![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০১৩ ঈসায়ী খ্রিষ্টাব্দ, এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ, রোজ সোমবার সন্ধ্যা ৭.১৫ টার কাছাকাছি। ছেলেটির হাতে সদ্য কেনা দু’টি গোলাপ আর সেকালের মত একখানা পত্র। গ্রীষ্মের সময় দিনগুলো সাধারণত দীর্ঘ হওয়ায় সবে মাত্র সূর্য পশ্চিম আকাশের মাঝে ডুব দিয়েছে। তখনই অপরিপক্ষ ও অগোছালো হাতে মেয়েটিকে প্রেমের আবেদন জানালো।
কার্জন হল;
ছেলেটি কার্জন হলের গেইটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে তার পায়ের উপর দিয়ে রিকশার একটি চাকা চলে গেলেও সেদিকে তার ভ্রূক্ষেপ নাই। ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ের জন্য। মেয়েটি কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো এসে পড়বে। ছেলেটির মনে আজ ভীষণ খুশির জোয়ার বইছে। মেয়েটির সাথে মনের কত কথা বলবে হয়তো তার ইয়ত্তা নেই। ছেলেটি যদিও অগোছালো,তবে প্রেমে পড়লে একটা হাবাগোবা ছেলে বা মেয়ের মুখেও নাকি খই ফুটে। অনেকে আবার কবিও হয়ে যায়। অনেক সহজ সরল, মেয়েটি। যা বলার খুব সহজে গুছিয়ে বলে দিতে পারে। ছেলেটি অনেক বড় বড় লেকচার দেয় যার আগা-মাথা কিছুই সে নিজে মানে না কিন্তু তবুও ছেলেটির লেকচার থামে না। মেয়েটি কিছুক্ষণ যুক্তি দিয়ে ওর কথার ভুল দেখাতে চাইবে পরে হাল ছেড়ে দেয়। এমন একজন ছেলের সাথে সুন্দর শুদ্ধ বাংলায় গুছিয়ে বলতে পারা মেয়েটির মিল হল, শুধু মনের জোরে।
পূর্ণ তৃপ্তির মাঝে;
তারা উদ্যানে গাছের নিচ বসে আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে গাছের নিচে বাসা বাঁধা কোন মানিক জোড়া। কারও মুখে কোন সাড়াশব্দ নেই। ছেলেটির নির্লজ্জ হাত ছোঁয়ার মাঝে তাদের নীরবতার ছেদ পড়লো। একটানে মেয়েটি হাত কেড়ে নিয়ে মাটির সাথে চোখ বুজে দিল পরম তৃপ্তিতে। অতঃপর হাজার গল্পের মাঝে হারিয়ে যাওয়া। আবার কখনো হাঁটতে থাকে দুজনে। যে হাঁটা কখনো না ফুরালেই পথিকের মনে শান্তি। দুজন দুজনার হাতে হাত ধরেও নেই আবার অনেক দূরেও নেই। গায়ে গা ঘেঁষার থেকে সামান্য দূর। আবার কখনো বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে। ছেলেটি তাকিয়ে বলল,তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। অনেক। মনে হচ্ছে আকাশের কোন পরী ভুলে ভুলে পৃথিবীতে নেমে এসে আমার সাথে হাঁটছে। অপূর্ব এক সৃষ্টি তুমি। কপালে একটা ছোট বিধির কাল টিপ। বড় বড়,টানা টানা চোখ। লম্বা চোখের পল্লব। ঠোঁটের উপরে হালকা গোলাপি রঙ। চোখে অনাবিল এক সুখের মেলা। সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও তৃষ্ণা মিটবে না ছেলেটির। ছেলেটি পাগলের মত দেখে যায় এই মায়াময় দৃশ্য।
বৃষ্টি ভেজা;
