নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করব,মানবতার সমাজ গড়বো ইনশাআল্লাহ।

মোঃ হৃদয় মোল্লা

বিএসসি অনার্স(রসায়ন)নরসিংদী সরকারি কলেজ

মোঃ হৃদয় মোল্লা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হ্যালোউইন

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:১১

❒ ইসলামের দৃষ্টিতে হ্যালোউইন
.
মুসলিমরা কি হ্যালোউইন উদযাপন করতে পারবে? মুসলিমরা হ্যালোউইনে অংশগ্রহন করতে পারবে কিনা, বলার আগে হ্যালোউইনের ইতিহাস এবং পটভূমি সম্পর্কে জানতে হবে।
.
❒ ধর্মীয় উৎসব
.
মুসলিমরা বছরে দুই দিন উৎসব পালন করেঃ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। এই উৎসব দুইটি ধর্মীয় বিশ্বাস ও ইসলামিক জীবনব্যবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত। অনেকে বলতে পারেন যে হ্যালোউইন শুধুই একটা সামাজিক উৎসব; এতে কোন ধর্মীয় তাৎপর্য নেই। কিন্তু আসলেই কি তাই? খুব সংক্ষেপে হ্যালোউইনের উৎস সম্পর্কে আগে জেনে নেয়া যাক।
.
❒ প্যাগান বা পৌত্তলিক উৎসঃ
.
হ্যালোউইনের শুরু samhain (প্রাচীন আইরিশ শব্দ। উচ্চারণ "সা-উইন," যার অর্থ, গ্রীষ্মশেষ) হিসেবে। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, কর্নওয়াল, ওয়েলস, ব্রিটানি এবং আইল অফ ম্যান— ব্রিটিশ আইল্সের এই ছ’টি জাতিকে বলে কেলটিক-নেশন (আইরিশ উচ্চারণে "সেলটিক")। এদের নানারকমের আচার অনুষ্ঠান রয়েছে। ৩১ অক্টোবর আর পয়লা নভেম্বরের মধ্যে যে রাত, সে রাতে কেলটিকরা সূর্য দেবতা এবং মৃত্যু দেবতাকে একসঙ্গে উপাসনা করত। তারা বিশ্বাস করত, এই রাত আলো আর অন্ধকারের মধ্যবর্তী সীমানা। তখন অতিপ্রাকৃত শক্তিগুলো একত্রিত হয়, এবং জাগতিক ও পারলৌকিক সকল প্রতিবন্ধকতা তুলে নেয়া হয়। ৩১ অক্টোবর রাত্রিতে মৃত ব্যক্তিরা জীবিতদের মাঝে ফিরে আসে, আগামী বছরের নতুন দেহ নেওয়ার জন্য। গ্রামবাসীরা এই খারাপ আত্মাদের থেকে বাচাঁর জন্য পশু ও খাদ্যশস্য উৎসর্গ করত।
.
শুধু তাই নয়, সেলটিকদের নতুন বছরও শুরু হতো নভেম্বরের গোড়া থেকে। সেইসময় ফসলও উঠতো। তাই কেউ কেউ মনে করেন, এটা হার্ভেস্ট ফেস্টিভ্যাল। মিষ্টিকুমড়া (pumpkin) সেটার প্রতীক।
.
❒ খ্রিস্টীয় প্রভাবঃ
.
খ্রিষ্টান ধর্ম যখন ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে বিস্তার লাভের পর গির্জা (খ্রিষ্টান উপাসনালয়) সাধারণ জনগনের মন থেকে পৌত্তলিক আচার-অনুষ্ঠান পাল্টে খৃষ্টীয় উৎসব প্রবেশ করাতে চাইলো। প্যাগানরা তাদের দেবতাদের যেভাবে সম্মান জানায়, খ্রিষ্টান ধর্মেও "ফিস্ট অফ অল সেইন্টস" নামে একটা উৎসব আছে, যেখানে খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মসাধুদের অনেকটা একইভাবে সম্মান জানায়। গির্জা এই উৎসবের নাম পাল্টে "হ্যালোউইন" রাখে। "হ্যালোউইন" শব্দের অর্থ "শোধিত আত্মা" বা "পবিত্র সন্ধ্যা"। শব্দটির উৎপত্তি ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। ধীরে ধীরে খ্রিষ্টান ধর্মের ভেতরে এই হ্যালোউইন স্থায়ী ভাবে ঢুকে যায়। আর আমেরিকায় এই উৎসব প্রবেশ করে আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের অভিবাসীদের মাধ্যমে।
.
❒ হ্যালোউইনের রীতিনীতি ও আচারানুষ্ঠান
.
• "ট্রিক অর ট্রিট" - "হয় বোকা বানাও, না হয় উপহার দাও" - সেই সময় থেকে মানুষ বিভিন্ন চরিত্রের পোশাক পরে, সেজেগুজে প্রতিবেশিদের বোকা বানাত। আর প্রতিবেশিরা ঝামেলা এড়াতে তাদের নানারকম উপহার, মিষ্টি, চকোলেট ইত্যাদি দিত। কিন্তু কোন বিশৃঙ্খলা হলে পুরো দোষ চাপানো হতো প্রেতাত্মা বা অপদেবতাদের ওপর। আবার "ফিস্ট অফ অল সেইন্টস"-এর সময় উৎসবের খরচ উঠানোর জন্য বিভিন্ন বাসায় গিয়ে চাঁদা তোলা হতো।
.
• বাদুর এবং কালো বিড়ালের ছবি - বিশ্বাস করা হয় যে এই প্রাণীগুলো মৃত আত্মাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এমনকি ডাইনিদের আত্মা নাকি কালো বিড়ালের রূপধারণ করে আসে।
.
• নানারকম খেলা, যেমন পানি থেকে কামড়ে আপেল তোলা - প্রাচিন পৌত্তলিকরা ভাগ্য-গণনার জন্য অনেক রকম কলাকৌশলের আশ্রয় নিতো। পানিতে ভাসন্ত আপেল কামড় দিয়ে তুলে আনা - এটা এখন খুব জনপ্রিয় খেলা হলেও এর উৎস পৌত্তলিক।
