| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
কাজের এক মেয়ে। চিরদুখিনী। সংসারে আপন বলতে কেউ নেই তার। আজন্ম এতিম সে। নাম তার মরিয়ম আক্তার। চারদেয়ালের জীবন নিয়ে খাঁচাবন্দি পাখির মতো ছটফটায়। কেঁদে কেঁদে তার চোখ জলশূন্য হয়ে গেলে জীবনযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চায় সে। এভাবেই পেরিয়ে যায় তার ধূসর শৈশব।মরিয়ম এখন রজস্বলা কিশোরী। স্রাব থেমে গেছে সেই কখন। থেকে থেকে সে এপাশ-ওপাশ করছে ড্রইংরুমের কার্পেটের ওপর। উঠি উঠি করে সকাল পেরিয়ে গেছে। দুপুর হতে বেশি দেরি নেই। তার সব কাজই পড়ে আছে।
কাজ নিয়ে আর এত ভাবতে হবে না তাকে। আফজাল খান কাউকে ডেকে এনে করিয়ে নিয়েছেন কিংবা নেবেন। কিছুদিন ধরে মনিব বড় দয়াবান। মরিয়মের জন্য সাত খুন মাপ। এই তো সেদিন ইস্ত্রি করতে গিয়ে সে প্রিয় ব্লেজারটা পুড়ে ফেলে। আফজাল খান কিছু না বলে মুচকি মুচকি হাসেন। নিজহাতে বাকি কাপড়গুলো ইস্ত্রি করে ঝুলিয়ে রাখেন হ্যাঙারে। পেয়ালায় চা ঢালতে গিয়ে মরিয়ম গতকাল ভেঙে ফেলে দামি চা-দানি। বকাবকি না করে আফজাল খান তাকে আদর করেন কোলে বসিয়ে।
আফজাল খান একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। বয়স ষাট ছুঁইছুঁই। আড়াই দশক ধরে বিপত্নীক। জনশ্রুতি হতে জানা যায়, তিনি নাকি পরকীয়া প্রেমে বাধা প্রদানের কারণে স্ত্রীকে মেরে ফেলেন গলা টিপে। আবার এমনও রটনা রয়েছে, বহুগামী এ লোকটির কাছে বুয়ারাও নিরাপদ নয়। নিন্দুকেরা বলে বেড়ায়, নারীতে কোনো বাচবিচার নেই আফজাল খানের। তাঁর কাছে যে কোনো নারীই নাকি অন্য কোনো নারীর অবিকল নকল।
এ-জাতীয় কথা মরিয়মও কিছু কিছু শুনেছে অর্পিতা সেনের কাছ থেকে।
অর্পিতা সেন বিজ্ঞাপনের মডেল। সংসারবৃত্তে প্রবেশ করেননি এখনও। ভালো ভালো খানাপিনার কারণে মধ্যচল্লিশেও তাকে যুবতি মনে হয়। তিনি আফজাল খানের পাশের বাসায় থাকেন একা একা। তাঁকে নিয়েও কানাঘুষা কম হয় না। আফজাল খানের ভাষায়, অর্পিতা সেন তো একটা খানদানি খানকি। একটু রেইট বেশি। এই আর কি!
অর্পিতা সেন কিংবা আফজাল খানের ব্যাপারে তেমন কোনো কৌতুহল নেই মরিয়মের। এঁদের সম্পর্কে বাজে ধারণা পোষণ করতে পারে না সে।
২.
ত্রিতল বাড়ির বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে আছেন আফজাল খান। পত্রিকার ওপর আতশী কাচ ধরে ধর্ষণ বিষয়ক সংবাদ পড়ছেন তিনি।
পাশের দ্বিতল বাড়ির ছাদে কার্নিশের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অর্পিতা সেন। ইয়ারফোন লাগিয়ে মোবাইলে কী যেন দেখছেন পুলকিত মনে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি জিগ্যেস করেন, কী খবর, দাদা?
