল যে আজ আর ফরম জমা নেওয়া হবে না ।
ফরম টা ঠিকঠাক আছে কিনা দেখানোর জন্য তথ্যকেন্দ্রে গেলাম । তথ্যকেন্দ্রে বলল ফরম পূরণ ভুল হয়েছে । সে সবাই কে তথ্য দেই কিন্তু জানেই না অনলাইন এ ফর্মটা কিভাবে দেওয়া থাকে, তাহাকে বুঝাতেই পারলাম না যে আমরা টেক্সট ফিল্ড এ লিখি। পরে ওরা পিডিএফ দেয়। কিন্তু তথ্যকেন্দ্রের ছেলেটির এক কথা, প্রিন্ট যেমন অনলাইন এ তেমন।
ভাই বলল যে কালকে এসে আগে জমা দেওয়ার পর দেখব যে কোথায় ভুল আছে । পরেরদিন সকাল ৯টায় যেতে বলল ।
আমি আর আমার ভাই সকাল ৮ টার মধ্যেই পাসপোর্ট অফিসে গেলাম । ১০টা থেকে ফরম জমা নেওয়া শুরু হলো । যিনি এই ফর্ম জমা নিচ্ছে আর তার চেকিং পারফরমেন্স অতি উত্তম যে লাইন সামনে আগায় না, এর মাঝে সে আবার ২০ মিনিট করে চা বিরতি নিতে যায়।
যাইহোক ভাইয়ার আগে ৫-৬ জন এর চেক করে বলল যে ভুল আছে । কারো ফরম ঠিক হয়নি ।
প্রথমে ভাইয়ার ফরম দেখে বলল যে ভুল কিন্তু ভাইয়া যখন বুঝিয়ে বলল যে আমি অনলাইনে ডাটা পুরণ করেছি তারপর তারাই এইটা পিডিএফ আকারে দিয়েছে ।
তারপর ও তিনি ভুল ধরলেন যে সত্যা্যিত শীল ১টু ট্যারা; এইটা সোজা করে মেরে নিয়ে আসুন ।
[সত্যা্যিত শীল ট্যারা আর সোজা কি । সত্যা্যিত করা আছে কিনা এইটাই মেন ব্যাপার । কিন্তু তারা ত্রুটি ধরবে ]
ভাই গেল আবার সত্যা্য়িত করতে আর আমি লাইনে দাঁড়িয়ে । প্রতিটি ফরম ই ভুল । এখন দেখেন যে ভুল গুলো কি কিঃ
১. আপনার পাসপোর্ট ছবি টা তুলা ঠিক হয় নি, নাক কান গলা থকবে কিন্তু ঘাড় বেশি চলে আসছে।
[ আরে অফিসার সাহেব আপনারা পাসপোর্ট এ যে ছবি দিবেন সেটা তো তুলেই নিবেন । ফরম এর সাথের তা তো আর দিবেন না ]
২.আপনি পেশা প্রাইভে্ট জব দিলেন কেন, আপনি তো কৃষক।
[ আরে শালা হারামি রা ওইটা কেটে দিয়ে কৃষক লিখে দিলেই তো হয় ]
৩. আপনার ভোটার কার্ড এ বাপের নাম এ মোহাম্মদ আছে, তাই যান আবার সব নতুন করে লিখে সত্যা্য়িত করে নিয়ে আসেন।
[ আরে দালালের ব্যাটা এই ছোট্ট জিনিসটা নামের আগে লিখে দিলেই তো হয় । এর জন্য বেচারা টাকে আবার গ্রামের বাসায় পাঠাবি]
৪. ফর্মে টাকার পরিমাণ বাংলাতে লিখেছেন কেন? আবার নতুন করে লিখে নিয়ে আসেন ।
[আরে মাদারী তোর কি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে । আর মানি রিসিপ্ট তো আছেই ]
৫. ভোটার আইডি বা জন্মনিবন্ধন একটার সত্যায়িত কপি দিলেই হয়। না উল্লেখ করলে ২ টাই দিতে হবে।
[তাহলে ওইখানে অথবা লিখা আছে ক্যান]
৬. নতুন, নবায়ন, অনলাইন, বৃদ্ধ, যুবক সবার একই লাইন [লাইন ১টা ভালো কথা কিন্তু তোর এত ঘন ঘন চা এর বিরতি লাগে ক্যান রে]
ইত্যাদি ইত্যাদি
এতো গেল চেকিং ম্যানের কাজ । আনসার বাহিনী আর গেটম্যান দের কথা বলি ।
১. বাইরের কেও ভেতরে প্রবেশ করিবেন না ।
[ দালাল রা ভেতরে বাইরে সর্বত্র বিরাজমান । তাদের জন্য কোন বাধা নাই ।]