.
• জ্যাক-ও-ল্যানটার্ন - আয়ারল্যান্ডে এক মাতাল আর কৃপণ চাষি ছিল। নাম জ্যাক। একদিন রাতে প্রচুর মদ খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে সে পড়ল শয়তানের পাল্লায়। শয়তান তাকে নরকে নিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু জ্যাক তাকে বোকা বানিয়ে উল্টো শয়তানকেই দশ বছরের জন্য বোতলের মধ্যে পুরে রাখল। দশ বছর পর যখন শয়তান আবার এলো তাকে দোযখে নিয়ে যেতে, তখন চালাক জ্যাক শয়তানকে আবার বোকা বনিয়ে গাছের সাথে বেধে ফেলল। এবার সে শয়তানের কাছ থেকে ওয়াদা নিল যে শয়তান কখনই জ্যাকের আত্মা নরকে নিতে পারবে না। শয়তান মেনে নিয়ে চলে গেলো। তারপর অনেকদিন পর যখন জ্যাক সত্যি সত্যি মারা গেলো, জ্যাকের আত্মা স্বর্গে উপস্থিত হলো। কিন্তু, সে তো আজীবন মাতাল আর কৃপণ ছিল। তাই স্বর্গে তার জায়গা হল না। এদিকে সে যখন নরকে গেলো, শয়তানও তার ওপর রাগ হয়ে নরকে জায়গা দিল না। স্বর্গ আর নরকের মাঝখানে পড়ে রইল জ্যাক। তার চলাফেরার জন্য বিছিয়ে দেওয়া হল কয়লার আগুন। সেই থেকেই তাকে কমলা আগুনের মধ্য দেখা যায়। এভাবেই জ্যাক-ও–ল্যানটার্নের উৎপত্তি।
.
১৮৪০ সাল, যখন থেকে আমেরিকায় আইরিশরা আসা শুরু করে, তখন থেকে আইরিশ লোকগাথার এই গল্প হ্যালোউইনে ঢুকে যায়। আর কুমড়ার মধ্যে আলো পরিণত হয় হ্যালোউইনের প্রতীকে।
.
❒ ইসলামের শিক্ষা
.
মুলত, হ্যালোউইনের সবকিছুই পৌত্তলিক ও খ্রিষ্ট ধর্ম থেকে এসেছে। আর ইসলামের দৃষ্টিতে এটা যে শিরক, তাতে কোন সন্দেহ নেই। মুসলমান হিসেবে আমাদের এমন আচারানুষ্ঠান পালন করা উচিত না যা আমাদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে অসম্মানিত করে। আমরা কিভাবে বলতে পারি যে আমরা এক আল্লাহ্‌র ইবাদত করি, অথচ আমরা হ্যালোউইনের মতো উৎসবে যোগদান করছি, যার উৎপত্তিই ভুত-প্রেত, দেবদেবী ইত্যাদি উপাসনা করার জন্য?
.
দুঃখজনক হলেও সত্যি, ইদানিং অনেক মুসলমান হ্যালোউইন পালন করাকে আধুনিকতা হিসেবে দেখছেন। মনে করছেন বিশ্বায়নের যুগে পাশ্চাত্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ক্ষতি কি? তারা এটাকে বিনোদন হিসেবে দেখছেন। বাচ্চাদের নানান রকম কার্টুন বা মুভি ক্যারাক্টারের সাজে সাজিয়ে মজা পাচ্ছেন, ছবি তুলছেন। ভাবছেন, এতে দোষের কি? বাচ্চাদের নানান রকম ক্যান্ডি, চকোলেট, উপহার দিচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে আয়োজন করা হচ্ছে হ্যালোউইন উৎসব! কিন্তু আমরা চিন্তাও করছিনা কতো বড় সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে এই কোমলমতি শিশুদের!
.
আমাদের শিশুরা যখন দেখবে অন্যরা সাজছে, ক্যান্ডি পাচ্ছে, মজা করছে, তখন আমরা কি করব? সবার আগে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আল্লাহ্‌র কাছে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ভালো চেয়ে দুয়া করতে হবে। ইমান অটল রাখার জন্য যে মানসিক শক্তি দরকার, তার জন্য দুয়া করতে হবে। বাচ্চারা যা করে আনন্দ পায়, সেগুলো তাদের ঈদ উপলক্ষে করতে দিতে হবে। নিজেদের সচেতন হতে হবে। তারপর পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের সচেতন করতে হবে, জানাতে হবে।
.
মনে রাখতে হবে, উৎসব মানেই বেপরোয়া হওয়া নয়। আনন্দ-ফুর্তি করে বৃথা সময় নষ্ট করা নয়। আমাদের দ্বীনে উৎসবও আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য পাবার মাধ্যম। শরিয়াতের বিধান মেনে, হালাল বিনোদনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করাই একজন মুসলিমের আসল আনন্দ।
.
❒ কুরআন থেকে শিক্ষাঃ
.
"যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রসূলের দিকে এস, তখন তারা বলে, আমাদের জন্যে তাই যথেষ্ট, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি। যদি তাদের বাপ দাদারা কোন জ্ঞান না রাখে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত না হয় তবুও কি তারা তাই করবে?" (সুরাহ আল-মায়েদাহ, আয়াত : ১০৪)
.
"যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।" (সুরাহ আল-হাদিদ, আয়াত : ১৬)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৩:১৫

