নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জানিনা আমি কে?

সুলাইমান হোসেন

সামুতে যা প্রকাশযোগ্য নয় তা আমার ব্যক্তিগত ব্লগে লিখে রাখি যেমন আত্মজীবনি,কবিতা ইত্যাদি https://hridoyeralo.blogspot.com/

সুলাইমান হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হারানো জীবনের স্মৃতিচারণ :জীবনের ইতিহাস (২য় পর্ব)

১৬ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১:১০

গত জীবনের স্মৃতিচারণ (২য় পর্ব)

গফফার পাগলার বাড়ি মেলা ও আমার পড়ালেখার শুরু

প্রতি বছর গফফার পাগলার বাড়িতে মেলা বসত। আমরা বন্ধুরা দল বেঁধে সেখানে যেতাম, আনন্দ করতাম, হাসতাম, খেতাম, ঘুরতাম। ফেরার পথে কেউ কেউ সিগারেট ধরাতো—আমি সাধারণত খেতাম না, তবে বছরে এক-আধবার গফফার পাগলার বাড়ির মতো উৎসবে পড়লে ছুটে যেতাম ঐ দলে, হয়তো এক-আধটা সিগারেটও খেতাম।
এমন মেলায় যেতাম হেঁটে, ফিরতামও হেঁটেই—আর এই হাঁটার মাঝেই যেন আনন্দ খুঁজে পেতাম।


---

পাঠশালার প্রথম পাঠ

আমার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছিল মায়ের কাছেই। তারপর আমি ভর্তি হই শিকদাড় বাড়ির একটি ব্র্যাক স্কুলে। সেটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম বিদ্যালয়। তবে সেখানে বেশিদিন থাকা হয়নি। কয়েকদিন পড়ানোর পর বাছাইপর্ব শুরু হলো—ছয় বছরের কম বয়স হলে কেউ টিকবে না।
আমার সাথে কয়েকজন মেয়ে ছিল, যাদের মধ্যে ছিল আমার কাজিন সাথীও। ওদের বয়স কম, চার-পাঁচ বছরের মতো। আমার বয়স ছয় হওয়ায় আমিই কেবল টিকে গেলাম। কিন্তু ওরা কেউ থাকল না, আর আমি একা একা মন খারাপ করে কান্নাকাটি করে ওদের সঙ্গে ফিরে এলাম।

ছোটবেলায় আমি বেশ বলদ টাইপের ছিলাম। ব্রাকে পড়লে পরে এক ক্লাস উপরে উঠে যেতাম, কিন্তু সে সুযোগটাও হাতছাড়া করলাম। এই বলদপনা জীবনে আজও রয়ে গেছে—চালাক-চতুর হতে পারলাম না কখনো।


---

পাড়াতেই নতুন স্কুল

এর কিছুদিন পর আমাদের পাড়ায় তৈরি হতে লাগল একটি নতুন স্কুল। নির্মাতা ছিলেন ছুরাফ মাস্টার। এটি ছিল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আনন্দে আমি যেন আত্মহারা! দূরে গিয়ে পড়াশোনা করা আমাদের মতো শিশুদের জন্য খুব কষ্টকর ছিল, আর তাই পাড়াতেই স্কুল পেয়ে স্বর্গ হাতে পেলাম।
আমি সহ কয়েকজন সেই স্কুলের প্রথম ছাত্র হয়ে গেলাম। আমার রোল নম্বর ক্লাস ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত এক ছিল। আমার মতো ‘গাধা’ ছাত্র যেখানে রোল এক হয়, সেই স্কুলের মান পাঠকেরা সহজেই অনুমান করতে পারবেন।

আমি তো রোল নম্বরের গুরুত্বই বুঝতাম না। ক্লাস টুতে যখন আবার রোল এক হলো, আব্বু এসে আম্মাকে বললেন, “সুলাইমানের রোল এক শুনছি।”
আমি তখন ভয় পেয়ে গেছি—ভাবলাম, এত কম রোল বানালাম বলে আব্বা হয়তো মারবেন! আমি তো ভাবতাম ভালো ছাত্র হলে রোল পঞ্চাশের মতো হওয়া উচিত!
সেই ভয়েই আমি পালিয়ে গেলাম।


---

চিতাখোলা স্কুলে যাত্রা

ওই স্কুলে থ্রি পর্যন্ত পড়ে আমি ভর্তি হই ঐতিহ্যবাহী কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে—যেটিকে আমরা বলতাম চিতাখোলা স্কুল। কারণ স্কুলের পাশে ছিল হিন্দুদের শ্মশান, যেখানে লাশ দাহ হতো।