২. ( পাসপোর্ট কারীর সাথে সাহায্যকারী কেও থাকলে ) তুমি এইখানে কি কর? পাসপোর্ট কারী আর স্টাফ ছাড়া কেউ ভেতরে থাকবেনা ।
[ হালার পুতরা দালাল গুলা কি তোদের স্টাফ ]
৩. যাদের ভুল হয়েছে তাদের কে সরাসরি বলে দিচ্ছে যে বাইরের টেবিলে চলে যান তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে ।
[লটি’র ব্যাটা তথ্যকেন্দ্র ক্যান রাখা হয়েছে ???? তথ্যকেন্দ্রে না পাঠিয়ে বাইরের টেবিলে ক্যান???]
ইত্যাদি ইত্যাদি
যাইহোক এত কিছু দেখা’র পর ভাই আবার সোজা করে সত্যা্য়িত শীল মেরে নিয়ে আসল । ফরম জমা নিল তখন বাজে ১১.৩০ । বলল যে ১টা’র দিকে আপনাকে ছবি তোলার জন্য ডাকবে । ভাই বলল যে মাত্র ৫টা ফরম জমা হয়েছে ।
ছবি তোলার লাইনে গিয়ে দেখি শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে । ফরম অ্যাপ্রোভড হল মাত্র ৫টা ছবি তোলার লাইনে মানুষ ২০০ জনের মত ।
তখন দেখলাম যাদের ফরম কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা ছবি তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে । তারা কেও দালাল কে ১৫০০, কেও ১২০০, কেও বা ১৩০০ টাকা নিয়ে অফিসের অন্য দরজা দিয়ে ওই কাটা/বাতিল করা ফরম ই অ্যাপ্রোভড করিয়ে নিয়েছে । আমরা ছবি তোলার জন্য ৫ জন বসে আছি কিন্তু আমাদের ডাকছে না । দালালদ্বারা অ্যাপ্রোভড কৃতদের ছবি তোলা হচ্ছে । ১টা বাজল তবুও ডাকলনা , ১.৩০ এও ৫ জনের কাওকে ডাকল না এবং বলল যে আজকের আর কোন ফরম নাই । তারপর
legal form approved হওয়া ৫ জন বলল যে আমাদের ফরম কোথায়? তখন তারা ১টু খোজাখোজি করে বলল যে পরিচালক স্যারের রুমে । স্যার লাঞ্চে । লাঞ্চ শেষে ফরম আসল ২.১৫ তে এবং বলা হলো যে আপনাদের আরো ৭ দিন পর ছবি তোলা হবে ; আপনারা ৭ দিন পর আসেন । সাথে সাথে ১ দালাল এসে বলল যে ৫০০-৬০০টাকা দিলে আজকেই ছবি তূলার ব্যবস্থা করতে পারব । আমরা বললাম যে ৭ দিন পরে এসে ছবি তুলব ।
বাতিলকৃত ফরম গুলো’র কোন সংশোধন না করে একই দিনে ছবি তোলা হচ্ছে মাত্র ১২০০-১৫০০ টাকার বিনিময়ে । আর সঠিক ফরমগুলো’র ক্ষেত্রে অর্থাৎ যাদের ফরমে কোন অতিরিক্ত টাকা পাইনি তাদের ৭ দিন পর ডাকা হচ্ছে । বাতিলকৃত ফরম গুলো সংশোধনের জন্য Informatiom booth এ না পাঠিয়ে অফিসের বাইরের দালালদের টেবিলে পাঠানো হচ্ছে টাকার দর কষাকষির জন্য । এই হচ্ছে আমাদের পাসপোর্ট অফিসের অবস্থা যেখানে ঘুষ খাওয়ার সর্বাত্নক চেষ্টা করা হয় ।
বি.সি.এস দেওয়া স্যারগুলোর পরিবর্তে দালালগুলোকে Checking man, info man , Director এর জব দিলেই ভালো হবে । সরাসরি টাকা চাইলে হয় । এত ফরমালিটি maintain এর তো কোন কারণ নাই ।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৫৫
ইমন_মুরেশদ বলেছেন: লিগ্যাল ভাবে পাসপোর্ট এর কাজ করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া একই কথা ........................