আফজাল খান স্বগতোক্তি করেন, কোন অর্থে দাদা! ব্রাদার না গ্র্যান্ডফাদার?
অর্পিতা সেনের বুক বরাবর তাকিয়ে তিনি বলেন, আমার খবর কে রাখে! বাসায় চলে আসুন না।
বাসায় নেই কেউ?
পল্লব তো ক্যামেরা নিয়ে সারা দিন বাইরে বাইরেই থাকে।
ফটো জার্নালিস্টরা এ রকমই হয়, বোধকরি। আর কেউ কি নেই?
থাকার মতো আর কে আছে আমার, বলুন?
না, মানে আমি মরিয়মের কথা বলছিলাম।
ও! মনে হয় ওর রেড সিগনাল চলছে, বলে তিনি বিটকেল হাসি হাসেন।
অর্পিতা সেন থু-থু করে থুতু ফেলে বলেন, কী বাজে বকছেন আপনি! একটা বাচ্চামেয়েকে নিয়ে এমন রসিকতা মানায় না, দাদা।
লোকটির প্রতি মনোযোগ হারান তিনি। তাকিয়ে থাকেন উড়ন্ত চিলের দিকে।
পর্দার ফাঁকে মরিয়মকে দেখা যায়। রজঃস্নান সেরে শাড়ি পরে নারী সেজেছে। বৈশাখী শাড়িটা আফজাল খানের ছেলের দেওয়া বিশেষ এক উপহার।
ছাদের মহিলাকে দেখে নিয়ে লোকটি নব্যনারীটিকে কাছে ডেকে আনেন। পিঠে হাত বুলিয়ে বলেন, বাহ! খুব সুন্দর তো।
৩.
বিকেলে আফজাল খান বারান্দায় পায়চারি করছেন। কপাল কুঁচকে যা মনে আসে তাই ভাবছেন। কী ভাবছেন তাও ভুলে যাচ্ছেন মাঝে-মধ্যে। ওদিকে ছাদের ওপর লেপটা মেরে বসে অর্পিতা সেন রোদ পোহাচ্ছেন। বারান্দায় এসে পড়েছে রোদের ছায়া। গ্রিল ধরে সেখানে দাঁড়িয়ে পুনরায় আলাপ জমিয়ে দেন আফজাল খান।
দেখুন, কী নিস্তেজ এই বিকেলের রোদ!
রাতে খুব কুয়াশা পড়বে, তাই না?
আজ নাকি পূর্ণিমা। কুয়াশায় ভিজবো।
এখনও পানাসক্ত আপনি?
আফজাল খান নিরুত্তর। হাই তুলে হাঁচি দিয়ে ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে দেন। চোখ বুজে দরদি কণ্ঠে ডাকেন, মরি-য়-ম!
মরিয়ম বিস্মিত। তাকে তিনি নাম ধরে ডাকেননি আগে কখনও। ঘর থেকে দৌড়ে আসার সময় শাড়িতে পা জড়িয়ে পড়ে যায় সে। আফজাল খান উঠে গিয়ে হাত ধরে তাকে তোলেন। বুকের কাছে টেনে আদর করতে করতে জিগ্যেস করেন, কোথাও ব্যথা পাওনি তো?
‘তুই’ থেকে ‘তুমি’ সম্বোধন শুনে মরিয়মের বিস্ময়ের মাত্রা আরও বাড়ে। জবাবে সে শুধু মাথাটা ডানে বামে নাড়ায়। কিছুণ চুপ থেকে প্রশ্নের অবতারণা করে, ডাকছিলেন কেন্, আঙ্কেল?
এমনিতেই। আর শোনো, আমাকে দাদা বলে ডাকবে, অর্পিতা সেনের দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে তিনি বলেন।
পল্লব ভাইয়াকে কী ডাকব?
