নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের চলার পথাটা একাই বেছে নেয়া বেটার কেননা যতো সাথী ততো ঝামেলা\n

কেতকী পাতার নৌকা

Go to My fb Id for details:- Facebook com/farhanul.pranto

কেতকী পাতার নৌকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিমুগ্ধ ভালোবাসা

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৫৭

ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায় বুঝিনি কভু সেই মায়া তো আমার তরে নয়''- ছাদের এক কোণায় বসে আপন মনে গানটা গেয়ে চলেছে অরণ্য। সঙ্গে গিটারের টুং টাং আওয়াজ। প্রকৃতি একেবারেই নিস্তব্ধ। যেন একাত্নতা পোষণ করছে শখের গায়কের সাথে। গানটা শেষের রূপ নিল। "এই যে মিস্টার"- মেয়ে কন্ঠের ডাকে চমকে পিছনে ফিরে তাকাল অরণ্য। মেয়েটাকে দেখেই ঘোর লেগে গেল ওর। অন্তরালের রহস্যময়ী যেন তার সব রূপের রহস্য উজাড় করে দিবালোকে ধরা দিয়েছে। : জ্বি, কিছু বলবেন আমায়??- আমতা আমতা করে বলে অরণ্য। : এইরকম হৃদয়হরণী গানের গলা আপনার!!! কোন উপমায় উপমিত করব ভেবে পাচ্ছি না। অচেনা ডানাকাটা পরীর মিষ্টিমধুর প্রশংসায় বরফের মত গলে গেল অরণ্য। তবুও আনন্দের ভাবটা প্রকাশ করল না ও। ভাব নিয়েই বলল: এ আর তেমন কি!! খুব একটা তো ভাল গাইতে পারি না। : সত্যি অনেক মোহনীয়তা আছে আপনার গলায়। মেয়েরা তো আপনার গান শুনেই আপনার প্রেমে পড়তে বাধ্য- কিছুটা উল্লসিত ভাব নিয়েই বলল মেয়েটা। পরক্ষণেই অরণ্য বলল: আমার আবার প্রেম!! কি যে বলেন না! আপনার নামটা জানতে পারি?? : নীরা আমার নাম। পড়ি ঢা.বি তে ম্যানেজমেন্ট এ ৩য় বর্ষে। আপনি? : আমি বুয়েটে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়ছি। ৪র্থ বর্ষ। : অরিজিনাল মাল্টিট্যালেন্টড বটে আপনি!! লেখাপড়া আর গান এতো ভালোভাবে ক্যামনে একসাথে কন্টিনিউ করেন? : লেখাপড়া আর গান ওদের মত, আর আমি আমার মতো। : বাই দ্যা ওয়ে আপনি কি এ বিল্ডিংয়ে কারো বাসায় বেড়াতে এসেছেন? আপনাকে তো এদিকে আগে কোথাও দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। : আমরা আজ সকালে ৩য় তলায় ভাড়া উঠেছি। আপনার বাসাও কি এই বিল্ডিংয়েই? : হুমম...৪র্থ তলায়। আমার একটু কাজ আছে এখন। আমি আসি। : আচ্ছা। ৪ দিন পরে এক শুভ্র সকালে- অরণ্যের রুমের দরজায় টক টক আজ। মায়ের কন্ঠস্বর শোনা গেল-ওই অরু....দরজা খোল তো। তোকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। অনিচ্ছাসত্ত্বেও দরজা খুলতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল অরণ্যের। সেই আগুনসুন্দরী তার সপ্নীল রূপে দাঁড়িয়ে আছে মায়ের পাশে। : এই অরু শোন, ও হল নীরা। এ বিল্ডিংয়েই থাকে। তোরা দুইজনে কথা বল। আমি একটু রান্নাঘর থেকে ঘুরে আসি- বলেই চলে গেলেন অরণ্যের মা। রুমে ঢুকেই বকবক শুরু করে দিল নীরা- : অরণ্য বাবু আপনাকে দেখলে তো মনে হয় খুব ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করা ছেলে! কিন্তু আপনার রুম তো পুরাই হ-য-ব-র-ল হয়ে আছে। দাঁড়ান আমি এক্ষুণি ঠিকঠাক করে দিচ্ছি সব। : এই কি করছেন!! আপনি কেন শুধু শুধু কষ্ট করতে যাচ্ছেন? ও আমি নিজেই পারবো। : একদম চুপ। শুধু দেখে যান। নীরার গমগমে আওয়াজে ভড়কে গেল অরণ্য। মনে মনে বলল- মেয়েটা তো অনেক রাগী। তবে অন্য রুপবতীদের মতো রুপের দেমাক দেখায় না। কিছুক্ষণ পর নীরা- হয়সে? : হয়সে মানে! যদি আন্তর্জাতিক ঘর গোছানো প্রতিযোগিতা থাকত তবে চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটা আপনিই পেতেন। : যদি বলি আপনার পুরো জীবনটাকে এভাবেই গুছিয়ে দিতে চাই আমি! বজ্রাহতের ন্যায় চমকে উঠে অরণ্য। আমতা আমতা করে বলে- মানে? : আরে কিছু না!! স্রেফ দুষ্টুমি করছিলাম আপনার সাথে। আর আপনি তো পুরাই হ্যাবলা! এতটুকু দুষ্টুমিও ধরতে পারেন না। আচ্ছা আমি এখন আসি। ভার্সিটিতে ক্লাস আছে কিছুক্ষণ পরে- বলেই চলে গেল নীরা। নীরা চোখের আড়াল হতেই তোলপাড় শুরু হয়ে গেল অরণ্যের মনে- মেয়েটা কি আসলেই দুষ্টুমি করেছে ওর সাথে?? আহ! কথাটা যদি মন থেকে বলত মেয়েটা! উফ! আর ভাবতে পারল না ও। সেই দিন বিকেলবেলা - বাসায় ঢুকতেই নীরাকে আবারো ড্রয়িংরুমে দেখতে পেল অরণ্য। খুব একটা সাজেনি মেয়েটা! কপালে নীল একটা টিপ পরেছে শুধু। বারেবারে এই দীঘল কেশী ললনাকে খুবই আপন মনে হয় ওর। : এই যে অরণ্য বাবু...শোনেন। আমার খুব পার্কে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে আজ। একা একা যেতে কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে একটু! কাইন্ডলি আপনি কি একটু সঙ্গ দিতে পারবেন আমায়? মেয়েটা এ কি বলে! এ যে মেঘ না চাইতেই জল! ( ভাবে অরণ্য) পরক্ষণে মুখে হাসি নিয়েই বলে - আচ্ছা চলেন। ডানাকাটা পরীদের সঙ্গ পাওয়া অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। শেষের কথাটা অবশ্য মনে মনেই বলে অরণ্য। ৫ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে বের হল দুজনেই। গিটারটা সাথে নিতে ভুলল না অরণ্য। : একটা রিকশা ডাকেন তাড়াতাড়ি(নীরা) : আমরা কি এক রিকশায় যাবো? : অত ন্যাকামো করেন কেন!! তাড়াতাড়ি করেন। রিকশা আসতেই উঠে পড়ল দুজনে। হুডটা তুলে দিতে চাইল অরণ্য। চোখ কড়মড় করে তার দিকে তাকাল নীরা। তৎক্ষণাৎ অরণ্য ফাঁটা বেলুনের মত চুপসে গেল সে অগ্নিময় দু চোখের দৃষ্টির সম্মুখে। পার্কে ঢুকতেই অনেক কপোত- কপোতীর দেখা মিলল। সবাই আলো- আধারীতে প্রেমলীলায় মও। যেন প্রেমের স্বর্গরাজ্য। : চলুন ওই কোণটায় গিয়ে বসি। (নীরা) সুবোধ ছেলের মত ওকে অনুসরণ করল অরণ্য। নীরা আবারো বলে- পরিবেশটা খুব সুন্দর....তাই না? : জ্বি। : মুখটা অমন আমসির মত করে রেখেছেন কেন? দাঁড়ান আপনার মুখটা স্বমহিমায় মহিমান্বিত করার ব্যবস্থা করছি এখনই। ঝটাপট একটা গান গেয়ে শোনান তো! : এ...খ...ন!!!( আমতা আমতা করে বলে অরণ্য) : জ্বি এখনইএটা আমার আদেশ। অমান্য করলে শাস্তি শিরোধার্য। মেয়েটা এমনিতেই অনেক রাগী। প্যাঁচাল পাড়লে প্রবলেম হতে পারে - এই ভেবেই গিটারটা ঠিক করে নিয়ে তার প্রিয় গানটার সুর তুলল অরণ্য- '' যখন নিঝুম রাতে সবকিছু চুপ নিষ্প্রাণ নগরীতে ঝিঁঝিরাও ঘুম আমি চাঁদের আলো হয়ে তোমার কালো ঘরে জেগে রই সারা নিশি উম...ম এতটা ভালোবাসি'' গানটা শেষ হতে না হতেই অরণ্যের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল নীরা। আর ডুঁকরে কেঁদে উঠল। গিটারটা পড়ে গেল একপাশে। : ওই হ্যাবলা......কিছু বোঝ না তুমি!! আমার চোখের ভাষা কি এতই অচেনা তোমার কাছে?? নীরার এই অকস্মাৎ আচরণে বিমূঢ় হয়ে গেল অরণ্য। : হাদারামটা এখনও কিছু বলে না কেন?? : কি বলব আর! তোমার নিষ্প্রাণ নগরীর কালো ঘরে চাঁদের আলো হয়ে থাকার সুযোগ খুজছিলাম এতোদিন। সপ্ন বুনে চলেছিলাম কবে তোমাকে সবকটি প্রেমের গান একসূত্রে গেয়ে বলব ''তোমায় আমি ভালোবাসি''!! কিন্তু তুমি তো প্রথমে বলার সুযোগটা আমায় দিলে না! : এবার বুঝ লেডিসরা অলওয়েজ ফার্স্ট কেন- বলেই মুখ বাঁকাল নীরা। আর অরণ্য যেন নীরার মাথা ছাড়তেই চাইছে না নিজের বুক থেকে। ততক্ষণে সন্ধা নেমে এসেছে পার্কের প্রতিটা কোণায়। নীড়ছাড়া পক্ষীরা ফিরে আসতে শুরু করেছে আপন আলয়ে। এরই মাঝে আবেগের ফুলঝুরি আর সপ্নাতুর দুটো চোখ নিয়ে পার্কের এক কোণে তখনও এক কপোত তার কপোতীকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে বিমুগ্ধ ভালবাসার প্রহরের অপেক্ষায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.