২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১৫
রাতুল_শাহ বলেছেন: হায় রে পাসপোর্ট!!!!!!!!!!!
৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:০৩
ঢাকাবাসী বলেছেন: দুর্ণীতি নেই এমন একটা সরকারী অফিস দেখাতে পারেন এদেশে?
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯
ইমন_মুরেশদ বলেছেন: কম বেশি সব জায়গাতেই দুর্নীতি আছে । কিন্তু এত বেশি (১০০%) পরিমাণ দুর্নীতি এই প্রথম দেখলাম ..................
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৫০
রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলেছেন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি গেছে আমার পাসপোর্ট পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য। আমাকে বললো এই চিঠিটা পরিচালক সাহেবকে দিয়ে মার্ক করিয়ে নিয়ে আসতে। তো, সেখানে যাওয়ার পর দারোয়ান স্যার আমার কাগজপত্র পরীক্ষা করলেন এবং বললেন, আপনি নিচতলা থেকে নবায়নের ফর্ম নিন। যথাযথভাবে পূরণ করে ওই কাউন্টারে জমা দিন.....। আমি ফর্ম আনতে গেলে তিনারা বললেন, আগে অন্য একটা কাগজে সব লিখে নেন, নাহলে ভুল হবে। আমি বললাম, আমার অত সহজে ভুল হয় না। তিনারা কটাক্ষ করতে ছাড়লো না। যাই হোক, ফর্ম পূরণ করে আবার আগের জনকে গিয়ে বললাম, দারোয়ান স্যার তো আমাকে পরিচালক সাবের রুমে ঢুকতে দিলো না, এই ফর্ম জমা দিতে বললো। ভদ্রলোক যথেষ্ট শান্ত থেকে বললো, আপনি অবশ্যই যাবেন এবং পরিচালকের স্বাক্ষর নিয়ে আসবেন। আমার এখানে কোন কাজ নেই, আসলেই ছবি তুলে দিব, বাসায় চলে যাবেন।
এর পর অনেকটা জোর করেই পরিচালকের রুমে ঢুকতে সমর্থ হলাম। চিঠিটা দেখেই দুইটা হিজিবিজি টান দিয়ে ছেড়ে দিলেন। বের হয়ে দারোয়ান স্যারকে যথাসম্ভব বিনীতভাবে বললাম, আপনি অযথাই আমাকে হয়রানি করলেন...। তিনিও পাসপোর্টের ডিজির মতো গম্ভীর হয়ে বললেন, বেশি বুঝে তো! আবার আসতে হবে...।
যাই হোক, ছবি তুলে বাসায় চলে গেলাম। পরের সপ্তাহে এসএমএস পেয়ে পাসপোর্ট নিয়ে গেলাম। হায় পাসপোর্ট!! জীবনের তৃতীয় পাসপোর্ট! আই লাভ য়ূ!!