![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মৃত্যু। জগতের সকল প্রানীর জন্য এক অবধারিত সত্য। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু আমাদের অবাক করে দেয়। আমাদের মনের ভিতর কে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। সন্তান হারোনো কোন মা কে তার বেদনার কোন সান্তনা দেয়া যায় না। এ আসলে সন্তান হারোনো মা ছাড়া অন্য কেউ বুঝবেওনা। বলা হয় সন্তানের মৃত দেহের বোঝা বাবা মায়ের কাঁধে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি। নিজের এই ক্ষুদ্র জীবনে এই অভিজ্ঞতা ও আল্লাহ দিয়েছেন। অনেকে অনেক সান্তনা সমবেদনা দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি কি কখনো তাকে ভুলতে পেরেছি। এই দুই হাতে আমি তাকে কবরে শুইয়ে রেখে এসেছি। এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় কি ভাবে পারলাম আমি তাকে ঐ অন্ধঁকার ঘরে রেখে বাসায় চলে আসতে। আত্বীয় স্বজন সবাই বল্লো, ছেলেটা একদম তোর মত দেখতে, কিন্তু আমি তো পারলাম না তাকে ধরে রাখতে। আমার ই যদি এমন হয়, তাহলে তার মায়ের কি অবস্থা !! প্রথম দিকে আমি তাকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, এখন আর আমি তার সামনে এই প্রসঙ্গ উঠাই না। এমনকি কোন সন্তান হারা মায়ের সামনে তাকে সান্তনা দিতেও যাই না। (সরি, একান্ত ব্যক্তিগত কথায় চলে যাওয়ার জন্য)।
আমাদের ম্যানিলা অফিসের সেক্রেটারি ম্যাদাম আইরিশ। বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। ম্যানিলায় থাকেন। প্রায় ২০ বছর ধরে সে আমাদের অফিসের সাথে যুক্ত। স্বামী আর এক ছেলেকে নিয়ে সুখেই ছিলেন। নভেম্বর মাসেই পুরো ফ্যামিলির সাথে অফিসিয়াল পিকনিক (আউটিং) এ দেখা হয়েছিলো। অফিসিয়াল পিকনিক এর গল্প আর ছবি অন্য একটা পর্বে আপনাদের জানাব। ছেলেটা অনেক হাসিখুশি। আমার সাথে অনেক ক্ষন কথা হলো, একসাথে সুইমিং পুলে সাঁতার ও কেটেছিলাম। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তায় হঠাৎ শুনি উনার ছেলেটা খুবই অসুস্থ। আই সি ইউ তে ভর্তি। জানুয়ারী ২০১৪ এর প্রথম সপ্তায় (৩ তারিখ মনে হয়) এক সকালে শুনি ছেলেটা বেচে নেই। প্রথমে আমি মনে হয় বিশ্বাস ই করতে পারছিলাম না। ২০/২১ বছরের একটা ছেলে। তাও আবার মারা গেল নিউমোনিয়ায়। এই গরমের দেশে, যেখানে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী এর নিচে নামে না।
যাই হোক, অফিসে সারাদিন এটা নিয়ে সবার মধ্যেই আলোচনা। সবাই ঐ ছেলেটির নানা স্মৃতিচারন করল, এক পর্যায়ে ম্যানেজার বল্লেন, আগামীকাল তো শনিবার অফিস বন্ধ, আমাদের তো ওদের বাড়িতে যাওয়া উচিৎ। আমি যেতে চাচ্ছিলাম না শুনেই দেখলাম উনি মনে হয় খুবই মাইন্ড করলেন। উনি অনুরোধ ও করলেন, পরে মনে হলো, এত করে বলছে, বস বলে কথা, ঠিক আছে যাব। মহিলার জন্য খুবই খারাপ লাগলো। এমন এক বয়সে তিনি সন্তান হারা হলেন, যখন হয়ত আর উনার মা হওয়ার সুযোগ নেই। সংসার নতুন করে গোছানোর / শুরু করার আর উপায় নেই। তার জন্য আসলে আর কি সান্তনা হতে পারে।
কিছুক্ষন পর আমাদের সুবিক অফিসের সেক্রেটারি আইরিন (আইরিন এবং আইরিশ কিন্তু দুই বোন নয়, মিলটা কাকতালিয়) আসল আমার ডেস্কের সামনে। তার সাথে আমার কথোপকথনটি পুরোটিই তুলে দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
আইরিন : আমাদের তো কিছু কন্ট্রিবিউট করা দরকার। তুমি কি কিছু কন্ট্রিবিউট করতে চাও ?
আমি (অনেকটা অবাক হয়ে !! ) : আমি ? আমি কি জিনিষ কন্ট্রিবিউট করতে পারি ?
আইরিন : তুমি মানি (পেসো) কন্ট্রিবিউট করতে পার।
আমি (আবারো অবাক !! ) : কেন ? সে কি খুব গরিব ? তা তো হবার কথা নয়, প্রায় ২০ বছর ধরে সে আমাদের ম্যানিলা অফিসের সেক্রেটারি।
আইরিন : না সে গরিব হতে যাবে কেন ?
