"বাবা মায়ের নির্বুদ্ধিতায় এভাবেই হারিয়ে যেতে হয় অনেক কে"

০১ লা জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:২৯

বোরখা পরে আছে মেয়েটি।কালো বোরখা।সর্বাঙ্গ ঢাকা শুধু চোখ দুটো বাদে।মেয়েটা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে।মনে হচ্ছে আমি তার পূর্ব পরিচিত।কেউ বার বার তাকালে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে।অস্বস্তি দূর করতে হলে যে তাকাচ্ছে তার সাথে কথা বলতে হয়।আমি মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলাম।
.
কিছু বলবেন?
-চিনতে পারিস নাই, না?জানতাম চিনবি না।মুখ ঢাকা থাকলে কি আর চিনতে পারবি?
এই কথা বলে মেয়েটা পর্দার আড়াল থেকে মুখ বের করল।আমি বেশ ধাক্কা খেলাম।এ যে দিয়া।
আমার খুব ঘনিষ্ট কয়েকজন বন্ধুর মধ্যে দিয়া একজন।এস এস সি তে আমরা একসাথে পড়েছি।আমাদের আরও একটা বন্ধু ছিলো।নীলু নাম।নীলু মেয়েটা সুন্দর ছিল।খুব সুন্দর।আমি ওকে পছন্দ করতাম।নিজ মুখে কখনো বলিনি।তবে আকার ইংগিতে অনেকবার বোঝাতে চেয়েছি।হয়তো বুঝেছিল নয়ত না বোঝার ভান করেছিল।তবে আমার দুর্ভাগ্য যে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়।তারপর আমিও কেমন যেন হয়ে গেলাম।যোগাযোগ রাখিনি আর কারো সাথে।সে অনেকদিনের কথা।আজ এতদিন পর দিয়ার সাথে দেখা হবে ভাবতেই পারিনি।
.
-কেমন আছিস রে দিয়া।
-আমি ভাল আছি।তোর খবর বল।
-আছি আগের মতোই।নীলুর সাথে কথা হয় না তোর?কেমন আছে রে মেয়েটা?
আমার কথা শুনে দিয়ার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।বললাম,
-কিরে মুখ এমন শুকনো হয়ে গেল কেন?
-তুই কিছুই জানিস না?
-না।
-তোর অবশ্য জানার কথাও না।তুই তো আর যোগাযোগ রাখিস নি আমাদের সাথে।জানবি কিভাবে?
-কেন? কি হয়েছে?
-নীলু মারা গেছে। অল্প বয়সে বিয়ে দিলে যা হয়।বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পেটে বাচ্চা এলো।
বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়েই মেয়েটা মারা গেলো।বাচ্চাটাকেও বাচানো যায় নি।মায়ের পেটেই বাচ্চাটা মারা গেছে।
.
কথাটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।চোখের সামনে নীলুর ছবি ভেসে উঠল।এই তো হাসি খুশি মায়াবী চেহারার মেয়েটি।পৃথিবীটাকে ভাল করে দেখতে না দেখতেই তাকে বিদায় নিতে হলো।পৃথিবীর স্বাদ গন্ধ কিছু পেল না নিষ্পাপ শিশুটিও। বাল্যবিবাহের করাল গ্রাসে হারিয়ে যেতে হলো দুটি জীবন কে।আমরা কত নিষ্ঠুর! কত বড় আহাম্মক!দুটি জীবন কে আমরা বাঁচতে দিলাম না।
.
কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেয়াটা অন্যায়।শুধু অন্যায় নয় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।অপ্রাপ্ত বয়স্ক কাউকে বিয়ে দেয়া হল অত্যাচার করা।মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার।সাঁতার না জানা কাউকে যদি ভরা নদীতে নামিয়ে দেয়া হয় তাহলে তার ডুবে যাওয়াটা শতভাগ নিশ্চিত।তেমনি কম বয়সের কোন মেয়েকে বিয়ে দিলে তার অবস্থাও সাঁতার না জানা ব্যক্তির মত হবে।সংসারের ঘানী টানতে টানতে সে নিজেই একসময় সংসার সাগরে তলিয়ে যাবে।নীলু যেরকম তলিয়ে গেলো চিরদিনের জন্য।

১১ টি +০/-০