উড়ো চিঠিঃ ১, তোমার নামে ঠিকানা বিহীন খামে

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

তন্দ্রা...

ইদানীং আগের মত বুকের ভেতরটায় চাঁপা ব্যথা অনুভব করছি। ছন্নছাড়া জীবনে আমার আছেই বা কি বল? স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমায় নিয়ে একটা ছোট্ট ঘর বাঁধবো। যেখানে তুমি আর আমি ছাড়া অন্য কেউই থাকবেনা। দুজনের একটা নতুন পৃথিবী হবে, যে পৃথিবীতে শুধু তুমি আর আমিই থাকবো। স্বপ্নের পৃথিবীটাকে সাজাবো লাল, নীল রঙে রঙ্গিন করে। আমাদের আকাশটাতে কখনো কাল বৈশাখী ছোঁয়া লাগবেনা। কোথায়ও নীলাভ দুঃখের মেঘ জমবে না, শুধু আলো আর আলোর মেলা থাকবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ অ-স্বপ্নের পথে যাত্রা করলো। আজ আমার পৃথিবীটাতে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নেই। স্বপ্নের আকাশটাতে দুঃখের অন্ধকার মেঘ জমেছে। কষ্ট গুলো আজ দু চোখের পাতায় ভর করেছে।



তই তই করে কেটে যাচ্ছে তোমার অনেকটি সন্ধ্যার চাঁদের আলো ভরা আকাশ। কিন্তু এতদিন পরে কোন দাবী থেকে নয়, অনুরোধ ভরা দুহাতের পেয়ালা নিয়ে লিখছি; আপন তাগিদেই। যেদিন অপূর্ণতার তৃপ্তি নিয়ে আমায় পূর্ণ ভেবে অপূর্ণ রেখে গেলে, কিন্তু নিয়ে গেলে আঁচল ভরা সবকিছু। আজ তার অল্পটুকু ফেরত পাবার আশায় আবারো লিখছি তোমার নামে ঠিকানা হীন খামে, নিয়মের উল্টো পথে হেটে।



কোন লগ্ন বিকালের পর যৌবন ভরা বৈশাখের সন্ধ্যায়, আবছা অন্ধকারের মাঝে সবুজের প্রান্তরের উদ্যানে লাল ইটের উপর বসে তোমার হাতে তুলে দেয়া গোলাপ ফুলগুলি ফেরত পাঠিও। আজ লাল ইটের প্রান্তরে বসে সেই গোলাপ গুলি খুঁজে বেড়াই। আমার মগ্নতার কোন কমতি ছিলনা কিন্তু নেই সেই ফুলের সুভাষ, নেই সে ফুলগুলি। বেচারা ফুলগুলি আজ তোমার অবহেলায় আর্তনাদে মাঝরাতে গুমরে কাঁদে। আর হা, হলের প্রাচীরের দেওয়ালে ফোটা খোঁপায় আঁটকে দেওয়া নাম না জানা হলুদ ফুলটি তোমার কাছে রেখে দিও।



বিকালে তোমার চায়ের নেশায় থমকে যেতে যেতে আজ আমিও নেশাগ্রস্ত। সেই কাপে জমিয়ে রাখা সাদাকালোর মাঝে স্বপ্নগুলো কোথায় যেন দূর অজানায় পালিয়ে গেছে। সাদা না হোক, অন্তত কালো স্বপ্নগুলো পাঠিয়ে দিও। সাদা-কালোর মাঝামাঝিতে আটকে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে টানতে টানতে আমি আজ হাঁপিয়ে উঠেছি। আর সন্ধ্যায় দুই পথের মাঝে আঁটকে দাঁড়িয়ে থাকা স্মৃতিগুলো রেখে দিও। মনে হবে কে যেন তোমায় অনুসরণ করছে।



আমার হাতের সেই উষ্ণতাটুকু মুছে দিও। যে উষ্ণতা দিয়ে প্রতিবার খাওয়ার সময় তোমার শীতল মুখের মাঝে রাঙ্গা ভাব কে সহজেই জড়িয়ে দিত হৃদয়ের মাঝে। খেতে গেলে সেই উষ্ণতা তোমায় বড্ড কষ্ট দেবে। আর কত অভুক্ত থাকবে বল? সেদিন গুলোর মুছে দেওয়া উষ্ণতাগুলো আমার নামে পাঠিয়ে দিও।



রাতের পর রাত জেগে, কত স্বপ্ন বুনেছিলাম, কত রিক্ততাই মাঝে ভরসা ছড়িয়েছিলাম সেই স্বপ্নগুলো তোমার ব্যাগে পড়ে থাকা আই ভ্রুর গাঁড় কালি দিয়ে মুছে দিও। আর মুছে দেওয়া স্বপ্নগুলো আমার নামে ফেরত পাঠিয়ে দিও। এখন রাতের সময়গুলো মৃত হয়ে কোন একদিকে আঁটকে থাকে। শেষরাতের জড়সড় ঘুমগুলোকেও ফেরত পাঠিও। অনেকদিন ঘুমাই নি। তন্দ্রা আমি সত্যিই হেরে গেছি। জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া ভুলের প্রতীক আমি। তবুও আমার নামে ফেরত পাঠিও। তোমার ফেরত ফেলে আবার প্রাণে জমবে হাসি আর... মেলা। আমাদের এতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখে সবাই হিংসা করতো। সবাই বলতো আমরা অনেক সুখী হব। তোমার কি মনে আছে তন্দ্রা? একদিন তাই হবে তন্দ্রা।



শুধু বলতে চাই,”ভাল রেখো”। কারণ, ভালো থাকাটাই জীবনের সবকিছু নয়, ভালো রাখাটাও অনেক কিছু।

ইতি

নীল বেদনার রাজকুমার:

নিরন্তর যাত্রা

২ টি +০/-০