আমি : তাহলে কি তার ছেলের সৎকার করার মত টাকা তার নেই?
আইরিন : আচ্ছা এখন বুঝতে পেরেছি, আসলে এটা ফিলিপাইনে আমাদের রেওয়াজ, কেউ মারা গেলে আমরা তার পরিবার কে সমবেদনা জানাতে টাকা ডোনেট করি।
আমি : সমবেদনার সাথে টাকার সম্পর্ক টা আসলে বুঝলাম না।
আইরিন : টাকার সম্পর্ক অবশ্যই আছে।
আমি : যেমন ?
আইরিন : মৃতদের সৎকারে এখানে অনেক টাকা খরচ হয়
আমি : কেন ? কবরস্থানের জায়গার দাম কি বেশি ?
আইরিন : তা তো আছেই, অনেক মেডিসিন কিনতে হয়।
আমি : কেন ? মেডিসিন দিয়ে কি হবে ?
আইরিন : আরে ডেড বডি টা তো ৭-১০ দিন রাখতে হবে। কেন তোমাদের ওখানে রাখে না ?
আমি : ওরে আল্লাহ !! ৭-১০ দিন রাখতে হবে কেন ? আমাদের দেশে তো ৭-১০ ঘন্টার মধ্যেই কবর দিয়ে ফেলি।
আইরিন : ৭-১০ ঘন্টার মধ্যেই কবর দিলে তো মৃত মানুষের কোন আত্বীয় স্বজন তাকে দেখতে আসতে পারবে না।
আমি : কেন ? কাছের আত্বীয় স্বজনরা দেখবে, দুরের আত্বীয় স্বজনরা এর মধ্যে যারা আসতে পারবে তারা দেখবে ?
আইরিন : আমাদের এখানে তো মৃত মানুষের আত্বীয় স্বজন সবাই আসবে, তার প্রায় সব বন্ধুরা আসবে তাই ৭-১০ দিন রাখতে হলে অনেক মেডিসিন কিনতে হবে।
আমি : আচ্ছা আর কিভাবে খরচ হতে পারে ?
আইরিন : মারা যাওয়ার পর কারাওকি সেট আনতে হব। বাসার সামনে প্যান্ডেল টাঙ্গাতে হব।
আমি : এ গুলি আবার কেন লাগবে ?
আইরিন : মৃত ব্যক্তির আত্বীয় স্বজন যারাই আসবে সবাই বিভিন্ন ক্যারল (বাইবেল সং) গাইবে বা বাইবেল পাঠ করবে।
আমি : তাই বলে ক্যারল আর বাইবেল পাঠের জন্য কারাওকি ?
আইরিন : যারা আসবে তাদের গান শুনানো হবে, তারা যেন বিরক্ত না হয়।
সাথে সাথে দেখলাম যে আইরিন খুব বিরক্ত বোধ করছে, আমি আর কথা এগুতে চাইলাম না। এই কথোপকথনের সাথে সাথে আমার মধ্যে শোক টা কেমন যেন কমে গেল । আমি আইরিনকে কিছু পেসো দিয়ে বল্লাম আমার নামে তুমি এটা কন্ট্রিবিউট করে দিও। আর আমি ওখানে যেতে চাচ্ছি না।
ধন্যবাদ
২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৪
বেলা শেষে বলেছেন: ....যারা আসবে তাদের গান শুনানো হবে, তারা যেন বিরক্ত না হয়।
সাথে সাথে দেখলাম যে আইরিন খুব বিরক্ত বোধ করছে.....
Assalamualikum brother, to much beautiful writing, good sensible Feeling....but i am thinking what will happen after my death....
৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১৮
পথহারা নাবিক বলেছেন: এইটা কি শেষকৃত্য নাকি যাত্রাপালা!!
৪| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:২৭
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: আজব সংস্কৃতি , ......: যারা আসবে তাদের গান শুনানো হবে, তারা যেন বিরক্ত না হয়।
আপনার সুন্দর লেখনী ভালো লাগলো।
৫| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:২২
তোমোদাচি বলেছেন: আজব!!
৬| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪
আদম_ বলেছেন: আজব!!
৭| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:১৪
তূর্য হাসান বলেছেন: অদ্ভুত। এজন্যই কথায় আছে এক দেশের বুলি আরেক দেশের গালি। কিন্তু মৃতের স্বজনদের গান শোনানো অদ্ভুত!!!!
আর আপনাকে সমবেদনা রইল।
৮| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৩
হতাশ নািবক বলেছেন: ঘটনা টা যদিও খুব মর্মান্তিক , তবুও আপনার লেখনি তে খুবই সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। চালিয়ে যান।
৯| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩১
গ্রাম্য২০১৭ বলেছেন: May be i am the most ungrateful reader of your blog. I almost read every blog of your but never commented. I am not a blogger, just a reader, thats why i dont comment in posts. Now i have to tell you, this series of Philippines diary is really good one. Keep it up bro. I will always visit your blog.
Your personal experience of death touched me also. Those words are really touchy. Nothing to console you as you accepted the ultimate truth.
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০১
ইমরান হক সজীব বলেছেন: অদ্ভুত! আজীব সংস্কৃতি!