![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন মানেই সুখ আর বেদনা, যাতে সবাই খুজে বেড়ায় বেঁচে থাকার প্রেরণা :)
অনিক আজও লেকের পাড়ে বসে আছে.....কিন্তু আজকের দিনটা আর অন্য দিনের মতো নয়! সারি সারি পাথর বসানো এই জায়গাটায় সে আগেও বসতো!! কিন্তু আজ সে একা....বড্ড একা!! আকাশের জমা হওয়া মেঘ দেখে চোখের কোনায় জল জমলো তার!! সে ভাবতে লাগলো, আকাশের মেঘ উড়ে যায়, অথবা বৃষ্টি হয়ে ঝরে যায় একসময় কিন্ত জীবনের জমা হওয়া মেঘগুলো বৃষ্টির মতো ঝরে যায় না কেনো???
এক
মেয়েটির নাম নীলা। এই লেকের পাড়েই প্রথম দেখা, পরিচয়। শীতের এক বিকেল, সে বসে ছিলো পাথরের এই যায়গাটিতে। আর নীলা বসে ছিলো লেকের পাড়ের বেঞ্চটিতে। সেদিন অনিক কেঁদেছিলো খুব....কারন তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার রেসাল্ট দিয়েছিলো সেদিন....কিন্তু সে তার পছন্দের বিষয় সে পায় নি। সে কান্না ভেজা চোখে দূরে বসা নীলার দিকে তাকাচ্ছিলো বারবার। সুন্দরী মেয়েদের দিকে তাকানো মিস করতে নেই, অনিক এই মতবাদে বিশ্বাসী। সেদিন দূরে একা একা বসে থাকা নীলাকেও কস্টে জর্জরিত মনে হচ্ছিলো। হয়তো সেও কেঁদেছিলো কোন যন্ত্রণায়। কিন্তুু অনিক তা বুঝতে পারে নি। বুঝার কথাও না।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। অনিকের শীত শীত লাগছে। লেকের পাড় থেকে সে চলে যাবে, সে উঠে পড়লো। দূরে মেয়েটি বসে আছে এখনো। মেয়েটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ডাক আসলো!
:এই যে শুনছেন!
(অনিক অবাক হয়ে পেছনে তাকালো)
:জ্বী...বলুন?
:আপনি কাঁদছিলেন কেন?
(অনিক আরো অবাক হলো! কারন এইভাবে অচেনা একটা মেয়ের ডাইরেক্ট প্রশ্ন করা আসলেই অবাক হওয়ার কথা)
:জ্বী না...আমি কাঁদছিলাম না তো!! চোঁখে পোঁকা পড়েছিল...এর জন্যই চোঁখ কাঁন্না কাঁন্না দেখাচ্ছে।
:আপনার এই কান্নার ব্যাপারটা কিন্তু আপনার চোঁখের দেখে বলি নি....কান্নার পর মানুষের স্বাভাবিক কন্ঠও অন্যরকম হয়ে যায়। আপনার কণ্ঠেই বুঝা যাচ্ছে আপনি কেঁদেছেন অনেক!!
:বাদ দেন...আমার কান্না যেনে আপনার কি হবে? তবে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম ....আপনিও কিন্তু কেঁদেছেন?
(অনিকের এই কথা শুনে মেয়েটি মুচকি হাসলো....হাসলে মেয়েদের অদ্ভুত সুন্দর লাগে.....অনিক তা আজ প্রথম বুঝতে পারলো)
:জ্বী না...আমি কাঁদি নি....আসলে আমার এতো সহজে কান্না পায় না। এইখানে আমি প্রায় সময় ই একা একা আসি...আজও আসলাম। তবে এটা সত্য আমার মন কিছুটা খারাপ!
(অনিক এ ব্যাপারে আর কোন প্রশ্ন করলো না)
মেয়েটি বললো,
:আচ্ছা আপনার নাম কি?
:অনিক, আপনার?
:নীলা।
:এর জন্যই কি নীল ড্রেস পড়েছেন?
নীলা হাসতে হাসতে বললো,
:না তো....নীল আমার পছন্দের রং....এর জন্যই এই রঙ্গের ড্রেস বেশী পড়া হয় আমার।
(সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়। মাগরিবের আজান হচ্ছে। )
:আচ্ছা....সন্ধ্যা হয়ে গেছে....আমি যাই। আপনি কি যাবেন না এখন? সন্ধ্যার পর লেকের পাড়ে একা একা থাকা ঠিক না।
:জ্বী....কিন্তু সন্ধ্যার পর এখানে অনেক জোনাকি জমা হয়!....দেখার ইচ্ছে ছিলো খুব।!
