নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুর্বল... তাই তোমাদের সবাইকে ভয় পাই!

আগামাথাহীন

ফাহিদ

সেই দিন পরলাম "আপ-টু-ডেট" কথা-র অর্থ হল "হালনাগাদ"। তাই, ভাবছিলাম একটু হালনাগাদ থাকার চেস্টা করা যাক সামু থেকে।

ফাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের গল্প

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১

বেশ আগের কথা। আমাদের বাসার পাশে এক বুড়া লোক থাকত। বয়সটা অনুমান করা একটু শক্ত ! ৭০-৮০ হবে হয়ত... কেউ কেউ অবশ্য বলত ১০০ এর উপরে, আমার বিশ্বাস হত না। ভদ্রলোককে যখনই দেখতাম, দেখতাম বাসার ছাদের একদম কার্নিশে বসে আছে... সকাল নেই সন্ধ্যা নেই, বসে আছে। মাঝে মাঝে গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতাম, বুড়ো তখনও দিব্যি বসে আছে। সময় নাম ছিল তার। সারাদিন ছাদে থাকে বলে আমরা দুষ্টামি করে তাকে ডাকতাম ছাদু, সময় ছাদু।



ছাদু মানুষটা খুবই চুপচাপ ধরনের, বদরাগী, হালকা পাগলাটে স্বভাবের। কথা টথা তেমন বলত না, দেখলেই কটমট করে তাকাত! বুড়ো বড্ড ফিলসফি ভালোবাসতো... সেই সূতা ধরেই তার সাথে বেশ কয়েক বার কথা হয়েছিল আমার। কচি বয়সে আমিও বেশ ফিলসফি নিয়ে ভাবসাব মারতাম কি নাহ!



সময় ছাদু প্রায়ই বলত, প্রকৃতি ভয়ানক দুষ্ট, তুমি যা দেখতে চাও, তোমাকে ঘুরে ফিরে তা-ই দেখায়। ওই বয়সে এই সব মাথার উপর থেকে যেত! তবে বিষয়টা আমি অনেক পরে Pi ছবিটা দেখে বুঝে ছিলাম; মনে পরেছিল সেদিন বুড়োর কথা!



সময় ছাদুর একটা বদ অভ্যাস ছিল, কথার মাঝে হঠাৎ চুপ হয়ে যেত, তার পর কি সব বির্‌ বির্‌ করে বলত! একবার-এর টা আমার বেশ ভাল মনে আছে, আমরা কথা বলছিলাম সাব্জেক্টিভিটি নিয়ে, যদিও তখনও জানতাম না সাব্জেক্টিভিটি কি জিনিস, এমন সময় ছাদু বিড়বিড় করে উঠল "আমার ইচ্ছা আছে, কিন্তু ইচ্ছা পূরণের নিয়ম নেই।" এই লাইনটা আমাকে আজও বেশ ভাবায়... গ্রামার এর কথা বাদ-ই দিলাম, অর্থও তো বোঝা যাচ্ছে না। জিজ্ঞেস করেছিলাম যদিও, কিন্তু বরাবরের মতই উত্তর পাই নি! আর একবার, বেশ গুরুগম্ভীর আড্ডা দিচ্ছিলাম Plato- এর আইডিয়াল স্টেট নিয়ে, বরাবরের মতই এই সব তখন আমি জানতাম নাহ, তখন ছাদু বিড়বিড় করে বলল "অভ্যস্ততা তোমাদের দৃষ্টি ভঙ্গিকে দূর্বল করে ফেলে। আর আমি তোমাদেরকে।" কোথায় কি!



বুড়ো একদিন আমাকে হঠাৎ ডাকল, কচিং ফাকি দিয়ে গেলাম ওদের ছাদে। দেখি বুড়ো বরাবরের মতই নিরস মুখে চেয়ে আছে শহরের দিকে! কীভাবে বুঝল কে জানে, আমি কাছে আসার সাথে সাথেই বুড়ো বলল "সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয়তা কি বল তো?", তার দৃষ্টি তখনও শহরের দিকেই! আমি একটু ভড়কে গেলাম, ভাবলাম বুড়ো হয়তো একা একা কথা বলছে, এই অভ্যাস তার ছিল। আমি পাশে গিয়ে দারালাম। তখন বুড়ো আমার দিকে ঘুরে ধমকের সুরে বলল "কই, বললি না"... তখন বুঝলাম প্রশ্নটা আমার দিকেই ছোড়া হয়েছিল। আমিও বয়স সূলভ বেশ ভাব নিয়ে বললাম "মানব সভ্যতার জটিলতা বাড়ানো।" বুড়ো কিছুক্ষুন চুপ করে থেকে বলল "বেশ ভাল বলেছিস, কিন্তু এইটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয়তা নাহ। সব চেয়ে বড় প্রয়োজনীয়তা হল ঘটনা ধরে রাখা। আমি ছিলাম না, আছি, থাকব না। আমরা ছিলাম না, আছি, থাকব না। এই বড় চিত্রটা আকার ক্যানভাস হল সময়। অথবা বলতে পারিস একটা ঝুড়ি! সমষ্টিগত ভাবে কখনো সময় হয় না, সময় যার যার আলাদা আলাদা! তোর সময় তোর, একদমই তোর। তাই, কখন সময়ের কাছ থেকে পালিয়ে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবি না, কারন সেটা যাওয়া যায় না। ভাল হোক মন্দ হোক, তুই তোর সময়ের সাথে যোগ করতে থাকবি! বুঝতে যাবি না কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ। বুড়ো বয়সে পিছে ফিরে তাকালে দেখবি অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবি।" আমি খুব বিজ্ঞের মত বললাম "হুম!" যেন সব বুঝা শেষ। এর কিছুদিন পরই বুড়ো মারা গেল। বন্ধুদের ভাষায় "ছাদু কোদু হয়ে গেছে।"



আমি আজও তার কথা গুল মেনে চলি, আজও তার কথা গুল চিন্তা করে মনে মনে বলি "হুম"... কিন্তু সত্যি বলতে কি, আমি এখনো কথা গুল ঠিক হজম করতে পারি নি! হয়তো কোন একদিন পারব! মাঝে মাঝে আগ্রহ বশত পছনে ফিরে তাকাই, লাভের লাভ কিছুই হয় না, কিছু অভিজ্ঞতা ছাড়া ঝুড়িতে আর কিছুই নাই। কোথায় আমার প্রশ্নের উত্তর গুল? তখন মনে মনে ভাবি, সম্ভবত আমি এখন বুড়ো হতে পারি নি। ভয় লাগে এটা ভেবে, আমি বুড়ো হব তোহ?!! যদি নাই হই তাহলে আমার ঝুড়ি যে একদমই বৃথা যাবে!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৮

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: বানানে অনেক ভুল আছে, ঠিক করলে পড়তে ভালো লাগতো।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫০

ফাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ বলার জন্য! ঠিক করে নিচ্ছি! সামনে থেকে খেয়াল রাখব আশা করি! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.