এইতো হলে চলে যাবে মেয়েটি। ঠিক সেই মুহূর্তেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত বিনা মেঘে বৃষ্টি। দু’জন আজ বৃষ্টি থেকে পালিয়ে যাবে। পালিয়ে যেতে চাই কিন্তু নীলক্ষেত এসে একটা হাসি দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে বলে রিকশা থেকে নেমে পড়ে ছেলেটি। অতঃপর মেয়েটিও, পুরো শরীর ভিজে চলল দু’জনের। হাত ধরে দু’জনে বৃষ্টিতে ভিজছে। ঠাণ্ডায় ছেলেটি মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে আর সবকিছু ভুলে ওড়নার ঘ্রাণ নিতে লাগল। এত সুন্দর গন্ধ কোথাও নেই,কোথাও। এত কাছে মেয়েটিকে আগে কখনো পায়নি ছেলেটি। ছেলেটি হাত ধরে বলতে লাগলো,আমায় ছেড়ে কোথাও যেওনা। এই ওড়নার ঘ্রাণ আমি সারা জীবন পেতে চাই। দু’জনই নীরব,চারদিক নীরব,শুধু বৃষ্টির শব্দ।
বিদায় বেলা সেদিন;
কমলাপুর ট্রেন স্টেশন। তারা দুজনে বাড়ি যাবে একই দিনে। ট্রেন ছাড়ার আগমুহূর্তে বিদায় বেলায় দৌড়ে এসে ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে করুণ মায়া নিয়ে কেঁদে উঠলো মেয়েটি। ছেলেটি পাঁথরের মত নিশ্চুপ। তার মুখে কোন কথা নেই। শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, আমি আবার তোমার হয়ে ফিরে আসবো তোমার মাঝে। আমার জন্মই তোমার জন্য। এই বাঁধন সারা জীবন অটুট থাকবে। আর কপালে ছোট্ট একটা চুমু বসিয়ে দেয় ছেলেটি। সারা স্টেশনের মানুষ তাকিয়ে আছে পাগলের মত মেয়েটির দিকে। তাদের চোখে এক অনাবিল প্রশান্তি এমন মিলন যেন না ভাঙ্গে কখনো। এমনই যেন ভালবাসা থাকে আজীবন।
ছোট্ট সংসার;
দু’জনের ছোট সংসার মাঝে মাঝে রান্না করা। আর একসঙ্গে ক্যান্টিনে বসে খাওয়া। একে অপরের মুখে হাত দিয়ে খাইয়ে দেওয়া। মেয়েটির লবণ বেশি খাওয়া নিষেধ করতো ছেলেটি, আর খেলে বকা দিত ভীষণ। তবুও মেয়েটি কখনো ছেলেটি হাত ধুতে গেলে বা অন্য মনস্ক হলে চুরি করে লবণ খেয়ে নিত। রান্না করা অধিকাংশ তরকারি ছেলেটির প্লেটে তুলে দিতে পারলে মেয়েটি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচত। আর খাওয়ার মাঝে ছোট ছোট চিমটির কাটি হত দু’জনের। সারা রমজান মাস একে অপরের সাথে ইফতার করা অতঃপর পাশাপাশি বসে থাকা।
দুষ্টামি আর ভালবাসা;
শাড়িতে অপরূপ লাগছে মেয়েটিকে। নীল রঙয়ের শাড়িতে অসম্ভব রকমের মানায় তাকে। এই রকম কতদিন শাড়ি পড়ে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধানমন্ডি লেকের পানির দিকে তাকিয়ে কত কথা বলে যাচ্ছে দু’জনে। কখনো হাসি কখনো চোখ টিপে মজা করা। কখনো আঙ্গুলের লুকোচুরি খেলা চলে তাদের। এক হাতের আঙ্গুলগুলি অন্য হাতের আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরতো। আর বলা হত এই আঙ্গুল ধরতে পার কিনা দেখি। মেয়েটি অধিকাংশ সময় ধরতে পারলে ছেলেটি ছিল মিথ্যুক। কখনো হত গানের খেলা। মেয়েটি গান গাইতো আর গানের শেষ অক্ষর দিয়ে ছেলেটিকেও গাইতে হবে। ছেলেটি গানের ‘গ’না বুঝলেও মিথ্যা মিথ্যা গান বানিয়ে বলতো। মেয়েটির গানের গলা খুবই ভাল।
ছেলেটির জন্মদিন;
ছেলেটির আজ জন্মদিন। জন্মদিন পালন হল। কেকের উপর জ্বলন্ত উনিশটা মোম। বড় বড় অক্ষরে GADHA লিখা। এক একটা মোমের আলো অন্ধকারকে দূরে টেলে দিয়ে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। একটা মোমে আগুন দিতেই শোঁ শোঁ করে আগুন উপরে উঠে গেল। কেক কাঁটা হল আর অনেক উপহার তালু বন্ধী হল ছেলেটির। ছেলেটির জন্মের পর আজ প্রথম জন্মদিন পালন করা হল। সেদিন শুধুই আজ, আর কি কখনো জন্মদিন এভাবে কাটবে ছেলেটির!