(অনিক আর কথা বাড়ালো না...সে বিদায় নিয়ে চলে গেলো..দূরে গিয়ে সে পেছন ফিরে তাকালো একবার...নীলা চলে যাচ্ছে...অনিকের আফসোস হলো যে নীলার জোনাক আর দেখা হলো না....অনিকের মনটা ভালো হয়ে গেলো....একজন অপরিচিত মেয়ের সাথে কথা বলে মন ভালো হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা কিছুতেই তার মাথায় ঢুকলো না। শুধু একটু হাসলো সে....মোবাইলে অনেক মিসড কল জমা হলো! ফেসবুকে নোটিফিকেশনে ভরে গেছে! সে সিদ্ধান্ত নিলো আজ আর কারো কল ধরবে না....ফেসবুকেও ঢুঁ মারবে না....এইসব করে সে তার মুড নস্ট করতে চায় না )
দুই
লেকের প্রতি অনিকের মায়া জন্মে গেছে অনেকটা। ইদানিং প্রায় প্রতিদিনই সে এইখানে আসে..মানুষ আসলেই অদ্ভুত ....চরম কস্টের মুহুর্তে যেখানে সে একটু স্বান্তনা একটু আনন্দ খুজে পায় সেটাকেই সে খুব আপন করে নেয়.....অনিক ও হয়তো স্বাভাবিকভাবেই এই লেকটিকে আপন করে নিয়েছে খুব। আজকে সে একটু পর পর আসেপাশে তাকাচ্ছে। কয়েকটি বেঞ্চ খালি, আর কয়েকটিতে কপোত-কপোতীরা বসে আছে। অনীক আনমনে হয়ে নীলাকে খুজতে থাকলো! কিন্তু নীলাকে আর খুজে পেলো না সে।
কয়েকদিন কেটে গেলো। অনিক প্রতিদিনই লেকের পাড়ে আসে। নীলাকে খুজে! তবে কি সে নীলার প্রেমে পড়ে গেলো!!
আজও লেকের পাড়ে বসে আছে সে। দূরে নীলার মতোই কাউকে যেনো দেখতে পেল সে। আজ সে লেকের ওপাড়ে পাথর বাঁধানো ঘাটে বসে আছে। সে নীলার কাছে গেলো।
:নীলা! কেমন আছেন?
নীলা চমকে উঠলো।
:আরে....আপনি অনিক না?
:জ্বী....তা কেমন আছেন?
:ভালো। আপনি?
:ভালোই! অনেকদিন দেখলাম না আপনাকে?
:ও...আমি একটু শহরের বাইরে গিয়েছিলাম। চলুন আমরা বেঞ্চিতে গিয়ে বসি।
(নীলা অনিক বেঞ্চিতে বসে আছে....নীলাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে আজকে। কেমন জানি কস্টের একটা ছাপ )
অনিক বলে উঠলো,
:তা আজকে সাদা ড্রেস পড়েছেন যে?
নীলা হাসতে হাসতে বললো,
:আজকের আকাশটা বেশী নীল না....সাদা মেঘ জমেছে অনেক....এর জন্যই সাদা ড্রেস পড়েছি।
পাশে এক বাদামওয়ালা বাদাম বিক্রি করছে। অনিক কিছু টাকার বাদাম কিনলো।
:নিন...বাদাম খান..?
:জ্বী...আপনি খান।
:আরে নিন....আমি কিন্তুু অজ্ঞান পার্টির লোক না....এই বিশ্বাসটুকু রাখতে পারেন। আর বাদাম খেয়ে খেয়ে গল্পও কিন্তুু জমে ভালো।
(এর মাঝে অনেক গল্পই হলো তাদের। কে কি করে! কই পড়াশোনা করে ইত্যাদি। নীলা এইচ.এস.সি প্রথম বর্ষে পড়ছে)
অনিক নীলাকে বললো....
:তা জোনাকি দেখা হয়েছে আপনার?
:না...সন্ধ্যায় একা একা ভয় করে!
:আমি যদি সাথে থাকি দেখবেন?
:নীলা কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। জ্বী দেখবো। আমার অনেক দিনের সখ জোনাকি দেখা।
সন্ধ্যায় জোনাকি দেখা হলো তাদের। অনিক এক দুইটা জোনাকি ধরে নীলার হাতে দিলো। জোনাকি হাতে পেয়ে নীলার আনন্দের সীমা রইলো না....তারা ফুচকা খেলো...রাস্তা ধরে হাঠলো....আরো অনেক গল্প করলো তারা। নীলা অনিককে তার মোবাইল নাম্বার ও দিলো।!
নীলার ফোন আসলো, লেকের কাছের রাস্তাটায় তার ড্রাইভার অপেক্ষা করছে। নীলা বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আর কোন দিন দেখা হবে কি না হবে এই ব্যাপারটিও জানতে পারলো না সে।
এভাবে প্রায় প্রতিদিনই তাদের দেখা হতে লাগলো। অনিক বুঝতে পারলো সে নীলার প্রেমে পড়ে গেছে.... কিন্তুু নীলার মনেও কি এই প্রেম জাগ্রত হয়েছে? সে বুঝতে পারলো না।
এভাবে অনেক দিন কেটে গেলো....