ভাইয়া নয়, আজ থেকে সে তোমার আঙ্কেল।
আচ্ছা! বলে মরিয়ম চলে যায় দৃশ্যের আড়ালে।
৪.
আফজাল খানের মাথাটা ভীষণভাবে ধরেছে। নাকের ছেঁদায় সর্ষের তেল ঢুকিয়ে হাঁচি দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। পারছেন না।
মরিয়মকে ডেকে বলেন একটা প্যারাসিটামল আনতে। কিছুণ পর জবাব আসে, এই বড়ি তো ঘরে পাই না। চুল টাইনা দেই?
ছাদে অর্পিতা সেনকে দেখতে পেয়ে তিনি মরিয়মকে বলেন, এখানে নয়, ঘরে।
প্রৌঢ়া ওই মহিলা এবার বারান্দা থেকে বেশ দূরে। কার্নিশে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে আছেন। তাঁর সামনাসামনি এক যুবক দাঁড়ানো। কাঁধে ক্যামেরা ঝুলানো। দেখতে পল্লবের মতোই লাগছে। তীক্ষ্ণদৃষ্টির আফজাল খান চোখে হাই পাওয়ারের চশমা লাগিয়েও সনাক্ত করতে পারেননি তাকে।
অর্পিতা সেন ফাস্কের মুখে চা ঢেলে বাড়িয়ে দেন যুবকের দিকে। যুবকটি চুকচুক করে চা গিলছে আর কথায় কথায় হাসছে। আলাপের অস্পষ্ট কিছু ধ্বনি বায়ুতরঙ্গে ভেসে ভেসে আফজাল খানের কান পর্যন্ত আসছে। কিন্তু একটা শব্দও উদ্ধার করতে পারছেন না তিনি।
কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করে অর্পিতা সেন পোজ দিতে থাকেন। ক্যামেরার ফ্যাশ জ্বলে উঠছে বারবার। ভীষণ অস্থির হয়ে যান আফজাল খান। অতর্কিতে তিনি হাঁক ছাড়েন, আমার দুরবিনটা নিয়ে এসো।
দুরবিন হাতে অবিলম্বে ছুটে আসে মরিয়ম। অর্পিতা সেন হেলেদুলে বারান্দার নিকটবর্তী হন। শাড়িপরা নারীসাজা মেয়েটিকে দেখে নিয়ে বিকৃত কণ্ঠে রঙ্গোক্তি করেন, চোখে বাইনোকুলার লাগিয়ে কী করবেন, আঙ্কেল?
তোমার ছিনালি দেখব, বিড়বিড়িয়ে জবাব দেন আফজাল খান। অর্পিতা সেনের অভিব্যক্তি দেখে বোঝা যায়নি তিনি তা শুনতে পেয়েছেন কিনা।
মরিয়মকে বারান্দায় রেখে পায়ে পায়ে আফজাল খান চলে যান নিজের শূন্যঘরে।
স্তব্ধতায় বসে থেকে আঙুল ছোঁয়ান টেবিলে রাখা কলিংবেলের ওপর। মরিয়ম শুনতে পাচ্ছে ক্রিং-ক্রিং আওয়াজ।
কাজের মেয়েটি দৌড়ে প্রবেশ করে মনিবের ঘরে।
৫.
শত ফুসলানিতেও কাজ হচ্ছে না। ভীষণ চটে যান আফজাল খান। হুট করে ধরে ফেলেন মরিয়মকে। ঠাস করে চড় মারেন গালে।
একটি অসহায় আর্তনাদ। বাতাসে ভেসে ছাদের মহিলার কান পর্যন্ত পৌঁছয়।
এরপর ক্রমাগত গোঙানি। শুনতে পাচ্ছে ছাদ থেকে নেমে আসা যুবক।
৬.