মুক্ত মেয়েটি;
আজ মেয়েটির কোন পিছুটান নেই। দেরি করে খাইলে কেউ বকা দেয়না। সন্ধ্যার সময় তাড়াতাড়ি টিউশনিতে না গেলে কেউ গালি দেয়না। ফোন না ধরলে, ফোন না দিলেও কেউ মারেনা। অল্পতে কেউ রাগারাগি করেনা। আজ মেয়েটি স্বাধীন। সত্যি আজ মেয়েটি মুক্ত। কেউ তাকে জ্বালায় না, রাগায় না। আজ হয়তো সে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে।
আজ এক বছর পূর্ণ হল স্মৃতির পাতার অংকগুলোর। ছেলেটি আজকে আবার কার্জন হলে গেল। আজ তবে একা। অনেক একা। কালকের সেই মাঠে গাছের নিচে বসল। উদ্যানের মাঠে বসলো কিন্তু গল্পের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার কেউই ছিলোনা। কিছুক্ষণ পর আজকেও বৃষ্টি নামতে পারতো। ছেলেটি রিকশা থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজতো। আজকে কেউ নেই। কোন ওড়নার ঘ্রাণ নেই। ট্রেন স্টেশনের বিদায়ের কান্না কেউ করে না, কেউ তাকিয়ে থাকেনা ছেলেটির পথ পানে। রান্না হয়, তবে ক্যান্টিনে বসে খাওয়া হয়না সেই আগের মত। চুরি করে কেউ লবণ খেলেও ছেলেটি আজ রাগ করে বকা দেয় না। কোন ইফতার একসাথে হয়তো হবেও না। ধানমন্ডি লেক আছে এখনো, নীল শাড়ি পড়া হাজারো মেয়ে আছে ঠিকই, কিন্তু আজ ছেলেটির সাথে সেই মেয়েটি নেই। তবে হয়তো সেখানে আর আঙ্গুলের লুকোচুরি খেলা হয় না। হয় না কোন গান বাঁধা। জন্মদিন আসে- তবে কেকের উনিশটি সাদা আলোর মাঝে কেউ হাসে না, আর হয়তো কেক কাঁটাও হবেনা কোনদিন। আজ ছেলেটি হাসলেও কারো মনে তৃপ্তি জাগাবে না। দু চোখ ভাসিয়ে কাঁদলেও সে আজ চোখের জল মুছে দিবে না। এমন না বলা হাজারো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে হয়তো বাকি জীবন বেঁচে থাকবে, ছেলেটি।
“যদি ডেকে বলি, এসো হাত ধরো
চল ভিজি আজ বৃষ্টিতে।
এসো গান করি,মেঘমল্লারে,
করুণা-ধারা দৃষ্টিতে”।
আসবেনা তুমি,জানি আমি জানি…
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:১৪
নিরন্তর যাত্রা বলেছেন: থ্যাংকস ভাইয়া......
২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:২৮
ডার্ক ম্যান বলেছেন: জীবনে যাই ঘটুক মানুষ সবসময় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে দারুন পাঙ্গম।আপনার লিখা অনেক ভাল লাগলো।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৫
নিরন্তর যাত্রা বলেছেন: বাস্তবতা মেনে নিয়ে বেচে আছি আজ। সহজে মানুষ কি করে স্মৃতি ভুলে যায়, কর্পোরেট হয়ে যায়, অবাক হয়ে ভাবি।।
থ্যাংকস ভাইয়া
৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫
আমিনুর রহমান বলেছেন:
লিখা ভালো হয়েছে!
১৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:১৩
নিরন্তর যাত্রা বলেছেন: থ্যাংকইউ আমিন ভাইয়া!
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪
জমরাজ বলেছেন: ভাল লেগেছে।