এই স্কুলে পড়েছে আমাদের এলাকার অনেক গুণীজন—মিজান কাকা, জুবায়ের, রুমা, এমনকি আমার চাচাতো বোন সুমিও।
আমি যখন দুই বছরের শিশু, তখন মিজান কাকা আমাকে সাইকেলের পেছনে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন। একদিন দিদিমনি ছাড় জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কে?”
মিজান কাকা বললেন, “আমার ভাতিজা।”
তিনি বললেন, “শিশুদেরকে ক্লাসে আনবেন না।”
তারপর থেকে কাকা আর আমাকে স্কুলে আনতেন না।


---

রিডিংয়ে অভিভূত দিদিমনি

পরে আমার আম্মা আমাকে দিদিমনির কাছেই ভর্তি করাতে নিয়ে গেলেন। তখন দিদিমনি ক্লাস ফোর নিচ্ছিলেন। তিনি আমাকে ক্লাস ফোরের বাংলা বই থেকে রিডিং পড়তে বললেন। আমি রিডিং শুরু করতেই দিদিমনি অভিভূত হয়ে গেলেন!
তিনি ক্লাসের বড় ছাত্রদের ধমক দিয়ে বললেন, “দেখো, ছেলেটা কত সুন্দর রিডিং পড়লো, আর তোমরা কিছুই পারো না!”

তিনিই আমাকে ক্লাস থ্রি-তে ভর্তি করে নিলেন। মিজান কাকার ভাতিজা বলেই তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন।


---

দিদিমনির কোল ও অংকের পাঠ

গুণের অংকে আমি ছিলাম খুব দুর্বল, ভাগের অংক পারতাম ভালো। দিদিমনি একদিন আমাকে কোলের মধ্যে বসিয়ে গুণের অংক শেখালেন। সেদিন থেকে জীবনে আর কোনোদিন গুণের অংক ভুলিনি।
আমি তখনই বুঝে গেলাম—বাচ্চাদের আদরে শেখালে যেটুকু হয়, মারলে তার কিছুই হয় না।

দিদিমনি ছিলেন কঠিন মেজাজের, তার পিটুনি খেয়ে ছাত্ররা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদত। কিন্তু তার দরকার হলে সবার আগে আমাকে পাঠাতো, কারণ আমি ছাড়া তার সঙ্গে সহজে কেউ কথা বলত না।


আমি আমার স্কুলজীবনে শিক্ষকদের নিকট থেকে যথেষ্ট আদর এবং প্রসংশা পেয়েছি।তবে কিছু ব্যাতিক্রম ঘটনাও ঘটেছে,যা ছিলো খুবই দুঃখানক।

একবারের ঘটনা।ক্লাস ফাইভের মডেলটেষ্ট পরিক্ষার সময়,যেটা সমাপনি পরিক্ষার আগে নেওয়া হয়।বলে রাখা প্রয়োজন, সব প্রাইমারি স্কুলেের প্রশ্নপত্র একই হয়ে থাকে।সেই সুবাধে আমাদের এলাকার স্কুল এবং কৃষ্ণপুর আমি যেই স্কুলে পড়তাম, দুই স্কুলের প্রশ্নপত্র একই ছিল। আমাদের এলাকার স্কুলটা ছিলো নামে মাত্র স্কুল

আসলে কোনো কামের ছিলোনা।আমরা আমাদের এলাকার স্কুলটিকে ভাঙা স্কুল বলে ডাকতাম।একদিন ঘুরতে ঘুরতে ভাঙা স্কুলের দিকে গিয়ে দেখি,পরিক্ষার সবগুলো প্রশ্নপত্র খোলা জায়গায় একটি চেয়ারের উপর রেখে দেওয়া আছে,আমি মহা সুযোগ মনে করে সেখান থেকে ছয়টি প্রশ্নপত্র চুরি করলাম।যেহেতু আমাদের স্কুল আর এই ভাঙা স্কুল দুটোই একই প্রাইমারি স্কুল,সুতরাং সবগুলো প্রশ্নপত্র কাজে লেগেছিলো।

আমি যেহেতু বলদ ছিলাম এজন্য পরিক্ষার মধ্যেও প্রশ্নপত্র গুলো অন্যদেরকে দেখানোর জন্য সঙ্গে করে নিয়ে গেলাম।আমার সহপাঠী শাহাদাত যখন দেখলো আমার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা প্রশ্নপত্রের সাথে পরিক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল রয়েছে, তখন সে হিংসা বশত দিদিমনি ম্যাডামকে বিষয়টা বলে দিলো।দিদিমনি আমাকে অফিসরুমে ডেকে নিয়ে কঠোরতার সহিত তিরস্কার করলেন।আমিও ক্ষমা চেয়ে নিলাম জীবনে আর এমনটা করবনা,সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমি দিদিমনির দৃষ্টি থেকে পরে গিয়েছিলাম।অন্যান্য ম্যাডাম এবং ক্লাসের সহপাঠী দের নিকট চোর নামে খ্যাতি অর্জন করেছিলাম।

ঘটনাটা ছিলো খুবই হতাশাজনক।সেই বলদ এখোনো রয়েই গেলাম চালাক চতুর হতে পারলামনা এখনো।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.