আজও নীলার সাথে দেখা হবে তার....সে সিদ্ধান্ত নিলো আজ সে তার মনের কথা বলেই দেবে। মনের কথা চেপে রাখা যে এতো কস্টের হবে সে ভাবতেই পারে নি।
তিন
অনিক লেকের পাড়ে বসে আছে....হাতে লাল গোলাপ....কিন্তুু নীলার দেখা নেই....মোবাইলও বন্ধ!!! সে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে আছে! কিন্তু নীলা আর আসলো না।
এভাবেই অপেক্ষা করতে করতে কেটে গেলো কয়েকদিন.....কিন্তুু তবুও অনিক প্রতিদিনই আসে এখানে....হাতে থাকে আগে কেনা লাল গোলাপটি। যদিও গোলাপটি শুকিয়ে গেছে, কিন্তু সে নতুন গোলাপ কেনে না আর...কারণ যে আবেগ নিয়ে গোলাপটি কিনেছিলো সে হয়তো নতুন আরেকটি কিনলে সেই আবেগ নাও থাকতে পারে। তাই এই শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ নিয়েই সে অপেক্ষায় থাকে...কিন্তুু নীলা আর আসে না...সে নীলার দেখা পায় না।
সন্ধ্যায়, আজও অপেক্ষার পর লেকের পাশের রাস্তা ধরে হেটে চলে যাচ্ছে সে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কেন জানি অচেনা লাগছে সবকিছু!!! এমন সময় পাশে একটি গাড়ি এসে থামলো। একজন লোক নেমে আসলো।
:আপনি তো অনিক? তাই না?
:জ্বী...আপনি?
:আমি নীলা ম্যাডামের গাড়ির ড্রাইভার। ম্যাডাম আপনাকে চিঠিটি দিতে বলেছিলেন।
অনিক চিঠিটি হাতে নিলো....বললো,
:নীলা কোথায় এখন? কেমন আছে ও? আমি গত কয়েকদিন থেকে খুজছি তাকে? তার মোবাইলও বন্ধ।
ড্রাইভার কাঁপা কাঁপা গলায় বললো....
:ম্যাডাম আর এই পৃথিবীতে নেই। উনি মারা গেছেন দুদিন আগে। মৃত্যুর আগে আপনাকে চিঠিটি দেয়ার কথার বলেছিলেন। এই বলে সে চলে গেলো!
অনিক কিছুতেই ঘটনার আকস্মিকতা বুঝতে পারলো না। সে বসে পড়লো রাস্তার পাশে। কাঁপা কাঁপা হাতে নীল খামের চিঠিটি খুললো সে....
অনিক,
কেমন আছো? আমি জানি এই চিঠি পড়ার সময় তুমি কিছুতেই ভালো থাকতে পারবে না। আমি জানি তুমি আমার প্রেমে পড়েছিলে, দেখতে দেখতে আমিও যে কখন তুমার প্রেমে পড়েছি বুঝতেই পারি নি। কিন্তুু আমি তোমাকে ধোঁকা দিতে চাই নি। আমি জানতাম কিছুদিন পর আমি মারা যাচ্ছি। তোমার সাথে যেদিন প্রথম দেখা সেদিনই আমি জানতে পেরেছিলাম যে আমার ক্যান্সার...লাস্ট স্টেজ। তোমার সাথে কাটানো আমার শেষ দিনগুলো আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ছিলো। এই চিঠি লেখার সময় এখনো আমার মনে হচ্ছে তুমি আমার হাতে জোনাকি তুলে দিচ্ছো। মনে আছে তোমার ঐ সন্ধ্যায় জোনাকি ধরার কথা? ভালো থেকো। ক্ষমা করো আমায়।
-নীলা।
আকাশে কালো মেঘ জমেছে, চাঁদের আলো কালো মেঘে ঢেকে গেছে, দুচোঁখে জল জমেছে তার। বুকপকেট থেকে শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ বের করলো সে। হাতে নীল খাম আর আর একটি শুকনো লাল গোলাপ। সোডিয়াম লাইটের নিচে রং বদলে গেছে তাদের। ঠিক যেনো নীলার জীবনের মতোই।
সে হাটতে থাকে, এই পথ কি আজ শেষ হবে???
জীবনে অনেক কিছু হারিয়ে যায় আবার অনেক কিছু না পাওয়াই রয়ে যায়। সমস্যা কি? কস্ট ছাড়া কি জীবন হয় কখনো???
©somewhere in net ltd.