দরজায় লাথি পড়ছে দমাদম। গোঙানির শব্দ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে হতে আচমকা থেমে গেছে।
অতিকষ্টে আড়ষ্ট হাতে কোনোমতে দরজা খোলে মরিয়ম। টলতে টলতে পড়ে যায় পল্লবের পায়ের ওপর। পাঁজাকোলা করে উঠিয়ে পল্লব স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মুহূর্ত কয়েক। বুঝতে পারছে না কী করবে সে। তাকে শুইয়ে দেয় বারান্দার মেঝেতে।
আলুথালু চুল। চোখে অবিরাম অশ্রু। ঠোঁটে ও বুকে দাঁতের চিহ্ন। পল্লবের দেওয়া শাড়িটায় ছোপ ছোপ রক্ত।
কম্পিত হাতে ক্যামেরার শাটার সরিয়ে পটাপট কয়েকটা স্ন্যাপ নিয়ে সে হুড়মুড়িয়ে ঢোকে আফজাল খানের ঘরে।
পল্লব লোকটাকে টেনেহিঁচড়ে বারান্দায় নিয়ে আসে। ছাদের ধোঁয়াটে আলোয় দাঁড়িয়ে অর্পিতা সেন একপাটি সেন্ডেল ছুড়ে মারেন মরিয়মের রক-ভক লোকটার দিকে। ঘাড় ও হাঁটুর নিচে ধরে পল্লব আছাড় মারে নরপশুটাকে।
চিৎকার করে ওঠেন অর্পিতা সেন, তুমি কি পাগল হয়ে গেলে পল্লব?
পল্লব ক্যামেরা দিয়ে সজোরে আঘাত করতে থাকে হায়েনাটার মাথার পেছনের দিকে। অর্পিতা সেন এবার মেঘগম্ভীর কণ্ঠে বলেন, এই লোকটাই তোমার জনক।
না! সে একটা হন্তারক। ধর্ষক।
আইনের হাতে তুলে দাও তাকে।
আইনের হাত পিচ্ছিল। শাস্তিটা নিজহাতে দিতে চাই।
অর্পিতা সেন মুঠোফোনের বাটন টিপে বলেন, হ্যালো, পুলিশ স্টেশন...।
কার্নিশের ওপর দিয়ে মুখ বাড়িয়ে তিনি পল্লবের প্রতি থুতু ছিটান। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকেন, কে কোথায় আছেন, লোকটাকে বাঁচান!
পল্লব নিস্পন্দ অপরাধীর কাছে হাঁটু গেড়ে বসে। পা দুটি জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ওঠে।
০৯ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৫২
হান্নান বলেছেন: thanks a lot. r u my fbf? if not, plz add me. https://www.facebook.com/hannan.kallol
২|
০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৫১
আরজু পনি বলেছেন:
গৃহকর্মীর প্রতি এহেন পাশবিক আচরনের বিচার যদি সব সময়ই হতো, তবে কতোই না ভালো হতো !
০৯ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৫৬
হান্নান বলেছেন: thanks a lot. r u my fbf? if not, add me. https://www.facebook.com/hannan.kallol
৩|
০৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮
রবিউল ফকির বলেছেন: গল্প লেখার ধরনটা খারাপ না। চেষ্টা চালিয়ে যান একদিন হয়তো বড় লেখক হয়ে যাবেন।
০৯ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৫৯
হান্নান বলেছেন: thanks a lot. r u my fbf? if not, plz add me. https://www.facebook.com/hannan.kallol
৪|
০৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০৭
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
চমৎকার গল্প। +++++++ রইল ভাই।
০৯ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০০
হান্নান বলেছেন: thanks a lot. r u my fbf? if not, add me. https://www.facebook.com/hannan.kallol
৫|
০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৫
নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
ভাল হয়েছে। ++++
০৯ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০১
হান্নান বলেছেন: thanks a lot. r u my fbf? if not, plz add me. https://www.facebook.com/hannan.kallol
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:১২
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: চমৎকার লেখা। এর আগেও আপনার লেখা পড়েছি। আপনি ভালো লিখেন।