নতুন বলেছেন: সবাই হ্যলোউইন কে মজা হিসেবেই দেখে, কেউ বিশ্বাস করেনা যে ভুত প্রেত আসে বা কি হবে না হবে।

দুনিয়ায় পরিবত`ন আসছে, পরিবত`ন আসবেই, থামানো যাবেনা।

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৪:০৬

সুপারডুপার বলেছেন: মুসলিমরা কি হ্যারি পটার দেখতে পারবে?

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৬:৫৮

অগ্নিবেশ বলেছেন: মুসলিমরা কি কমোডে পায়খানা করতে পারবে?

৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যালোউইন উৎসব পালন করার মধ্যে আবার মুসলিম হিন্দু কি??
উৎসব মানেই আনন্দ। এই আনন্দ যে কোনো মানুষ করতে পারে।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:২৮

মোঃ হৃদয় মোল্লা বলেছেন: যদি আপনি ধর্মে বিশ্বাসী হোন তবে আপনাকে ধর্মের বিধিনিষেধ মানতে হবে।

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:৩১

জাহিদ হাসান বলেছেন: আপনাদের এমন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে মানুষ ধর্মই ছেড়ে দিচ্ছে।

আপনারা পয়লা বৈশাখ, শহীদ দিবস, বিজয় দিবস পালনকে পর্যন্ত হারাম-হারাম বলে জিকির তোলেন।
আর এইটা তো কোন দূর দেশের ভূত উৎসব।

ভালো হয়ে যান নয়তো আশেপাশে সব মুসলিমকে ধর্মত্যাগ করে আপনাদের মুখে জুতা মারতে দেখবেন।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৫

মোঃ হৃদয় মোল্লা বলেছেন: কোন অর্থে বাড়াবাড়ি বলছেন?

৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৮

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: আপনার সুন্দর উপস্থাপনা এবং তথে্থ্যর জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.