নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ফাহমিদা বারী

আমার ব্লগ মানে গল্প। গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানাই :)

ফাহমিদা বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঁশি কই আগের মতো বাজে না

১৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪৩

নীরব হোটেলের খাবার
হোটেল রাজ্জাক
কুলফি আইসক্রিম

একদিন আমি আর আমার বুয়েটের একজন বন্ধু মিলে 'হোটেল আল রাজ্জাক' এ খেতে গেলাম।
এই তো মাত্র কিছুদিন আগের কথাই বলছি। রাজ্জাক হোটেলটা চিনেছেন তো? পুরনো ঢাকার বংশালে অবস্থিত। খুব আহামরি কোনো রেস্টুরেন্ট না। কিন্তু মনে পড়ে, দিনের পর দিন ছাত্রীহলের ডাইনিং এর খাবার খেতে খেতে যখন অরুচি ধরে যেত, তখন আমরা হঠাৎ মাঝে সাঝে এরকম রুচি বদল করে আসতাম। বড়সড় রেস্টুরেন্টের নামই তেমন একটা জানতাম না তখন। অবশ্য সেই নব্বইয়ের দশকে অন্তত এই নাজিমউদ্দিম রোডের আশেপাশে বড়সড় রেস্টুরেন্ট খুঁজে পাওয়ার আশা করা ছিল বাতুলতা। আমাদের চিকনা পটকা দেহে হাল্কাফুল্কা ব্যাগের ভেতরে থাকা পার্সের দেহটাও যে ছিল আমাদের মতোই চিকনা!
যাই হোক, বুয়েটের ডাইনিং এর অবস্থা কিন্তু আদতে খারাপ ছিল না। ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মতো আমাদের ছাত্রীদের রান্নাবান্না করার সুযোগ ছিল না। হলে হিটার রাখা ছিল নিষিদ্ধ। শুধু চা খাওয়ার জন্য আমরা একটা ওয়াটার হিটার রাখতে পারতাম। এছাড়া খাওয়াদাওয়ার জন্য আমাদের ডাইনিং আর ক্যান্টিনই ছিল একমাত্র ভরসা।
সেই ক্যান্টিন আবার বন্ধ হয়ে যেত সন্ধ্যা হতে না হতেই। মাঝে মাঝেই দেখতাম ক্যান্টিনে নতুন নতুন 'বয়'। আমরা খুঁজতাম আগের জনকে। ক্যান্টিনের সার্বিক দায়িত্বে যে মহিলা কর্মচারী ছিলেন তিনি বলতেন, 'বড় হয়ে গেছে, তাই পালটায়ে ফেলা হইছে!'
অর্থাৎ মেয়েদের হলে বড় ছেলে কাজ করতে পারত না। একটু বড় হলেই পুরনোদের পাল্টে অন্য কোনো ছেলেদের হলে কাজে লাগানো হতো। তার জায়গায় আসত নতুন কোনো কিশোর।
ছেলেদের হলে শুনতাম রাত নয়টা দশটাতেও মজার মজার খাবার পাওয়া যায়। বিরিয়ানি, তেহারি, চিকেন ব্রেড--- একসময় যেসব খাবার আমাদের তরুণ মুখে অমৃতের মতো লাগত, সেগুলো নাকি ছেলেদের হলের ক্যান্টিনে হরহামেশাই পাওয়া যেত। আমাদের মেয়েদের হলের মেয়েরা অপেক্ষা করে থাকতাম কবে একটা ফিস্ট পাবো আর একটু ভালোমন্দ খাবো!
তাই মাঝে মাঝে হোটেল রাজ্জাক, নীরব হোটেল এসব জায়গায় আমাদের পদধূলি ফেলতে হতো। রাজ্জাক হোটেলের সেই নানরুটি আর চিকেন কাবাবের স্বাদ যেন এখনো মুখে লেগে আছে!
কিন্তু সেদিন রাজ্জাকে গিয়ে যা কিছু খেলাম, কোনোকিছুতেই আর আগের সেই স্বাদ ফিরে পেলাম না। উঠতে উঠতে মনে হলো, খাবারের মান খারাপ হয়ে গেছে। এত এত হোটেল রেস্টুরেন্টের ভিড়ে রাজ্জাক তার স্বকীয়তা হারিয়েছে।
আরেকদিনের কথা। সেদিন নানারকম ভর্তা ভাজি সহযোগে ভাত খেতে ইচ্ছে করল। ভাবলাম অনলাইনে কোনো পেজ থেকে অর্ডার করি। বাইরে খেতে যাওয়ার সময় নেই। ফুডপাণ্ডায় ভর্তা লিখে সার্চ দিতেই নীরব হোটেলের নাম সামনে এলো। আহ নীরব! নামটা দেখেই হুড়মুড়িয়ে কত কিছু যে মনে পড়ে গেল!
নানারকম ভর্তার মজা তো ছিলই আরও ছিল ঝাল ঝাল গরুর মাংসের ভুনা। সেই মাংশ খেতে খেতে ঝোল চাওয়া হলে প্রতিবার ঝোলের সঙ্গে আরও দুই এক টুকরা মাংশ যোগ করে দিত। এই সুযোগে কতবার যে ঝোল রিফিল করতাম সেটা মনে করে এখনো লজ্জা পাই।
নিজের হাতের রান্না করা মাংশ খেতে খেতে মুখে চড়া পড়ে গেছে। ভাবলাম একটু গরুর মাংসও অর্ডার করা যাক।
যথাসময়ে খাবার চলে এলো। আমি এটা নাড়ি ওটা চাখি, কিছুতেই কেন যেন রুচি পাই না। মনে হয়, কী জানি কে পিষেছে পাটায়। তার হাতটা পরিষ্কার ছিল কী না! গরুর মাংসটা আসল গরুর মাংস দিয়েই রান্না করা হয়েছে তো!
একসময় অর্ধভুক্ত পেটেই উঠে পড়লাম। উঁহু! খেতে ভালো লাগছে না। সেই স্বাদ পাচ্ছি না। নীরব হোটেলের মানটাও কি তাহলে নেমে গেল? আহা এত ভালো একটা হোটেল ছিল! কী মজার ছিল খাবারগুলো!
আমি আমার জীবনে কুলফি আইসক্রিম খুব বেশি খাইনি। কিন্তু আমার মনে কুলফির খুব আনন্দময় একটা স্মৃতি আছে। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার পথেই দেখতাম স্কুলগেটে কুলফি মামা কুলফি বিক্রি করছে। আমি আমার বাবার দিকে আগ্রহী চোখে তাকাতাম। আব্বা মাঝে মাঝে কিনে দিত। সেই দিনগুলো ছিল আমার একেকটি ঈদের দিন।
ফুডপাণ্ডায় দেখি কুলফি আইসক্রিমেরও নানারকম পেজ আসে। আমি অর্ডার করতে গিয়েও হাত সরিয়ে নিই!
থাক! কিছু জিনিস স্মৃতিতেই বেঁচে থাকুক। সবকিছু ফিরে পেতে চাওয়ার ধৃষ্টতা দেখাতে হয় না!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.